বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী দৈনিক সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা কাজের নিয়ম। অতিরিক্ত কাজের জন্য বাড়তি মজুরি এবং সপ্তাহে একদিন বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ডেলিভারিম্যানরা ‘ফ্রিল্যান্সার’ হওয়ায় নেই নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা। নেই ন্যূনতম আয়ের গ্যারান্টিও। ফলে দৈনিক ১১-১২ ঘণ্টাও কাজ করেন অনেক রাইডার।
আবদুল্লাহ কাফি
প্রচন্ড জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে আরিফের শরীর। কাঁধে ভারী ব্যাগ। যাচ্ছেন গ্রাহকের বাসায়। ডেলিভারি করবেন অর্ডার করা খাবার। শরীর চলছে না। তবুও ঘুরাচ্ছেন সাইকেলের প্যাডেল। ‘রাতে খেতে পারব কি না জানি না, তাই আজও কাজ করছি’, স্ট্রিমকে বলেন ফুডপান্ডার এই রাইডার।
এ গল্প শুধু আরিফ হাসানের না। এমন হাজারো তরুণ ছড়িয়ে আছে শহরের অলিগলিতে। যাঁরা ফুডপান্ডা, ফুডি, পাঠাওসহ নামী-বেনামী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ‘ফ্রিল্যান্সার’ হিসাবে কাজ করেন। যাঁরা কাজ করছেন গিগ-ইকোনোমির (মুক্ত শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হয় যে অর্থনীতিতে) সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু সবচেয়ে অবহেলিত স্তরে।
রাইডারদের আয়-ব্যয়
প্রতিষ্ঠানভেদে প্রতি ডেলিভারিতে ১৯ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত ডেলিভারি চার্জ পান রাইডাররা। অর্ডারের সময়, দূরত্ব বিবেচনায় অনেক সময় সেটা বাড়ে বা কমে।
ফুডপান্ডার রাইডার মোহাম্মদ জাফরের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে। ঢাকার মগবাজারে এক রুমে চারজন শেয়ার করে থাকেন। বাসা ভাড়া দেন ১১ হাজার টাকা। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমাদেরকে ডেলিভারি চার্জ দেওয়া হয় ব্যাচ সিস্টেমে। ১ থেকে ৬ পর্যন্ত ব্যাচ আছে। ভালো কাজ করলে ব্যাচের শুরুর দিকে যাওয়া যায়। তখন ডেলিভারি চার্জটাও একটু বেশি পাওয়া যায়।’
স্বাভাবিক অবস্থায় ডেলিভারি চার্জ কেমন পান জানতে চাইলে জাফর বলেন, ‘প্রতি অর্ডারে ডেলিভারির দূরত্ব হয় অন্তত দুই কিলোমিটার। একটা ডেলিভারিতে পাই ৩০ টাকা। অনেক সময় আরও কমও পাই। তবে একই সময়ে একই রেস্টুরেন্টে দুই বা তার বেশি অর্ডার পেলে ডেলিভারি চার্জ আবার কমে যায়। প্রথমটাতে ৩০ টাকা পেলে পরেরটাতে দেয় ১৫ বা ১৭ টাকা। আর দিনে ১৬টা ডেলিভারি দিতে পারলে বোনাস দেয় ৭০ টাকা।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফুডপান্ডার তুলনায় দেশি প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারি চার্জ একটু বেশি। তবে তাদের অর্ডার কম।
পাঠাও-এর রাইডার নূর মুহাম্মদ স্ট্রিমকে বলেন, ‘৪০ টাকার নিচে আমাদের ডেলিভারি চার্জ নাই। ব্যাচ-১ এ থাকলে চার্জ আর একটু বাড়ে। এটা ফুডপান্ডার তুলনায় অনেকটা বেশি।’
ফুডির রাইডার সুমন স্ট্রিমকে বলেন, ‘পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে প্রতি সপ্তাহে আমাদের ব্যাচ নির্ধারণ করা হয়৷ ব্যাচ ছয়ের সর্বনিম্ন ডেলিভারি চার্জ ৪২ টাকা৷ ব্যাচ-১ এর ৪৯ টাকা৷ এর বাইরে সাপ্তাহিক বোনাস দেয় ফুডি৷’
বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের বৈষম্যমূলক আচরণ
