স্ট্রিম সংবাদদাতা
লিবিয়ার ত্রিপলি থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন হবিগঞ্জ জেলার অন্তত ৩৫ জন তরুণ। এখনো তাঁদের জীবিত বা নিরাপদে পৌঁছানোর কোনো খবর মেলেনি। ছোট একটি নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই যাত্রার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই উৎকণ্ঠা শুরু হয়। এই ঘটনায় হবিগঞ্জজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে চরম উত্তেজনা ও চাপা আতঙ্ক।
চলতি বছরের ১ অক্টোবর লিবিয়া প্রবাসী মো. হাসান আশরাফ (সামায়ূন) ওরফে হাসান মোল্লা নামে একজনের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা ভিডিও ফুটেজ থেকে ঘটনা সামনে আসা শুরু হয়। হাসানের বাড়ি হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমভাগ গ্রামে। সম্প্রতি তাঁর মাধ্যমে অবৈধভাবে আরও অনেকের সঙ্গে একটি নৌকায় অনেকের সঙ্গে ভূমধ্যসাগর হয়ে লিবিয়ার ত্রিপলি থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন হবিগঞ্জের ৩৫ তরুণ। ৩০ সেপ্টেম্বর তাঁরা রওনা দেওয়ার পর থেকেই তাঁদের খোঁজ মিলছে না। তাঁরা বেঁচে আছে কি না—তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় তাঁদের অভিভাবকরা।
নিখোঁজদের মধ্যে আজমিরীগঞ্জের পশ্চিমভাগ গ্রামেরই রয়েছেন ছয় জন। প্রত্যেককে ১৭-১৮ লাখ টাকার বিনিময়ে ‘আদম বেপারী’ সামায়ূন মোল্লা অবৈধপথে নৌকায় ইতালি পাঠায় বলে জানিয়েছে তাঁদের পরিবার। এর ৩-৪ মাস আগে ভিসা নিয়ে সৌদি আরব হয়ে লিবিয়ায় হাসানের কাছে পৌঁছান ওইসব তরুণ।
আজমিরীগঞ্জের নিখোঁজ আলফাজ মিয়া রনির বড় ভাই মনির মিয়া বলেন, ‘৩০ সেপ্টেম্বর লিবিয়ার ত্রিপলি থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে চারটি নৌকা ছেড়ে যায়। এর মধ্যে একটি নৌকায় হবিগঞ্জের ৩৫ জনসহ ৭০ ছিল। সেই নৌকাই নিখোঁজ হয়েছে।’ বাকি তিনটি নৌকা ইতালিতে পৌঁছেছে বলে তিনি জেনেছেন।
সন্তান নিখোঁজ, বাড়িতে পাওনাদাররা
নিখোঁজ তরুণদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে বুধবার (১৫ অক্টোবর) আজমিরীগঞ্জের পশ্চিমভাগ গ্রামে গিয়েছিল ঢাকা স্ট্রিম। সন্তানরা নিখোঁজ থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। এমন দুঃসময়ে তাঁদের বাড়িতে ভিড় করছেন প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরা।
সন্তানকে ইতালি পাঠাতে আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও স্থানীয়দের কাছ থেকে ধার, সুদে ঋণ ও এনজিও থেকে টাকা নিয়েছিল পরিবারগুলো। এখন তাঁদের নিখোঁজ থাকার খবরে পাওনাদাররাও আসছেন বাড়িতে।
আজমেরিগঞ্জের স্থানীয় শিবপাশা বাজারের ব্র্যাক কার্যালয় থেকে থেকে পরিবারের দুজনের নামে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন পশ্চিমভাগ গ্রামের নিখোঁজ সাব্বিরের বাবা আব্দুল ওয়াহেদ। এ জন্য মাসিক কিস্তি পরিশোধ করেন। সংস্থাটির মাঠকর্মী সুমন মিয়া বাড়িতে এসে কিস্তির জন্য তাগিদ দেন।
