leadT1ad

স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের মৃত্যুর ঘটনায় পাঁচ নারী অধিকারকর্মীর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা স্ট্রিম সম্পাদকের উত্তর

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

স্ট্রিম গ্রাফিক

ঢাকা স্ট্রিমের গ্রাফিক্স ডিজাইনার স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের মৃত্যুর ঘটনায় গত ১৯ অক্টোবর প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক বরাবর পাঁচজন বিশিষ্ট নারী অধিকারকর্মী চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তাঁরা স্বর্ণময়ী বিশ্বাস এবং আরও কয়েকজন নারী কর্মীর করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নেওয়া পদক্ষেপের ব্যাপারে জানতে চান।

পরদিন ২০ অক্টোবর ঢাকা স্ট্রিমের প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক গোলাম ইফতেখার মাহমুদ তাঁদের চিঠির উত্তর পাঠান। ঢাকা স্ট্রিমের পাঠকদের জন্য সম্পাদকের উত্তর এবং পাঁচজন নারী অধিকারকর্মীর চিঠি এখানে তুলে ধরা হলো:

ঢাকা স্ট্রিমের উত্তর

বিষয়: ঢাকা স্ট্রিমের প্রতিক্রিয়া
সম্মানিত সর্বজন,

স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের করুণ মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আলোচনার বিষয়ে আপনাদের চিঠির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

আমাদের বিশ্বাস, এই বিষয়ে আপনাদের সম্পৃক্ততা ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। আমরা গতকাল (১৯ অক্টোবর ২০২৫) প্রকাশিত আমাদের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতেও এই ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি।

আপনারা জানেন, স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের পরিবার ইতিমধ্যেই অস্বাভাবিক মৃত্যুর একটি মামলা দায়ের করেছে। তদন্ত চলমান থাকায় এ বিষয়ে মন্তব্য করা আমাদের পক্ষে সমীচীন নয়। তবে ১৩ জুলাই আমাদের বাংলা কনটেন্ট প্রধান আলতাফ শাহনেওয়াজকে নিয়ে ঢাকা স্ট্রিমের কিছু কর্মীর দায়ের করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কী পদক্ষেপ নিয়েছিলাম, সেটি স্পষ্ট করার সুযোগ পেয়ে আমরা কৃতজ্ঞ।

সেই অভিযোগপত্রে ঢাকা স্ট্রিমের বিভিন্ন বিভাগের ২৮ জন কর্মী সই করেন। তাঁদের মধ্যে সাতজনের নির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল, বাকিরা সেই অভিযোগের প্রতি সমর্থন জানান।

অভিযোগ পাওয়ার দিনই একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কমিটির সদস্য ছিলেন মরিয়ম আখতার সুমি (এক্সিকিউটিভ–এইচআর ও অ্যাডমিন) এবং পি এম সজল আহমেদ (হেড অব এইচআর)। নানাবিধ কারণে কমিটির গঠনপ্রক্রিয়া শ্রম আইন (সংশোধিত ২০২২)–এর শর্তগুলো সম্পূর্ণভাবে প্রতিপালন করা যে সম্ভব হয়নি, সে সম্পর্কে আমরা অবগত। এর জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।

আমরা অভিযোগকারী সাত সহকর্মীর সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলি। পরে তাঁদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। আলোচনায় আলতাফ শাহনেওয়াজকে প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরিচ্যুত অথবা বার্তাকক্ষ থেকে প্রত্যাহার– এই দুটির মধ্যে কোন সিদ্ধান্তে তাঁরা সম্মত তা জানতে চাওয়া হয়। অভিযোগকারী সাতজন নারী সহকর্মী আলতাফ শাহনেওয়াজকে বার্তাকক্ষ থেকে সরিয়ে নেওয়া এবং তাঁর সঙ্গে তাঁদের সরাসরি যোগাযোগ না থাকা নিশ্চিত করার প্রস্তাব করেন। অভিযোগকারীদের পক্ষ থেকে এর বাইরে আর কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থার প্রস্তাব করা হয়নি।

প্রস্তাব অনুযায়ী, তাৎক্ষণিকভাবে আলতাফ শাহনেওয়াজকে বার্তাকক্ষ থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর পরবর্তী তিন মাস শাহনেওয়াজকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এই সময়ের মধ্যে আর কোনো নতুন অভিযোগ ওঠেনি। আমরা সবাইকে উৎসাহিত করেছিলাম, যেন কোনো অসঙ্গতি দেখলে তা জানানো হয়। স্বর্ণময়ী বিশ্বাসও এর মধ্যে আর কোনো অভিযোগ উত্থাপন করেননি।

