leadT1ad

ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিতে বদল কি, কতটা কঠিন হবে

প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৩০
স্ট্রিম গ্রাফিক

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে গত ২৬ নভেম্বর দুই ন্যাশনাল গার্ড সদস্যের ওপর গুলি করা হয়। এতে সারাহ বেকস্ট্রম নিহত ও তাঁর সহকর্মী অ্যান্ড্রু ওলফ গুরুতর আহত হন। এক আফগান নাগরিকের বিরুদ্ধে এই হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ঘটনার পরপরই তিনি ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসকে (ইউএসসিআইএস) নির্দেশ দেন, ঝুলে থাকা সব আশ্রয় (অ্যাসাইলাম) আবেদন স্থগিত করার। এখন আশ্রয় প্রার্থনা, গ্রিন কার্ড ও নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে।

আশ্রয় আবেদনে স্থবিরতা ও আইনি জটিলতা

ইউএসসিআইএস পরিচালক জোসেফ এডলোর আশ্রয় আবেদন সাময়িকভাবে স্থগিত রেখেছেন। এতে প্রায় ১৫ লাখ আবেদনকারীর ভাগ্য অনিশ্চিত। যদিও এই স্থগিতাদেশ অধিকাংশ আশ্রয় মামলা বিচারাধীন থাকা ইমিগ্রেশন আদালতগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।

এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্প প্রশাসনের আগের অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, আগে প্রশাসন আশ্রয় আবেদনের জট কমানোর জন্য দ্রুত কাজ করছিল। ইউএসসিআইএসের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আশ্রয় মামলা প্রায় পাঁচগুণ বেড়ে এক লাখ ৩৫ হাজার ৯১টি হয়েছে। যদিও বাতিলের সংখ্যাও ছয় গুণ বেড়েছে। তবুও ২০২১ সালের পর প্রথমবারের মতো আবেদনের জট কিছুটা কমছিল। কিন্তু নতুন নির্দেশনার ফলে সেই অগ্রগতি থমকে গেল।

বিপাকে ১৯ দেশের নাগরিক

নতুন নির্দেশনায় ইউএসসিআইএসকে ১৯টি নির্দিষ্ট দেশের নাগরিকদের জন্য সব ধরনের অভিবাসন সুবিধা স্থগিত রাখার কথা বলা হয়েছে। এই দেশগুলোকে ট্রাম্প প্রশাসন আগেই ‘উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। এই স্থগিতাদেশের আওতায় কাজের অনুমতি, গ্রিন কার্ড, নাগরিকত্ব ও পরিবারের সদস্যদের স্পন্সর করার মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত। কার্যত এই ১৯টি দেশের মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাস বা কাজ করার কোনো সুযোগ পাবেন না।

দেশগুলো হলো– আফগানিস্তান, বুরুন্ডি, চাদ, কিউবা, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লাওস, লিবিয়া, মিয়ানমার, রিপাবলিক অব কঙ্গো, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, সুদান, টোগো, তুর্কমেনিস্তান, ভেনেজুয়েলা ও ইয়েমেন।

এসব দেশের নাগরিকদের ওপর ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম চলতি সপ্তাহের শুরুতে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি এই তালিকা সম্প্রসারিত করে প্রায় ৩০টিতে উন্নীত করার সুপারিশ করেছেন।

অনুমোদিত অভিবাসন আবেদন পুনঃপর্যালোচনা

ইউএসসিআইএসেএর আরেকটি নির্দেশে বাইডেন প্রশাসনের সময়কালের অনুমোদিত আবেদনগুলো পুনর্বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে উল্লেখিত ১৯টি দেশের যেসব নাগরিক অভিবাসন সুবিধা পেয়েছেন, তাদের সবার আবেদন ‘বিস্তৃতভাবে পুনরায় পর্যালোচনা’ করা হবে। এই গণ-পুনঃপরীক্ষা প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনে আবেদনকারীদের আবারও সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হতে পারে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তার প্রতি কোনো হুমকি আছে কিনা, তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে কর্মকর্তারা যাচাই করবেন, আবেদনকারীদের নাম কোনো ফেডারেল ডেটাবেসে কোনো অভিযোগ আছে কিনা অথবা তারা পরিচয় নিশ্চিতে যথেষ্ট প্রমাণ দিয়েছেন কিনা। যদিও আবেদনকারী সন্ত্রাসী কিনা বা মিথ্যা পরিচয় দিচ্ছেন কিনা, তা যাচাই করা অভিবাসন প্রক্রিয়ার সাধারণ ও নিয়মিত অংশ। তবুও এভাবে ঢালাওভাবে পুরোনো অনুমোদিত নথি ঘাটার ঘটনা বিরল।

আফগান অভিবাসী নিয়ে বিতর্ক

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার অভিযোগ করে আসছেন, দুই দশকের যুদ্ধের পর ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে, তখন বাইডেন প্রশাসন আফগান অভিবাসীদের সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করতে ব্যর্থ হয়েছে। ওয়াশিংটন শুটিংয়ের সন্দেহভাজন হামলাকারী রহমানউল্লাহ লাকানওয়ালসহ ওই সময় আশ্রয় পাওয়া অনেক আফগানই যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করেছিলেন।

ট্রাম্প গত সপ্তাহে মন্তব্য করেছেন, কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে ও তাদের মধ্যে অনেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন বা বিপজ্জনক হতে পারেন। তবে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিনের ইমিগ্রেশন ক্লিনিকের সহপরিচালক ডেনিস গিলম্যান এই অভিযোগের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন।

গিলম্যানের মতে, আফগান আশ্রয় প্রার্থীদের ইউএসসিআইএস তদন্ত প্রক্রিয়া ছিল অত্যন্ত কঠোর। তাদের সাক্ষাৎকারগুলো সাধারণত ছয় থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতো। গিলম্যান আরও জানান, তিনি নিজে এমন অনেক সাক্ষাৎকারে উপস্থিত ছিলেন। তার বারবার মনে হয়েছে, যাদের উদ্ধার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাদের পেছনে এভাবে সম্পদের অপচয় করাটা অযৌক্তিক।

আইনি লড়াই ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব

ট্রাম্প প্রশাসনের এই কঠোর অভিবাসন নীতি খুব সম্ভবত ফেডারেল আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। ট্রাম্পের আগের মেয়াদের অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। ডেনিস গিলম্যানের মতে, শেষ পর্যন্ত হয়তো চ্যালেঞ্জকারীরা আদালতে জয়ী হবেন ও আশ্রয় আবেদনগুলো পুনরায় সচল হবে। কিন্তু এই মধ্যবর্তী সময়ে স্থবিরতা তৈরি হবে ও আবেদনের জট আরও বাড়বে। আদালতের রায় আসার আগ পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির শিকার হতে হবে। আর প্রশাসন তাদের অভিবাসন প্রক্রিয়াকে ধীর করার উদ্দেশ্য সফলভাবে বাস্তবায়ন করে যাবে।

তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা

Ad 300x250

সম্পর্কিত