স্ট্রিম ডেস্ক
খাগড়াছড়িতে মারমা এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে টানা ছয় দিন (বুধবার থেকে সোমবার) ধরে উত্তেজনা চলছে। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হওয়া প্রতিবাদ বিক্ষোভ রোববারে (২৮ সেপ্টেম্বর) এসে সংঘর্ষে রূপ নেয়। সেই সংঘর্ষে গুলিতে তিনজন নিহত এবং সেনা-পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। এতে জেলা শহর ও আশপাশের এলাকায় জনজীবন প্রায় অচল হয়ে পড়ে।
এদিকে, ১৪৪ ধারা জারির ফলে দোকানপাট বন্ধ, যানবাহন চলাচল সীমিত এবং মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। গুইমারা বাজারে অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষের ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
অন্যদিকে, ফেসবুকভিত্তিক সংগঠন ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’ আট দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও, সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে তাদের ‘মিডিয়া সেল’ থেকে নতুন এক পোস্টে আহতদের চিকিৎসা ও নিহতদের সৎকারে যেন বাধা না পড়ে সেজন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবরোধ শিথিল করার কথা জানানো হয়। তবে জেলার অন্য সড়কগুলোতে অবরোধ বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
সব মিলিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তায় সাজেক থেকে আটকে থাকা ৫১৮ পর্যটককে ফিরিয়ে আনার কাজও চলছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে। রাত ৯টার দিকে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে মামরা এক স্কুলছাত্রী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ ওঠে। রাত ১১টার দিকে স্বজনরা তাকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা মামলা করলে পুলিশ শয়ন শীল (২১) নামের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে এবং আদালত তাকে ছয় দিনের রিমান্ডে পাঠায়। পরদিন বুধবার থেকেই ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’ সংগঠন ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করে। তাদের ডাকে বৃহস্পতিবার অর্ধদিবস সড়ক অবরোধ পালিত হয়। আর শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় নারী নিপীড়নবিরোধী সমাবেশ। যদিও সেদিন আর কোনো কর্মসূচি ছিল না, তবে শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আবারও অবরোধের ডাক দেওয়া হয়।
এদিন সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে অবরোধকারীদের সঙ্গে স্থানীয় একটি পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে, যাতে চারজন আহত হন বলে দাবি করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিলেও বিকেল ৪টার দিকে শহরের মহাজনপাড়া এলাকায় নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়। মহাজনপাড়া, নারকেলবাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সদর এলাকার চারটি স্থানে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার এ ঘটনা ঘটে। ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন শনিবার দুপুর ২টার পর থেকে সদর উপজেলা, পৌর এলাকা এবং গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি করে।
‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ডাকে তিন পার্বত্য জেলায় অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধ ঘোষণা করা হয়েছিল। অবরোধ প্রথম দিনে সোমবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম ও বান্দরবানের সঙ্গে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও, অবরোধ শিথিলের পর দুপুর থেকে তা পুনরায় সচল হয়। তবে খাগড়াছড়ির সঙ্গে যোগাযোগ এখনও বন্ধ রয়েছে।
জানা গেছে, রাঙামাটি জেলা শহরে সোমবার সকালে একমাত্র অভ্যন্তরীণ যানবাহন হিসেবে সিএনজি অটোরিকশাগুলো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছিল। চট্টগ্রাম সড়কে সিএনজি অটোরিকশা সকাল থেকে চলাচল করতে দেখা গেছে। দুপুরের দিকে বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাক ও জরুরি পরিবহনও চলাচল শুরু করে।
চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মোটর মালিক সমিতির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম শাকিল বলেন, ‘রোববার রাতে আমরা নিরাপত্তার কারণে বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস পেয়েছি। তাই দুপুরের মধ্যে চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলার সঙ্গে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। তবে খাগড়াছড়ির সঙ্গে যোগাযোগ এখনও বন্ধ রয়েছে।’
খাগড়াছড়ি সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাঙামাটি জেলা সমন্বয় কমিটি সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুঃখপ্রকাশ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার সিঙিনালায় অষ্টম শ্রেণির এক মারমা কিশোরীর ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে শুরু হওয়া আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সদর ও গুইমারা উপজেলায় যে সহিংসতা ও অশান্তি দেখা দিয়েছে, তার প্রতি দলটি গভীর শোক প্রকাশ করছে। নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়েছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হয়েছে।