বর্তমানে বিশ্বের ১১টি দেশে ব্যবসা করছে ফুডপান্ডা। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি ৷ জার্মানি-ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে প্রথম যাত্রা শুরু করার সুবিধাও (ফার্স্ট মুভার অ্যাডভান্টেজ) পেয়েছে৷ ফলে ফুডপান্ডা নিজের আধিপত্য বিস্তার করেছে রাতারাতি। বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম ফুডপান্ডা।
সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইউরোপের অনেক দেশে স্বাস্থ্য বিমা, দুর্ঘটনা ভাতা, ন্যূনতম আয়ের নিশ্চয়তা দেয় ফুডপান্ডা। এমনকি জ্বালানি খরচ পর্যন্ত দেয় অনেক দেশে। তবে বাংলাদেশে সুবিধা দেওয়ার কথা কর্তৃপক্ষ বললেও সে ব্যাপারে জানেন না রাইডাররা।
ফুডপান্ডার রাইডার মোহাম্মদ সোলাইমান স্ট্রিমকে বলেন, ‘ফুডপান্ডা কোনো বিমা সহায়তা, কোনো রকম ভাতা দেয় না। যেমন কাজ করি, তেমন টাকা পাই। এর বাইরে কেউ কোনো সুবিধা পাইছে, এমন ঘটনা কখনো শুনি নাই।’
২০১৯ সাল থেকে ফুডপান্ডার রাইডার হিসাবে কাজ করছেন সুজন ঘোষ। স্ট্রিমকে সুজন বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমি মৌচাক হয়ে অর্ডার নিয়ে যাচ্ছিলাম। রাস্তায় আমার সাইকেলের ঘষা লাগে সামনের এক পথচারীর গায়ে। এতে আমাকে মারধর করেন ওই লোক। প্রতিবাদ করতেই ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁর সঙ্গীরাও।’
এ ঘটনার পর ফুডপান্ডা কী ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশ্নে সুজন বলেন, 'অফিসে ঘটনাটা জানালে তারা রেস্ট করতে বলে। আর কোনো ব্যবস্থা নেয় নাই। আমাকে কোনো ভাতাও দেয় নাই। ভাতা দেওয়ার কোনো সিস্টেমই ফুডপান্ডার নাই।'
পাল্টাপাল্টি অবস্থানে ফুডপান্ডা-রাইডার
ফুডপান্ডা বাংলাদেশের অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স হেড (জনসংযোগ বিভাগের প্রধান) জাহেদুল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমাদের ডেলিভারি পার্টনারদের জন্য স্বাস্থ্যসেবাকে সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য করতে গ্রামীণ ডিজিটাল হেলথকেয়ার সলিউশনস এর ‘সুখী’ ব্র্যান্ডের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে ফুডপান্ডা। ফলে ডেলিভারি পার্টনাররা বিশেষ ছাড়ে টেলিমেডিসিন ও বিমাসেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় উপভোগ করতে পারবেন তাঁরা।’
তবে ফুডপান্ডার অন্তত ২০ জন রাইডার স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, তাঁরা ‘সুখী‘ ব্র্যান্ডের ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
পড়াশোনার পাশাপাশি ফুডপান্ডার সঙ্গে কাজ করেন সাইদুল ইসলাম। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘দিনে ছয়-সাত ঘণ্টা কাজ করি। মাসে ৮-১০ হাজার টাকা ইনকাম হয়। এর বাইরে সুখী, বিমা বা অন্য কোনো সুবিধার ব্যাপারে জানি না। ফুডপান্ডার অ্যাপসের মাধ্যমে তাঁদের এসব বিষয়ে জানাই আমরা।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর উত্তরা জোনের একজন রাইডার স্ট্রিমকে বলেন, ‘আপনার মুখে সুখীর কথা শুনে আমি অ্যাপের সব নোটিশ দেখেছি। সুখী বিষয়ে কোনো আপডেট পাইনি। আমার রাইডার বন্ধুদের সঙ্গেও কথা বলেছি, তারাও ব্যপারটা জানেন না। কোনো বিমার ব্যাপারেও তাঁরা জানেন না।’
বিমাসেবা দেয় না পাঠাও-ফুডি
রাইডারদেরকে দুর্ঘটনা ভাতা, অসুস্থ ভাতা বা অন্য কোনো বিমাসেবা দেয় না পাঠাও বা ফুডি। ফুডির রাইডার সুমন বলেন, ‘কোনো বিমা বা ভাতা সুবিধা পাই না কখনো। গ্রাহক ভালো হলে বেতনের বাইরে শুধু টিপস পাই মাঝেমধ্যে। ফুডি বিমাসেবা দেয় কিনা, সেটা জানি না।’
পাঠাওয়ের রাইডার নূর মুহাম্মদ বলেন, ‘বিমাটিমা কিছু নাই। সারা দিন খাটি, রাতে ঘুমাই। আর কী!’
