সুমন সুবহান
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ও নেপালের মতো দেশে ‘জেনারেশন জি’ বা জেন-জি আন্দোলন তুলেছে নতুন রাজনৈতিক ঢেউ। প্রচলিত ব্যবস্থার প্রতি হতাশা, বেকারত্বের জ্বালা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ তরুণ প্রজন্মকে এক ছাতার নিচে এনেছে। এসব আন্দোলন দেখিয়েছে, বয়সভিত্তিক একটি দল কত দ্রুত ও কার্যকরভাবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন করতে পারে।
এই ঢেউ ভারতের রাজনীতিতেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে লাদাখে চলমান তরুণদের আন্দোলনের পর থেকে। যদিও সেখানে এখনো দেশব্যাপী জেন-জি আন্দোলন শুরু হয়নি, তবু ভারতের বিপুল তরুণ জনসংখ্যা—যারা ডিজিটালভাবে সংযুক্ত এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন—একটি পরিবর্তনের দিকে ঝুঁকতে পারে। তাদের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ ও অসন্তোষ কেবল একটি স্ফুলিঙ্গের অপেক্ষায়। সেই মুহূর্ত এলে ভারতের রাজনীতিতে শুরু হতে পারে নতুন অধ্যায়, যা প্রচলিত দলগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে এবং রাজনৈতিক এজেন্ডাকেও নতুনভাবে সাজাতে বাধ্য করবে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভারতের জনসংখ্যা প্রায় ১৪৩ কোটি। এর মধ্যে ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া তরুণ-তরুণীর সংখ্যা প্রায় ৩৮ থেকে ৪০ কোটি, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় জেন-জি জনগোষ্ঠী। মোট জনসংখ্যার আনুমানিক ২৬% থেকে ২৮% এই বয়সগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এত বিপুল সংখ্যক তরুণ শুধু ভারতের জনসংখ্যার একটি অংশ নয়, বরং তারা দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশ ও নেপালের মতো ভারতেও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক বেকারত্ব, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি হতাশা লক্ষ্য করা যায়। ডিজিটাল মাধ্যমে সংযুক্ত এই প্রজন্ম সহজেই নিজেদের ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করতে সক্ষম। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ও দুর্নীতির মতো বিষয় ঘিরে তাদের আন্দোলন দানা বাঁধতে পারে। বিশেষত শহুরে ও আধা-শহুরে অঞ্চল হবে এসব পরিবর্তনের প্রধান ক্ষেত্র, যেখানে তরুণরা নিজেদের অধিকার ও ভবিষ্যৎ নিয়ে সবচেয়ে বেশি সচেতন।
বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক বৈষম্য: সাম্প্রতিক সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে ভারতে বর্তমানে সামগ্রিক বেকারত্বের হার ৫.১%। তবে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। ২০২৩ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকের (জানুয়ারি–মার্চ) এক জরিপে দেখা যায়, ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ১৩.৪%। স্নাতক বা তার ঊর্ধ্বতন শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্নদের ক্ষেত্রে এই হার আরও বেশি—বিভিন্ন গবেষণায় ১৫% থেকে ১৯% পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করার পরও চাকরি না পাওয়ার সংকটে পড়ছে মূলত জেন-জি প্রজন্মই।
লাদাখে বেকারত্বের উচ্চ হার তরুণদের বিক্ষোভে অংশগ্রহণের অন্যতম প্রধান কারণ। ফলে বেকারত্ব আরও তীব্র হলে তা সারা দেশে জেন-জি আন্দোলনের বিস্তারের পেছনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বিবিসির এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেকারত্ব, রাজনৈতিক দুর্নীতি এবং পুরোনো নেতৃত্বের প্রতি হতাশা একটি সাধারণ সমস্যা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আন্দোলন ভারতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে—একই ধরনের পরিস্থিতি সেখানে তৈরি হতে পারে কি না, তা নিয়ে।
ভারতের রাজনৈতিক দল ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) এবং কয়েকটি আঞ্চলিক দল ইতিমধ্যেই সতর্ক করে বলেছে, বেকারত্ব ও অন্যান্য সামাজিক সমস্যার কারণে নেপালের মতো একটি জেন-জি আন্দোলন ভারতেও দেখা দিতে পারে।
