স্ট্রিম ডেস্ক
বিশ্বে বিরল খনিজ সম্পদের প্রতিযোগিতায় চীন অন্য সব দেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। এই খনিজ সম্পদ আধুনিক প্রযুক্তি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তিও করেছে। তবে বাস্তবতা হলো, এই খনিজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ আরও বেশি চীনের দিকেই ঝুঁকছে।
যুক্তরাষ্ট্র নিজস্ব সরবরাহ শৃঙ্খলা গড়ে তুলতে বড় উদ্যোগ নিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন দেশীয় ও মিত্র দেশগুলোতে খনিজ প্রকল্পে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। একটি কৌশলগত খনিজ মজুদ গঠনের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প সরকার খনিজ প্রকল্প অনুমোদনের নিয়ম সহজ করছে, পরিবেশগত বিধিনিষেধ শিথিল করছে এবং নতুন প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার জন্য ভর্তুকি দিচ্ছে। তবে চীনের যে বড় ও মজবুত ভিত্তি, তা ধরতে এ উদ্যোগ হয়তো অনেক দেরিতে শুরু হয়েছে।
চীন দীর্ঘদিন ধরে বিরল খনিজ উত্তোলন, পরিশোধন ও উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে প্রভাব তৈরি করেছে। বর্তমানে তারা বিশ্বের প্রায় ৭০% বিরল খনিজ উত্তোলন এবং ৯০% পরিশোধনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বিরল খনিজ কী
বিরল খনিজ হলো রাসায়নিকভাবে মিল আছে এমন ১৭টি ধাতুর সমষ্টি। এর মধ্যে নিওডিমিয়াম, ডাইস্প্রোসিয়াম ও প্রাসিওডিমিয়ামের মতো ধাতু রয়েছে। এগুলো আধুনিক প্রযুক্তির নীরব সহায়ক।
উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চুম্বক তৈরিতে এসব ধাতুর প্রয়োজন হয়, যা বৈদ্যুতিক গাড়ি, উইন্ড টারবাইন, স্মার্টফোন, সেমিকন্ডাক্টর ও নিখুঁত নির্দেশনাযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়। এই উপাদানগুলো ছাড়া সবুজ জ্বালানির রূপান্তর, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ডিজিটাল অর্থনীতি কার্যত থেমে যাবে।
চীনের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ
চীন শুধু এই খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে না—বরং প্রতিযোগীদের অনেক পিছনে ফেলেছে। তারা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলার ওপর এমন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে, যা ভূরাজনীতিক ভারসাম্যকেও পাল্টে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র উন্নয়নের গতি বাড়ালেও চীন এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রণ আরও কড়াকড়ি করছে।
এ বিষয়ে সাম্প্রতিক ও কৌশলগত পদক্ষেপ নেয় চীন গত ৯ অক্টোবর। সেদিন তারা বিরল খনিজ চুম্বক, অ্যালয় এবং এমনকি চীনা উৎসযুক্ত উপাদান থাকা সেমিকন্ডাক্টরের রপ্তানিতে লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করে।
এখন থেকে চীনা উৎস থেকে আসা খনিজ উপাদানযুক্ত চুম্বক বা অ্যালয় রপ্তানি করতে হলে কোম্পানিগুলোকে চীন সরকারের অনুমতি নিতে হবে। আরও পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদানও চীন সরকারের নিয়ন্ত্রণের তালিকায় যোগ হয়েছে। আগে যেখানে ২টি উপাদান নিয়ন্ত্রিত ছিল, এখন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭-এ।
