পাবনায় সার নিয়ে কারসাজি
পাবনায় প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও ভর্তুকি মূল্যের বেশি দাম রাখছেন দোকানীরা। এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হচ্ছে কৃষকদের। এমন একাধিক বাগবিতণ্ডার রেকর্ডিং ঢাকা স্ট্রিমের হাতে আছে। কিন্তু কৃষি বিভাগ বলছে, বাজারে সারের কোনো সংকট নেই।
স্ট্রিম সংবাদদাতা
পাবনার বিল ও চরাঞ্চলে শুরু হয়েছে পেঁয়াজ ও আগাম শীতকালীন সবজির আবাদ। জমি তৈরির জন্য প্রয়োজন হচ্ছে বিভিন্ন রাসায়নিক (নন-ইউরিয়া) সার। এতে হঠাৎ বেড়েছে চাহিদা। কিন্তু সরকার নির্ধারিত ভর্তুকি মূল্যে সার পাওয়া যাচ্ছে না, অভিযোগ কৃষকের। বাড়তি দামে বিক্রির দায় একে-অপরের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা। অথচ কৃষি বিভাগ বলছে—‘বাজারে সারের কোনো সংকট নেই।’
তবে ‘কৃত্রিম সংকট’ সৃষ্টি করে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির অভিযোগ করছেন কৃষকেরা। রবি মৌসুম শুরুর আগেই সারের এমন কারসাজিতে বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) তাঁরা বিক্ষোভও করেছেন। কিন্তু কৃষি বিভাগ দাবি করছে, বাড়তি দামের অভিযোগ এখনো আসেনি।
কৃষি বিভাগের দাবির সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না। প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও ভর্তুকি মূল্যে থেকে অতিরিক্ত দাম রাখছেন খুচরা বিক্রেতারা। এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডাও হচ্ছে। এমন একাধিক বাগবিতণ্ডার রেকর্ড ঢাকা স্ট্রিমের হাতে এসেছে। এতে বেশি মূল্য আদায়ের বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে।
কী বলছে কৃষি বিভাগের তথ্য
কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ‘কন্দ’ বা মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ শুরু হয়। এ সময় নন-ইউরিয়া, বিশেষ করে ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট) সারের চাহিদা বাড়ে। এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষের জন্য প্রয়োজন হয় প্রায় ৩০ কেজি টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) ও ডিএপি সার। যা জমি তৈরির জন্য শেষ চাষের সময় মাটিতে মিশিয়ে দিতে হয়। এ ছাড়া বেগুনসহ অন্যান্য সবজির ক্ষেত্রে বিঘা প্রতি দরকার হয় ১০ থেকে ১৫ কেজি সার।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, পাবনায় রবি মৌসুমে প্রায় ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতি বছর গড়ে সাড়ে ৫ লাখ টন শীতকালীন সবজি উৎপাদন হয়। এ জন্য সরকার নির্ধারিত ভর্তুকি মূল্যে ডিএপি সারের কেজি প্রতি দর ২১ টাকা।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) রাফিউল ইসলাম স্ট্রিমকে জানান, চলতি বছর ১ দশমিক ৪২ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য ৮ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে জেলায় প্রতি বছর রবি ফসল চাষের সময় কি পরিমাণ রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয়, তা জানাতে পারেনি কৃষি বিভাগ। তবে তাদের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মজুদ আছে পাবনায় ১৮৫ মেট্রিক টন টিএসপি, ৪৪০ মেট্রিক টন আমদানিকৃত ডিএপি ও ৫৮৯ মেট্রিক টন সার। যা চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত।
বাজার ঘুরে যা মিলল
কৃষি বিভাগের তথ্যে সারের সংকট নেই, তবে বাজারে দেখা গেছে চিত্র ভিন্ন। সরকার নির্ধারিত ভর্তুকি মূল্যে ডিএপি সারের কেজি প্রতি দর ২১ টাকা হলেও বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকা দরে।