এনসিপি রাঙামাটি জেলার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদের যে বক্তব্যগুলো প্রকাশ পেয়েছে, সেগুলো অরাজনৈতিক ও শিষ্টাচার বহির্ভূত এবং সেসব বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানানো হচ্ছে। দলটি একই সঙ্গে পার্বত্য জেলার সকল নাগরিককে স্বস্তি বজায় রেখে ধৈর্য্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতার মনোভাব ধারণ করারও অনুরোধ করেছে।
বিবৃতিতে এনসিপি আরও জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িত দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি তারা জানাচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন জঘন্য অপরাধ ও সহিংসতা প্রতিহত করা যায়।
খাগড়াছড়িতে সংঘটিত ঘটনা ভারতের বা ফ্যাসিস্টদের ইন্ধনে সংঘটিত হওয়া বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সোমবার পুরাতন রমনা থানা কমপ্লেক্সে পাঁচটি থানার প্রশাসনিক কাম-ব্যারাক ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা মহল খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। তারা চাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন না হোক। এই মহলই মূলত খাগড়াছড়িতে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম আরও জানান, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ করা হচ্ছে এবং খাগড়াছড়িকে ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে। এই ঘটনা প্রতিরোধ করতে সরকার সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা খাগড়াছড়িতে অবস্থান করছেন এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বয় করছেন। তিনি উল্লেখ করেন, পরিস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘কিছু সন্ত্রাসী পাহাড়ের ওপর থেকে ফায়ার করছে এবং এই হাতিয়ারগুলো অনেক সময় বাইরে থেকে আসে। এটা প্রতিহত করতে সবার সহযোগিতা দরকার।’
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি শিক্ষার্থীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার দাবি করেছে ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট। এই জোটের অধীনে থাকা ১৭টি মানবাধিকার সংগঠন ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ভুক্তভোগী কিশোরী ও তার পরিবারের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে। তারা এ ধরনের সহিংসতা পুনরায় ঘটা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও আবেদন জানিয়েছে।
ধর্ষণ আইন সংস্কার জোটে আইসিডিডিআরবি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, একশন এইড বাংলাদেশ, এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনসহ মোট ১৭টি মানবাধিকার সংগঠন অন্তর্ভুক্ত।
অন্যদিকে, মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে হত্যা, ধর্ষণ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা ও অগ্নিসংযোগসহ সমস্ত অপরাধকে তদন্তের আওতায় আনার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে। সংস্থাটি জড়িত সকল অপরাধীকে শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বান জানায়, বিশেষ করে যারা স্কুল শিক্ষার্থীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে।
এইচআরএসএস আরও বলেছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে এবং পাহাড়ি অঞ্চলের সাধারণ নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়িত্বশীল ও মানবাধিকার সম্মত পদ্ধতিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
গুইমারায় সংঘর্ষে নিহত তিনজনের পরিচয় প্রকাশ করেছে পুলিশ। গত রোববার গুলিতে নিহত তিনজন হলেন—গুইমারার রামসু বাজার এলাকার অলাকাই মারমার ছেলে তৈইচিং মারমা (২০), আমতলী পাড়ার থুহলাঅং মারমার ছেলে আথুইপ্রু মারমা (২১) এবং চেংগুলি পাড়ার হাসু মারমার ছেলে আখ্রাউ মারমা (২২)। পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে, সোমবার দুপুরে খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালি বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের বৈঠক হয়। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব পক্ষই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছে।
এর আগে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও জানিয়েছেন, খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সেখানে অবস্থান করছেন পরিস্থিতি তদারকির জন্য।
খাগড়াছড়িতে মারমা এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে টানা ছয় দিন (বুধবার থেকে সোমবার) ধরে উত্তেজনা চলছে। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হওয়া প্রতিবাদ বিক্ষোভ রোববারে (২৮ সেপ্টেম্বর) এসে সংঘর্ষে রূপ নেয়। সেই সংঘর্ষে গুলিতে তিনজন নিহত এবং সেনা-পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। এতে জেলা শহর ও আশপাশের এলাকায় জনজীবন প্রায় অচল হয়ে পড়ে।