এ ব্যপারে ফুডির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ মান্নান স্ট্রিমকে বলেন, ‘ফুডি রাইডারদের দুর্ঘটনা বা চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজন হলে মানবিক দিক বিবেচনা করে সহায়তা করে। তবে এই সুবিধা স্থায়ী, সর্বজনীন বা বাধ্যতামূলক নয়।’
শ্রম আইন কী বলে
বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী দৈনিক সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা কাজের নিয়ম। অতিরিক্ত কাজের জন্য বাড়তি মজুরি এবং সপ্তাহে একদিন বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ডেলিভারিম্যানরা ‘ফ্রিল্যান্সার’ হওয়ায় নেই নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা। নেই ন্যূনতম আয়ের গ্যারান্টিও। ফলে দৈনিক ১১-১২ ঘণ্টাও কাজ করেন অনেক রাইডার।
ফুডপান্ডা বাংলাদেশের অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স হ্যাড (জনসংযোগ বিভাগের প্রধান) জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘রাইডাররা আমাদের প্ল্যাটফর্মে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন। তাই তাঁরা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজের সময় নির্ধারণ করতে পারেন। তাঁরা চাইলে একাধিক প্ল্যাটফর্মেও কাজ করতে পারেন। প্রতিটি অর্ডার গ্রহণের আগে রাইডাররা অর্ডারটি থেকে কত আয় হবে তা দেখতে পান।’
ফুডি রাইডারদের দুর্ঘটনা বা চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজন হলে মানবিক দিক বিবেচনা করে সহায়তা করে। তবে এই সুবিধা স্থায়ী, সর্বজনীন বা বাধ্যতামূলক নয়।-মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ মান্নান, চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও), ফুডি
ফুডির সিওও মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ মান্নান স্ট্রিমকে বলেন, ‘ফুডি তাদের রাইডারদের ফ্রিল্যান্সার ও চুক্তিভিত্তিক রাইডার হিসেবে নিয়োগ দেয়। ফলে তাঁরা প্রচলিত শ্রম আইনের আওতায় পড়েন না। তবে এই খাতটি ধীরে ধীরে আনুষ্ঠানিক কাঠামোয় আসছে। শ্রম আইনের প্রযোজ্যতা নিয়ে নীতিনির্ধারক মহলে আলোচনা চলছে।’
যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সাল স্ট্রিমকে বলেন, 'আমাদের তত্ত্বাবধায়নের ঘাটতি আছে। সরকারের ব্যর্থতা আছে। বিদেশে সুবিধা দিচ্ছে একটা প্রতিষ্ঠান, অথচ বাংলাদেশে একটুও পাচ্ছি না। এর মানে আমরা আমাদের হিস্যা বুঝে নিতে পারিনি।'
ফারুখ ফয়সাল বলেন, 'আমাদের ট্রেড ইউনিয়গুলোকে আরও স্বাধীন হতে হবে। যেকোনো রাজনৈতিক চাপ থেকে মুক্ত হয়ে কাজ করতে হবে। ডেলিভারিম্যানসহ এমন পেশার সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে।'
ট্রেড ইউনিয়ন নেতা মঞ্জুর মঈন স্ট্রিমকে বলেন, ‘ছুটি এবং ন্যূনতম আয়ের নিশ্চয়তা অবশ্যই দিতে হবে। এটা একজন শ্রমিকের অধিকার। কিন্তু অধিকাংশ রাইডার জানেন না, শ্রম আইন কী বা এটা কীভাবে কাজ করে। ফলে যে যেভাবে পারছে, আমার দেশে ব্যবসা করে চলে যাচ্ছে।’
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া স্ট্রিমকে বলেন, ‘আইনের ঠিকঠাক প্রয়োগ করা গেলে অর্থনৈতিক বৈষম্য অনেকটা কমে আসবে। ‘ফ্রিল্যান্সার’ বলে রাইডারদের যতদিন সুবিধার বাইরে রাখা হবে, ততদিন এই সমস্যার সমাধান হবে না।’
মন্তব্য করতে নারাজ পাঠাও
