মো. আবুল কালাম আজাদ
‘নির্বাচনী রাজনীতিতে ধর্মীয় দলগুলো পিছিয়ে কেন’ শিরোনামটি প্রাসঙ্গিকভাবেই আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে টেনে নিয়ে যায়। তাই লেখাটি একটু পেছন থেকে শুরু করা যাক। ১৯৭১ সালে এদেশের লাখো তরুণ, বেকার যুবক, কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষ কোনো রকম অস্ত্র-শস্ত্র আর ট্রেনিং ছাড়াই ভিনদেশি একটি প্রশিক্ষিত ও আধুনিক মরণাস্ত্রে সজ্জিত হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করেছিল। স্বপ্ন ছিল দেশ যদি স্বাধীন হয়, পাঞ্জাবিরা চলে যাবে, বাংলার পূর্বাকাশে জ্বলজ্বল করে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য উঠবে। দূর হবে সব ধরনের শোষণ ও বৈষম্য। আসবে অর্থনৈতিক মুক্তি। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে এবং বেকার যুবকেরা চাকরি পাবে। যার যার ধর্ম-রীতি-নীতি পালনেও স্বাধীনতা থাকবে।
সংগত কারণে একাত্তর পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধাদের অভিপ্রায় ছিল রাষ্ট্রের সংবিধান রচিত হলে তাতে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিতের গ্যারান্টি থাকবে। অথচ সংবিধানে লেখা হলো বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাই হবে রাষ্ট্রের দর্শন। আমার মতে, শেষের স্তম্ভটিই ছিল এদেশে ইসলাম বা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করার একটি কৌশল।
১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর ‘ভারতের প্রেসক্রিপশন’ খুব সুকৌশলে এদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের সূচনা যেভাবে করা হয়েছিল, তার মধ্য দিয়ে মূলত সমাজের এক চতুর্থাংশ জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করা হয় বলে অনেকেই বলে থাকেন।
এরপর ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী আনেন। সংবিধানে সংযোজন করেন ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। শেখ মুজিবের একনায়কতান্ত্রিক অবস্থান থেকে দেশ আবার বহুদলীয় রাজনীতির ধারায় ফিরতে শুরু করে।
এখানে স্মরণ রাখা ভালো, ‘বাকশাল’ গঠনের সময় শেখ মুজিব তাঁর নিজের দল আওয়ামী লীগসহ দেশের ৬৪টি দল নিষিদ্ধ করেন। আর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামিসহ অন্যান্য ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত অন্যান্য সব দলের রাজনীতি করার বৈধতা দেন।
এসব বাস্তবতা মনে রাখলে নির্বাচনী রাজনীতিতে ধর্মীয় দলগুলো কেন পিছিয়ে, তার স্বরূপ উন্মোচন করার ক্ষেত্রে বোধ করি খানিকটা সুবিধা হবে। এখানে আমরা বিভিন্ন সংসদ নির্বাচনের ভোটের পরিসংখ্যান তুলে দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করব আমাদের দেশে ধর্মভিত্তিক যে রাজনৈতিক সংগঠনগুলো রয়েছে, অতীতে ভোটের রাজনীতিতে তারা কেমন করেছিল।
১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াত, নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফতে রাব্বানী পার্টি ও ডেমোক্রেটিক পার্টি মিলে ‘ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ’ ব্যানারে নির্বাচন করে। সেই নির্বাচনে জামায়াতের ৬ জন এমপি নির্বাচিত হন এবং এই জোট মোট কাস্টিং ভোটের ১ দশমিক ৪ শতাংশ পেয়েছিল। বলা ভালো, এটাই প্রথম ও সর্বশেষ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়া।
জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক গোলাম আজম ১৯৮০ সালে দেশে ফেরার পর থেকেই জামায়াতের প্রকাশ্য রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ ঘটে। জোটের ভবিষ্যত মিশন-ভিশন আর নেতৃত্বের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বে ১৯৮১ সালের পর থেকেই এসব দলের মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট হতে থাকে। ফলে জামায়াত বাদে অন্য ইসলামি দলগুলোর ইলেকশন পারফরমেন্স তেমন উল্লেখযোগ্য নয়।