সাব্বিরের বাবা আব্দুল ওয়াহেদ জানান, প্রায় ৩ মাস আগে সন্তানকে ‘দালাল’ হাসান মোল্লার মাধ্যমে লিবিয়া পাঠান। পরে তাঁর কথা অনুযায়ী সাব্বিরকে ইতালি পাঠানোর উদ্যোগ নেন তিনি। সন্তান ও পরিবারের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এক পর্যায়ে কষ্টের জমানো টাকা, এনজিও থেকে নেওয়া ঋণ, জায়গা-জমি ও গরু-ছাগল বিক্রি করে হাসান মোল্লাকে প্রায় ১৮ টাকা দিয়েছেন তিনি। সাব্বিরকে ৩০ সেপ্টেম্বর নৌকায় ইতালি পাঠিয়েছেন বলে তাঁকে জানিয়েছেন হাসান।
টাকা কম দিলে ঝুঁকিপূর্ণ নৌকায়
বুধবার আজমেরিগঞ্জের পশ্চিমভাগ গ্রামের সাব্বিরের মা জানান যে ১৫ দিন ধরে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। একই উপজেলার নোয়াগড় গ্রামের নিখোঁজ রবিউলের বাবা বাবলু মিয়া বলেন, ‘হাসান মোল্লা প্রথমে ৫ লাখ টাকায় লিবিয়া ও পরে ১২ লাখ টাকায় ইতালি পাঠাবে বলে চুক্তি করে। আমি সব টাকা তাঁর লোকজনের কাছে দিয়েছি। ৩০ অক্টোবর সে আমার ছেলেকে নৌকায় করে ইতালি পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছে। কিন্তু ১৫ দিন ধরে আমার ছেলে কোনো খোঁজ নেই।’
হাসান মোল্লার ফেসবুক পোস্টে এবাদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি মন্তব্য করেন, ‘সবার যাওয়া হচ্ছে, গেল না শুধু আমার ভাই ও তার সফর সঙ্গীরা।’ যোগাযোগ করা হলে, এবাদুর রহমান বলেন, ‘হাসানে গেইম দিয়েছিল গত ১ (অক্টোবর) তারিখে। সেখানে ভাই-ভাতিজাসহ ৩ জন ছিল।’ তিনি জানান, তাঁরা প্রত্যেকে ১৭ লাখ করে দিয়েছে। হাসানের স্থানীয় এজেন্টের মধ্যদিয়ে সব কিছু হয়েছে। তারা নগদ টাকা ছাড়া নেন না। যেতে চেয়ে টাকা দিলে ৪-৫ দিনের মধ্যেই এর প্রক্রিয়া করে ফেলে।
লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাত্রাকে হাসান মোল্লা নাম দিয়েছেন ‘গেইম’। নিখোঁজ আলফাজ মিয়া রনির বড় ভাই মনির মিয়া জানান, লিবিয়া প্রবাসী হাসান মোল্লার ‘গেইমে’ হবিগঞ্জের ৩৫ জন ১৭ থেকে ২০ লাখ টাকা করে দিয়ে ইতালি যাওয়ার উদ্যোগ নেন।
হাসানের মাধ্যমে ইতালিতে যাওয়া ব্যক্তি ও স্বজনদের অভিযোগ রয়েছে, কম টাকা দিলে ঝুঁকিপূর্ণ নৌকায় তুলে দেওয়া হয় তরুণদের। আর চাহিদানুযায়ী টাকা দিলে তিনি তরুণদের সহজেই পৌঁছে দেন ইতালিতে। তার মাধ্যমে ইতালি গিয়ে অনেকেই বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
সমুদ্রপথে যাত্রা অবৈধ হওয়ায় ভুক্তভোগীরা আইনের সহযোগিতা চায় না। কখনো পুলিশের হাতে ধরা পড়লেই বিষয়টা সামনে আসে।
গ্রামে থাকে না হাসানের পরিবার, আসে টাকা নিতে
আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমভাগ গ্রামের আব্দুল গনির ছেলে হাসান আশরাফ। দেশে থাকতে তিনি হবিগঞ্জ শহরের উমেদনগরে একটি মসজিদে ইমামতি করতেন। এ কারণে তাঁকে ‘হাসান মোল্লা’ বলত লোকজন। এলাকাবাসী তাঁকে সামায়ুন মোল্লা নামেও ডাকেন। ৭-৮ বছর ধরে লিবিয়ায় থাকেন। তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি থাকেন লিবিয়ার বেনগাজী শহরে।
