leadT1ad

মৃত শাবকের পাশেই দুদিন ধরে দাঁড়িয়ে আছে মা হাতি

দুদিন আগে মারা যাওয়া শাবকের নিথর দেহের পাশেই ‘পাথরের মতন’ দাঁড়িয়ে আছে মমতাময়ী মা হাতি। মানুষের আর বুনো প্রাণীর এখানে যেন বিশেষ কোনো তফাৎ নেই। মানুষের উপস্থিতি টের পেলেই বিরক্ত হয়ে তেড়ে আসছিল হাতিটি। মঙ্গল ও বুধবার দুদিন ধরে প্রচেষ্টা করেও হাতি শাবকের মৃতদেহ কাপ্তাই হ্রদ থেকে উদ্ধার করতে পারেনি বন বিভাগ।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
রাঙামাটি

প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ৫৫
মৃত শাবকের পাশে দাঁড়িয়ে আছে মা হাতি। সংগৃহীত ছবি

খাড়া পাহাড় থেকে পা পিঁছলে কাপ্তাই হৃদের পানিতে পড়ে যায় হাতি শাবক। আহত হয়ে পানিতে ডুবে যায় শাবকটি। আর উঠতে পারেনি। পরে মৃত অবস্থায় ভেসে উঠে। শাবকের এই মৃত্যু যেন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না মা হাতিটি। দুদিন ধরেই মৃত শাবকের পাশে অপেক্ষা করছে মা হাতি।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটে সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের কাচালংমুখ বনশুল্ক ও পরীক্ষণ ফাঁড়ির আওতাধীন রাঙামাটির বরকল উপজেলার বরুনাছড়ি গ্রামের লিটনের টিলায় মারা যায় হাতি শাবকটি। কিন্তু শাবকটির মৃত্যু মেনে নিতে পারছে তার সন্তানের মৃত্যু। গীতিকার হায়দার হোসেনের বিখ্যাত গানের পঙক্তিটি এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক–‘যার চলে যায় সেই বুঝে হায় বিচ্ছেদ কী যন্ত্রণা’। দুদিন আগে মারা যাওয়া শাবকের নিথর দেহের পাশেই ‘পাথরের মতন’ দাঁড়িয়ে আছে মমতাময়ী মা হাতি। মানুষের আর বুনো প্রাণীর এখানে যেন বিশেষ কোনো তফাৎ নেই।

দাঁড়িয়ে থাকা মা হাতিটি মানুষের উপস্থিতি টের পেলেই বিরক্ত হয়ে তেড়ে আসছিল। মঙ্গল ও বুধবার দুদিন ধরে প্রচেষ্টা করেও হাতি শাবকের মৃতদেহ কাপ্তাই হ্রদ থেকে উদ্ধার করতে পারেনি বন বিভাগ। ইতোমধ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চিকিৎসকদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছেন।

স্থানীয়দের মতে, মারা যাওয়া হাতিটি সেই শাবক; যেটি সম্প্রতিকালে 'গোলাপি হাতি' হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। হাতি শাবকের বয়স ৮-১০ মাস হতে পারে বলছে বন বিভাগ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সকাল থেকেই বন বিভাগ শাবক হাতিটি উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হচ্ছে। কেন না মঙ্গলবার দিনভর কাপ্তাই হ্রদে ডুবে মারা যাওয়া হাতি শাবকটির পাশের টিলাতেই মা হাতি দাঁড়িয়ে ছিল। বুধবারও একইভাবে দাঁড়িয়ে ছিল মা হাতিটি। এ কারণে দুইদিনেও শাবকটি কাপ্তাই হ্রদ থেকে উদ্ধার করা হয়নি। তবে বুধবার পানিতে ভাসমান হাতি শাবকের মৃতদেহের অবস্থান স্থানান্তর হওয়ায় মায়ের অবস্থানও পাল্টেছে। বুধবার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। হাতির মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে হয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও।

জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রফিকুজ্জামান শাহ স্ট্রিমকে বলেন, ‘হাতি শাবক মৃত্যুর ঘটনায় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ভেটেরিনারি সার্জনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। ওই কমিটিসহ আমরা আজকে (বুধবার) আবারও ঘটনাস্থলে গিয়েছি। আজকে গিয়ে আমরা দেখতে পাই মৃত হাতির বাচ্চাটা যেখানে ছিল সেখানে নেই। অন্যত্র চলে গেছে। আর মা হাতিটি ৮-১০ ফুটের মধ্যেই দাঁড়িয়ে আছে।’

ডিএফও আরও বলেন, 'যেহেতু মা হাতিটি সেখানে অবস্থান করছে, আমরা কাছাকাছি যেতে পারিনি। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা যে টিম পাঠিয়েছেন তারাও নিশ্চিত হয়েছেন যে শাবকটি পড়ে গিয়েই হ্রদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে। যেহেতু হাতির বাচ্চাটির কাছে যাওয়া যাচ্ছে না। তাই পোস্টমর্টেম করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন আমরা মা হাতি ও হাতির পাল থাকা অবস্থায় সেদিকে যেন না যাই। যদি হাতির পাল সেখান থেকে সরে যায় তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

বন বিভাগের তথ্যমতে, পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন কাপ্তাই ও রাজস্থলী উপজেলা এবং উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন বরকল ও লংগদু উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে বুনো হাতির পাল দেখা যায়। এসব বুনো হাতির পালে ২৪-২৬টি হাতে দেখা যায়।

Ad 300x250

সম্পর্কিত