এসব বিষয়ে জানতে এক মাসের বেশি সময় ধরে পাঠাও-এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি কর্তৃপক্ষের। গত জুলাই মাসের শুরু থেকে পাঠাও-এর জনসংযোগ প্রধান ফয়েজ ফয়সালকে বারবার ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
পাঠাওয়ের হটলাইন নাম্বার, সাপোর্ট নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা বলেন, কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করবে। কোনো উত্তর না পেয়ে গত ৪ জুলাই মেইল করা হয়। কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করবে বলে মেইলের উত্তর দেওয়া হলেও যোগাযোগ করেনি।
সর্বশেষ আজ শনিবার (৯ আগস্ট) পাঠাও ফুডের ওয়েবসাইটে দেওয়া ঠিকানায় গেলে সেখানে উপস্থিত কর্মীরা জানান, জনসংযোগ বিষয়টি হেড অফিস থেকে দেখা হয়। শুক্র-শনিবার হেড অফিস বন্ধ থাকে। তাঁরা কোনো তথ্য দিতে পারবেন না।
এক মাসের বেশি সময় ধরে যোগাযোগের চেষ্টার কথা জানালে তাঁরা কথা বলিয়ে দেন সহকারী ব্যবস্থাপক সজীব সাহার সঙ্গে। সজীব সাহাকে পুরো ঘটনা জানলে তিনিও কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করবে বলে বলেন। তবুও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে সজীব সাহাকে কয়েকবার কল করার পর প্রতিবেদকে কল করেন পাঠাও-এর জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়েজ ফয়সাল।
তবে তিনিও তথ্য দিনে অসম্মতি জানান। দিনভর অপেক্ষা করিয়ে তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘আজ ছুটির দিন। আমরা কেউ এসব বিষয়ে কথা বলার এখতিয়ার রাখি না। শুধু পাঠাওয়ের সিইও এসব বিষয়ে কথা বলেন। পাঠও ফুডের প্রধানও এ ব্যাপারে কথা বলতে পারবেন না।’
আন্দোলনে ফুডপান্ডার রাইডাররা
এদিকে সর্বনিম্ন ৪০ টাকা ডেলিভারি চার্জসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন ফুডপান্ডার রাইডাররা। রাইডারদের বিভিন্ন ফেসবুক এবং টেলিগ্রাম গ্রুপে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তাদের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১০ আগস্ট কর্মবিরতি, ১১ আগস্ট সাইকেল র্যালি ও ১২ আগস্ট কমপ্লিট শাটডাউন।
রাইডারদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ডেলিভারি চার্জ সর্বনিম্ন ৪০ টাকা দিতে হবে, পান্ডামার্ট থেকে একাধিক অর্ডার এলে প্রতিটি অর্ডারের জন্যে সর্বনিম্ন ৪০ টাকা এবং দূরত্ব অনুযায়ী তার যথাযথ চার্জ দিতে হবে, একটি অর্ডার হাতে থাকাকালে, আরেকটি অর্ডার এলেও ডেলিভারি চার্জ কমানো যাবে না, কোনো ব্যাচ সিস্টেম থাকবে না, পাঁচ কিলোমিটারের জন্য সব ব্যাচকেই সমান চার্জ দিতে হবে, কোনো অর্ডার ক্যানসেল হলেও এর পুরো টাকা রাইডারকে দিতে হবে ।
আন্দোলনে সক্রিয় গুলশান জোনের রাইডার নীরব স্ট্রিমকে বলেন, ‘একসঙ্গে দুইটা অর্ডার পেলে ডেলিভার্জ কমায়ে দেওয়া হয়। অর্ডার ক্যানসেল করা হলে তার কোনো চার্জ দেয় না কিন্তু আমাদের তো ঠিকই পরিশ্রম করতে হয়। অনলাইনে টিপস পেলে সেখান থেকেও টাকা কাটা হয়। এসবের প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন করছি।’
ফুডপান্ডার বিরুদ্ধে কথা বললে আইডি ব্যান করে দেওয়া হয় বলেও জানান নীরব। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের ডাক দেওয়ায় আমাদের অন্তত ১০০ জন রাইডারের আইডি ব্যান করে দিয়েছে ফুড পান্ডা। আন্দোলনে যাওয়ার আগে আমরা তাদের সঙ্গে বসেছি, কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, ভালো না লাগলে চলে যান।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক রাইডার বলেন, ‘গত বছর আমাদের কয়েকজন রাইডার ভাই আন্দোলন করেছেন। সে সময় ১০ জন রাইডারের আইডি ব্যান করে দেওয়া হয়েছিল। নাম প্রকাশ করলে আমার আইডিও ব্যান করে দিতে পারে। আমি আর ফুডপান্ডার সঙ্গে কাজ করতে পারব না।’