বুধবার হাসান আশরাফের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন সময় ইতালি যেতে না পারা লোকজন টাকা ফেরত চাইতে তার বাড়ি আসেন, নানান ঝামেলা করেন। এসব কারণে হাসান মোল্লার পরিবারের সদস্যরা এলাকা ছেড়ে ঢাকায় বসবাস করছেন।
মাঝে মধ্যে হাসান আশরাফের বাবা আব্দুল গনি স্থানীয় শিবপাশা বাজারে এসে দালাল ও ভুক্তভোগিদের কাছ থেকে টাকা নেন বলে স্ট্রিম জানতে পেরেছে।
গ্রামে গড়ে তুলেছে সিন্ডিকেট, ফেসবুকে প্রচার
তরুণদের ‘সহজে ইতালি যেতে’ আগ্রহী করে তুলতে এলাকায় সিন্ডিকেট চক্র গড়ে তুলেছেন হাসান মোল্লা। তাঁদের মাধ্যমে তিনি ইতালি যাওয়ায় ইচ্ছুকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন। ইতালি যেতে হলে শুরুতে এলাকার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের কাছে টাকা জমা রাখতে হয়।
হাসান মোল্লার ফেসবুক ঘেঁটে দেখা যায়, প্রতিবার তাঁর মাধ্যমে লোকজন লিবিয়া থেকে নৌকায় ইতালি রওনা দেওয়ার আগে তাঁদের ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে প্রচার চালান। পোস্টের নিচে অনেক লোকজন তাঁকে ধন্যবাদ ও ইতালি যাওয়ার প্রস্তাব দেন। পরে যাত্রা করা ওই লোকজন ইতালি পৌঁছে বলে দাবি করে হাসান মোল্লা পোস্ট দিলেও সেখানে ইতালি পৌঁছানোর কোনো ছবি থাকে না।
সিলেটের একজন ভুক্তভোগী নাম না প্রকাশের শর্তে স্ট্রিমকে জানান, তিনি ২০২১ সালে আরব আমিরাত থেকে লিবিয়া পৌঁছান। সেখানে ওই বছরের ডিসেম্বরে হাসান মোল্লার কাছে যান তিনি। ২০২২ সালের মার্চে তাঁকে ইতালি পৌঁছে দেওয়া কথা থাকলেও তিনি যেতে পারেননি। পরে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
অবৈধভাবে ইতালি যাত্রায় উদ্বুদ্ধ করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ওই ভুক্তভোগী বলেন, বিদেশেও বিভিন্ন স্থানে হাসান মোল্লার লোক আছে। তাঁরা বিভিন্ন সময় সহকর্মী ও অন্য শ্রমিকদের কাছে গিয়ে বলে, হাসান মোল্লার ‘গেইমে’ এতজন ইতালি গেছে। এভাবে লোক জোগাড় করে দিলে তাঁরাও টাকা পান।
নিখোঁজ তরুণদের ওপরেই ঝুঁকির দায়
হাসান মোল্লা ফেসবুকে তেমন সক্রিয় নন। মাসে এক-দুটি পোস্ট দেন। ১ অক্টোবর এক পোস্টে হাসান মোল্লা দাবি করেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আমার লোক ৪ বোডে মোট ৮৮ জন সুন্দর মতো ইতালিতে পৌঁছে গেছে।’ তবে এর প্রতিবাদ জানিয়ে ওই পোস্টেই ১৫ অক্টোবর মেরিন জুমা নামে একজন লিখেন, ‘এই ভিডিওর একটা মানুষও ইতালিতে যেতে পারেনি, তাদের সাথে সাগরে মাঝে দুর্ঘটনা হয়েছে, তারা ইতালিতে পৌঁছানোর আগেই পোস্ট দিছে আলহামদুলিল্লাহ পৌঁছে গেছে, মিথ্যা কথা বলার কি দরকার ভাই।’
এক ফেসবুক কমেন্টে তিনি দাবি করেন, ৪টি নৌকার মধ্যে ৩টি নৌকা ইতালি পৌঁছেছে। তবে একটি নৌকা নিজেদের দোষে তারা ‘ডুবাই দিছে'। তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। অনেককেই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, আবার অনেকেই জেল হাজতে রয়েছেন।
নিখোঁজ তরুণদের পরিবারকে হাসান মোল্লা প্রশ্ন করেন, ‘যারা নিখোঁজ, তাঁদের মা-বাবা কি জানে না, ছেলের মৃত্যুর ঝুঁকি আছে। তাহলে তাদের সন্তানদের কেন অবৈধ পথে ইউরোপ পাঠাতে চায়?’
