ফারুক হোসাইন
প্রাথমিক স্তরের বই মুদ্রণ ও বিতরণ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বিগত বছরগুলোতে মুদ্রণের নানা অনিয়মের কথা জানিয়ে বই ছাপাতে চায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। অন্যদিকে, পাঠ্যক্রম প্রণয়নের সঙ্গে মুদ্রণের সমন্বয়ের সুবিধা এবং অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তা নিজেদের কাছেই রাখতে চায় এনসিটিবি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও এনসিটিবির কয়েকজন কর্মকর্তা স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, বই ছাপানোর সঙ্গে আর্থিক বিষয়াদি যুক্ত থাকায় এতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও একই অভিযোগ করছেন এনসিটিবির দিকে।
এতদিন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পাশাপাশি প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই মুদ্রণ ও বিতরণের কাজ করে এসেছে এনসিটিবি। তবে প্রাথমিকের বই মুদ্রণ ও বিতরণের কাজ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে দেওয়ার আওয়ামী লীগ সরকার আমলের একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য এনসিটিবি আইন-২০১৮-এর সংশোধনী প্রস্তাব প্রকাশ করে এ সংক্রান্ত মতামত চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসচিব ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. মো. মাসুদ রানা খান স্ট্রিমকে বলেন, সরকার এখন কেন পুরোনো একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে, জানি না। বই ছাপানো ও বিতরণ একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। এর সঙ্গে আর্থিক বিষয়াদি সংম্পৃক্ত, দরপত্র আহ্বান করা হয়। এসব কারণেই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বই ছাপানোতে এত আগ্রহ দেখাচ্ছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নুর মো. শামসুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, ‘অধিদপ্তর থেকে বই ছাপানো ও বিতরণ করলে সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়া যাবে। বইয়ের মানও বজায় থাকবে।’
অধিদপ্তরের একটি বিভাগের পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৃহস্পতিবার স্ট্রিমকে বলেন, প্রতিবছর প্রাথমিক পর্যায়ের প্রায় ১০ কোটি বই ছাপানো হয়। কিন্তু অনেক সময় বই সঠিক সময়ে পাওয়া যায় না, মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। অতীতে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। এসব বইয়ের বাজেট আসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। কিন্তু কাজটি করে এনসিটিবি, যেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর প্রাথমিকের সব বই পেতে প্রায় তিন মাস দেরি হয়। এপ্রিল নাগাদ সব বিষয়ের পাঠ্যবই সরবরাহ করে এনসিটিবি। এনসিটিবির সচিব অধ্যাপক মো. সাহতাব উদ্দিন স্ট্রিমকে বলেন, এবার জাতীয় স্বার্থে মাধ্যমিকের বই আগে ছাপানো হয়। সে কারণে দেরি হয়।
পাঠক্রম প্রণয়ন ও মুদ্রণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এনসিটিবি থেকে শুধু একটি স্তরের বই মুদ্রণ ও বিতরণের কাজ সরিয়ে নেওয়ার ফলে সমন্বয়হীনতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।
এনসিটিবির সচিব অধ্যাপক মো. সাহতাব উদ্দিন বলেন, বই ছাপানোর কাজ পৃথক প্রতিষ্ঠান থেকে হলে সমন্বয়হীনতা দেখা দেবে। আমরা চাই অখণ্ড এনসিটিবি। যেহেতু কারিকুলাম প্রণয়ন ও পাঠ্যবই মুদ্রণে এনসিটিবির দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আছে; ফলে নির্ভুল ও মানসম্মত বই এই সংস্থাই দিতে পারে। কিন্তু আলাদা হয়ে গেলে যদি ছাপানোর আগ মুহূর্তে কোনো পরিমার্জন করা হয়, সেটি সংযোজন বা সংশোধনের সুযোগও কমে যাবে।’
এ বিষয়ে ড. মো. মাসুদ রানা খান বলেন, এনসিটিবি দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ এবং একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। সেখানে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নতুন কেউ বই ছাপানো বা বিতরণ করতে গেলে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা থেকেই যায়।