প্রচন্ড জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে আরিফের শরীর। কাঁধে ভারী ব্যাগ। যাচ্ছেন গ্রাহকের বাসায়। ডেলিভারি করবেন অর্ডার করা খাবার। শরীর চলছে না। তবুও ঘুরাচ্ছেন সাইকেলের প্যাডেল। ‘রাতে খেতে পারব কি না জানি না, তাই আজও কাজ করছি’, স্ট্রিমকে বলেন ফুডপান্ডার এই রাইডার।
এ গল্প শুধু আরিফ হাসানের না। এমন হাজারো তরুণ ছড়িয়ে আছে শহরের অলিগলিতে। যাঁরা ফুডপান্ডা, ফুডি, পাঠাওসহ নামী-বেনামী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ‘ফ্রিল্যান্সার’ হিসাবে কাজ করেন। যাঁরা কাজ করছেন গিগ-ইকোনোমির (মুক্ত শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হয় যে অর্থনীতিতে) সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু সবচেয়ে অবহেলিত স্তরে।
রাইডারদের আয়-ব্যয়
প্রতিষ্ঠানভেদে প্রতি ডেলিভারিতে ১৯ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত ডেলিভারি চার্জ পান রাইডাররা। অর্ডারের সময়, দূরত্ব বিবেচনায় অনেক সময় সেটা বাড়ে বা কমে।
ফুডপান্ডার রাইডার মোহাম্মদ জাফরের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে। ঢাকার মগবাজারে এক রুমে চারজন শেয়ার করে থাকেন। বাসা ভাড়া দেন ১১ হাজার টাকা। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমাদেরকে ডেলিভারি চার্জ দেওয়া হয় ব্যাচ সিস্টেমে। ১ থেকে ৬ পর্যন্ত ব্যাচ আছে। ভালো কাজ করলে ব্যাচের শুরুর দিকে যাওয়া যায়। তখন ডেলিভারি চার্জটাও একটু বেশি পাওয়া যায়।’
স্বাভাবিক অবস্থায় ডেলিভারি চার্জ কেমন পান জানতে চাইলে জাফর বলেন, ‘প্রতি অর্ডারে ডেলিভারির দূরত্ব হয় অন্তত দুই কিলোমিটার। একটা ডেলিভারিতে পাই ৩০ টাকা। অনেক সময় আরও কমও পাই। তবে একই সময়ে একই রেস্টুরেন্টে দুই বা তার বেশি অর্ডার পেলে ডেলিভারি চার্জ আবার কমে যায়। প্রথমটাতে ৩০ টাকা পেলে পরেরটাতে দেয় ১৫ বা ১৭ টাকা। আর দিনে ১৬টা ডেলিভারি দিতে পারলে বোনাস দেয় ৭০ টাকা।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফুডপান্ডার তুলনায় দেশি প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারি চার্জ একটু বেশি। তবে তাদের অর্ডার কম।
পাঠাও-এর রাইডার নূর মুহাম্মদ স্ট্রিমকে বলেন, ‘৪০ টাকার নিচে আমাদের ডেলিভারি চার্জ নাই। ব্যাচ-১ এ থাকলে চার্জ আর একটু বাড়ে। এটা ফুডপান্ডার তুলনায় অনেকটা বেশি।’
ফুডির রাইডার সুমন স্ট্রিমকে বলেন, ‘পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে প্রতি সপ্তাহে আমাদের ব্যাচ নির্ধারণ করা হয়৷ ব্যাচ ছয়ের সর্বনিম্ন ডেলিভারি চার্জ ৪২ টাকা৷ ব্যাচ-১ এর ৪৯ টাকা৷ এর বাইরে সাপ্তাহিক বোনাস দেয় ফুডি৷’
বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের বৈষম্যমূলক আচরণ
বর্তমানে বিশ্বের ১১টি দেশে ব্যবসা করছে ফুডপান্ডা। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি ৷ জার্মানি-ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে প্রথম যাত্রা শুরু করার সুবিধাও (ফার্স্ট মুভার অ্যাডভান্টেজ) পেয়েছে৷ ফলে ফুডপান্ডা নিজের আধিপত্য বিস্তার করেছে রাতারাতি। বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম ফুডপান্ডা।
সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইউরোপের অনেক দেশে স্বাস্থ্য বিমা, দুর্ঘটনা ভাতা, ন্যূনতম আয়ের নিশ্চয়তা দেয় ফুডপান্ডা। এমনকি জ্বালানি খরচ পর্যন্ত দেয় অনেক দেশে। তবে বাংলাদেশে সুবিধা দেওয়ার কথা কর্তৃপক্ষ বললেও সে ব্যাপারে জানেন না রাইডাররা।
ফুডপান্ডার রাইডার মোহাম্মদ সোলাইমান স্ট্রিমকে বলেন, ‘ফুডপান্ডা কোনো বিমা সহায়তা, কোনো রকম ভাতা দেয় না। যেমন কাজ করি, তেমন টাকা পাই। এর বাইরে কেউ কোনো সুবিধা পাইছে, এমন ঘটনা কখনো শুনি নাই।’
২০১৯ সাল থেকে ফুডপান্ডার রাইডার হিসাবে কাজ করছেন সুজন ঘোষ। স্ট্রিমকে সুজন বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমি মৌচাক হয়ে অর্ডার নিয়ে যাচ্ছিলাম। রাস্তায় আমার সাইকেলের ঘষা লাগে সামনের এক পথচারীর গায়ে। এতে আমাকে মারধর করেন ওই লোক। প্রতিবাদ করতেই ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁর সঙ্গীরাও।’
এ ঘটনার পর ফুডপান্ডা কী ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশ্নে সুজন বলেন, 'অফিসে ঘটনাটা জানালে তারা রেস্ট করতে বলে। আর কোনো ব্যবস্থা নেয় নাই। আমাকে কোনো ভাতাও দেয় নাই। ভাতা দেওয়ার কোনো সিস্টেমই ফুডপান্ডার নাই।'
পাল্টাপাল্টি অবস্থানে ফুডপান্ডা-রাইডার
ফুডপান্ডা বাংলাদেশের অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স হেড (জনসংযোগ বিভাগের প্রধান) জাহেদুল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমাদের ডেলিভারি পার্টনারদের জন্য স্বাস্থ্যসেবাকে সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য করতে গ্রামীণ ডিজিটাল হেলথকেয়ার সলিউশনস এর ‘সুখী’ ব্র্যান্ডের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে ফুডপান্ডা। ফলে ডেলিভারি পার্টনাররা বিশেষ ছাড়ে টেলিমেডিসিন ও বিমাসেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় উপভোগ করতে পারবেন তাঁরা।’
তবে ফুডপান্ডার অন্তত ২০ জন রাইডার স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, তাঁরা ‘সুখী‘ ব্র্যান্ডের ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
পড়াশোনার পাশাপাশি ফুডপান্ডার সঙ্গে কাজ করেন সাইদুল ইসলাম। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘দিনে ছয়-সাত ঘণ্টা কাজ করি। মাসে ৮-১০ হাজার টাকা ইনকাম হয়। এর বাইরে সুখী, বিমা বা অন্য কোনো সুবিধার ব্যাপারে জানি না। ফুডপান্ডার অ্যাপসের মাধ্যমে তাঁদের এসব বিষয়ে জানাই আমরা।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর উত্তরা জোনের একজন রাইডার স্ট্রিমকে বলেন, ‘আপনার মুখে সুখীর কথা শুনে আমি অ্যাপের সব নোটিশ দেখেছি। সুখী বিষয়ে কোনো আপডেট পাইনি। আমার রাইডার বন্ধুদের সঙ্গেও কথা বলেছি, তারাও ব্যপারটা জানেন না। কোনো বিমার ব্যাপারেও তাঁরা জানেন না।’
বিমাসেবা দেয় না পাঠাও-ফুডি
রাইডারদেরকে দুর্ঘটনা ভাতা, অসুস্থ ভাতা বা অন্য কোনো বিমাসেবা দেয় না পাঠাও বা ফুডি। ফুডির রাইডার সুমন বলেন, ‘কোনো বিমা বা ভাতা সুবিধা পাই না কখনো। গ্রাহক ভালো হলে বেতনের বাইরে শুধু টিপস পাই মাঝেমধ্যে। ফুডি বিমাসেবা দেয় কিনা, সেটা জানি না।’
পাঠাওয়ের রাইডার নূর মুহাম্মদ বলেন, ‘বিমাটিমা কিছু নাই। সারা দিন খাটি, রাতে ঘুমাই। আর কী!’