তবে হাসানের ওই মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে শেখ আলমগীর নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘যে নৌকা নিখোঁজ সেই নৌকার ধারণ ক্ষমতা ৫০ জন, আপনি উঠিয়ে দিলেন ৭৫ জন, এটা তো ঠিক হয়নি। আপনি বলেন যে, নিজেরাই নৌকা ডুবিয়ে দিছে। কেউ কি চায় এত টাকা দিয়ে সমুদ্রে গিয়ে নৌকা ডুবিয়ে দিতে? ছোট ছোট বাচ্চাদের জীবন নিয়ে খেলবে না।’
কী বলছে প্রশাসন ও অভিযুক্ত ব্যক্তি
হাসান আশরাফের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে জানতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে স্ট্রিম। ফেসবুক মেসেঞ্জারে তাঁকে একাধিক মেসেজে পাঠালেও কোনো উত্তর দেননি।
বুধবার এলাকায় গিয়ে হাসানের সহযোগী হিসেবে পরিচিত আব্দুল মুকিত মাস্টারের কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি ‘দালাল সিন্ডিকেটের’ সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) দৃষ্টি আকর্ষণ করে মো. আমিনুল ইসলাম নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘এই মাফিয়াকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
এদিকে হাসানের বিরুদ্ধে এখনো কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়নি ভুক্তভোগীরা। তবে শিগগিরিই পরিবারগুলো একত্রে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেবেন বলে জানান আব্দুল ওয়াহেদ। এ বিষয়ে অন্যান্য নিখোঁজ পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
নিখোঁজ সদস্যদের পরিবারের লোকজন আবেদন করলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিবিড় রঞ্জন তালুকদার। তিনি বলেন, ‘অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে কয়েকজন তরুণ নিখোঁজ হয়েছেন বলে সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরেছি। যদিও এখন পর্যন্ত নিখোঁজ সদস্যদের পরিবার থেকে কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ পাইনি।’
অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মত
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক-এর অভিবাসন কর্মসূচি তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের তিনটা অঞ্চলের দশ থেকে বারোটা জেলার মানুষ মরিয়াভাবে ইউরোপে প্রবেশে চেষ্টা করে। এর মধ্যে আছে সিলেট বিভাগ, ঢাকার আশপাশের জেলা ও মাদারীপুর অঞ্চল। বিশ থেকে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর বয়সের তরুণরা এভাবে ইউরোপে ঢুকার চেষ্টা করছেন। বিশ্বের যেসব দেশ থেকে এভাবে ইতালি ঢোকার চেষ্টা করে, অন্তত দশ বছর ধরে তার মধ্যে সবার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ।
ব্র্যাক-এর অভিবাসন কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক শরীফ হাসান স্ট্রিমকে বলেন, ‘এই যে মানুষজন যেকোনো মূল্যে দেশ ছাড়তে চায়, কী শিক্ষিত কী অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী, তাঁরা আসলে মনে করেন, বাংলাদেশে কোনো ভবিষ্যৎ নাই। মূল কারণ হচ্ছে দেশের মধ্যে কর্মসংস্থান ও সুশাসনের অভাব। এই সমস্যার সমাধান না করলে বাকি কারণগুলো সমাধান করা কঠিন। …ঢাকার আশাপাশ, মাদারীপুর ও সিলেট অঞ্চলে দালাল চক্র গড়ে উঠেছে। …সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শতাধিক গ্রুপ আছে লোকজনকে নানা রকম প্রলোভন দেখায়। এজন্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয়া হওয়া জরুরি, যেমন এই চক্রগুলো ভাঙা যায়।’
২০১৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে অনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরত আনার বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। ইউরোপের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রাপথে আটকে পড়া অভিবাসন প্রত্যাশীদের দেশে ফেরত এনে সহায়তা দেওয়ার কাজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে করে থাকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক-এর অভিবাসন কর্মসূচি। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এক লাখের বেশি মানুষ অবৈধভাবে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করেছে। লিবিয়া ও ইউরোপ থেকে ফেরত আসা সাড়ে তিন হাজার মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ইউরোপে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখায় দালাল চক্রটি। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার পর তাদের ওপর নির্যাতন করে পরিবারের কাছে টাকা চাওয়া হয়। এই টাকার পরিমাণ ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ লাখ থেকে সাতষট্টি লাখ টাকা পর্যন্ত আদায়ের ঘটনা পাওয়া গেছে।