ডিজিটাল সংযোগ: ভারতে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮৫ কোটির বেশি। ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী ভারতীয় তরুণদের প্রায় ৯৫% স্মার্টফোন ব্যবহার করে। এছাড়াও ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৩.৭% সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়। ২০২৩ সালের ডেটা অনুযায়ী এই সংখ্যা ছিল ৪৬.২ কোটি, যা ২০২৪-এর শুরুতে বেড়ে ৪৯.১ কোটি হয়েছে।
এই ব্যবহারকারীদের মধ্যে বড় অংশই তরুণরা, যারা ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক ইত্যাদি মাধ্যমে তথ্য এবং আন্দোলনের বার্তা দ্রুত ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব না থাকলেও তারা সহজেই বিক্ষোভে নিজেদের সংগঠিত করতে পারে। বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা এই প্রক্রিয়ার উদাহরণ হিসেবে কাজ করেছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম—বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া—তরুণদের একত্রিত করতে এবং নেতৃত্ববিহীন আন্দোলন তৈরি করতে সহায়তা করছে। এই মাধ্যমগুলো শুধু যোগাযোগের হাতিয়ার নয়, বরং রাজনৈতিক পরিবর্তনের নতুন প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও কাজ করছে।
রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের অভাব: ভারতের তরুণ প্রজন্ম ক্রমবর্ধমান হারে অনুভব করছে যে দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলো তাদের চাহিদা এবং প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ। এই দলগুলো প্রায়শই পারিবারিক শাসন বা পুরোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের ওপর নির্ভরশীল, ফলে তারা জেন-জি প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা এবং আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। তরুণদের কাছে রাজনীতি এখন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতীক। এই মোহভঙ্গের মূল কারণগুলো হলো:
প্রজন্মগত ব্যবধান: প্রচলিত রাজনীতিকরা প্রায়শই এমন নীতি ও কৌশল ব্যবহার করেন, যা পুরোনো প্রজন্মের জন্য প্রাসঙ্গিক। জেন-জি প্রজন্মের আগ্রহ কেন্দ্রিত—কর্মসংস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ডিজিটাল স্বাধীনতা। এই প্রজন্মগত ব্যবধান প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক কাঠামোকে তরুণদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লাদাখে চলমান আন্দোলনকে গুরুত্বসহকারে কভার করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই আন্দোলন শুধু স্থানীয় দাবি (রাজ্যের মর্যাদা ও সাংবিধানিক সুরক্ষা) নিয়ে নয়, বরং তরুণদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং প্রতিষ্ঠিত কাঠামোর প্রতি অবিশ্বাসকেও তুলে ধরে।
দুর্নীতির ব্যাপকতা: তরুণরা দেখছে, দুর্নীতির কারণে চাকরির সুযোগ কমছে এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে। তারা মনে করে রাজনীতিবিদরা ব্যক্তিগত স্বার্থে কাজ করছেন, জনগণের জন্য নয়। এই উপলব্ধি তাদের মধ্যে গভীর হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
নেতৃত্বের সংকট: পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোতে নতুন ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব বংশানুক্রমিকভাবে হস্তান্তরিত হয়, যা যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষাকে আঘাত করে। তরুণরা এমন নেতৃত্ব চায়, যারা প্রযুক্তি বোঝে, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন এবং সততার সঙ্গে কাজ করবে।
জেন-জি আন্দোলন যদি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে, তবে প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হবে। তাদের নীতি ও কৌশল পরিবর্তন করতে বাধ্য হতে হবে। নতুন ধরনের তরুণ-কেন্দ্রিক রাজনৈতিক শক্তি বা নেতৃত্ব এই আন্দোলনের মাধ্যমে উত্থান লাভ করতে পারে। এর ফলে রাজনৈতিক আলোচনা কর্মসংস্থান, পরিবেশ ও প্রযুক্তির মতো বিষয়গুলোতে স্থানান্তরিত হবে। সব মিলিয়ে, এটি ভারতের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