এই নিয়ম শুধু চীনের অভ্যন্তরে নয়, বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলছে। যেসব বিদেশি প্রতিষ্ঠান চীনা প্রযুক্তি বা কাঁচামাল ব্যবহার করে, তাদের এখন রপ্তানির জন্য বেইজিংয়ের অনুমতি নিতে হচ্ছে। একে শুধু রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নয়—চীনের কৌশলগত চাপ প্রয়োগ হিসেবেও বিবেচনা করা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার আগে এই পদক্ষেপ চীনের শক্তি প্রদর্শনের ইঙ্গিত দেয়। তারা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছে—প্রয়োজনে বিরল খনিজকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে। পাল্টা জবাব দেবে শুল্ক বা প্রযুক্তি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে।
বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বাণিজ্য রুট দিয়ে চীন ইতোমধ্যে আফ্রিকা, ওশেনিয়া ও লাতিন আমেরিকার বিকল্প উৎস থেকে আমদানি শুরু করেছে। ফলে সয়াবিন বা চিপসের মতো পণ্যে তাদের বিকল্প আমদানি উৎস তৈরি হয়েছে।
এতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চীনের নির্ভরতা এবং সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দর-কষাকষির শক্তিও কমেছে।
চীন অর্থনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজারকে প্রভাবিত করছে। তারা জানে, সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর বাজার নিয়ন্ত্রণ মানেই বৈশ্বিক কৌশল নির্ধারণে ভূমিকা রাখা।
এটা শুধু খনিজেই সীমাবদ্ধ নয়। চীনে খনিজ খাত ও উৎপাদন শিল্প একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। যেসব অঞ্চলে খনিজ পরিশোধন হয়, সেখানেই ব্যাটারি, ইলেকট্রনিক্স ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তি উৎপাদন হয়।
এই সজ্জিত ও একত্রিত কাঠামো চীনকে খরচ ও উৎপাদনের গতিতে অনেক এগিয়ে রেখেছে। বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা এখনও খণ্ডিত, বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীল এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পিছিয়ে আছে।
কীভাবে এই আধিপত্য তৈরি করল চীন
চীনের এই আধিপত্য কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। ১৯৮০-র দশক থেকেই চীন বিরল খনিজকে কৌশলগত সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত করে। তারা দক্ষ জনবল তৈরি করে, প্রকৌশল শিক্ষা জোরদার করে এবং এমন পরিবেশগত ছাড় দিয়েছে, যা অনেক দেশ এড়িয়ে গেছে।
যখন পশ্চিমা দেশগুলো শিল্প উৎপাদন বিদেশে সরিয়ে নিচ্ছিল, চীন তখন নিজস্ব সক্ষমতা গড়ে তুলছিল। চীন পরিবেশগত ক্ষতি—যেমন খনন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের বিষাক্ত বর্জ্য—মেনে নিয়ে যে পথে অন্য দেশরা পা বাড়াতে ভয় পেয়েছিল, সে পথে এগিয়েছে।
তারা হাজার হাজার প্রকৌশলীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং খনি থেকে কারখানা পর্যন্ত একই অঞ্চলে সংযুক্ত একটি একীভূত কাঠামো গড়ে তুলেছে। এভাবে উৎপাদন খরচ কমিয়েছে ও সময় বাঁচিয়েছে। এর ফলে বিরল খনিজ উপাদান এখন চীনের জন্য একটি জাতীয় নিরাপত্তা সম্পদে পরিণত হয়েছে।
এখন এই সক্ষমতাকে তারা ভূরাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। যেমন সরবরাহ ও দাম নিয়ন্ত্রণ করে নিজেদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
যুক্তরাষ্ট্র যদি শুল্ক আরোপ, ঘরোয়া উৎপাদকদের ভর্তুকি ও কৌশলগত মজুদ গড়ার মাধ্যমে হস্তক্ষেপ করে, তাহলে বাজারে স্থিতিশীলতা নয়, বরং অস্থিরতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে বৈশ্বিক উৎপাদকরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।
এখন দাম ওঠানামা করছে নীতিগত ঘোষণায়, বাজার বাস্তবতায় নয়। আর এই অনিশ্চয়তা চীনের পক্ষে কাজ করছে, কারণ তার হাতে রয়েছে সবচেয়ে গভীর ও বিস্তৃত নিয়ন্ত্রণ।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, যেসব দেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সম্পদ নির্ভরতা কমানো’ উদ্যোগে অংশ নিচ্ছে, তারাও এখনও চীনের প্রযুক্তি ও দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল।
উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার নতুন খনিগুলো থেকেও অনেক সময় কাঁচামাল পরিশোধনের জন্য চীনেই পাঠানো হয়। পশ্চিমা দেশগুলো হয়তো খনিজের মালিক, কিন্তু পরিশোধনের কৌশল চীনের হাতে।
অর্থনৈতিক প্রভাব
এই অবস্থার বড় অর্থনৈতিক প্রভাব রয়েছে। বৈশ্বিক খনিজ বাণিজ্যের পুনর্গঠনের ফলে এক নতুন শিল্প চক্র তৈরি হচ্ছে। এখন বিনিয়োগ যাচ্ছে অনুসন্ধান, পরিশোধন, পুনর্ব্যবহার ও বিকল্প উপকরণের গবেষণায়।
পশ্চিমা দেশগুলো যখন নিজেদের উদ্যোগ বড় করার চেষ্টা করছে, চীন ততদিনে আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে। সেখানে তারা লিথিয়াম, কোবাল্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খনিজের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ও কোম্পানিগুলো একযোগে কাজ করছে, যাতে ভবিষ্যতের সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। ফলে অন্য দেশগুলো যখন এখনও প্রস্তুতির পথে, চীন তখন পরবর্তী প্রজন্মের খনিজ সরবরাহ ইতিমধ্যেই নিশ্চিত করে ফেলেছে।
সাম্প্রতিক তথ্যই বাস্তবতা তুলে ধরে। ২০২৫ সালে চীনের বিরল খনিজ রপ্তানি বছরে ৮% কমেছে। এই হ্রাস উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়ন্ত্রণের ফলে। একই সময়, দেশটির অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বেড়েছে, কারণ বৈদ্যুতিক গাড়ি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিখাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
চীন এখন নিজের উৎপাদন নিজস্ব শিল্পখাতে কাজে লাগাচ্ছে, বিশ্ব বাজারে নয়। এই রূপান্তর তাকে বৈশ্বিক সরবরাহকারীর চেয়ে স্বনির্ভর ভোক্তা হিসেবে আরও শক্তিশালী করে তুলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে চীনের বিরল খনিজ নিয়ন্ত্রণ একটি ভিন্ন ধরনের বাণিজ্যযুদ্ধ। এটি আর টিভির ওপর শুল্ক নয়—এটি এমন খনিজের নিয়ন্ত্রণ, যা যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি, শক্তি ও প্রতিরক্ষা খাত চালিত করে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এবং বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে একটি বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর এই সময়ে এটি বৈদ্যুতিক গাড়ি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা খাতকে বিপদে ফেলতে পারে।
এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশন অব কানাডার ভিনা নাজিবুল্লাহ বলেন, ‘এই পরিস্থিতি সব দেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা হওয়া উচিত। এখনই বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে হবে।’
সবচেয়ে বড় ভয় হলো—চীন যদি সরবরাহ কমিয়ে দেয়, দাম বাড়িয়ে দেয় বা এমন নিয়ম চালু করে যাতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে বিশ্ব কার্যত ‘জিম্মি’হয়ে পড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্লেষকরাও স্বীকার করছেন—চীনের সহ্যক্ষমতা বেশি। তারা অর্থনৈতিক চাপ সইতে পারে, এমনকি তাদের সর্বশেষ পাঁচবছর মেয়াদি পরিকল্পনায় শুল্ককে অর্থনীতির ধীরগতির কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। চীন এখন এমন একটি বড় চুক্তির দিকে এগোচ্ছে, যা তাদের স্বার্থকে এগিয়ে নেবে।
সম্ভাবনা ও ঝুঁকি
বিনিয়োগকারীদের জন্য এই পরিবর্তন একসঙ্গে সম্ভাবনা ও ঝুঁকি নিয়ে এসেছে। বিরল খনিজ ও কৌশলগত খনিজ এখন পণ্য ও প্রযুক্তির মাঝামাঝি এক নতুন সম্পদশ্রেণির ভিত্তি হয়ে উঠছে। এসব খনিজের দাম শুধু চাহিদার ওপর নয়, নীতিমালার ওপরও নির্ভর করবে।