এখানে উল্লেখ করা দরকার, বাংলাদেশে জামায়াত বাদে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে জোট হয়েছে যেমন ‘উলামা ফ্রন্ট’ বা ইসলামি ঐক্যজোট। যেখানে ১৯৯১ সালে ইসলামি ঐক্যজোট ১ টি আসন ও ০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পায়, সেখানে জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সঙ্গে জোট করে ১৮ টি আসন এবং ১২ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জামায়াত এককভাবে নির্বাচন করে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ ভোট এবং ৩টি আসন লাভ করে। অন্য কোনো ইসলামি দল কোনো আসন পায়নি। ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ১৭ টি আসন পায়। ভোট পায় ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। অন্যদিকে ইসলামী ঐক্যজোট ০ দশমিক ৬৮ শতাংশ ভোট পেয়ে ২টি আসন লাভ করে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতের ভোটের শতকরা হার ছিল ৪ দশমিক ৭ এবং আসন সংখ্যা ২টি। তা ছাড়া, ইসলামী ঐক্যজোটের ভোটের হার ছিল ০ দশমিক ১৫ শতাংশ। তাই ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ইসলামি দলগুলোর ইলেকশন ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ‘বিএনপির আনুকূল্য নিয়েই জামায়াতে ইসলামীসহ অপরাপর ইসলামি দল ‘হেফাজত, খেলাফত, তরিকত—এসব নিয়ে রাজনীতি করেছে’।
এ কথা অনস্বীকার্য, বাংলাদেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের প্রতিটিতেই ইসলামি দলগুলোর সর্বোচ্চ ভোটব্যাংক ১৬ শতাংশ হতে পারে। সংখ্যায় বলা যায়, ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার ভোট এদের আছে। অথচ এমপি হিসেবে নির্বাচিত হতে লাখের ওপর ভোট লাগে। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে দ্বিদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি সমাজে জায়গা করে নেয় আমাদের সমাজে। ফলে এখানে বিশেষ আদর্শকেন্দ্রিক দলগুলোকে টিকে থাকতে হয় কৌশল করে।
দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সব সময় ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী হওয়ায় ধর্মভিত্তিক দলগুলোর রাজনৈতিক কার্যকলাপ তাদের ক্ষমতাশীন সময়ে এক অর্থে নিষিদ্ধই ছিল। শুধু এ দলের সুসম্পর্ক ছিল চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, মাইজভান্ডারীর দল আর হেফাজতের অরাজনৈতিক অংশের সঙ্গে। অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন সেই ১৯৭২-১৯৭৬ যুগে চলে যায়। তারা তখন খুব নীরব ও গুপ্তভাবে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে থাকে।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে ইসলামি দলগুলো নির্বাচনী কৌশল সাজানো শুরু করে দিয়েছে। বিগত তিনটি নির্বাচনে যেহেতু জনগণের ভোট লাগেনি, তাই কোন দলের ভোট বেড়েছে বা কমেছে অথবা কোথায় আছে, তা বের করা বেশ জটিল।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি এখন নিষিদ্ধ। দেশে অবস্থানরত তাদের সমর্থকরা কাকে ভোট দেবে, তা-ও নিশ্চিত নয়। আসন্ন নির্বাচনে প্রতি ১০ জনের ভেতর ৪ জন ভোটার হলো তরুণ। এঁরা কাদের ওপর আস্থা রাখবেন, তা-ও বলা মুশকিল। তবে জনগণের চিন্তাভাবনায় এখন বিস্তর পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। আমাদের দেশে প্রচলিত যে দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ‘বাইনারি’, আগের মতো তা আর কাজ করছে কি? আসলে জনগণ তো এখন অনেক সচেতন। তাই এসব দিক বিবেচনায় যদি সত্যিকার অর্থে ইসলামি দলগুলোর ভেতরে কোনো ঐক্য বা নির্বাচনী সমঝোতা হয়, তাহলে তারা হয়তো ভালো ফলের আশা করতে পারে। শেষে এটি বলা যায় যে আমাদের দেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে ধর্মীয় দলগুলো পিছিয়ে থাকে তাদের নিজেদের মধ্যে মতদ্বৈততা ও অনৈক্যের কারণে।
লেখক: অধ্যাপক ও গবেষক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
‘নির্বাচনী রাজনীতিতে ধর্মীয় দলগুলো পিছিয়ে কেন’ শিরোনামটি প্রাসঙ্গিকভাবেই আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে টেনে নিয়ে যায়। তাই লেখাটি একটু পেছন থেকে শুরু করা যাক। ১৯৭১ সালে এদেশের লাখো তরুণ, বেকার যুবক, কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষ কোনো রকম অস্ত্র-শস্ত্র আর ট্রেনিং ছাড়াই ভিনদেশি একটি প্রশিক্ষিত ও আধুনিক মরণাস্ত্রে সজ্জিত হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করেছিল। স্বপ্ন ছিল দেশ যদি স্বাধীন হয়, পাঞ্জাবিরা চলে যাবে, বাংলার পূর্বাকাশে জ্বলজ্বল করে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য উঠবে। দূর হবে সব ধরনের শোষণ ও বৈষম্য। আসবে অর্থনৈতিক মুক্তি। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে এবং বেকার যুবকেরা চাকরি পাবে। যার যার ধর্ম-রীতি-নীতি পালনেও স্বাধীনতা থাকবে।