প্রাথমিক স্তরের বই মুদ্রণের কাজ এনসিটিবির কাছ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে দিতে প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০২২ সালে। তখন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয় বই মুদ্রণ, বিতরণে বিলম্ব ও বইয়ের নিম্নমান রোধসহ এনসিটিবিকে সার্ভিস চার্জ বাবদ দেওয়া অর্থ সাশ্রয় করতে প্রাথমিকের বই মুদ্রণের কাজ সরিয়ে নিতে চায় তারা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঠ্যপুস্তক নিজ ব্যবস্থাপনায় ছাপানো ও বিতরণের বিষয়ে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তবে পাঠক্রম প্রণয়ন করবে এনসিটিবি।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, পাঠক্রম প্রণয়ন ও মুদ্রণ-বিতরণের দায়িত্ব এনসিটিবির হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এনসিটিবি আইন-২০১৮ সংশোধন করা প্রয়োজন। ওই সভায় তাই এ সিদ্ধান্তও হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় আইন সংশোধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এরপর ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সেখানেও আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়।
১৯৮৩ সালে স্কুল টেক্সটবুক বোর্ড ও জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন কেন্দ্রকে একীভূত করে বর্তমান এনসিটিবি গঠন করা হয়। এর আগে ওই দুই প্রতিষ্ঠান মুদ্রণ ও বিপণনের কাজ করত। সমন্বয়হীনতার কারণেই প্রতিষ্ঠান দুটিকে একীভূত করে এনসিটিবি গঠন করা হয়। আবার কর্মবিভাজিত হলে পুরোনো জটিলতা ফিরে আসতে পারে বলে আশঙ্কা এনসিটিবির কর্মকর্তাদের।
এর আগে, আইনটি সংশোধনে অনুষ্ঠিত দুটি সভার সারসংক্ষেপ ২০২৩ সালের ১৩ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করা হয়। এতে নীতিগত সম্মতিও দেন তিনি। এরপর ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর এ আইনটি সংশোধন করতে একটি সভার আয়োজন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সভায় সভাপতিত্ব করেন। এতে এনসিটিবি আইন সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের পাশাপাশি প্রস্তাবিত আইনটিও তুলে ধরা হয়। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে এনসিটিবি আইন সংশোধনের উদ্যোগ থমকে যায়।
তবে চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক চিঠিতে এনসিটিবি আইনের সংশোধনী প্রস্তাব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার কথা জানানো হয়। সিনিয়র সহকারী সচিব সিফাত উদ্দীনের সই করা পত্রে এ-ও বলা হয়, আইনটিতে সংশোধন আনতে গত ১২ আগস্ট আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আইনের সংশোধনী প্রস্তাব কার্যবিবরণীর মাধ্যমে অনুমোদিত হয়।
এখন আইনটি সংশোধন হয়ে গেলে ২০২৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিকের বই ছাপাবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষা থাকবে একটি ছাতার তলে। এই খাতকে বনসাই করে রাখলে কাজ করব কীভাবে? এখন দেশের জন্য একটি অস্থির সময়, আমাদের ধারণা একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করে কাজটি করার পাঁয়তারা করছে। -মাসুদ রানা খান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক
আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বলা হয়েছে, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকের মুদ্রণ, প্রকাশনা ও বিতরণ করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বর্তমানে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা এনসিটিবির বিভিন্ন পদে প্রেষণে কাজ করেন।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) এবং প্রাথমিক শিক্ষাক্রম শাখার কর্মকর্তারা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ-ময়মনসিংহে অবস্থিত) থেকে প্রেষণে নিয়োগ পাবেন বলেও সংশোধনী প্রস্তাবে বলা আছে।
বিদ্যমান আইনে এনসিটিবির শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ হন শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউট বা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের শিক্ষকেরা। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউট, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের পাশাপাশি জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির কর্মকর্তারাও শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করতে পারবেন।