প্রচলিত দলগুলোর ওপর চাপ: জেন-জি আন্দোলন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়লে বিজেপি, কংগ্রেস এবং আঞ্চলিক দলগুলো তরুণ ভোটারদের সমর্থন ধরে রাখতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। ভারতের রাজনৈতিক মহল ও গণমাধ্যম বাংলাদেশের আন্দোলন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বিরোধী দলগুলো সতর্ক বার্তা দিয়েছে, আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে বেকারত্ব ও অন্যান্য সামাজিক সমস্যার কারণে ভারতেও একই ধরনের যুব আন্দোলন দেখা দিতে পারে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোকে তরুণদের কর্মসংস্থান ও অন্যান্য সমস্যা সমাধানে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের কিছু বিরোধী শিবিরে বাংলাদেশের আন্দোলনের স্লোগান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নিজেদের আন্দোলনে প্রতিফলিত করেছে।
নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান: জেন-জি আন্দোলন কোনো প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের অংশ না হলেও একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হতে পারে। লাদাখের উদাহরণ থেকে দেখা গেছে, সোনাম ওয়াংচুক এবং স্থানীয় যুবসমাজ নেতৃত্বে এমন একটি আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত কাঠামোর বাইরে থেকে জনগণের কাছে নিজেদের দাবিগুলো তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। তরুণরা পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ভরসা না রেখে নিজেদের এমন প্রতিনিধি চায় যারা তাদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করবে।
নীতি নির্ধারণে পরিবর্তন: যদি জেন-জি আন্দোলন সফল হয়, তবে সরকারের নীতি নির্ধারণে পরিবর্তন আনতে পারে। যুব সমাজের চাহিদা অনুযায়ী কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও পরিবেশের মতো বিষয়গুলো রাজনৈতিক এজেন্ডায় আরও গুরুত্ব পেতে পারে।
রাজনৈতিক মেরুকরণ: দেশব্যাপী এই আন্দোলনের প্রভাব রাজনৈতিক মেরুকরণও বাড়াতে পারে। প্রতিষ্ঠান থেকে বাইরে থেকে ওঠা আন্দোলনগুলি প্রচলিত কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করে। সরকার যদি এগুলিকে শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হিসেবে দেখে ও কঠোর দমনমূলক পদক্ষেপ নেবে, তরুণদের মধ্যে সরকারের প্রতি অবিশ্বাস তৈরি হবে। লাদাখের উদাহরণে দেখা গেছে, এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠেছে। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ লেহে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চারজন নিহত ও বহু আহত হয়েছে। যদি এ ধরনের ঘটনা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে, তা সমাজের বিভিন্ন স্তরে ফাটল সৃষ্টি করতে পারে এবং রাজনৈতিক মেরুকরণকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে জেনারেশন জেড বা জেন-জি আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সীমিত। তবে কিছু গণমাধ্যম লাদাখে চলমান বিক্ষোভকে ‘জেন-জি আন্দোলন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, লাদাখের আন্দোলন মূলত স্থানীয় ইস্যুতে শুরু হলেও জেন-জি প্রজন্মের নেতৃত্বে এটি বৃহত্তর আকার ধারণ করেছে। এটি প্রমাণ করে যে ভারতের তরুণ প্রজন্ম কেবল রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় নয়, বরং নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অত্যন্ত সচেতন। আন্দোলনটি সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে এবং লাদাখের সমস্যাগুলোকে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এনেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, যদি ভারতের অন্যান্য রাজ্যে বেকারত্ব বা রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের অভাবের মতো সমস্যা তীব্র হয়, লাদাখের মতো জেন-জি আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে।
