মামিদালা জগদেশ কুমার
ছাপাখানা আবিষ্কারের বহু পরে আমরা বইকে শিক্ষার কাজে ব্যবহার শুরু করি। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক সময়ের শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে প্রজেক্টর, স্মার্টবোর্ড ও ট্যাবলেট ব্যবহার করতে শুরু করেন। এই ধারাবাহিকতায় এখন যোগ হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় শিক্ষার মান প্রযুক্তি নয় বরং শিখন/শিক্ষণ পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে। ভালো শিক্ষাদান বরাবরই নির্ভর করেছে শিক্ষকরা কীভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তার ওপর, ব্যবহৃত সরঞ্জামের ওপর নয়।
শ্রেণিকক্ষে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে কয়েক দশক ধরে করা গবেষণাগুলো আমাদের সতর্ক করেছে। শুধু সরঞ্জাম ব্যবহার করে শিক্ষার মান খুব কমই বাড়ানো যায়। এর সঙ্গে প্রয়োজন সঠিক শিক্ষণপদ্ধতি। আশার ব্যাপার হচ্ছে, শিক্ষাদানের ওপর ইংরেজি ভাষায় করা ৬৭টি গবেষণা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রযুক্তিবিহীন প্রচলিত শিক্ষাদানের তুলনায় ডিজিটাল প্রযুক্তির শিক্ষাদান অনেক বেশি ইতিবাচক প্রভাব রাখে।
তবে চীনের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষাদানের ভালো ফলাফল তখনই পাওয়া গেছে যখন প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং প্রযুক্তিকে শুধু আলাদাভাবে ব্যবহার না করে শিক্ষকের পড়ানোর পরিকল্পনার একটি অংশ করে তোলা হয়েছে।
সাম্প্রতিক আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ছাত্রছাত্রীরা সক্রিয়ভাবে শেখার চেষ্টা করতে গিয়ে (যেমন: সমস্যা সমাধান করা, অনুশীলন করা) যখন এআই টুলগুলোর সাহায্য নিয়েছে, তখনই তারা সবচেয়ে ভালো ফল পেয়েছে। এআইকে দিয়ে পড়াশোনা করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে কোনো লাভ হয় না।
অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, এআই তখনই সবচেয়ে ভালো কাজ করে যখন একজন শিক্ষক পরিকল্পনা করে ক্লাসের এমন পরিবেশ তৈরি করেন, যেখানে শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করার এবং শিক্ষকের কাছ থেকে মতামত পাওয়ার সুযোগ পায়। এর ফলে শিক্ষার্থীদের শেখার মান, আত্মবিশ্বাস এবং আনন্দ—সবকিছুই বহুগুণ বেড়ে যায়।
উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত সমীক্ষাগুলো বলছে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই মনে করেন এআই শিক্ষকদের সহায়তা করবে, প্রতিস্থাপন নয়। এআই অনেক স্মার্ট কাজ করতে পারলেও মানুষের মতো ভাবতে, নতুন কিছু তৈরি করতে বা কোনটা ঠিক ও কোনটা ভুল, তা বুঝতে পারে না। পরামর্শ, সমস্যার সমাধান ও মানসিক আশ্রয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষকের কোনো বিকল্প নেই।
সাম্প্রতিক সময়ের ভারতের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউশন অব টেকনোলজি (আইআইটি) দিল্লি এ ব্যাপারে একটি উদ্যোগ নিয়েছে। তাঁরা শিক্ষার্থীদের এআই ব্যবহার করতে নিষেধ করছে না, বরং শেখাচ্ছে কীভাবে এআই সাক্ষরতা, নৈতিক প্রশিক্ষণ এবং অ্যাসাইনমেন্টে এআই ব্যবহার করা যায়। তারা প্রযুক্তিকে গ্রহণ করেছে, কিন্তু মানবিক মূল্যবোধ এবং সততাকে সবার উপরে স্থান দিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা তখনই ভালো শেখে যখন শিক্ষাব্যবস্থা শুধু বক্তৃতানির্ভর না হয়ে সক্রিয় হয়। সক্রিয় শিক্ষণ কৌশল মানে হলো সমস্যার সমাধানে অংশগ্রহণ, আলোচনা, সহযোগিতা। এআই প্ল্যাটফর্মগুলো সক্রিয় শিক্ষণকে সমর্থন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইন্টেলিজেন্ট টিউটরিং সিস্টেমের কথা। যা শিক্ষার্থীদের ধাপে ধাপে অনুশীলন করতে শেখায় এবং নির্দিষ্ট ফিডব্যাক দেয়।
শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া বা ফিডব্যাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের শুধু উত্তর ‘ভুল’ হয়েছে বলে দেওয়া যথেষ্ট নয় । কেন ভুল হয়েছে ও কীভাবে সেটা ঠিক করা যায়, তা বুঝিয়ে দেওয়াটাই আসল শিক্ষা। যে প্রযুক্তি শুধু বিচার করে (নম্বর দেয়), তার চেয়ে সেই প্রযুক্তি অনেক বেশি শক্তিশালী যা শেখার পথে ছাত্রছাত্রীদের ‘পথপ্রদর্শক’ বা গাইড হিসেবে কাজ করে।
এআই-কে সব সমস্যার সমাধান হিসেবে কল্পনা করার লোভ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু গবেষণা আমাদের সতর্ক করে যে, স্ক্রিন-ভিত্তিক শিক্ষা গভীর বোঝাপড়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। নিউরোসায়েন্সের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১০-১২ বছর বয়সী শিশুরা স্ক্রিনের চেয়ে কাগজে কোনো বিষয়বস্তু ভালোভাবে মনে রাখতে পারে। পাতা উল্টানো ও লেখার মাধ্যমে এক ধরনের স্নায়বিক সংযোগ হয়, যা ডিজিটাল মাধ্যমে প্রায়শই হয় না। আর সবচেয়ে খারাপ দিক হলো, প্রযুক্তি মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করতে পারে। গেম-ভিত্তিক শিক্ষা নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ থাকলেও পরীক্ষায় ফলাফলে অগ্রগতি খুবই কম দেখা গেছে। এক্ষেত্রে সতর্কবার্তা হলো, কার্যকর শিক্ষার জন্য শুধু বিনোদনই যথেষ্ট নয়।
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় পরীক্ষামূলকভাবে এডচ্যাট নামে এআই চ্যাটবট ব্যবহার করে গ্রেডিং ও পাঠ পরিকল্পনা করা হয়েছে। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, এর মাধ্যমে তারা সপ্তাহে পাঁচ ঘণ্টার বেশি কাজের সময় বাঁচিয়েছেন। এই বাঁচানো সময়কে তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা ও সহায়তার মতো কাজে লাগিয়েছেন। এআই দক্ষতার মানসম্মত বিষয়বস্তু সরবরাহ করতে পারে কিন্তু শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীর সম্পর্ক, নৈতিক নির্দেশনা বা মানুষের আবেগকে প্রতিস্থাপন করতে পারে না। তাই এখানেও জোর দেওয়া হয়েছে শিক্ষকের নজরদারি ও মানবিক ছোঁয়ার ওপর। শিক্ষকের ভূমিকা কেবল তথ্য প্রদানকারী থেকে পরিবর্তিত হয়ে পথপ্রদর্শক ও পরামর্শদাতায় পরিণত হচ্ছে।
সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে এআই খুব শক্তিশালী। কিন্তু উদ্দেশ্য ছাড়া ব্যবহার করলে এই সরঞ্জামগুলো অপব্যবহার বা শেখার ক্ষতি করতে পারে।
আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে শিক্ষাদানের কেন্দ্রে আছে মানবিক প্রচেষ্টা, নৈতিকতা, প্রতিফলন এবং সৃজনশীলতা। যন্ত্র যা এখন অব্দি অনুকরণ করতে পারে না, অদূর ভবিষ্যতেও পারবে বলেও মনে হয় না।
এআই কি মৌলিকভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে বদলে দেবে কিনা তার উত্তর বেশ সূক্ষ্ম। প্রযুক্তি হয়তো আরও উৎকর্ষ সাধন করবে ও আরও আকর্ষণীয় হবে কিন্তু শিক্ষাদানের পদ্ধতির মূল নীতিগুলো একই থাকবে। সক্রিয় অংশগ্রহণ, প্রতিক্রিয়া, ধাপে ধাপে সহায়তা, প্রতিফলন ও পরামর্শদানই হলো ভালো শিক্ষার ভিত্তি।
বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যবহার করা হলে এআই এই প্রতিটি দিককে উন্নত করতে পারে। কিন্তু সুচিন্তিত শিক্ষার পরিবেশ ছাড়া এআই নিছক অলঙ্কার মাত্র। এআই শিক্ষাব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটাতে পারে এই বিশ্বাসকে আমাদের কিছুটা সংযত করতে হবে।
সামনের পথ দুদিকে ভাগ হয়ে আছে। একদিকে এআই ভরসার লাঠি বা বিভ্রান্তি হয়ে দাঁড়াতে পারে, অন্যদিকে এটি আমাদের আরও গভীর, সমৃদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার দিকে নিয়ে যাবে। পার্থক্যটা নির্ভর করবে আমরা শিক্ষাদান পদ্ধতিকে কেন্দ্রে রাখছি কি না তার ওপর। এআই-এর যুগেও শিক্ষাদান পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ থাকবে কি? গবেষণা বলছে হ্যাঁ, আর সাধারণ জ্ঞানও তাই বলে।
মামিদালা জগদেশ কুমার: ভারতের ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) প্রাক্তন উপাচার্য।
দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ।
ছাপাখানা আবিষ্কারের বহু পরে আমরা বইকে শিক্ষার কাজে ব্যবহার শুরু করি। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক সময়ের শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে প্রজেক্টর, স্মার্টবোর্ড ও ট্যাবলেট ব্যবহার করতে শুরু করেন। এই ধারাবাহিকতায় এখন যোগ হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় শিক্ষার মান প্রযুক্তি নয় বরং শিখন/শিক্ষণ পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে। ভালো শিক্ষাদান বরাবরই নির্ভর করেছে শিক্ষকরা কীভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তার ওপর, ব্যবহৃত সরঞ্জামের ওপর নয়।
শ্রেণিকক্ষে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে কয়েক দশক ধরে করা গবেষণাগুলো আমাদের সতর্ক করেছে। শুধু সরঞ্জাম ব্যবহার করে শিক্ষার মান খুব কমই বাড়ানো যায়। এর সঙ্গে প্রয়োজন সঠিক শিক্ষণপদ্ধতি। আশার ব্যাপার হচ্ছে, শিক্ষাদানের ওপর ইংরেজি ভাষায় করা ৬৭টি গবেষণা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রযুক্তিবিহীন প্রচলিত শিক্ষাদানের তুলনায় ডিজিটাল প্রযুক্তির শিক্ষাদান অনেক বেশি ইতিবাচক প্রভাব রাখে।
তবে চীনের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষাদানের ভালো ফলাফল তখনই পাওয়া গেছে যখন প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং প্রযুক্তিকে শুধু আলাদাভাবে ব্যবহার না করে শিক্ষকের পড়ানোর পরিকল্পনার একটি অংশ করে তোলা হয়েছে।
সাম্প্রতিক আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ছাত্রছাত্রীরা সক্রিয়ভাবে শেখার চেষ্টা করতে গিয়ে (যেমন: সমস্যা সমাধান করা, অনুশীলন করা) যখন এআই টুলগুলোর সাহায্য নিয়েছে, তখনই তারা সবচেয়ে ভালো ফল পেয়েছে। এআইকে দিয়ে পড়াশোনা করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে কোনো লাভ হয় না।
অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, এআই তখনই সবচেয়ে ভালো কাজ করে যখন একজন শিক্ষক পরিকল্পনা করে ক্লাসের এমন পরিবেশ তৈরি করেন, যেখানে শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করার এবং শিক্ষকের কাছ থেকে মতামত পাওয়ার সুযোগ পায়। এর ফলে শিক্ষার্থীদের শেখার মান, আত্মবিশ্বাস এবং আনন্দ—সবকিছুই বহুগুণ বেড়ে যায়।
উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত সমীক্ষাগুলো বলছে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই মনে করেন এআই শিক্ষকদের সহায়তা করবে, প্রতিস্থাপন নয়। এআই অনেক স্মার্ট কাজ করতে পারলেও মানুষের মতো ভাবতে, নতুন কিছু তৈরি করতে বা কোনটা ঠিক ও কোনটা ভুল, তা বুঝতে পারে না। পরামর্শ, সমস্যার সমাধান ও মানসিক আশ্রয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষকের কোনো বিকল্প নেই।
সাম্প্রতিক সময়ের ভারতের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউশন অব টেকনোলজি (আইআইটি) দিল্লি এ ব্যাপারে একটি উদ্যোগ নিয়েছে। তাঁরা শিক্ষার্থীদের এআই ব্যবহার করতে নিষেধ করছে না, বরং শেখাচ্ছে কীভাবে এআই সাক্ষরতা, নৈতিক প্রশিক্ষণ এবং অ্যাসাইনমেন্টে এআই ব্যবহার করা যায়। তারা প্রযুক্তিকে গ্রহণ করেছে, কিন্তু মানবিক মূল্যবোধ এবং সততাকে সবার উপরে স্থান দিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা তখনই ভালো শেখে যখন শিক্ষাব্যবস্থা শুধু বক্তৃতানির্ভর না হয়ে সক্রিয় হয়। সক্রিয় শিক্ষণ কৌশল মানে হলো সমস্যার সমাধানে অংশগ্রহণ, আলোচনা, সহযোগিতা। এআই প্ল্যাটফর্মগুলো সক্রিয় শিক্ষণকে সমর্থন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইন্টেলিজেন্ট টিউটরিং সিস্টেমের কথা। যা শিক্ষার্থীদের ধাপে ধাপে অনুশীলন করতে শেখায় এবং নির্দিষ্ট ফিডব্যাক দেয়।
শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া বা ফিডব্যাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের শুধু উত্তর ‘ভুল’ হয়েছে বলে দেওয়া যথেষ্ট নয় । কেন ভুল হয়েছে ও কীভাবে সেটা ঠিক করা যায়, তা বুঝিয়ে দেওয়াটাই আসল শিক্ষা। যে প্রযুক্তি শুধু বিচার করে (নম্বর দেয়), তার চেয়ে সেই প্রযুক্তি অনেক বেশি শক্তিশালী যা শেখার পথে ছাত্রছাত্রীদের ‘পথপ্রদর্শক’ বা গাইড হিসেবে কাজ করে।
এআই-কে সব সমস্যার সমাধান হিসেবে কল্পনা করার লোভ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু গবেষণা আমাদের সতর্ক করে যে, স্ক্রিন-ভিত্তিক শিক্ষা গভীর বোঝাপড়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। নিউরোসায়েন্সের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১০-১২ বছর বয়সী শিশুরা স্ক্রিনের চেয়ে কাগজে কোনো বিষয়বস্তু ভালোভাবে মনে রাখতে পারে। পাতা উল্টানো ও লেখার মাধ্যমে এক ধরনের স্নায়বিক সংযোগ হয়, যা ডিজিটাল মাধ্যমে প্রায়শই হয় না। আর সবচেয়ে খারাপ দিক হলো, প্রযুক্তি মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করতে পারে। গেম-ভিত্তিক শিক্ষা নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ থাকলেও পরীক্ষায় ফলাফলে অগ্রগতি খুবই কম দেখা গেছে। এক্ষেত্রে সতর্কবার্তা হলো, কার্যকর শিক্ষার জন্য শুধু বিনোদনই যথেষ্ট নয়।
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় পরীক্ষামূলকভাবে এডচ্যাট নামে এআই চ্যাটবট ব্যবহার করে গ্রেডিং ও পাঠ পরিকল্পনা করা হয়েছে। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, এর মাধ্যমে তারা সপ্তাহে পাঁচ ঘণ্টার বেশি কাজের সময় বাঁচিয়েছেন। এই বাঁচানো সময়কে তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা ও সহায়তার মতো কাজে লাগিয়েছেন। এআই দক্ষতার মানসম্মত বিষয়বস্তু সরবরাহ করতে পারে কিন্তু শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীর সম্পর্ক, নৈতিক নির্দেশনা বা মানুষের আবেগকে প্রতিস্থাপন করতে পারে না। তাই এখানেও জোর দেওয়া হয়েছে শিক্ষকের নজরদারি ও মানবিক ছোঁয়ার ওপর। শিক্ষকের ভূমিকা কেবল তথ্য প্রদানকারী থেকে পরিবর্তিত হয়ে পথপ্রদর্শক ও পরামর্শদাতায় পরিণত হচ্ছে।
সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে এআই খুব শক্তিশালী। কিন্তু উদ্দেশ্য ছাড়া ব্যবহার করলে এই সরঞ্জামগুলো অপব্যবহার বা শেখার ক্ষতি করতে পারে।
আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে শিক্ষাদানের কেন্দ্রে আছে মানবিক প্রচেষ্টা, নৈতিকতা, প্রতিফলন এবং সৃজনশীলতা। যন্ত্র যা এখন অব্দি অনুকরণ করতে পারে না, অদূর ভবিষ্যতেও পারবে বলেও মনে হয় না।
এআই কি মৌলিকভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে বদলে দেবে কিনা তার উত্তর বেশ সূক্ষ্ম। প্রযুক্তি হয়তো আরও উৎকর্ষ সাধন করবে ও আরও আকর্ষণীয় হবে কিন্তু শিক্ষাদানের পদ্ধতির মূল নীতিগুলো একই থাকবে। সক্রিয় অংশগ্রহণ, প্রতিক্রিয়া, ধাপে ধাপে সহায়তা, প্রতিফলন ও পরামর্শদানই হলো ভালো শিক্ষার ভিত্তি।
বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যবহার করা হলে এআই এই প্রতিটি দিককে উন্নত করতে পারে। কিন্তু সুচিন্তিত শিক্ষার পরিবেশ ছাড়া এআই নিছক অলঙ্কার মাত্র। এআই শিক্ষাব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটাতে পারে এই বিশ্বাসকে আমাদের কিছুটা সংযত করতে হবে।
সামনের পথ দুদিকে ভাগ হয়ে আছে। একদিকে এআই ভরসার লাঠি বা বিভ্রান্তি হয়ে দাঁড়াতে পারে, অন্যদিকে এটি আমাদের আরও গভীর, সমৃদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার দিকে নিয়ে যাবে। পার্থক্যটা নির্ভর করবে আমরা শিক্ষাদান পদ্ধতিকে কেন্দ্রে রাখছি কি না তার ওপর। এআই-এর যুগেও শিক্ষাদান পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ থাকবে কি? গবেষণা বলছে হ্যাঁ, আর সাধারণ জ্ঞানও তাই বলে।
মামিদালা জগদেশ কুমার: ভারতের ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) প্রাক্তন উপাচার্য।
দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ।
পাহাড়ে ধর্ষণ কখনোই কমবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না পাহাড়ি জনপদের মানুষকে আমরা অপরায়ণ প্রক্রিয়ার একমুখী চশমা দিয়ে দেখা থেকে বিরত হবো। বিশেষভাবে শুধু পাহাড় নয়, সারা বাংলাদেশেই ধর্ষণ কমবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা নারী ও শিশুবান্ধব সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারব।
১৮ ঘণ্টা আগেবন্ধুর সঙ্গে টুকটাক কথা হচ্ছিলো মেসেঞ্জারে। সকাল সকাল সে একটি আইনি কাজ সারতে যাচ্ছিল শহরের আরেক প্রান্তে। বললাম, পূর্ব নির্ধারিত কাজ না থাকলে আমি সঙ্গে যেতে পারতাম। সে জবাব দিল, স্বামী সঙ্গে আছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, ওরে শাবানা!
১ দিন আগেশুধু বোমা পড়া বন্ধ হলেই গাজায় যুদ্ধ থেমে যাবে না। এই যুদ্ধ আমাদের ভেতরে ভেতরে আঘাত করতে থাকবে। রেখে যাবে এমন ক্ষত, যা কোনো হতাহতের তালিকায় লেখা থাকে না, উঠে আসে না খবরের শিরোনামেও।
২ দিন আগেফেসবুক স্ক্রল করতে গিয়ে দুটিতে ছবিতে চোখ আটকে গেল। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, মার্কিন প্রেসিডেন্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেফ তাইয়্যেপ এরদোয়ান, কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান এক সঙ্গে এক টেবি
২ দিন আগে