এনসিটিবি আইন সংশোধন করাকে ‘ষড়যন্ত্রের অংশ’ হিসেবে দেখছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্বরত মাসুদ রানা খান। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা থাকবে একটি ছাতার তলে। এই খাতকে বনসাই করে রাখলে কাজ করব কীভাবে? এখন দেশের জন্য একটি অস্থির সময়, আমাদের ধারণা একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করে কাজটি করার পাঁয়তারা করছে। তবে এ ব্যাপারে আমরা উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে আপত্তি জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা এবং অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) মাসুদ আকতার খানকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও রিসিভ করেননি।
চলতি বছরের মে মাসে রাজধানীর মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার অবশ্য বলেছিলেন, পট পরিবর্তনের পর পাঠ্যবই সংশোধনে বিলম্ব হওয়ায় এনসিটিবি সময়মতো সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিতে পারেনি। শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় মাসে এসে সব বই বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এনসিটিবি কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের কাজ করবে, কিন্তু বই ছাপা ও বিতরণ ম্যানেজারিয়াল কাজ, এটা আমরা মন্ত্রণালয় করতে চাই। এতে এনসিটিবিকে ভাগ করার কোনো প্রয়োজন নেই।
প্রাথমিক স্তরের বই মুদ্রণ ও বিতরণ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বিগত বছরগুলোতে মুদ্রণের নানা অনিয়মের কথা জানিয়ে বই ছাপাতে চায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। অন্যদিকে, পাঠ্যক্রম প্রণয়নের সঙ্গে মুদ্রণের সমন্বয়ের সুবিধা এবং অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তা নিজেদের কাছেই রাখতে চায় এনসিটিবি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও এনসিটিবির কয়েকজন কর্মকর্তা স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, বই ছাপানোর সঙ্গে আর্থিক বিষয়াদি যুক্ত থাকায় এতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও একই অভিযোগ করছেন এনসিটিবির দিকে।
এতদিন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পাশাপাশি প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই মুদ্রণ ও বিতরণের কাজ করে এসেছে এনসিটিবি। তবে প্রাথমিকের বই মুদ্রণ ও বিতরণের কাজ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে দেওয়ার আওয়ামী লীগ সরকার আমলের একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য এনসিটিবি আইন-২০১৮-এর সংশোধনী প্রস্তাব প্রকাশ করে এ সংক্রান্ত মতামত চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসচিব ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. মো. মাসুদ রানা খান স্ট্রিমকে বলেন, সরকার এখন কেন পুরোনো একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে, জানি না। বই ছাপানো ও বিতরণ একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। এর সঙ্গে আর্থিক বিষয়াদি সংম্পৃক্ত, দরপত্র আহ্বান করা হয়। এসব কারণেই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বই ছাপানোতে এত আগ্রহ দেখাচ্ছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নুর মো. শামসুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, ‘অধিদপ্তর থেকে বই ছাপানো ও বিতরণ করলে সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়া যাবে। বইয়ের মানও বজায় থাকবে।’
অধিদপ্তরের একটি বিভাগের পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৃহস্পতিবার স্ট্রিমকে বলেন, প্রতিবছর প্রাথমিক পর্যায়ের প্রায় ১০ কোটি বই ছাপানো হয়। কিন্তু অনেক সময় বই সঠিক সময়ে পাওয়া যায় না, মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। অতীতে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। এসব বইয়ের বাজেট আসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। কিন্তু কাজটি করে এনসিটিবি, যেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর প্রাথমিকের সব বই পেতে প্রায় তিন মাস দেরি হয়। এপ্রিল নাগাদ সব বিষয়ের পাঠ্যবই সরবরাহ করে এনসিটিবি। এনসিটিবির সচিব অধ্যাপক মো. সাহতাব উদ্দিন স্ট্রিমকে বলেন, এবার জাতীয় স্বার্থে মাধ্যমিকের বই আগে ছাপানো হয়। সে কারণে দেরি হয়।