আমরা কৃতজ্ঞ যে আমাদের এই শোকের সময়ে আপনারা আমাদের সহকর্মীর মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আহ্বানের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

এই পরিপ্রেক্ষিতে, এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে আমাদের কার্যালয়ে আপনারা স্বাগত। আপনারা এসে আমরা কী করেছি তা বোঝার জন্য সহকর্মীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেন এবং প্রয়োজনে আমাদের কোনো ত্রুটি থাকলে সেটি সংশোধন করার পরামর্শ দিতে পারেন।

ঢাকা স্ট্রিমের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো অংশ অস্পষ্টতা বা দ্বিধা তৈরি করে তার জন্য আমরা দুঃখিত। আমরা আশ্বস্ত করছি, সংশ্লিষ্ট পক্ষের তদন্তে আমরা সব সময় আন্তরিকভাবে সহায়তা করতে প্রস্তুত আছি।

সকল কর্মীর বিশেষ করে নারী কর্মীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা ঢাকা স্ট্রিমের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয়। বর্তমানে ঢাকা স্ট্রিমে আটজন নারী কর্মী নিরাপদে কর্মরত আছেন।

আপনাদের চিঠির জন্য পুনরায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

শুভেচ্ছান্তে,
প্রধান সম্পাদক
ঢাকা স্ট্রিম

পাঁচ নারী অধিকারকর্মীর চিঠি

গোলাম ইফতেখার মাহমুদ
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক
ঢাকা স্ট্রিম

বিষয়: ঢাকা স্ট্রিমের বাংলা বিভাগের প্রধানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রসঙ্গে

জনাব,

আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে আপনার নিউজপোর্টালে কর্মরত গ্রাফিক্স ডিজাইনার স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের আত্মহত্যার খবর জানতে পারি। একই সঙ্গে জানতে পারলাম যে স্বর্ণময়ী বিশ্বাস এবং আরও কয়েকজন নারী সহকর্মী আপনার কাছে বাংলা বিভাগের প্রধান আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন।

বাংলাদেশে নারী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, উচ্চ আদালত থেকে ২০১০ সালে কর্মক্ষেত্রে যৌনহয়রানি প্রতিরোধ এবং অভিযোগ নিরসনের কতগুলো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। আপনার প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগ কর্তৃক প্রচারিত বিবৃতিটি পড়ার পর আমাদের মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছে। আমরা জানতে চাই, এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে আদালতের নির্দেশনা সাপেক্ষে আপনি কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন? যেমন আমরা জানতে চাই যে বিবৃতিতে উল্লেখিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটিতে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নারী-পুরুষের অনুপাত রক্ষিত হয়েছিল কিনা বা বহিঃস্থ সদস্য ছিলেন কিনা? আরও প্রশ্ন জাগে যে তদন্ত কমিটির কার্যপরিধি (টার্মস অব রেফারেন্স) কী ছিল? কারণ অভিযোগ ছিল যৌন হয়রানির, ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণের নয়। অথচ আপনাদের বিবৃতিতে দেখছি তদন্ত কমিটি ‘অসৌজন্যমূলক আচরণের’ প্রমাণের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিয়েছে। আর শুধু বার্তাকক্ষ থেকে একজন বিভাগীয় প্রধানকে প্রত্যাহার করাটা যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে আদৌ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ কিনা এ প্রশ্নও করতে হচ্ছে আমাদের কারণ এ ধরনের ঘটনায় অভিযুক্তকে সাময়িক বরখাস্তের নিয়ম থাকলেও আপনার প্রতিষ্ঠান যে তা করেনি সেটা আপনাদের বিবৃতি থেকে স্পষ্ট। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে আমরা যা জেনেছি, তা বিবৃতির বক্তব্য এবং যৌন হয়রানি প্রশ্নে ঢাকা স্ট্রিমের প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

আপনাদের দাবি অনুযায়ী, গৃহীত পদক্ষেপের ব্যাপারে অভিযোগকারীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এ দাবির পক্ষে আপনাদের কাছে কোনো প্রমাণ আছে কিনা আমরা তা-ও জানতে চাই।

আপনার উত্তরের প্রত্যাশায়,

রেহনুমা আহমেদ
গীতিআরা নাসরীন
মির্জা তাসলিমা সুলতানা
সায়দিয়া গুলরুখ
সামিনা লুৎফা

Ad 300x250

সম্পর্কিত