নেতৃত্ব ও কৌশল: লাদাখের আন্দোলন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়নি। বরং এটি সোনাম ওয়াংচুকের মতো সমাজকর্মী এবং স্থানীয় তরুণদের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছে। আন্দোলনকারীরা সোশ্যাল মিডিয়া, লাইভ স্ট্রিমিং এবং অনলাইন প্রচারণার মাধ্যমে বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে। এই ডিজিটাল কৌশলই আন্দোলনকে দ্রুত নজরে এনেছে। তবে আন্দোলন যদি লক্ষ্যবিহীন বা বিশৃঙ্খল হয়, তা দ্রুত দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া: সরকার যদি আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে, তা শান্তিপূর্ণ সমাধান নিশ্চিত করতে পারে। লাদাখের বিক্ষোভে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একজন পরিবেশকর্মীকে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ এনেছে, যেখানে তিনি নেপাল ও বাংলাদেশের জেন-জি আন্দোলনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছিলেন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে ভারত সরকার তরুণ আন্দোলনের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন।
অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীর সমর্থন: জেন-জি আন্দোলন শুধু তরুণদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, সমাজের অন্যান্য শ্রেণী যেমন কৃষক বা শ্রমিকদের সমর্থন পেলে বৃহৎ গণআন্দোলনে রূপ নিতে পারে। লাদাখে ২০২০ সাল থেকে রাজ্যের মর্যাদা এবং সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে আন্দোলন চলেছে, যা ২০২৫ সালে সহিংস রূপ নেয় এবং তরুণরা নেতৃত্ব দিচ্ছে। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কিছু রাজনৈতিক নেতা এটি ‘জেন-জি বিক্ষোভ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে আন্দোলন নেপাল ও বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে। একইভাবে, বিহারে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ও আসামে মোড়ান সম্প্রদায়ের ‘তফসিলি উপজাতি’ মর্যাদা দাবির আন্দোলনে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ লক্ষ্যণীয় ছিল।
লাদাখের জেন-জি আন্দোলন কেবল ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়; এটি ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পট পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। বাংলাদেশ ও নেপালের অভিজ্ঞতা ভারতীয় তরুণদের মধ্যে নতুন আশা জাগিয়েছে। তারা প্রচলিত রাজনীতির বাইরে গিয়ে নিজেদের কণ্ঠস্বর প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
যদি আন্দোলন সারা দেশে ছড়ায়, তা কেবল বেকারত্ব বা অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, রাজনৈতিক সংস্কার, নেতৃত্ব পরিবর্তন এবং গণতন্ত্রের নীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। সরকারের প্রতিক্রিয়া—দমন বা আলোচনার মাধ্যমে—ভবিষ্যৎ গতিকে নির্ধারণ করবে। লাদাখের এই আন্দোলন ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক মডেল তৈরির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ও নেপালের মতো দেশে ‘জেনারেশন জি’ বা জেন-জি আন্দোলন তুলেছে নতুন রাজনৈতিক ঢেউ। প্রচলিত ব্যবস্থার প্রতি হতাশা, বেকারত্বের জ্বালা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ তরুণ প্রজন্মকে এক ছাতার নিচে এনেছে। এসব আন্দোলন দেখিয়েছে, বয়সভিত্তিক একটি দল কত দ্রুত ও কার্যকরভাবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন করতে পারে।