পাঠক্রম প্রণয়ন ও মুদ্রণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এনসিটিবি থেকে শুধু একটি স্তরের বই মুদ্রণ ও বিতরণের কাজ সরিয়ে নেওয়ার ফলে সমন্বয়হীনতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।
এনসিটিবির সচিব অধ্যাপক মো. সাহতাব উদ্দিন বলেন, বই ছাপানোর কাজ পৃথক প্রতিষ্ঠান থেকে হলে সমন্বয়হীনতা দেখা দেবে। আমরা চাই অখণ্ড এনসিটিবি। যেহেতু কারিকুলাম প্রণয়ন ও পাঠ্যবই মুদ্রণে এনসিটিবির দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আছে; ফলে নির্ভুল ও মানসম্মত বই এই সংস্থাই দিতে পারে। কিন্তু আলাদা হয়ে গেলে যদি ছাপানোর আগ মুহূর্তে কোনো পরিমার্জন করা হয়, সেটি সংযোজন বা সংশোধনের সুযোগও কমে যাবে।’
এ বিষয়ে ড. মো. মাসুদ রানা খান বলেন, এনসিটিবি দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ এবং একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। সেখানে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নতুন কেউ বই ছাপানো বা বিতরণ করতে গেলে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা থেকেই যায়।
প্রাথমিক স্তরের বই মুদ্রণের কাজ এনসিটিবির কাছ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে দিতে প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০২২ সালে। তখন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয় বই মুদ্রণ, বিতরণে বিলম্ব ও বইয়ের নিম্নমান রোধসহ এনসিটিবিকে সার্ভিস চার্জ বাবদ দেওয়া অর্থ সাশ্রয় করতে প্রাথমিকের বই মুদ্রণের কাজ সরিয়ে নিতে চায় তারা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঠ্যপুস্তক নিজ ব্যবস্থাপনায় ছাপানো ও বিতরণের বিষয়ে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তবে পাঠক্রম প্রণয়ন করবে এনসিটিবি।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, পাঠক্রম প্রণয়ন ও মুদ্রণ-বিতরণের দায়িত্ব এনসিটিবির হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এনসিটিবি আইন-২০১৮ সংশোধন করা প্রয়োজন। ওই সভায় তাই এ সিদ্ধান্তও হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় আইন সংশোধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এরপর ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সেখানেও আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়।
১৯৮৩ সালে স্কুল টেক্সটবুক বোর্ড ও জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন কেন্দ্রকে একীভূত করে বর্তমান এনসিটিবি গঠন করা হয়। এর আগে ওই দুই প্রতিষ্ঠান মুদ্রণ ও বিপণনের কাজ করত। সমন্বয়হীনতার কারণেই প্রতিষ্ঠান দুটিকে একীভূত করে এনসিটিবি গঠন করা হয়। আবার কর্মবিভাজিত হলে পুরোনো জটিলতা ফিরে আসতে পারে বলে আশঙ্কা এনসিটিবির কর্মকর্তাদের।
এর আগে, আইনটি সংশোধনে অনুষ্ঠিত দুটি সভার সারসংক্ষেপ ২০২৩ সালের ১৩ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করা হয়। এতে নীতিগত সম্মতিও দেন তিনি। এরপর ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর এ আইনটি সংশোধন করতে একটি সভার আয়োজন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সভায় সভাপতিত্ব করেন। এতে এনসিটিবি আইন সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের পাশাপাশি প্রস্তাবিত আইনটিও তুলে ধরা হয়। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে এনসিটিবি আইন সংশোধনের উদ্যোগ থমকে যায়।
তবে চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক চিঠিতে এনসিটিবি আইনের সংশোধনী প্রস্তাব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার কথা জানানো হয়। সিনিয়র সহকারী সচিব সিফাত উদ্দীনের সই করা পত্রে এ-ও বলা হয়, আইনটিতে সংশোধন আনতে গত ১২ আগস্ট আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আইনের সংশোধনী প্রস্তাব কার্যবিবরণীর মাধ্যমে অনুমোদিত হয়।
এখন আইনটি সংশোধন হয়ে গেলে ২০২৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিকের বই ছাপাবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষা থাকবে একটি ছাতার তলে। এই খাতকে বনসাই করে রাখলে কাজ করব কীভাবে? এখন দেশের জন্য একটি অস্থির সময়, আমাদের ধারণা একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করে কাজটি করার পাঁয়তারা করছে। -মাসুদ রানা খান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক
আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বলা হয়েছে, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকের মুদ্রণ, প্রকাশনা ও বিতরণ করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বর্তমানে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা এনসিটিবির বিভিন্ন পদে প্রেষণে কাজ করেন।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) এবং প্রাথমিক শিক্ষাক্রম শাখার কর্মকর্তারা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ-ময়মনসিংহে অবস্থিত) থেকে প্রেষণে নিয়োগ পাবেন বলেও সংশোধনী প্রস্তাবে বলা আছে।
বিদ্যমান আইনে এনসিটিবির শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ হন শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউট বা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের শিক্ষকেরা। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউট, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের পাশাপাশি জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির কর্মকর্তারাও শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করতে পারবেন।
এনসিটিবি আইন সংশোধন করাকে ‘ষড়যন্ত্রের অংশ’ হিসেবে দেখছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্বরত মাসুদ রানা খান। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা থাকবে একটি ছাতার তলে। এই খাতকে বনসাই করে রাখলে কাজ করব কীভাবে? এখন দেশের জন্য একটি অস্থির সময়, আমাদের ধারণা একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করে কাজটি করার পাঁয়তারা করছে। তবে এ ব্যাপারে আমরা উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে আপত্তি জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা এবং অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) মাসুদ আকতার খানকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও রিসিভ করেননি।
চলতি বছরের মে মাসে রাজধানীর মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার অবশ্য বলেছিলেন, পট পরিবর্তনের পর পাঠ্যবই সংশোধনে বিলম্ব হওয়ায় এনসিটিবি সময়মতো সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিতে পারেনি। শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় মাসে এসে সব বই বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এনসিটিবি কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের কাজ করবে, কিন্তু বই ছাপা ও বিতরণ ম্যানেজারিয়াল কাজ, এটা আমরা মন্ত্রণালয় করতে চাই। এতে এনসিটিবিকে ভাগ করার কোনো প্রয়োজন নেই।
রাজধানীর পোস্তগোলা মহাশ্মশানে লাশ সৎকারের কাজ করেন লিটন সাধু। পাশাপাশি সদরঘাট এলাকায় ফলও বিক্রি করেন তিনি। তবে আধ্যাত্মিক ভাবনা থেকে দীর্ঘদিন ধরেই চুল–দাড়ি লম্বা রাখেন তিনি। দুই হাতে ভর্তি থাকে ধাতব বালা। ব্যতিক্রমী বেশভূষার কারণে স্থানীদের কাছে পরিচিত ছিলেন তিনি।
১ দিন আগেক্ষমতায় যাওয়ার পরে অনেক শাসকই ‘লেখক’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। এমন নজির আমাদের দেশেও আছে। সাবেক সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮৩ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর ‘কবি’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তখন দেশের সরকারি সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় বিশেষভাবে ছাপা হয়েছিল তাঁর কবিতা।
৩ দিন আগেআওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করেছিলেন, মায়ের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারসূত্রে জমিটির মালিকানা পাওয়ার বিষয়টি শেখ হাসিনা জানতে পারেন ২০০৭ সালে। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়। তবে স্ট্রিমের অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, ১৯৯৪ সালেই এর পূর্ব পাশে প্রায় ১ বিঘা জমি কিনেছিলেন শেখ হাসিনা।
৬ দিন আগেজমি বিক্রেতা ও স্থানীয়রা জানান, এলাকায় কেউ জমি বিক্রির পরিকল্পনা করছে কি না, বৈকুণ্ঠ নাথ সে সবের খোঁজ রাখতেন। বিক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতেন তিনি। পরের আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করে বিক্রেতাকে টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার কাজও করতেন। তবে জমি বেচাকেনার আলোচনার সময় ক্রেতার আসল পরিচয় গোপন রাখা হতো।
৯ দিন আগে