এদিকে, ১৪৪ ধারা জারির ফলে দোকানপাট বন্ধ, যানবাহন চলাচল সীমিত এবং মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। গুইমারা বাজারে অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষের ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
অন্যদিকে, ফেসবুকভিত্তিক সংগঠন ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’ আট দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও, সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে তাদের ‘মিডিয়া সেল’ থেকে নতুন এক পোস্টে আহতদের চিকিৎসা ও নিহতদের সৎকারে যেন বাধা না পড়ে সেজন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবরোধ শিথিল করার কথা জানানো হয়। তবে জেলার অন্য সড়কগুলোতে অবরোধ বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
সব মিলিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তায় সাজেক থেকে আটকে থাকা ৫১৮ পর্যটককে ফিরিয়ে আনার কাজও চলছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে। রাত ৯টার দিকে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে মামরা এক স্কুলছাত্রী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ ওঠে। রাত ১১টার দিকে স্বজনরা তাকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা মামলা করলে পুলিশ শয়ন শীল (২১) নামের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে এবং আদালত তাকে ছয় দিনের রিমান্ডে পাঠায়। পরদিন বুধবার থেকেই ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’ সংগঠন ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করে। তাদের ডাকে বৃহস্পতিবার অর্ধদিবস সড়ক অবরোধ পালিত হয়। আর শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় নারী নিপীড়নবিরোধী সমাবেশ। যদিও সেদিন আর কোনো কর্মসূচি ছিল না, তবে শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আবারও অবরোধের ডাক দেওয়া হয়।
এদিন সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে অবরোধকারীদের সঙ্গে স্থানীয় একটি পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে, যাতে চারজন আহত হন বলে দাবি করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিলেও বিকেল ৪টার দিকে শহরের মহাজনপাড়া এলাকায় নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়। মহাজনপাড়া, নারকেলবাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সদর এলাকার চারটি স্থানে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার এ ঘটনা ঘটে। ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন শনিবার দুপুর ২টার পর থেকে সদর উপজেলা, পৌর এলাকা এবং গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি করে।
‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ডাকে তিন পার্বত্য জেলায় অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধ ঘোষণা করা হয়েছিল। অবরোধ প্রথম দিনে সোমবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম ও বান্দরবানের সঙ্গে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও, অবরোধ শিথিলের পর দুপুর থেকে তা পুনরায় সচল হয়। তবে খাগড়াছড়ির সঙ্গে যোগাযোগ এখনও বন্ধ রয়েছে।
জানা গেছে, রাঙামাটি জেলা শহরে সোমবার সকালে একমাত্র অভ্যন্তরীণ যানবাহন হিসেবে সিএনজি অটোরিকশাগুলো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছিল। চট্টগ্রাম সড়কে সিএনজি অটোরিকশা সকাল থেকে চলাচল করতে দেখা গেছে। দুপুরের দিকে বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাক ও জরুরি পরিবহনও চলাচল শুরু করে।
চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মোটর মালিক সমিতির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম শাকিল বলেন, ‘রোববার রাতে আমরা নিরাপত্তার কারণে বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস পেয়েছি। তাই দুপুরের মধ্যে চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলার সঙ্গে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। তবে খাগড়াছড়ির সঙ্গে যোগাযোগ এখনও বন্ধ রয়েছে।’
খাগড়াছড়ি সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাঙামাটি জেলা সমন্বয় কমিটি সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুঃখপ্রকাশ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার সিঙিনালায় অষ্টম শ্রেণির এক মারমা কিশোরীর ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে শুরু হওয়া আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সদর ও গুইমারা উপজেলায় যে সহিংসতা ও অশান্তি দেখা দিয়েছে, তার প্রতি দলটি গভীর শোক প্রকাশ করছে। নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়েছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হয়েছে।
এনসিপি রাঙামাটি জেলার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদের যে বক্তব্যগুলো প্রকাশ পেয়েছে, সেগুলো অরাজনৈতিক ও শিষ্টাচার বহির্ভূত এবং সেসব বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানানো হচ্ছে। দলটি একই সঙ্গে পার্বত্য জেলার সকল নাগরিককে স্বস্তি বজায় রেখে ধৈর্য্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতার মনোভাব ধারণ করারও অনুরোধ করেছে।