এ ব্যপারে ফুডির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ মান্নান স্ট্রিমকে বলেন, ‘ফুডি রাইডারদের দুর্ঘটনা বা চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজন হলে মানবিক দিক বিবেচনা করে সহায়তা করে। তবে এই সুবিধা স্থায়ী, সর্বজনীন বা বাধ্যতামূলক নয়।’
শ্রম আইন কী বলে
বাংলাদেশের শ্রম আইন অনুযায়ী দৈনিক সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা কাজের নিয়ম। অতিরিক্ত কাজের জন্য বাড়তি মজুরি এবং সপ্তাহে একদিন বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ডেলিভারিম্যানরা ‘ফ্রিল্যান্সার’ হওয়ায় নেই নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা। নেই ন্যূনতম আয়ের গ্যারান্টিও। ফলে দৈনিক ১১-১২ ঘণ্টাও কাজ করেন অনেক রাইডার।
ফুডপান্ডা বাংলাদেশের অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স হ্যাড (জনসংযোগ বিভাগের প্রধান) জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘রাইডাররা আমাদের প্ল্যাটফর্মে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন। তাই তাঁরা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজের সময় নির্ধারণ করতে পারেন। তাঁরা চাইলে একাধিক প্ল্যাটফর্মেও কাজ করতে পারেন। প্রতিটি অর্ডার গ্রহণের আগে রাইডাররা অর্ডারটি থেকে কত আয় হবে তা দেখতে পান।’
ফুডি রাইডারদের দুর্ঘটনা বা চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজন হলে মানবিক দিক বিবেচনা করে সহায়তা করে। তবে এই সুবিধা স্থায়ী, সর্বজনীন বা বাধ্যতামূলক নয়।-মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ মান্নান, চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও), ফুডি
ফুডির সিওও মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ মান্নান স্ট্রিমকে বলেন, ‘ফুডি তাদের রাইডারদের ফ্রিল্যান্সার ও চুক্তিভিত্তিক রাইডার হিসেবে নিয়োগ দেয়। ফলে তাঁরা প্রচলিত শ্রম আইনের আওতায় পড়েন না। তবে এই খাতটি ধীরে ধীরে আনুষ্ঠানিক কাঠামোয় আসছে। শ্রম আইনের প্রযোজ্যতা নিয়ে নীতিনির্ধারক মহলে আলোচনা চলছে।’
যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সাল স্ট্রিমকে বলেন, 'আমাদের তত্ত্বাবধায়নের ঘাটতি আছে। সরকারের ব্যর্থতা আছে। বিদেশে সুবিধা দিচ্ছে একটা প্রতিষ্ঠান, অথচ বাংলাদেশে একটুও পাচ্ছি না। এর মানে আমরা আমাদের হিস্যা বুঝে নিতে পারিনি।'
ফারুখ ফয়সাল বলেন, 'আমাদের ট্রেড ইউনিয়গুলোকে আরও স্বাধীন হতে হবে। যেকোনো রাজনৈতিক চাপ থেকে মুক্ত হয়ে কাজ করতে হবে। ডেলিভারিম্যানসহ এমন পেশার সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে।'
ট্রেড ইউনিয়ন নেতা মঞ্জুর মঈন স্ট্রিমকে বলেন, ‘ছুটি এবং ন্যূনতম আয়ের নিশ্চয়তা অবশ্যই দিতে হবে। এটা একজন শ্রমিকের অধিকার। কিন্তু অধিকাংশ রাইডার জানেন না, শ্রম আইন কী বা এটা কীভাবে কাজ করে। ফলে যে যেভাবে পারছে, আমার দেশে ব্যবসা করে চলে যাচ্ছে।’
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া স্ট্রিমকে বলেন, ‘আইনের ঠিকঠাক প্রয়োগ করা গেলে অর্থনৈতিক বৈষম্য অনেকটা কমে আসবে। ‘ফ্রিল্যান্সার’ বলে রাইডারদের যতদিন সুবিধার বাইরে রাখা হবে, ততদিন এই সমস্যার সমাধান হবে না।’
মন্তব্য করতে নারাজ পাঠাও
এসব বিষয়ে জানতে এক মাসের বেশি সময় ধরে পাঠাও-এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি কর্তৃপক্ষের। গত জুলাই মাসের শুরু থেকে পাঠাও-এর জনসংযোগ প্রধান ফয়েজ ফয়সালকে বারবার ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
পাঠাওয়ের হটলাইন নাম্বার, সাপোর্ট নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা বলেন, কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করবে। কোনো উত্তর না পেয়ে গত ৪ জুলাই মেইল করা হয়। কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করবে বলে মেইলের উত্তর দেওয়া হলেও যোগাযোগ করেনি।
সর্বশেষ আজ শনিবার (৯ আগস্ট) পাঠাও ফুডের ওয়েবসাইটে দেওয়া ঠিকানায় গেলে সেখানে উপস্থিত কর্মীরা জানান, জনসংযোগ বিষয়টি হেড অফিস থেকে দেখা হয়। শুক্র-শনিবার হেড অফিস বন্ধ থাকে। তাঁরা কোনো তথ্য দিতে পারবেন না।