প্রতিটি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ, রাষ্ট্রীয় মালিকানা বা নতুন জোট বাজারে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলবে। বাজার হবে খুবই অস্থির। তবে যারা আগেভাগে ও শৃঙ্খলাপূর্ণভাবে বিনিয়োগ করবে, তারা বড় লাভবান হতে পারে।
সরকারগুলোর জন্য এই পরিস্থিতি থেকে শেখার বিষয় হলো—দূরদৃষ্টি থাকা জরুরি। চীনের সফলতা কেবল খনিজ সম্পদে নয়, তাদের কৌশলে। তারা অনেক আগেই বুঝেছিল—ভৌত উপকরণের নিয়ন্ত্রণই একুশ শতকে অর্থনৈতিক শক্তির ভারসাম্য নির্ধারণ করবে।
চীন উৎপাদন সক্ষমতা গড়েছে, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করেছে এবং এমন নীতিগত কাঠামো বানিয়েছে, যা এখন তাদের ভূরাজনৈতিক প্রভাবের ভিত্তি। এই কাঠামো অনুকরণ করতে কয়েক বছর নয়, দশক লেগে যাবে।
২০২৬ সাল ও পরবর্তী সময়ের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা নির্ধারিত হবে বিরল খনিজ ঘিরেই। এটি নতুন জোট গঠন করছে, বাণিজ্য প্রবাহ বদলাচ্ছে এবং বিনিয়োগের নতুন ধারণা তৈরি করছে।
যুক্তরাষ্ট্র আইন তৈরি করতে ও অর্থ ব্যয় করতে পারে, কিন্তু চীন ইতোমধ্যেই বাস্তব কাঠামো গড়ে ফেলেছে। তাই নতুন এই সম্পদ-নির্ভর যুগে চীন স্পষ্টভাবে এগিয়ে। এই উপলব্ধি এখন আর্থিক বাজারে প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। আর তা বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতিতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।
বিরল খনিজের নিয়ন্ত্রণ মানেই আধুনিক জীবনের নিয়ন্ত্রণ। ব্যাটারি থেকে শুরু করে মাইক্রোচিপ—সবকিছু নির্ভর করে এমন এক সরবরাহ শৃঙ্খলার ওপর, যার নিয়ন্ত্রণ চীনের হাতে।
বিশ্ব এখন কেবল বুঝতে শুরু করেছে—এই নির্ভরতা কাটানো কতটা কঠিন ও ব্যয়বহুল হবে।
টেসলার মতো বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতারা চুম্বকের সংকটে পড়ছে। টারবাইন যন্ত্রাংশের ঘাটতির কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতেও অগ্রগতি থেমে যাচ্ছে। এমনকি মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগও ক্ষেপণাস্ত্র নির্দেশনা ব্যবস্থার সরবরাহ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপট? পশ্চিমা দেশের জন্য অনেকটাই হতাশাজনক। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, বিরল খনিজের দৌড় ইতোমধ্যেই শেষ; আর চীন সে দৌড়ে জিতে গেছে। শুধু তা-ই নয়, বেইজিং ২০৩০ সাল নাগাদ নতুন শিল্পবিপ্লবের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।
বিরল খনিজ হলো আধুনিক শক্তির প্রতীক। ক্ষমতা এখন শুধু কার কাছে বেশি অস্ত্র আছে তা নয়—কার হাতে সেই অস্ত্র তৈরির উপকরণ আছে, সেটাই মুখ্য।
একটি বিষয় স্পষ্ট, তা হলো খনিজই এখন নতুন তেল। আর সেই ‘নল’ ঘুরানোর ক্ষমতা এখন চীনের হাতে।
তথ্যসূত্র: এশিয়া টাইমস, আল-জাজিরা, সিএনএন
বিশ্বে বিরল খনিজ সম্পদের প্রতিযোগিতায় চীন অন্য সব দেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। এই খনিজ সম্পদ আধুনিক প্রযুক্তি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তিও করেছে। তবে বাস্তবতা হলো, এই খনিজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ আরও বেশি চীনের দিকেই ঝুঁকছে।