এই ঢেউ ভারতের রাজনীতিতেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে লাদাখে চলমান তরুণদের আন্দোলনের পর থেকে। যদিও সেখানে এখনো দেশব্যাপী জেন-জি আন্দোলন শুরু হয়নি, তবু ভারতের বিপুল তরুণ জনসংখ্যা—যারা ডিজিটালভাবে সংযুক্ত এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন—একটি পরিবর্তনের দিকে ঝুঁকতে পারে। তাদের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ ও অসন্তোষ কেবল একটি স্ফুলিঙ্গের অপেক্ষায়। সেই মুহূর্ত এলে ভারতের রাজনীতিতে শুরু হতে পারে নতুন অধ্যায়, যা প্রচলিত দলগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে এবং রাজনৈতিক এজেন্ডাকেও নতুনভাবে সাজাতে বাধ্য করবে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভারতের জনসংখ্যা প্রায় ১৪৩ কোটি। এর মধ্যে ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া তরুণ-তরুণীর সংখ্যা প্রায় ৩৮ থেকে ৪০ কোটি, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় জেন-জি জনগোষ্ঠী। মোট জনসংখ্যার আনুমানিক ২৬% থেকে ২৮% এই বয়সগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এত বিপুল সংখ্যক তরুণ শুধু ভারতের জনসংখ্যার একটি অংশ নয়, বরং তারা দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশ ও নেপালের মতো ভারতেও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক বেকারত্ব, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি হতাশা লক্ষ্য করা যায়। ডিজিটাল মাধ্যমে সংযুক্ত এই প্রজন্ম সহজেই নিজেদের ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করতে সক্ষম। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ও দুর্নীতির মতো বিষয় ঘিরে তাদের আন্দোলন দানা বাঁধতে পারে। বিশেষত শহুরে ও আধা-শহুরে অঞ্চল হবে এসব পরিবর্তনের প্রধান ক্ষেত্র, যেখানে তরুণরা নিজেদের অধিকার ও ভবিষ্যৎ নিয়ে সবচেয়ে বেশি সচেতন।
বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক বৈষম্য: সাম্প্রতিক সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে ভারতে বর্তমানে সামগ্রিক বেকারত্বের হার ৫.১%। তবে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। ২০২৩ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকের (জানুয়ারি–মার্চ) এক জরিপে দেখা যায়, ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ১৩.৪%। স্নাতক বা তার ঊর্ধ্বতন শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্নদের ক্ষেত্রে এই হার আরও বেশি—বিভিন্ন গবেষণায় ১৫% থেকে ১৯% পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করার পরও চাকরি না পাওয়ার সংকটে পড়ছে মূলত জেন-জি প্রজন্মই।
লাদাখে বেকারত্বের উচ্চ হার তরুণদের বিক্ষোভে অংশগ্রহণের অন্যতম প্রধান কারণ। ফলে বেকারত্ব আরও তীব্র হলে তা সারা দেশে জেন-জি আন্দোলনের বিস্তারের পেছনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বিবিসির এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেকারত্ব, রাজনৈতিক দুর্নীতি এবং পুরোনো নেতৃত্বের প্রতি হতাশা একটি সাধারণ সমস্যা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আন্দোলন ভারতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে—একই ধরনের পরিস্থিতি সেখানে তৈরি হতে পারে কি না, তা নিয়ে।
ভারতের রাজনৈতিক দল ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) এবং কয়েকটি আঞ্চলিক দল ইতিমধ্যেই সতর্ক করে বলেছে, বেকারত্ব ও অন্যান্য সামাজিক সমস্যার কারণে নেপালের মতো একটি জেন-জি আন্দোলন ভারতেও দেখা দিতে পারে।
ডিজিটাল সংযোগ: ভারতে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮৫ কোটির বেশি। ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী ভারতীয় তরুণদের প্রায় ৯৫% স্মার্টফোন ব্যবহার করে। এছাড়াও ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৩.৭% সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়। ২০২৩ সালের ডেটা অনুযায়ী এই সংখ্যা ছিল ৪৬.২ কোটি, যা ২০২৪-এর শুরুতে বেড়ে ৪৯.১ কোটি হয়েছে।