শরীফ হাসান বলেন, ‘অবৈধভাবে ইতালি যেতে যত টাকা খরচ হয়, অত টাকা দেশে আসে না। অবৈধভাবে বিদেশে গেলে বৈধভাবে দেশে টাকাও পাঠাতে পারেন না। টাকা পাঠাতে হুন্ডি ব্যবহার করলে বিদেশি মুদ্রা দেশে আসে না, ওই দেশেই থেকে যায়। পরে দেশে থেকে টাকা পাচারে ওই টাকা ব্যবহার হয়।’
লিবিয়ার ত্রিপলি থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন হবিগঞ্জ জেলার অন্তত ৩৫ জন তরুণ। এখনো তাঁদের জীবিত বা নিরাপদে পৌঁছানোর কোনো খবর মেলেনি। ছোট একটি নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই যাত্রার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই উৎকণ্ঠা শুরু হয়। এই ঘটনায় হবিগঞ্জজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে চরম উত্তেজনা ও চাপা আতঙ্ক।
চলতি বছরের ১ অক্টোবর লিবিয়া প্রবাসী মো. হাসান আশরাফ (সামায়ূন) ওরফে হাসান মোল্লা নামে একজনের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা ভিডিও ফুটেজ থেকে ঘটনা সামনে আসা শুরু হয়। হাসানের বাড়ি হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমভাগ গ্রামে। সম্প্রতি তাঁর মাধ্যমে অবৈধভাবে আরও অনেকের সঙ্গে একটি নৌকায় অনেকের সঙ্গে ভূমধ্যসাগর হয়ে লিবিয়ার ত্রিপলি থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন হবিগঞ্জের ৩৫ তরুণ। ৩০ সেপ্টেম্বর তাঁরা রওনা দেওয়ার পর থেকেই তাঁদের খোঁজ মিলছে না। তাঁরা বেঁচে আছে কি না—তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় তাঁদের অভিভাবকরা।
নিখোঁজদের মধ্যে আজমিরীগঞ্জের পশ্চিমভাগ গ্রামেরই রয়েছেন ছয় জন। প্রত্যেককে ১৭-১৮ লাখ টাকার বিনিময়ে ‘আদম বেপারী’ সামায়ূন মোল্লা অবৈধপথে নৌকায় ইতালি পাঠায় বলে জানিয়েছে তাঁদের পরিবার। এর ৩-৪ মাস আগে ভিসা নিয়ে সৌদি আরব হয়ে লিবিয়ায় হাসানের কাছে পৌঁছান ওইসব তরুণ।
আজমিরীগঞ্জের নিখোঁজ আলফাজ মিয়া রনির বড় ভাই মনির মিয়া বলেন, ‘৩০ সেপ্টেম্বর লিবিয়ার ত্রিপলি থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে চারটি নৌকা ছেড়ে যায়। এর মধ্যে একটি নৌকায় হবিগঞ্জের ৩৫ জনসহ ৭০ ছিল। সেই নৌকাই নিখোঁজ হয়েছে।’ বাকি তিনটি নৌকা ইতালিতে পৌঁছেছে বলে তিনি জেনেছেন।
সন্তান নিখোঁজ, বাড়িতে পাওনাদাররা
নিখোঁজ তরুণদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে বুধবার (১৫ অক্টোবর) আজমিরীগঞ্জের পশ্চিমভাগ গ্রামে গিয়েছিল ঢাকা স্ট্রিম। সন্তানরা নিখোঁজ থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। এমন দুঃসময়ে তাঁদের বাড়িতে ভিড় করছেন প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরা।
সন্তানকে ইতালি পাঠাতে আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও স্থানীয়দের কাছ থেকে ধার, সুদে ঋণ ও এনজিও থেকে টাকা নিয়েছিল পরিবারগুলো। এখন তাঁদের নিখোঁজ থাকার খবরে পাওনাদাররাও আসছেন বাড়িতে।
আজমেরিগঞ্জের স্থানীয় শিবপাশা বাজারের ব্র্যাক কার্যালয় থেকে থেকে পরিবারের দুজনের নামে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন পশ্চিমভাগ গ্রামের নিখোঁজ সাব্বিরের বাবা আব্দুল ওয়াহেদ। এ জন্য মাসিক কিস্তি পরিশোধ করেন। সংস্থাটির মাঠকর্মী সুমন মিয়া বাড়িতে এসে কিস্তির জন্য তাগিদ দেন।
সাব্বিরের বাবা আব্দুল ওয়াহেদ জানান, প্রায় ৩ মাস আগে সন্তানকে ‘দালাল’ হাসান মোল্লার মাধ্যমে লিবিয়া পাঠান। পরে তাঁর কথা অনুযায়ী সাব্বিরকে ইতালি পাঠানোর উদ্যোগ নেন তিনি। সন্তান ও পরিবারের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এক পর্যায়ে কষ্টের জমানো টাকা, এনজিও থেকে নেওয়া ঋণ, জায়গা-জমি ও গরু-ছাগল বিক্রি করে হাসান মোল্লাকে প্রায় ১৮ টাকা দিয়েছেন তিনি। সাব্বিরকে ৩০ সেপ্টেম্বর নৌকায় ইতালি পাঠিয়েছেন বলে তাঁকে জানিয়েছেন হাসান।