যুক্তরাষ্ট্র নিজস্ব সরবরাহ শৃঙ্খলা গড়ে তুলতে বড় উদ্যোগ নিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন দেশীয় ও মিত্র দেশগুলোতে খনিজ প্রকল্পে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। একটি কৌশলগত খনিজ মজুদ গঠনের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প সরকার খনিজ প্রকল্প অনুমোদনের নিয়ম সহজ করছে, পরিবেশগত বিধিনিষেধ শিথিল করছে এবং নতুন প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার জন্য ভর্তুকি দিচ্ছে। তবে চীনের যে বড় ও মজবুত ভিত্তি, তা ধরতে এ উদ্যোগ হয়তো অনেক দেরিতে শুরু হয়েছে।
চীন দীর্ঘদিন ধরে বিরল খনিজ উত্তোলন, পরিশোধন ও উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে প্রভাব তৈরি করেছে। বর্তমানে তারা বিশ্বের প্রায় ৭০% বিরল খনিজ উত্তোলন এবং ৯০% পরিশোধনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বিরল খনিজ কী
বিরল খনিজ হলো রাসায়নিকভাবে মিল আছে এমন ১৭টি ধাতুর সমষ্টি। এর মধ্যে নিওডিমিয়াম, ডাইস্প্রোসিয়াম ও প্রাসিওডিমিয়ামের মতো ধাতু রয়েছে। এগুলো আধুনিক প্রযুক্তির নীরব সহায়ক।
উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চুম্বক তৈরিতে এসব ধাতুর প্রয়োজন হয়, যা বৈদ্যুতিক গাড়ি, উইন্ড টারবাইন, স্মার্টফোন, সেমিকন্ডাক্টর ও নিখুঁত নির্দেশনাযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়। এই উপাদানগুলো ছাড়া সবুজ জ্বালানির রূপান্তর, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ডিজিটাল অর্থনীতি কার্যত থেমে যাবে।
চীনের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ
চীন শুধু এই খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে না—বরং প্রতিযোগীদের অনেক পিছনে ফেলেছে। তারা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলার ওপর এমন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে, যা ভূরাজনীতিক ভারসাম্যকেও পাল্টে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র উন্নয়নের গতি বাড়ালেও চীন এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রণ আরও কড়াকড়ি করছে।
এ বিষয়ে সাম্প্রতিক ও কৌশলগত পদক্ষেপ নেয় চীন গত ৯ অক্টোবর। সেদিন তারা বিরল খনিজ চুম্বক, অ্যালয় এবং এমনকি চীনা উৎসযুক্ত উপাদান থাকা সেমিকন্ডাক্টরের রপ্তানিতে লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করে।
এখন থেকে চীনা উৎস থেকে আসা খনিজ উপাদানযুক্ত চুম্বক বা অ্যালয় রপ্তানি করতে হলে কোম্পানিগুলোকে চীন সরকারের অনুমতি নিতে হবে। আরও পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদানও চীন সরকারের নিয়ন্ত্রণের তালিকায় যোগ হয়েছে। আগে যেখানে ২টি উপাদান নিয়ন্ত্রিত ছিল, এখন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭-এ।
এই নিয়ম শুধু চীনের অভ্যন্তরে নয়, বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলছে। যেসব বিদেশি প্রতিষ্ঠান চীনা প্রযুক্তি বা কাঁচামাল ব্যবহার করে, তাদের এখন রপ্তানির জন্য বেইজিংয়ের অনুমতি নিতে হচ্ছে। একে শুধু রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নয়—চীনের কৌশলগত চাপ প্রয়োগ হিসেবেও বিবেচনা করা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার আগে এই পদক্ষেপ চীনের শক্তি প্রদর্শনের ইঙ্গিত দেয়। তারা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছে—প্রয়োজনে বিরল খনিজকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে। পাল্টা জবাব দেবে শুল্ক বা প্রযুক্তি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে।
বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বাণিজ্য রুট দিয়ে চীন ইতোমধ্যে আফ্রিকা, ওশেনিয়া ও লাতিন আমেরিকার বিকল্প উৎস থেকে আমদানি শুরু করেছে। ফলে সয়াবিন বা চিপসের মতো পণ্যে তাদের বিকল্প আমদানি উৎস তৈরি হয়েছে।
এতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চীনের নির্ভরতা এবং সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দর-কষাকষির শক্তিও কমেছে।
চীন অর্থনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজারকে প্রভাবিত করছে। তারা জানে, সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর বাজার নিয়ন্ত্রণ মানেই বৈশ্বিক কৌশল নির্ধারণে ভূমিকা রাখা।
এটা শুধু খনিজেই সীমাবদ্ধ নয়। চীনে খনিজ খাত ও উৎপাদন শিল্প একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। যেসব অঞ্চলে খনিজ পরিশোধন হয়, সেখানেই ব্যাটারি, ইলেকট্রনিক্স ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তি উৎপাদন হয়।
এই সজ্জিত ও একত্রিত কাঠামো চীনকে খরচ ও উৎপাদনের গতিতে অনেক এগিয়ে রেখেছে। বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা এখনও খণ্ডিত, বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীল এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পিছিয়ে আছে।
কীভাবে এই আধিপত্য তৈরি করল চীন
চীনের এই আধিপত্য কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। ১৯৮০-র দশক থেকেই চীন বিরল খনিজকে কৌশলগত সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত করে। তারা দক্ষ জনবল তৈরি করে, প্রকৌশল শিক্ষা জোরদার করে এবং এমন পরিবেশগত ছাড় দিয়েছে, যা অনেক দেশ এড়িয়ে গেছে।
যখন পশ্চিমা দেশগুলো শিল্প উৎপাদন বিদেশে সরিয়ে নিচ্ছিল, চীন তখন নিজস্ব সক্ষমতা গড়ে তুলছিল। চীন পরিবেশগত ক্ষতি—যেমন খনন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের বিষাক্ত বর্জ্য—মেনে নিয়ে যে পথে অন্য দেশরা পা বাড়াতে ভয় পেয়েছিল, সে পথে এগিয়েছে।
তারা হাজার হাজার প্রকৌশলীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং খনি থেকে কারখানা পর্যন্ত একই অঞ্চলে সংযুক্ত একটি একীভূত কাঠামো গড়ে তুলেছে। এভাবে উৎপাদন খরচ কমিয়েছে ও সময় বাঁচিয়েছে। এর ফলে বিরল খনিজ উপাদান এখন চীনের জন্য একটি জাতীয় নিরাপত্তা সম্পদে পরিণত হয়েছে।
এখন এই সক্ষমতাকে তারা ভূরাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। যেমন সরবরাহ ও দাম নিয়ন্ত্রণ করে নিজেদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
যুক্তরাষ্ট্র যদি শুল্ক আরোপ, ঘরোয়া উৎপাদকদের ভর্তুকি ও কৌশলগত মজুদ গড়ার মাধ্যমে হস্তক্ষেপ করে, তাহলে বাজারে স্থিতিশীলতা নয়, বরং অস্থিরতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে বৈশ্বিক উৎপাদকরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।
এখন দাম ওঠানামা করছে নীতিগত ঘোষণায়, বাজার বাস্তবতায় নয়। আর এই অনিশ্চয়তা চীনের পক্ষে কাজ করছে, কারণ তার হাতে রয়েছে সবচেয়ে গভীর ও বিস্তৃত নিয়ন্ত্রণ।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, যেসব দেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রের ‘সম্পদ নির্ভরতা কমানো’ উদ্যোগে অংশ নিচ্ছে, তারাও এখনও চীনের প্রযুক্তি ও দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল।
উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার নতুন খনিগুলো থেকেও অনেক সময় কাঁচামাল পরিশোধনের জন্য চীনেই পাঠানো হয়। পশ্চিমা দেশগুলো হয়তো খনিজের মালিক, কিন্তু পরিশোধনের কৌশল চীনের হাতে।
অর্থনৈতিক প্রভাব
এই অবস্থার বড় অর্থনৈতিক প্রভাব রয়েছে। বৈশ্বিক খনিজ বাণিজ্যের পুনর্গঠনের ফলে এক নতুন শিল্প চক্র তৈরি হচ্ছে। এখন বিনিয়োগ যাচ্ছে অনুসন্ধান, পরিশোধন, পুনর্ব্যবহার ও বিকল্প উপকরণের গবেষণায়।