সংগত কারণে একাত্তর পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধাদের অভিপ্রায় ছিল রাষ্ট্রের সংবিধান রচিত হলে তাতে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিতের গ্যারান্টি থাকবে। অথচ সংবিধানে লেখা হলো বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাই হবে রাষ্ট্রের দর্শন। আমার মতে, শেষের স্তম্ভটিই ছিল এদেশে ইসলাম বা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করার একটি কৌশল।
১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর ‘ভারতের প্রেসক্রিপশন’ খুব সুকৌশলে এদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের সূচনা যেভাবে করা হয়েছিল, তার মধ্য দিয়ে মূলত সমাজের এক চতুর্থাংশ জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করা হয় বলে অনেকেই বলে থাকেন।
এরপর ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী আনেন। সংবিধানে সংযোজন করেন ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। শেখ মুজিবের একনায়কতান্ত্রিক অবস্থান থেকে দেশ আবার বহুদলীয় রাজনীতির ধারায় ফিরতে শুরু করে।
এখানে স্মরণ রাখা ভালো, ‘বাকশাল’ গঠনের সময় শেখ মুজিব তাঁর নিজের দল আওয়ামী লীগসহ দেশের ৬৪টি দল নিষিদ্ধ করেন। আর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামিসহ অন্যান্য ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত অন্যান্য সব দলের রাজনীতি করার বৈধতা দেন।
এসব বাস্তবতা মনে রাখলে নির্বাচনী রাজনীতিতে ধর্মীয় দলগুলো কেন পিছিয়ে, তার স্বরূপ উন্মোচন করার ক্ষেত্রে বোধ করি খানিকটা সুবিধা হবে। এখানে আমরা বিভিন্ন সংসদ নির্বাচনের ভোটের পরিসংখ্যান তুলে দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করব আমাদের দেশে ধর্মভিত্তিক যে রাজনৈতিক সংগঠনগুলো রয়েছে, অতীতে ভোটের রাজনীতিতে তারা কেমন করেছিল।
১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াত, নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফতে রাব্বানী পার্টি ও ডেমোক্রেটিক পার্টি মিলে ‘ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ’ ব্যানারে নির্বাচন করে। সেই নির্বাচনে জামায়াতের ৬ জন এমপি নির্বাচিত হন এবং এই জোট মোট কাস্টিং ভোটের ১ দশমিক ৪ শতাংশ পেয়েছিল। বলা ভালো, এটাই প্রথম ও সর্বশেষ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়া।
জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক গোলাম আজম ১৯৮০ সালে দেশে ফেরার পর থেকেই জামায়াতের প্রকাশ্য রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ ঘটে। জোটের ভবিষ্যত মিশন-ভিশন আর নেতৃত্বের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বে ১৯৮১ সালের পর থেকেই এসব দলের মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট হতে থাকে। ফলে জামায়াত বাদে অন্য ইসলামি দলগুলোর ইলেকশন পারফরমেন্স তেমন উল্লেখযোগ্য নয়।
এখানে উল্লেখ করা দরকার, বাংলাদেশে জামায়াত বাদে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে জোট হয়েছে যেমন ‘উলামা ফ্রন্ট’ বা ইসলামি ঐক্যজোট। যেখানে ১৯৯১ সালে ইসলামি ঐক্যজোট ১ টি আসন ও ০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পায়, সেখানে জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সঙ্গে জোট করে ১৮ টি আসন এবং ১২ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জামায়াত এককভাবে নির্বাচন করে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ ভোট এবং ৩টি আসন লাভ করে। অন্য কোনো ইসলামি দল কোনো আসন পায়নি। ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ১৭ টি আসন পায়। ভোট পায় ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। অন্যদিকে ইসলামী ঐক্যজোট ০ দশমিক ৬৮ শতাংশ ভোট পেয়ে ২টি আসন লাভ করে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতের ভোটের শতকরা হার ছিল ৪ দশমিক ৭ এবং আসন সংখ্যা ২টি। তা ছাড়া, ইসলামী ঐক্যজোটের ভোটের হার ছিল ০ দশমিক ১৫ শতাংশ। তাই ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ইসলামি দলগুলোর ইলেকশন ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ‘বিএনপির আনুকূল্য নিয়েই জামায়াতে ইসলামীসহ অপরাপর ইসলামি দল ‘হেফাজত, খেলাফত, তরিকত—এসব নিয়ে রাজনীতি করেছে’।