বুধবার জেলার সুজানগর বাজার, চরতারাপুর, দুবলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা ও পাইকারি প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাড়তি দাম ছাড়া মিলছে না সার। বাজারে থেকে উধাও বাংলা (পতেঙ্গা) ডিএপি। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) ডিএপি সার পাওয়া গেলেও কিনতে হচ্ছে বস্তা প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি দামে।
তবে কৃষকেরা জানান, ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা ডিএপি সার ৬০০ টাকা বেড়ে এখন ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে বিএডিসির এক বস্তা ডিএপি সার ৪৫০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৫০০ টাকায়, এমওপি ৩৫০-৪০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৭৫০ টাকায় এবং টিএসপি ৬৫০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
অভিযোগের সত্যতা মিলল বাজারে
কৃষকের অভিযোগের সত্যতা মিলল সারের দোকনেও। বুধবার সুজানগর বাজারে কয়েকটি খুচরা দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সরকার নির্ধারিত ভর্তুকি মূল্যে প্রতি কেজি ২১ টাকা হলেও, তা বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকা দরে। খুচরা দোকানী বাড়তি মূল্যের কথা স্বীকারও করলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানী বলেন, সারের দাম বেশি নিচ্ছে ডিলারদের সিন্ডিকেট, এ কারণে তিনি বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
সুজানগর বাজারের সার ডিলার বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজে গিয়ে কথা হয় মো. মিঠুন বিশ্বাসের সঙ্গে। সারের সংকট নেই জানালেও বাড়তি দাম নেওয়ার কথা অস্বীকার করলেন মিঠুন। তিনি বলেন, ‘পর্যাপ্ত মজুদ আছে, বাড়তি দাম নেওয়ার কোনো ঘটনাই ঘটে নি।’ তবে সার কিনতে আসা একাধিক কৃষক দোকানের সামনে থেকে সরে এসে স্ট্রিমকে জানান, তাঁদের কাছ থেকে বাড়তি দাম নেওয়া হয়েছে। দোকানীর সঙ্গে তাঁদের কথোপকথনের একাধিক রেকর্ড শোনান।
এর একটি রেকর্ডে বলতে শোনা যায়, এক কৃষক বাংলা (পতেঙ্গা) ডিএপি সারের দাম জানতে চাওয়ায় দোকানী এক বস্তার মূল্য বলছেন, একুশ শ পঞ্চাশ (২,১৫০) টাকা। তিনি স্বীকার করেন, এক মাস আগেও এর দাম কম ছিল ১ হাজার ৭০০ টাকা। আর নতুন আমাদানি করা সার ঘাটে (সুজানগর নদীবন্দর) আছে। তবে দাবি করেন, তিনি দাম বাড়াননি, সার কিনতে হয় তাঁর।
আরেকটি রেকর্ডে দোকানী কৃষককে বলছেন, বাংলা (পতেঙ্গা) ডিএপি সারের কেজি ৪৫ টাকা। এতে ৫০ কেজির এক বস্তার দাম দাঁড়ায় ২ হাজার ২৫০ টাকা। আর বিএডিসির সার কেজি ২৮ টাকা। এতে বস্তার মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ৪০০ টাকা। এ সময়, সারের দাম আরও বাড়বে বলে কৃষকদের জানাচ্ছেন দোকানী। এর অযুহাত হিসেবে তিনি বলছেন, ‘সার নাই, সরকারকে আনতে পারা লাগে না! সামনে দাম আরও বাড়বিনি। সব সারের দাম আপ-ডাউন করে, তার মধ্যে বাংলা (ড্যাব) সার সেরা। আমরা কোনো সার আমদানি করি না। সার সব সরকারের। একটা সিংগেল দানা সারও প্রাইভেটে নাই।’ মাসখানেক ওই সার ১ হাজার ৮০০ টাকা বস্তায় বিক্রি হয়েছে বলে তিনি জানান।
রাস্তায় নামলেন কৃষকেরা
ডিলারেরা কারসাজি করে নানা অজুহাতে বাড়িয়ে দিয়েছে দাম। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। কৃষি বিভাগ ও প্রশাসনের কর্তাদের জানিয়েও প্রতিকার না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন চাষীরা। বুধবার সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউপির বাহিরচরে দুই ঘণ্টার প্রতীকী কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা। রাস্তায় কাস্তে কোদাল ট্রাক্টরসহ কৃষি উপকরণ ফেলে রেখে এ সময় তাঁরা কৃষি উৎপাদন খরচ কমাতে, উপকরণের দাম কমাতে শ্লোগান দেন।