টাকা কম দিলে ঝুঁকিপূর্ণ নৌকায়
বুধবার আজমেরিগঞ্জের পশ্চিমভাগ গ্রামের সাব্বিরের মা জানান যে ১৫ দিন ধরে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। একই উপজেলার নোয়াগড় গ্রামের নিখোঁজ রবিউলের বাবা বাবলু মিয়া বলেন, ‘হাসান মোল্লা প্রথমে ৫ লাখ টাকায় লিবিয়া ও পরে ১২ লাখ টাকায় ইতালি পাঠাবে বলে চুক্তি করে। আমি সব টাকা তাঁর লোকজনের কাছে দিয়েছি। ৩০ অক্টোবর সে আমার ছেলেকে নৌকায় করে ইতালি পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছে। কিন্তু ১৫ দিন ধরে আমার ছেলে কোনো খোঁজ নেই।’
হাসান মোল্লার ফেসবুক পোস্টে এবাদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি মন্তব্য করেন, ‘সবার যাওয়া হচ্ছে, গেল না শুধু আমার ভাই ও তার সফর সঙ্গীরা।’ যোগাযোগ করা হলে, এবাদুর রহমান বলেন, ‘হাসানে গেইম দিয়েছিল গত ১ (অক্টোবর) তারিখে। সেখানে ভাই-ভাতিজাসহ ৩ জন ছিল।’ তিনি জানান, তাঁরা প্রত্যেকে ১৭ লাখ করে দিয়েছে। হাসানের স্থানীয় এজেন্টের মধ্যদিয়ে সব কিছু হয়েছে। তারা নগদ টাকা ছাড়া নেন না। যেতে চেয়ে টাকা দিলে ৪-৫ দিনের মধ্যেই এর প্রক্রিয়া করে ফেলে।
লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাত্রাকে হাসান মোল্লা নাম দিয়েছেন ‘গেইম’। নিখোঁজ আলফাজ মিয়া রনির বড় ভাই মনির মিয়া জানান, লিবিয়া প্রবাসী হাসান মোল্লার ‘গেইমে’ হবিগঞ্জের ৩৫ জন ১৭ থেকে ২০ লাখ টাকা করে দিয়ে ইতালি যাওয়ার উদ্যোগ নেন।
হাসানের মাধ্যমে ইতালিতে যাওয়া ব্যক্তি ও স্বজনদের অভিযোগ রয়েছে, কম টাকা দিলে ঝুঁকিপূর্ণ নৌকায় তুলে দেওয়া হয় তরুণদের। আর চাহিদানুযায়ী টাকা দিলে তিনি তরুণদের সহজেই পৌঁছে দেন ইতালিতে। তার মাধ্যমে ইতালি গিয়ে অনেকেই বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
সমুদ্রপথে যাত্রা অবৈধ হওয়ায় ভুক্তভোগীরা আইনের সহযোগিতা চায় না। কখনো পুলিশের হাতে ধরা পড়লেই বিষয়টা সামনে আসে।
গ্রামে থাকে না হাসানের পরিবার, আসে টাকা নিতে
আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমভাগ গ্রামের আব্দুল গনির ছেলে হাসান আশরাফ। দেশে থাকতে তিনি হবিগঞ্জ শহরের উমেদনগরে একটি মসজিদে ইমামতি করতেন। এ কারণে তাঁকে ‘হাসান মোল্লা’ বলত লোকজন। এলাকাবাসী তাঁকে সামায়ুন মোল্লা নামেও ডাকেন। ৭-৮ বছর ধরে লিবিয়ায় থাকেন। তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি থাকেন লিবিয়ার বেনগাজী শহরে।
বুধবার হাসান আশরাফের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন সময় ইতালি যেতে না পারা লোকজন টাকা ফেরত চাইতে তার বাড়ি আসেন, নানান ঝামেলা করেন। এসব কারণে হাসান মোল্লার পরিবারের সদস্যরা এলাকা ছেড়ে ঢাকায় বসবাস করছেন।
মাঝে মধ্যে হাসান আশরাফের বাবা আব্দুল গনি স্থানীয় শিবপাশা বাজারে এসে দালাল ও ভুক্তভোগিদের কাছ থেকে টাকা নেন বলে স্ট্রিম জানতে পেরেছে।
গ্রামে গড়ে তুলেছে সিন্ডিকেট, ফেসবুকে প্রচার
তরুণদের ‘সহজে ইতালি যেতে’ আগ্রহী করে তুলতে এলাকায় সিন্ডিকেট চক্র গড়ে তুলেছেন হাসান মোল্লা। তাঁদের মাধ্যমে তিনি ইতালি যাওয়ায় ইচ্ছুকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন। ইতালি যেতে হলে শুরুতে এলাকার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের কাছে টাকা জমা রাখতে হয়।
হাসান মোল্লার ফেসবুক ঘেঁটে দেখা যায়, প্রতিবার তাঁর মাধ্যমে লোকজন লিবিয়া থেকে নৌকায় ইতালি রওনা দেওয়ার আগে তাঁদের ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে প্রচার চালান। পোস্টের নিচে অনেক লোকজন তাঁকে ধন্যবাদ ও ইতালি যাওয়ার প্রস্তাব দেন। পরে যাত্রা করা ওই লোকজন ইতালি পৌঁছে বলে দাবি করে হাসান মোল্লা পোস্ট দিলেও সেখানে ইতালি পৌঁছানোর কোনো ছবি থাকে না।