বিবৃতিতে এনসিপি আরও জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িত দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি তারা জানাচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন জঘন্য অপরাধ ও সহিংসতা প্রতিহত করা যায়।
খাগড়াছড়িতে সংঘটিত ঘটনা ভারতের বা ফ্যাসিস্টদের ইন্ধনে সংঘটিত হওয়া বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সোমবার পুরাতন রমনা থানা কমপ্লেক্সে পাঁচটি থানার প্রশাসনিক কাম-ব্যারাক ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা মহল খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। তারা চাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন না হোক। এই মহলই মূলত খাগড়াছড়িতে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম আরও জানান, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ করা হচ্ছে এবং খাগড়াছড়িকে ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে। এই ঘটনা প্রতিরোধ করতে সরকার সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা খাগড়াছড়িতে অবস্থান করছেন এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বয় করছেন। তিনি উল্লেখ করেন, পরিস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘কিছু সন্ত্রাসী পাহাড়ের ওপর থেকে ফায়ার করছে এবং এই হাতিয়ারগুলো অনেক সময় বাইরে থেকে আসে। এটা প্রতিহত করতে সবার সহযোগিতা দরকার।’
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি শিক্ষার্থীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার দাবি করেছে ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট। এই জোটের অধীনে থাকা ১৭টি মানবাধিকার সংগঠন ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ভুক্তভোগী কিশোরী ও তার পরিবারের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে। তারা এ ধরনের সহিংসতা পুনরায় ঘটা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও আবেদন জানিয়েছে।
ধর্ষণ আইন সংস্কার জোটে আইসিডিডিআরবি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, একশন এইড বাংলাদেশ, এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনসহ মোট ১৭টি মানবাধিকার সংগঠন অন্তর্ভুক্ত।
অন্যদিকে, মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে হত্যা, ধর্ষণ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা ও অগ্নিসংযোগসহ সমস্ত অপরাধকে তদন্তের আওতায় আনার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে। সংস্থাটি জড়িত সকল অপরাধীকে শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বান জানায়, বিশেষ করে যারা স্কুল শিক্ষার্থীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে।
এইচআরএসএস আরও বলেছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে এবং পাহাড়ি অঞ্চলের সাধারণ নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়িত্বশীল ও মানবাধিকার সম্মত পদ্ধতিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
গুইমারায় সংঘর্ষে নিহত তিনজনের পরিচয় প্রকাশ করেছে পুলিশ। গত রোববার গুলিতে নিহত তিনজন হলেন—গুইমারার রামসু বাজার এলাকার অলাকাই মারমার ছেলে তৈইচিং মারমা (২০), আমতলী পাড়ার থুহলাঅং মারমার ছেলে আথুইপ্রু মারমা (২১) এবং চেংগুলি পাড়ার হাসু মারমার ছেলে আখ্রাউ মারমা (২২)। পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে, সোমবার দুপুরে খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালি বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের বৈঠক হয়। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব পক্ষই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছে।
এর আগে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও জানিয়েছেন, খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সেখানে অবস্থান করছেন পরিস্থিতি তদারকির জন্য।
খাগড়াছড়িতে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছে প্রতিবাদ বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেওয়া জুম্ম ছাত্র-জনতা। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) পৌনে ৯টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাদের ‘মিডিয়া সেল’ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
১৪ মিনিট আগে২৮ সেপ্টেম্বর প্রখ্যাত ব্রিটিশ-আমেরিকান সাংবাদিক মেহেদী হাসানকে একটি সাক্ষাৎকার দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এই সাক্ষাৎকার দেন তিনি। সাক্ষাতকারে তাঁরা হাসিনাকে নিয়ে ভারতের সিদ্ধান্ত, ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও বাংলাদেশের সামগ্
১ ঘণ্টা আগেদেশজুড়ে ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালিত হচ্ছে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মন্দিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় এই উৎসব উদযাপিত হচ্ছে।
৩ ঘণ্টা আগেদুই দিনের ব্যবধানে আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। এবার ভরিপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪১৫ টাকা বেড়েছে।
৩ ঘণ্টা আগে