চরতারাপুর গ্রামের কৃষক মো. বাপ্পী বলেন, এখন আগাম পেঁয়াজ রোপণের মৌসুম শুরু হচ্ছে। এতে ডিএপি সারের চাহিদা অনেক বেড়েছে। এই সুযোগে সিন্ডিকেট করে সারের সংকট দেখিয়ে দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে। ‘তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করার জন্য জমি প্রস্তুত করতে সারের দাম নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’ বেশি দামের কারণে এ বছর জমি প্রস্তুত করতে পারছেন না বলেও জানান তিনি।
সারের বাড়তি দামের কারণে প্রতি বিঘা জমি প্রস্তুত করতে অতিরিক্ত দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা খরচ হচ্ছে জানিয়ে কৃষক মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘এভাবে যদি প্রস্তুতি খরচ বাড়ে, তাহলে পুরো উৎপাদন খরচই বেড়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘খুচরা দোকানে গেলে বলে ডিলারেরা বেশি দাম নিচ্ছে, আর ডিলারদের কাছে গেলে বলে সার নেই। এমনিতেই সার-কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের দাম বেড়েছে, ফসলের দামের সাথে সমন্বয় করে টিকে থাকাই কঠিন। এ কথা সুজানগর কৃষি অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।’
কৃষক সংগঠক ও লেখক নাহিদ হাসান জানান, কয়দিন আগে কুড়িগ্রামেও সার নিয়ে কৃষকেরা সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করেছেন। অতীতে সারের দাবিতে কৃষকেরা গুলিও খেয়েছেন।
কী বলছেন কৃষক নেতা ও কর্তৃপক্ষ
রবি মৌসুমে ভর্তুকির সার সংকটের অজুহাত দেখিয়ে প্রকাশ্যেই বেশি দাম নেওয়া হলেও কর্তৃপক্ষ কখনও তা স্বীকার করতে চায় না বলে অভিযোগ করেন কৃষক ক্ষেত মজুর সমিতির পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব। তিনি বলেন, ‘সার ডিলারেরা কৃষক স্বার্থ প্রাধান্য দেন না। অনেক ডিলারের দোকানই নেই, তাঁরা ডিও নিয়ে ভর্তুকির সার তোলার আগেই কালোবাজারে বিক্রি করে দেন। বুর্জোয়া রাষ্ট্র ব্যবস্থায় তাঁরা সব সরকারের আমলেই বহাল তবিয়তে ছিল, এখনও আছে। এর একটা বিহিত হওয়া প্রয়োজন।’
সার নিয়ে খুচরা বিক্রেতা পর্যায়েই মূলত কেলেঙ্কারিটা ঘটে মনে করেন কৃষক নেতা ও লেখক নাহিদ হাসান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উপজেলা কৃষি অফিস থেকে মাইকিং করে জনগণকে অবহিত করলেই হয়, কোন সারের দাম কত। সেই সঙ্গে যদি সত্যই সারের সংকট না থাকে, তাহলে কোনো ডিলার বেশি দাম নিলেই তাঁর সম্পর্কে অভিযোগের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হলেই কেলেঙ্কারিটা ঘটবে না।’
বিকল্প উপায় হিসেবে নাহিদ হাসান বলেন, ‘গরু ও মোষের মূত্রের সঙ্গে নয় গুণ পানি মেশালেই ইউরিয়া সার পাওয়া যায়। কীভাবে প্রাকৃতিকভাবেই অন্যান্য সারও মেলে, এই জ্ঞানটাও উপ-সহকারী কৃষি কর্তারা কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারেন।’
সারের অধিক মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক জানান, এমন অভিযোগ এলে তাঁরা ব্যবস্থা নেন। তিনি বলেন, ‘পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সারের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। যখনই আমরা মূল্যবৃদ্ধির তথ্য পাই, তখনই অভিযান পরিচালনা করা হয়। কারসাজির প্রমাণ পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পাবনার বিল ও চরাঞ্চলে শুরু হয়েছে পেঁয়াজ ও আগাম শীতকালীন সবজির আবাদ। জমি তৈরির জন্য প্রয়োজন হচ্ছে বিভিন্ন রাসায়নিক (নন-ইউরিয়া) সার। এতে হঠাৎ বেড়েছে চাহিদা। কিন্তু সরকার নির্ধারিত ভর্তুকি মূল্যে সার পাওয়া যাচ্ছে না, অভিযোগ কৃষকের। বাড়তি দামে বিক্রির দায় একে-অপরের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা। অথচ কৃষি বিভাগ বলছে—‘বাজারে সারের কোনো সংকট নেই।’