এই ব্যবহারকারীদের মধ্যে বড় অংশই তরুণরা, যারা ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক ইত্যাদি মাধ্যমে তথ্য এবং আন্দোলনের বার্তা দ্রুত ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব না থাকলেও তারা সহজেই বিক্ষোভে নিজেদের সংগঠিত করতে পারে। বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা এই প্রক্রিয়ার উদাহরণ হিসেবে কাজ করেছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম—বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া—তরুণদের একত্রিত করতে এবং নেতৃত্ববিহীন আন্দোলন তৈরি করতে সহায়তা করছে। এই মাধ্যমগুলো শুধু যোগাযোগের হাতিয়ার নয়, বরং রাজনৈতিক পরিবর্তনের নতুন প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও কাজ করছে।
রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের অভাব: ভারতের তরুণ প্রজন্ম ক্রমবর্ধমান হারে অনুভব করছে যে দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলো তাদের চাহিদা এবং প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ। এই দলগুলো প্রায়শই পারিবারিক শাসন বা পুরোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের ওপর নির্ভরশীল, ফলে তারা জেন-জি প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা এবং আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। তরুণদের কাছে রাজনীতি এখন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতীক। এই মোহভঙ্গের মূল কারণগুলো হলো:
প্রজন্মগত ব্যবধান: প্রচলিত রাজনীতিকরা প্রায়শই এমন নীতি ও কৌশল ব্যবহার করেন, যা পুরোনো প্রজন্মের জন্য প্রাসঙ্গিক। জেন-জি প্রজন্মের আগ্রহ কেন্দ্রিত—কর্মসংস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ডিজিটাল স্বাধীনতা। এই প্রজন্মগত ব্যবধান প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক কাঠামোকে তরুণদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লাদাখে চলমান আন্দোলনকে গুরুত্বসহকারে কভার করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই আন্দোলন শুধু স্থানীয় দাবি (রাজ্যের মর্যাদা ও সাংবিধানিক সুরক্ষা) নিয়ে নয়, বরং তরুণদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং প্রতিষ্ঠিত কাঠামোর প্রতি অবিশ্বাসকেও তুলে ধরে।
দুর্নীতির ব্যাপকতা: তরুণরা দেখছে, দুর্নীতির কারণে চাকরির সুযোগ কমছে এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে। তারা মনে করে রাজনীতিবিদরা ব্যক্তিগত স্বার্থে কাজ করছেন, জনগণের জন্য নয়। এই উপলব্ধি তাদের মধ্যে গভীর হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
নেতৃত্বের সংকট: পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোতে নতুন ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব বংশানুক্রমিকভাবে হস্তান্তরিত হয়, যা যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষাকে আঘাত করে। তরুণরা এমন নেতৃত্ব চায়, যারা প্রযুক্তি বোঝে, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন এবং সততার সঙ্গে কাজ করবে।
জেন-জি আন্দোলন যদি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে, তবে প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হবে। তাদের নীতি ও কৌশল পরিবর্তন করতে বাধ্য হতে হবে। নতুন ধরনের তরুণ-কেন্দ্রিক রাজনৈতিক শক্তি বা নেতৃত্ব এই আন্দোলনের মাধ্যমে উত্থান লাভ করতে পারে। এর ফলে রাজনৈতিক আলোচনা কর্মসংস্থান, পরিবেশ ও প্রযুক্তির মতো বিষয়গুলোতে স্থানান্তরিত হবে। সব মিলিয়ে, এটি ভারতের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
প্রচলিত দলগুলোর ওপর চাপ: জেন-জি আন্দোলন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়লে বিজেপি, কংগ্রেস এবং আঞ্চলিক দলগুলো তরুণ ভোটারদের সমর্থন ধরে রাখতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। ভারতের রাজনৈতিক মহল ও গণমাধ্যম বাংলাদেশের আন্দোলন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বিরোধী দলগুলো সতর্ক বার্তা দিয়েছে, আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে বেকারত্ব ও অন্যান্য সামাজিক সমস্যার কারণে ভারতেও একই ধরনের যুব আন্দোলন দেখা দিতে পারে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোকে তরুণদের কর্মসংস্থান ও অন্যান্য সমস্যা সমাধানে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের কিছু বিরোধী শিবিরে বাংলাদেশের আন্দোলনের স্লোগান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নিজেদের আন্দোলনে প্রতিফলিত করেছে।
নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান: জেন-জি আন্দোলন কোনো প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের অংশ না হলেও একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হতে পারে। লাদাখের উদাহরণ থেকে দেখা গেছে, সোনাম ওয়াংচুক এবং স্থানীয় যুবসমাজ নেতৃত্বে এমন একটি আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত কাঠামোর বাইরে থেকে জনগণের কাছে নিজেদের দাবিগুলো তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। তরুণরা পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ভরসা না রেখে নিজেদের এমন প্রতিনিধি চায় যারা তাদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করবে।
নীতি নির্ধারণে পরিবর্তন: যদি জেন-জি আন্দোলন সফল হয়, তবে সরকারের নীতি নির্ধারণে পরিবর্তন আনতে পারে। যুব সমাজের চাহিদা অনুযায়ী কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও পরিবেশের মতো বিষয়গুলো রাজনৈতিক এজেন্ডায় আরও গুরুত্ব পেতে পারে।
রাজনৈতিক মেরুকরণ: দেশব্যাপী এই আন্দোলনের প্রভাব রাজনৈতিক মেরুকরণও বাড়াতে পারে। প্রতিষ্ঠান থেকে বাইরে থেকে ওঠা আন্দোলনগুলি প্রচলিত কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করে। সরকার যদি এগুলিকে শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হিসেবে দেখে ও কঠোর দমনমূলক পদক্ষেপ নেবে, তরুণদের মধ্যে সরকারের প্রতি অবিশ্বাস তৈরি হবে। লাদাখের উদাহরণে দেখা গেছে, এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠেছে। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ লেহে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চারজন নিহত ও বহু আহত হয়েছে। যদি এ ধরনের ঘটনা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে, তা সমাজের বিভিন্ন স্তরে ফাটল সৃষ্টি করতে পারে এবং রাজনৈতিক মেরুকরণকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে জেনারেশন জেড বা জেন-জি আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সীমিত। তবে কিছু গণমাধ্যম লাদাখে চলমান বিক্ষোভকে ‘জেন-জি আন্দোলন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, লাদাখের আন্দোলন মূলত স্থানীয় ইস্যুতে শুরু হলেও জেন-জি প্রজন্মের নেতৃত্বে এটি বৃহত্তর আকার ধারণ করেছে। এটি প্রমাণ করে যে ভারতের তরুণ প্রজন্ম কেবল রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় নয়, বরং নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অত্যন্ত সচেতন। আন্দোলনটি সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে এবং লাদাখের সমস্যাগুলোকে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এনেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, যদি ভারতের অন্যান্য রাজ্যে বেকারত্ব বা রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের অভাবের মতো সমস্যা তীব্র হয়, লাদাখের মতো জেন-জি আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে।