সিলেটের একজন ভুক্তভোগী নাম না প্রকাশের শর্তে স্ট্রিমকে জানান, তিনি ২০২১ সালে আরব আমিরাত থেকে লিবিয়া পৌঁছান। সেখানে ওই বছরের ডিসেম্বরে হাসান মোল্লার কাছে যান তিনি। ২০২২ সালের মার্চে তাঁকে ইতালি পৌঁছে দেওয়া কথা থাকলেও তিনি যেতে পারেননি। পরে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
অবৈধভাবে ইতালি যাত্রায় উদ্বুদ্ধ করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ওই ভুক্তভোগী বলেন, বিদেশেও বিভিন্ন স্থানে হাসান মোল্লার লোক আছে। তাঁরা বিভিন্ন সময় সহকর্মী ও অন্য শ্রমিকদের কাছে গিয়ে বলে, হাসান মোল্লার ‘গেইমে’ এতজন ইতালি গেছে। এভাবে লোক জোগাড় করে দিলে তাঁরাও টাকা পান।
নিখোঁজ তরুণদের ওপরেই ঝুঁকির দায়
হাসান মোল্লা ফেসবুকে তেমন সক্রিয় নন। মাসে এক-দুটি পোস্ট দেন। ১ অক্টোবর এক পোস্টে হাসান মোল্লা দাবি করেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আমার লোক ৪ বোডে মোট ৮৮ জন সুন্দর মতো ইতালিতে পৌঁছে গেছে।’ তবে এর প্রতিবাদ জানিয়ে ওই পোস্টেই ১৫ অক্টোবর মেরিন জুমা নামে একজন লিখেন, ‘এই ভিডিওর একটা মানুষও ইতালিতে যেতে পারেনি, তাদের সাথে সাগরে মাঝে দুর্ঘটনা হয়েছে, তারা ইতালিতে পৌঁছানোর আগেই পোস্ট দিছে আলহামদুলিল্লাহ পৌঁছে গেছে, মিথ্যা কথা বলার কি দরকার ভাই।’
এক ফেসবুক কমেন্টে তিনি দাবি করেন, ৪টি নৌকার মধ্যে ৩টি নৌকা ইতালি পৌঁছেছে। তবে একটি নৌকা নিজেদের দোষে তারা ‘ডুবাই দিছে'। তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। অনেককেই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, আবার অনেকেই জেল হাজতে রয়েছেন।
নিখোঁজ তরুণদের পরিবারকে হাসান মোল্লা প্রশ্ন করেন, ‘যারা নিখোঁজ, তাঁদের মা-বাবা কি জানে না, ছেলের মৃত্যুর ঝুঁকি আছে। তাহলে তাদের সন্তানদের কেন অবৈধ পথে ইউরোপ পাঠাতে চায়?’
তবে হাসানের ওই মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে শেখ আলমগীর নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘যে নৌকা নিখোঁজ সেই নৌকার ধারণ ক্ষমতা ৫০ জন, আপনি উঠিয়ে দিলেন ৭৫ জন, এটা তো ঠিক হয়নি। আপনি বলেন যে, নিজেরাই নৌকা ডুবিয়ে দিছে। কেউ কি চায় এত টাকা দিয়ে সমুদ্রে গিয়ে নৌকা ডুবিয়ে দিতে? ছোট ছোট বাচ্চাদের জীবন নিয়ে খেলবে না।’
কী বলছে প্রশাসন ও অভিযুক্ত ব্যক্তি
হাসান আশরাফের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে জানতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে স্ট্রিম। ফেসবুক মেসেঞ্জারে তাঁকে একাধিক মেসেজে পাঠালেও কোনো উত্তর দেননি।
বুধবার এলাকায় গিয়ে হাসানের সহযোগী হিসেবে পরিচিত আব্দুল মুকিত মাস্টারের কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি ‘দালাল সিন্ডিকেটের’ সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) দৃষ্টি আকর্ষণ করে মো. আমিনুল ইসলাম নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘এই মাফিয়াকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
এদিকে হাসানের বিরুদ্ধে এখনো কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়নি ভুক্তভোগীরা। তবে শিগগিরিই পরিবারগুলো একত্রে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেবেন বলে জানান আব্দুল ওয়াহেদ। এ বিষয়ে অন্যান্য নিখোঁজ পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
নিখোঁজ সদস্যদের পরিবারের লোকজন আবেদন করলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিবিড় রঞ্জন তালুকদার। তিনি বলেন, ‘অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে কয়েকজন তরুণ নিখোঁজ হয়েছেন বলে সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরেছি। যদিও এখন পর্যন্ত নিখোঁজ সদস্যদের পরিবার থেকে কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ পাইনি।’
অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মত
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক-এর অভিবাসন কর্মসূচি তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের তিনটা অঞ্চলের দশ থেকে বারোটা জেলার মানুষ মরিয়াভাবে ইউরোপে প্রবেশে চেষ্টা করে। এর মধ্যে আছে সিলেট বিভাগ, ঢাকার আশপাশের জেলা ও মাদারীপুর অঞ্চল। বিশ থেকে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর বয়সের তরুণরা এভাবে ইউরোপে ঢুকার চেষ্টা করছেন। বিশ্বের যেসব দেশ থেকে এভাবে ইতালি ঢোকার চেষ্টা করে, অন্তত দশ বছর ধরে তার মধ্যে সবার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ।