এক মাসের বেশি সময় ধরে যোগাযোগের চেষ্টার কথা জানালে তাঁরা কথা বলিয়ে দেন সহকারী ব্যবস্থাপক সজীব সাহার সঙ্গে। সজীব সাহাকে পুরো ঘটনা জানলে তিনিও কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করবে বলে বলেন। তবুও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে সজীব সাহাকে কয়েকবার কল করার পর প্রতিবেদকে কল করেন পাঠাও-এর জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়েজ ফয়সাল।
তবে তিনিও তথ্য দিনে অসম্মতি জানান। দিনভর অপেক্ষা করিয়ে তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘আজ ছুটির দিন। আমরা কেউ এসব বিষয়ে কথা বলার এখতিয়ার রাখি না। শুধু পাঠাওয়ের সিইও এসব বিষয়ে কথা বলেন। পাঠও ফুডের প্রধানও এ ব্যাপারে কথা বলতে পারবেন না।’
আন্দোলনে ফুডপান্ডার রাইডাররা
এদিকে সর্বনিম্ন ৪০ টাকা ডেলিভারি চার্জসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন ফুডপান্ডার রাইডাররা। রাইডারদের বিভিন্ন ফেসবুক এবং টেলিগ্রাম গ্রুপে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তাদের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১০ আগস্ট কর্মবিরতি, ১১ আগস্ট সাইকেল র্যালি ও ১২ আগস্ট কমপ্লিট শাটডাউন।
রাইডারদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ডেলিভারি চার্জ সর্বনিম্ন ৪০ টাকা দিতে হবে, পান্ডামার্ট থেকে একাধিক অর্ডার এলে প্রতিটি অর্ডারের জন্যে সর্বনিম্ন ৪০ টাকা এবং দূরত্ব অনুযায়ী তার যথাযথ চার্জ দিতে হবে, একটি অর্ডার হাতে থাকাকালে, আরেকটি অর্ডার এলেও ডেলিভারি চার্জ কমানো যাবে না, কোনো ব্যাচ সিস্টেম থাকবে না, পাঁচ কিলোমিটারের জন্য সব ব্যাচকেই সমান চার্জ দিতে হবে, কোনো অর্ডার ক্যানসেল হলেও এর পুরো টাকা রাইডারকে দিতে হবে ।
আন্দোলনে সক্রিয় গুলশান জোনের রাইডার নীরব স্ট্রিমকে বলেন, ‘একসঙ্গে দুইটা অর্ডার পেলে ডেলিভার্জ কমায়ে দেওয়া হয়। অর্ডার ক্যানসেল করা হলে তার কোনো চার্জ দেয় না কিন্তু আমাদের তো ঠিকই পরিশ্রম করতে হয়। অনলাইনে টিপস পেলে সেখান থেকেও টাকা কাটা হয়। এসবের প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন করছি।’
ফুডপান্ডার বিরুদ্ধে কথা বললে আইডি ব্যান করে দেওয়া হয় বলেও জানান নীরব। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের ডাক দেওয়ায় আমাদের অন্তত ১০০ জন রাইডারের আইডি ব্যান করে দিয়েছে ফুড পান্ডা। আন্দোলনে যাওয়ার আগে আমরা তাদের সঙ্গে বসেছি, কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, ভালো না লাগলে চলে যান।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক রাইডার বলেন, ‘গত বছর আমাদের কয়েকজন রাইডার ভাই আন্দোলন করেছেন। সে সময় ১০ জন রাইডারের আইডি ব্যান করে দেওয়া হয়েছিল। নাম প্রকাশ করলে আমার আইডিও ব্যান করে দিতে পারে। আমি আর ফুডপান্ডার সঙ্গে কাজ করতে পারব না।’
নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক শাহমান মৈশান ‘শিল্পী সুলতানের উত্তরাধিকার: কল্পনা সৌন্দর্য ও সহজ মানুষের রাজনীতি’ শিরোনামে প্রবন্ধে তিনি সুলতানের জীবন-দর্শন ও চিত্রকর্ম নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন।
২ ঘণ্টা আগেনিয়ন্ত্রিত বনভূমির পরিমাণ দেশের মোট আয়তনের ২০ শতাংশে উন্নীত করতে বাংলাদেশে সরকার সুপরিকল্পিত কর্মসূচি গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
৩ ঘণ্টা আগেসিইসি বলেন, ‘গত বছরের জুলাই আন্দোলনের পর থেকে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, আপনারা দেখেছেন। সেদিক থেকে অবশ্যই চ্যালেঞ্জ আছে। তারপরও আমি বলব, জুলাই আন্দোলনের পরে সবাই শান্তিতে ঘুমাইতে পারছেন।’
৬ ঘণ্টা আগে‘১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর যে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল, তা ২৮ বছরেও বাস্তবায়ন করেনি রাষ্ট্র। পাহাড়ে বিদ্যমান সমস্যাগুলো নতুন নতুন রূপে দেখা দিচ্ছে। সমতলের পরিস্থিতি আরও নাজুক।’
৭ ঘণ্টা আগে