নেতৃত্ব ও কৌশল: লাদাখের আন্দোলন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়নি। বরং এটি সোনাম ওয়াংচুকের মতো সমাজকর্মী এবং স্থানীয় তরুণদের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছে। আন্দোলনকারীরা সোশ্যাল মিডিয়া, লাইভ স্ট্রিমিং এবং অনলাইন প্রচারণার মাধ্যমে বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে। এই ডিজিটাল কৌশলই আন্দোলনকে দ্রুত নজরে এনেছে। তবে আন্দোলন যদি লক্ষ্যবিহীন বা বিশৃঙ্খল হয়, তা দ্রুত দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া: সরকার যদি আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে, তা শান্তিপূর্ণ সমাধান নিশ্চিত করতে পারে। লাদাখের বিক্ষোভে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একজন পরিবেশকর্মীকে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ এনেছে, যেখানে তিনি নেপাল ও বাংলাদেশের জেন-জি আন্দোলনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছিলেন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে ভারত সরকার তরুণ আন্দোলনের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন।
অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীর সমর্থন: জেন-জি আন্দোলন শুধু তরুণদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, সমাজের অন্যান্য শ্রেণী যেমন কৃষক বা শ্রমিকদের সমর্থন পেলে বৃহৎ গণআন্দোলনে রূপ নিতে পারে। লাদাখে ২০২০ সাল থেকে রাজ্যের মর্যাদা এবং সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে আন্দোলন চলেছে, যা ২০২৫ সালে সহিংস রূপ নেয় এবং তরুণরা নেতৃত্ব দিচ্ছে। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কিছু রাজনৈতিক নেতা এটি ‘জেন-জি বিক্ষোভ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে আন্দোলন নেপাল ও বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে। একইভাবে, বিহারে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ও আসামে মোড়ান সম্প্রদায়ের ‘তফসিলি উপজাতি’ মর্যাদা দাবির আন্দোলনে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ লক্ষ্যণীয় ছিল।
লাদাখের জেন-জি আন্দোলন কেবল ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়; এটি ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পট পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। বাংলাদেশ ও নেপালের অভিজ্ঞতা ভারতীয় তরুণদের মধ্যে নতুন আশা জাগিয়েছে। তারা প্রচলিত রাজনীতির বাইরে গিয়ে নিজেদের কণ্ঠস্বর প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
যদি আন্দোলন সারা দেশে ছড়ায়, তা কেবল বেকারত্ব বা অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, রাজনৈতিক সংস্কার, নেতৃত্ব পরিবর্তন এবং গণতন্ত্রের নীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। সরকারের প্রতিক্রিয়া—দমন বা আলোচনার মাধ্যমে—ভবিষ্যৎ গতিকে নির্ধারণ করবে। লাদাখের এই আন্দোলন ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক মডেল তৈরির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এই প্রজন্মের আন্দোলন, ভাষা ও সাংস্কৃতিক প্রতীক—সব মিলিয়ে তারা একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যাকরণ নির্মাণ করছে। এই ব্যাকরণকে বুঝতে হলে আমাদের প্রবেশ করতে হবে তাদের নির্মিত বাস্তবতায়, তাদের ডিজিটাল ছন্দে এবং তাদের মনোজাগতিক প্রতীকতত্ত্বে। অন্যথায়, আমরা শুধু তাদের সহিংসতা দেখব, কিন্তু তাদের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ব
৭ ঘণ্টা আগেজেন-জি বা ‘জেনারেশন জুমার্স’। অধুনা দুনিয়ায় বহুল আলোচিত একটি প্রজন্ম-পরিভাষা। জন্ম থেকেই ডিজিটাল প্রযুক্তির সংস্পর্শে আসা এরা প্রথম প্রজন্ম। উন্নত দেশ হোক বা উন্নয়নশীল সমাজ, জেন-জিরা নানা উপায়ে নাড়িয়ে দিচ্ছে প্রচলিত শাসন, সংস্কৃতি ও চিন্তার কাঠামো। তাঁদের ভাষা, অভিব্যক্তি আর প্রতিক্রিয়া অনেক ক্ষেত্র
৭ ঘণ্টা আগেহুমায়ূন আহমেদের ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা থাকার কথা না, তবে তাঁর পরিবারের লোকজন নিশ্চয় এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। তাঁদের কথা সত্য বলে ধরে নিলে, হুমায়ূনের আত্মজীবনীর প্রায় ৬০ শতাংশই মিথ্যা হিসেবে অবিহিত হবে।
৮ ঘণ্টা আগেপাহাড় প্রশ্নে বাংলাদেশে ‘জাতীয়তাবাদ’ যে সবচেয়ে প্রকট আকারে হাজির হয়, তার আরেকপ্রস্থ নজিরও দেখা গেল। সঙ্গে আর্মি বা সেনাপ্রীতিও।
১ দিন আগে