তবে ‘কৃত্রিম সংকট’ সৃষ্টি করে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির অভিযোগ করছেন কৃষকেরা। রবি মৌসুম শুরুর আগেই সারের এমন কারসাজিতে বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) তাঁরা বিক্ষোভও করেছেন। কিন্তু কৃষি বিভাগ দাবি করছে, বাড়তি দামের অভিযোগ এখনো আসেনি।
কৃষি বিভাগের দাবির সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না। প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও ভর্তুকি মূল্যে থেকে অতিরিক্ত দাম রাখছেন খুচরা বিক্রেতারা। এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডাও হচ্ছে। এমন একাধিক বাগবিতণ্ডার রেকর্ড ঢাকা স্ট্রিমের হাতে এসেছে। এতে বেশি মূল্য আদায়ের বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে।
কী বলছে কৃষি বিভাগের তথ্য
কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ‘কন্দ’ বা মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ শুরু হয়। এ সময় নন-ইউরিয়া, বিশেষ করে ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট) সারের চাহিদা বাড়ে। এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষের জন্য প্রয়োজন হয় প্রায় ৩০ কেজি টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) ও ডিএপি সার। যা জমি তৈরির জন্য শেষ চাষের সময় মাটিতে মিশিয়ে দিতে হয়। এ ছাড়া বেগুনসহ অন্যান্য সবজির ক্ষেত্রে বিঘা প্রতি দরকার হয় ১০ থেকে ১৫ কেজি সার।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, পাবনায় রবি মৌসুমে প্রায় ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতি বছর গড়ে সাড়ে ৫ লাখ টন শীতকালীন সবজি উৎপাদন হয়। এ জন্য সরকার নির্ধারিত ভর্তুকি মূল্যে ডিএপি সারের কেজি প্রতি দর ২১ টাকা।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) রাফিউল ইসলাম স্ট্রিমকে জানান, চলতি বছর ১ দশমিক ৪২ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য ৮ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে জেলায় প্রতি বছর রবি ফসল চাষের সময় কি পরিমাণ রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয়, তা জানাতে পারেনি কৃষি বিভাগ। তবে তাদের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মজুদ আছে পাবনায় ১৮৫ মেট্রিক টন টিএসপি, ৪৪০ মেট্রিক টন আমদানিকৃত ডিএপি ও ৫৮৯ মেট্রিক টন সার। যা চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত।
বাজার ঘুরে যা মিলল
কৃষি বিভাগের তথ্যে সারের সংকট নেই, তবে বাজারে দেখা গেছে চিত্র ভিন্ন। সরকার নির্ধারিত ভর্তুকি মূল্যে ডিএপি সারের কেজি প্রতি দর ২১ টাকা হলেও বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকা দরে।
বুধবার জেলার সুজানগর বাজার, চরতারাপুর, দুবলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা ও পাইকারি প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাড়তি দাম ছাড়া মিলছে না সার। বাজারে থেকে উধাও বাংলা (পতেঙ্গা) ডিএপি। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) ডিএপি সার পাওয়া গেলেও কিনতে হচ্ছে বস্তা প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি দামে।
তবে কৃষকেরা জানান, ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা ডিএপি সার ৬০০ টাকা বেড়ে এখন ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে বিএডিসির এক বস্তা ডিএপি সার ৪৫০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৫০০ টাকায়, এমওপি ৩৫০-৪০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৭৫০ টাকায় এবং টিএসপি ৬৫০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
অভিযোগের সত্যতা মিলল বাজারে