পশ্চিমা দেশগুলো যখন নিজেদের উদ্যোগ বড় করার চেষ্টা করছে, চীন ততদিনে আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে। সেখানে তারা লিথিয়াম, কোবাল্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খনিজের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ও কোম্পানিগুলো একযোগে কাজ করছে, যাতে ভবিষ্যতের সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। ফলে অন্য দেশগুলো যখন এখনও প্রস্তুতির পথে, চীন তখন পরবর্তী প্রজন্মের খনিজ সরবরাহ ইতিমধ্যেই নিশ্চিত করে ফেলেছে।
সাম্প্রতিক তথ্যই বাস্তবতা তুলে ধরে। ২০২৫ সালে চীনের বিরল খনিজ রপ্তানি বছরে ৮% কমেছে। এই হ্রাস উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়ন্ত্রণের ফলে। একই সময়, দেশটির অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বেড়েছে, কারণ বৈদ্যুতিক গাড়ি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিখাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
চীন এখন নিজের উৎপাদন নিজস্ব শিল্পখাতে কাজে লাগাচ্ছে, বিশ্ব বাজারে নয়। এই রূপান্তর তাকে বৈশ্বিক সরবরাহকারীর চেয়ে স্বনির্ভর ভোক্তা হিসেবে আরও শক্তিশালী করে তুলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে চীনের বিরল খনিজ নিয়ন্ত্রণ একটি ভিন্ন ধরনের বাণিজ্যযুদ্ধ। এটি আর টিভির ওপর শুল্ক নয়—এটি এমন খনিজের নিয়ন্ত্রণ, যা যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি, শক্তি ও প্রতিরক্ষা খাত চালিত করে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এবং বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে একটি বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর এই সময়ে এটি বৈদ্যুতিক গাড়ি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা খাতকে বিপদে ফেলতে পারে।
এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশন অব কানাডার ভিনা নাজিবুল্লাহ বলেন, ‘এই পরিস্থিতি সব দেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা হওয়া উচিত। এখনই বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে হবে।’
সবচেয়ে বড় ভয় হলো—চীন যদি সরবরাহ কমিয়ে দেয়, দাম বাড়িয়ে দেয় বা এমন নিয়ম চালু করে যাতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে বিশ্ব কার্যত ‘জিম্মি’হয়ে পড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্লেষকরাও স্বীকার করছেন—চীনের সহ্যক্ষমতা বেশি। তারা অর্থনৈতিক চাপ সইতে পারে, এমনকি তাদের সর্বশেষ পাঁচবছর মেয়াদি পরিকল্পনায় শুল্ককে অর্থনীতির ধীরগতির কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। চীন এখন এমন একটি বড় চুক্তির দিকে এগোচ্ছে, যা তাদের স্বার্থকে এগিয়ে নেবে।
সম্ভাবনা ও ঝুঁকি
বিনিয়োগকারীদের জন্য এই পরিবর্তন একসঙ্গে সম্ভাবনা ও ঝুঁকি নিয়ে এসেছে। বিরল খনিজ ও কৌশলগত খনিজ এখন পণ্য ও প্রযুক্তির মাঝামাঝি এক নতুন সম্পদশ্রেণির ভিত্তি হয়ে উঠছে। এসব খনিজের দাম শুধু চাহিদার ওপর নয়, নীতিমালার ওপরও নির্ভর করবে।
প্রতিটি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ, রাষ্ট্রীয় মালিকানা বা নতুন জোট বাজারে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলবে। বাজার হবে খুবই অস্থির। তবে যারা আগেভাগে ও শৃঙ্খলাপূর্ণভাবে বিনিয়োগ করবে, তারা বড় লাভবান হতে পারে।
সরকারগুলোর জন্য এই পরিস্থিতি থেকে শেখার বিষয় হলো—দূরদৃষ্টি থাকা জরুরি। চীনের সফলতা কেবল খনিজ সম্পদে নয়, তাদের কৌশলে। তারা অনেক আগেই বুঝেছিল—ভৌত উপকরণের নিয়ন্ত্রণই একুশ শতকে অর্থনৈতিক শক্তির ভারসাম্য নির্ধারণ করবে।