ব্র্যাক-এর অভিবাসন কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক শরীফ হাসান স্ট্রিমকে বলেন, ‘এই যে মানুষজন যেকোনো মূল্যে দেশ ছাড়তে চায়, কী শিক্ষিত কী অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী, তাঁরা আসলে মনে করেন, বাংলাদেশে কোনো ভবিষ্যৎ নাই। মূল কারণ হচ্ছে দেশের মধ্যে কর্মসংস্থান ও সুশাসনের অভাব। এই সমস্যার সমাধান না করলে বাকি কারণগুলো সমাধান করা কঠিন। …ঢাকার আশাপাশ, মাদারীপুর ও সিলেট অঞ্চলে দালাল চক্র গড়ে উঠেছে। …সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শতাধিক গ্রুপ আছে লোকজনকে নানা রকম প্রলোভন দেখায়। এজন্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয়া হওয়া জরুরি, যেমন এই চক্রগুলো ভাঙা যায়।’
২০১৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে অনিয়মিত বাংলাদেশিদের ফেরত আনার বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। ইউরোপের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রাপথে আটকে পড়া অভিবাসন প্রত্যাশীদের দেশে ফেরত এনে সহায়তা দেওয়ার কাজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে করে থাকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক-এর অভিবাসন কর্মসূচি। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এক লাখের বেশি মানুষ অবৈধভাবে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করেছে। লিবিয়া ও ইউরোপ থেকে ফেরত আসা সাড়ে তিন হাজার মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ইউরোপে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখায় দালাল চক্রটি। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার পর তাদের ওপর নির্যাতন করে পরিবারের কাছে টাকা চাওয়া হয়। এই টাকার পরিমাণ ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ লাখ থেকে সাতষট্টি লাখ টাকা পর্যন্ত আদায়ের ঘটনা পাওয়া গেছে।
শরীফ হাসান বলেন, ‘অবৈধভাবে ইতালি যেতে যত টাকা খরচ হয়, অত টাকা দেশে আসে না। অবৈধভাবে বিদেশে গেলে বৈধভাবে দেশে টাকাও পাঠাতে পারেন না। টাকা পাঠাতে হুন্ডি ব্যবহার করলে বিদেশি মুদ্রা দেশে আসে না, ওই দেশেই থেকে যায়। পরে দেশে থেকে টাকা পাচারে ওই টাকা ব্যবহার হয়।’
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া দম্পতির হেফাজত থেকে আব্দুল হাদি নূর নামে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শিশুটির অবস্থান শনাক্তের পর মঙ্গলবার ভোর পৌনে ছয়টার দিকে মিরপুর মডেল থানার হোটেল ক্লাসিক আবাসিক থেকে পারভেজ-কাকলি দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁদের হেফাজতেই শিশুটি ছিল।
২ ঘণ্টা আগেঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়েছেন পায়ুপথে বাতাস ঢোকানোর ঘটনায় অসুস্থ হওয়া কিশোর তানভীর (১৪)। সোমবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর কয়লারঘাট এলাকার একটি প্লাস্টিক কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
২ ঘণ্টা আগেদেশে বর্তমানে ৩০৭টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এর মধ্যে সক্রিয়ভাবে উৎপাদনে আছে প্রায় ২৫০টি কোম্পানি। বাপির প্রাথমিক জরিপে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, শুধু শীর্ষ ৪৫টি কোম্পানিরই প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল পুড়ে গেছে।
৩ ঘণ্টা আগেসামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত ‘বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসা দিচ্ছে না কাতার’ শীর্ষক খবরকে ‘একেবারেই গুজব’ বলে জানিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলেছে, কাতারের শ্রমবাজার যথারীতি চালু আছে এবং এ ধরনের মিথ্যা তথ্য মহলবিশেষের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার।
৩ ঘণ্টা আগে