এ কথা অনস্বীকার্য, বাংলাদেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের প্রতিটিতেই ইসলামি দলগুলোর সর্বোচ্চ ভোটব্যাংক ১৬ শতাংশ হতে পারে। সংখ্যায় বলা যায়, ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার ভোট এদের আছে। অথচ এমপি হিসেবে নির্বাচিত হতে লাখের ওপর ভোট লাগে। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে দ্বিদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি সমাজে জায়গা করে নেয় আমাদের সমাজে। ফলে এখানে বিশেষ আদর্শকেন্দ্রিক দলগুলোকে টিকে থাকতে হয় কৌশল করে।
দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সব সময় ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী হওয়ায় ধর্মভিত্তিক দলগুলোর রাজনৈতিক কার্যকলাপ তাদের ক্ষমতাশীন সময়ে এক অর্থে নিষিদ্ধই ছিল। শুধু এ দলের সুসম্পর্ক ছিল চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, মাইজভান্ডারীর দল আর হেফাজতের অরাজনৈতিক অংশের সঙ্গে। অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন সেই ১৯৭২-১৯৭৬ যুগে চলে যায়। তারা তখন খুব নীরব ও গুপ্তভাবে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে থাকে।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে ইসলামি দলগুলো নির্বাচনী কৌশল সাজানো শুরু করে দিয়েছে। বিগত তিনটি নির্বাচনে যেহেতু জনগণের ভোট লাগেনি, তাই কোন দলের ভোট বেড়েছে বা কমেছে অথবা কোথায় আছে, তা বের করা বেশ জটিল।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি এখন নিষিদ্ধ। দেশে অবস্থানরত তাদের সমর্থকরা কাকে ভোট দেবে, তা-ও নিশ্চিত নয়। আসন্ন নির্বাচনে প্রতি ১০ জনের ভেতর ৪ জন ভোটার হলো তরুণ। এঁরা কাদের ওপর আস্থা রাখবেন, তা-ও বলা মুশকিল। তবে জনগণের চিন্তাভাবনায় এখন বিস্তর পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। আমাদের দেশে প্রচলিত যে দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ‘বাইনারি’, আগের মতো তা আর কাজ করছে কি? আসলে জনগণ তো এখন অনেক সচেতন। তাই এসব দিক বিবেচনায় যদি সত্যিকার অর্থে ইসলামি দলগুলোর ভেতরে কোনো ঐক্য বা নির্বাচনী সমঝোতা হয়, তাহলে তারা হয়তো ভালো ফলের আশা করতে পারে। শেষে এটি বলা যায় যে আমাদের দেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে ধর্মীয় দলগুলো পিছিয়ে থাকে তাদের নিজেদের মধ্যে মতদ্বৈততা ও অনৈক্যের কারণে।
লেখক: অধ্যাপক ও গবেষক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
২০২৫ সালে এসে একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান বাস্তবতা কী। এ প্রশ্ন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ২০২৪ সালের পরে। গত বছরের ঘটনা প্রবাহের পর বদলে গেছে এদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চালচিত্র।
১৪ ঘণ্টা আগেময়মনসিংহের বৃদ্ধ ফকির হালিম উদ্দিন অকন্দের মাথার চুল জোর করে কেটে দেওয়ার ঘটনাটি সংবাদ হিসেবে ‘ছোট’ হলেও এর অভিঘাত বড়। এ শুধু একজন মানুষের মাথার চুল নয়, এটি আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি আর মানবিক মর্যাদার ওপর চালানো আক্রমণ। চুল কেটে দেওয়া মানে শুধু দেহের ক্ষতি নয়, আত্মার অপমান।
২ দিন আগেসামনের পথ দুদিকে ভাগ হয়ে আছে। একদিকে এআই ভরসার লাঠি বা বিভ্রান্তি হয়ে দাঁড়াতে পারে, অন্যদিকে এটি আমাদের আরও গভীর, সমৃদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার দিকে নিয়ে যাবে। পার্থক্যটা নির্ভর করবে আমরা শিক্ষাদান পদ্ধতিকে কেন্দ্রে রাখছি কি না তার ওপর। এআই-এর যুগেও শিক্ষাদান পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ থাকবে কি?
৩ দিন আগে