চীন উৎপাদন সক্ষমতা গড়েছে, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করেছে এবং এমন নীতিগত কাঠামো বানিয়েছে, যা এখন তাদের ভূরাজনৈতিক প্রভাবের ভিত্তি। এই কাঠামো অনুকরণ করতে কয়েক বছর নয়, দশক লেগে যাবে।
২০২৬ সাল ও পরবর্তী সময়ের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা নির্ধারিত হবে বিরল খনিজ ঘিরেই। এটি নতুন জোট গঠন করছে, বাণিজ্য প্রবাহ বদলাচ্ছে এবং বিনিয়োগের নতুন ধারণা তৈরি করছে।
যুক্তরাষ্ট্র আইন তৈরি করতে ও অর্থ ব্যয় করতে পারে, কিন্তু চীন ইতোমধ্যেই বাস্তব কাঠামো গড়ে ফেলেছে। তাই নতুন এই সম্পদ-নির্ভর যুগে চীন স্পষ্টভাবে এগিয়ে। এই উপলব্ধি এখন আর্থিক বাজারে প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। আর তা বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতিতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে।
বিরল খনিজের নিয়ন্ত্রণ মানেই আধুনিক জীবনের নিয়ন্ত্রণ। ব্যাটারি থেকে শুরু করে মাইক্রোচিপ—সবকিছু নির্ভর করে এমন এক সরবরাহ শৃঙ্খলার ওপর, যার নিয়ন্ত্রণ চীনের হাতে।
বিশ্ব এখন কেবল বুঝতে শুরু করেছে—এই নির্ভরতা কাটানো কতটা কঠিন ও ব্যয়বহুল হবে।
টেসলার মতো বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতারা চুম্বকের সংকটে পড়ছে। টারবাইন যন্ত্রাংশের ঘাটতির কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতেও অগ্রগতি থেমে যাচ্ছে। এমনকি মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগও ক্ষেপণাস্ত্র নির্দেশনা ব্যবস্থার সরবরাহ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপট? পশ্চিমা দেশের জন্য অনেকটাই হতাশাজনক। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, বিরল খনিজের দৌড় ইতোমধ্যেই শেষ; আর চীন সে দৌড়ে জিতে গেছে। শুধু তা-ই নয়, বেইজিং ২০৩০ সাল নাগাদ নতুন শিল্পবিপ্লবের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।
বিরল খনিজ হলো আধুনিক শক্তির প্রতীক। ক্ষমতা এখন শুধু কার কাছে বেশি অস্ত্র আছে তা নয়—কার হাতে সেই অস্ত্র তৈরির উপকরণ আছে, সেটাই মুখ্য।
একটি বিষয় স্পষ্ট, তা হলো খনিজই এখন নতুন তেল। আর সেই ‘নল’ ঘুরানোর ক্ষমতা এখন চীনের হাতে।
তথ্যসূত্র: এশিয়া টাইমস, আল-জাজিরা, সিএনএন
প্যারিসের লুভর মিউজিয়ামে রোববার (১৯ অক্টোবর) সকালে মাত্র চার মিনিটের ব্যবধানে সংঘটিত এক দুঃসাহসিক চুরি আবারও ইতিহাসের আলোচনায়। নেপোলিয়নের আমলের অমূল্য আটটি অলংকার চুরি করে নিয়ে গেছে একদল সশস্ত্র চোর।
১১ ঘণ্টা আগেইউনাইটেড লিগ অব আরাকান (ইউএলএ)-এর সশস্ত্র শাখা আরাকান আর্মি (এএ)। সংগঠনটি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অধিক স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীনতার দাবির পাশাপাশি দেশে পুরো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যও লড়ছে।
১ দিন আগেসাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ‘নো কিং’ (কোনো রাজা মানি না) আন্দোলনের ব্যানারে দেশব্যাপী বিক্ষোভের এক জোয়ার দেখা গেছে। দেশটির ছোট-বড় শহরগুলোতে হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের স্বৈরাচারসদৃশ কর্মকাণ্ড ও বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে।
২ দিন আগেতিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার মশাল কর্মসূচি পালন করে রংপুর বিভাগের হাজার হাজার মানুষ। আগামী ৩০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১টা থেকে ১১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি।
২ দিন আগে