কৃষকের অভিযোগের সত্যতা মিলল সারের দোকনেও। বুধবার সুজানগর বাজারে কয়েকটি খুচরা দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সরকার নির্ধারিত ভর্তুকি মূল্যে প্রতি কেজি ২১ টাকা হলেও, তা বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকা দরে। খুচরা দোকানী বাড়তি মূল্যের কথা স্বীকারও করলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানী বলেন, সারের দাম বেশি নিচ্ছে ডিলারদের সিন্ডিকেট, এ কারণে তিনি বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
সুজানগর বাজারের সার ডিলার বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজে গিয়ে কথা হয় মো. মিঠুন বিশ্বাসের সঙ্গে। সারের সংকট নেই জানালেও বাড়তি দাম নেওয়ার কথা অস্বীকার করলেন মিঠুন। তিনি বলেন, ‘পর্যাপ্ত মজুদ আছে, বাড়তি দাম নেওয়ার কোনো ঘটনাই ঘটে নি।’ তবে সার কিনতে আসা একাধিক কৃষক দোকানের সামনে থেকে সরে এসে স্ট্রিমকে জানান, তাঁদের কাছ থেকে বাড়তি দাম নেওয়া হয়েছে। দোকানীর সঙ্গে তাঁদের কথোপকথনের একাধিক রেকর্ড শোনান।
এর একটি রেকর্ডে বলতে শোনা যায়, এক কৃষক বাংলা (পতেঙ্গা) ডিএপি সারের দাম জানতে চাওয়ায় দোকানী এক বস্তার মূল্য বলছেন, একুশ শ পঞ্চাশ (২,১৫০) টাকা। তিনি স্বীকার করেন, এক মাস আগেও এর দাম কম ছিল ১ হাজার ৭০০ টাকা। আর নতুন আমাদানি করা সার ঘাটে (সুজানগর নদীবন্দর) আছে। তবে দাবি করেন, তিনি দাম বাড়াননি, সার কিনতে হয় তাঁর।
আরেকটি রেকর্ডে দোকানী কৃষককে বলছেন, বাংলা (পতেঙ্গা) ডিএপি সারের কেজি ৪৫ টাকা। এতে ৫০ কেজির এক বস্তার দাম দাঁড়ায় ২ হাজার ২৫০ টাকা। আর বিএডিসির সার কেজি ২৮ টাকা। এতে বস্তার মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ৪০০ টাকা। এ সময়, সারের দাম আরও বাড়বে বলে কৃষকদের জানাচ্ছেন দোকানী। এর অযুহাত হিসেবে তিনি বলছেন, ‘সার নাই, সরকারকে আনতে পারা লাগে না! সামনে দাম আরও বাড়বিনি। সব সারের দাম আপ-ডাউন করে, তার মধ্যে বাংলা (ড্যাব) সার সেরা। আমরা কোনো সার আমদানি করি না। সার সব সরকারের। একটা সিংগেল দানা সারও প্রাইভেটে নাই।’ মাসখানেক ওই সার ১ হাজার ৮০০ টাকা বস্তায় বিক্রি হয়েছে বলে তিনি জানান।
রাস্তায় নামলেন কৃষকেরা
ডিলারেরা কারসাজি করে নানা অজুহাতে বাড়িয়ে দিয়েছে দাম। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। কৃষি বিভাগ ও প্রশাসনের কর্তাদের জানিয়েও প্রতিকার না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন চাষীরা। বুধবার সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউপির বাহিরচরে দুই ঘণ্টার প্রতীকী কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা। রাস্তায় কাস্তে কোদাল ট্রাক্টরসহ কৃষি উপকরণ ফেলে রেখে এ সময় তাঁরা কৃষি উৎপাদন খরচ কমাতে, উপকরণের দাম কমাতে শ্লোগান দেন।
চরতারাপুর গ্রামের কৃষক মো. বাপ্পী বলেন, এখন আগাম পেঁয়াজ রোপণের মৌসুম শুরু হচ্ছে। এতে ডিএপি সারের চাহিদা অনেক বেড়েছে। এই সুযোগে সিন্ডিকেট করে সারের সংকট দেখিয়ে দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে। ‘তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করার জন্য জমি প্রস্তুত করতে সারের দাম নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’ বেশি দামের কারণে এ বছর জমি প্রস্তুত করতে পারছেন না বলেও জানান তিনি।
সারের বাড়তি দামের কারণে প্রতি বিঘা জমি প্রস্তুত করতে অতিরিক্ত দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা খরচ হচ্ছে জানিয়ে কৃষক মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘এভাবে যদি প্রস্তুতি খরচ বাড়ে, তাহলে পুরো উৎপাদন খরচই বেড়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘খুচরা দোকানে গেলে বলে ডিলারেরা বেশি দাম নিচ্ছে, আর ডিলারদের কাছে গেলে বলে সার নেই। এমনিতেই সার-কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের দাম বেড়েছে, ফসলের দামের সাথে সমন্বয় করে টিকে থাকাই কঠিন। এ কথা সুজানগর কৃষি অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।’
কৃষক সংগঠক ও লেখক নাহিদ হাসান জানান, কয়দিন আগে কুড়িগ্রামেও সার নিয়ে কৃষকেরা সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করেছেন। অতীতে সারের দাবিতে কৃষকেরা গুলিও খেয়েছেন।
কী বলছেন কৃষক নেতা ও কর্তৃপক্ষ
রবি মৌসুমে ভর্তুকির সার সংকটের অজুহাত দেখিয়ে প্রকাশ্যেই বেশি দাম নেওয়া হলেও কর্তৃপক্ষ কখনও তা স্বীকার করতে চায় না বলে অভিযোগ করেন কৃষক ক্ষেত মজুর সমিতির পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব। তিনি বলেন, ‘সার ডিলারেরা কৃষক স্বার্থ প্রাধান্য দেন না। অনেক ডিলারের দোকানই নেই, তাঁরা ডিও নিয়ে ভর্তুকির সার তোলার আগেই কালোবাজারে বিক্রি করে দেন। বুর্জোয়া রাষ্ট্র ব্যবস্থায় তাঁরা সব সরকারের আমলেই বহাল তবিয়তে ছিল, এখনও আছে। এর একটা বিহিত হওয়া প্রয়োজন।’
সার নিয়ে খুচরা বিক্রেতা পর্যায়েই মূলত কেলেঙ্কারিটা ঘটে মনে করেন কৃষক নেতা ও লেখক নাহিদ হাসান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উপজেলা কৃষি অফিস থেকে মাইকিং করে জনগণকে অবহিত করলেই হয়, কোন সারের দাম কত। সেই সঙ্গে যদি সত্যই সারের সংকট না থাকে, তাহলে কোনো ডিলার বেশি দাম নিলেই তাঁর সম্পর্কে অভিযোগের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হলেই কেলেঙ্কারিটা ঘটবে না।’
বিকল্প উপায় হিসেবে নাহিদ হাসান বলেন, ‘গরু ও মোষের মূত্রের সঙ্গে নয় গুণ পানি মেশালেই ইউরিয়া সার পাওয়া যায়। কীভাবে প্রাকৃতিকভাবেই অন্যান্য সারও মেলে, এই জ্ঞানটাও উপ-সহকারী কৃষি কর্তারা কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারেন।’
সারের অধিক মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক জানান, এমন অভিযোগ এলে তাঁরা ব্যবস্থা নেন। তিনি বলেন, ‘পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সারের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। যখনই আমরা মূল্যবৃদ্ধির তথ্য পাই, তখনই অভিযান পরিচালনা করা হয়। কারসাজির প্রমাণ পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রাথমিক স্তরের বই মুদ্রণ ও বিতরণ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বিগত বছরগুলোতে মুদ্রণের নানা অনিয়মের কথা জানিয়ে বই ছাপাতে চায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
৫ ঘণ্টা আগেরাজধানীর পোস্তগোলা মহাশ্মশানে লাশ সৎকারের কাজ করেন লিটন সাধু। পাশাপাশি সদরঘাট এলাকায় ফলও বিক্রি করেন তিনি। তবে আধ্যাত্মিক ভাবনা থেকে দীর্ঘদিন ধরেই চুল–দাড়ি লম্বা রাখেন তিনি। দুই হাতে ভর্তি থাকে ধাতব বালা। ব্যতিক্রমী বেশভূষার কারণে স্থানীদের কাছে পরিচিত ছিলেন তিনি।
১ দিন আগেক্ষমতায় যাওয়ার পরে অনেক শাসকই ‘লেখক’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। এমন নজির আমাদের দেশেও আছে। সাবেক সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮৩ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর ‘কবি’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তখন দেশের সরকারি সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় বিশেষভাবে ছাপা হয়েছিল তাঁর কবিতা।
৩ দিন আগেআওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করেছিলেন, মায়ের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারসূত্রে জমিটির মালিকানা পাওয়ার বিষয়টি শেখ হাসিনা জানতে পারেন ২০০৭ সালে। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়। তবে স্ট্রিমের অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, ১৯৯৪ সালেই এর পূর্ব পাশে প্রায় ১ বিঘা জমি কিনেছিলেন শেখ হাসিনা।
৬ দিন আগে