চলতি বছরের ৪১তম পুরুষ ও ১৮তম মহিলা জাতীয় ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছেন টঙ্গীর এরশাদনগরের সুমাইয়া আক্তার। তাঁর গল্প উঠে এসেছে এই লেখায়।
স্ট্রিম ডেস্ক
টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকার ছোট্ট এক ভাড়া ঘর। ভেতরে মা, অন্ধ বাবা আর ছোট বোনকে নিয়ে থাকেন সুমাইয়া আক্তার। ঘরের এক কোণে সাজানো ট্রফি আর মেডেল। সম্প্রতি শেষ হওয়া ৪১তম পুরুষ ও ১৮তম মহিলা জাতীয় ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হিসেবে জিতেছেন স্বর্ণপদক। ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্ন্যাচে ৭০ কেজি আর ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ৯৬ কেজি মিলিয়ে তুলেছেন ১৬৬ কেজি।
ছোটবেলায় স্কুলের মাঠে দৌড়ে সবসময় প্রথম হতেন সুমাইয়া। তখন তাঁদের স্কুলে আসতেন ভারোত্তোলন প্রশিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান। বাংলাদেশের ভারোত্তোলন প্রসঙ্গ এলেই তাঁর নাম চলে আসে। এরশাদ নগর এলাকায় তিনি গড়ে তুলেছেন ভারোত্তোলন ও শরীরচর্চা ক্লাব। মেয়েদের ভারোত্তোলন চর্চায় উৎসাহ দেন তিনি। তাঁর হাতেই শুরু দেশের নারী ভারোত্তোলনের। মজিবুর রহমান এসএ গেমসে দুই সোনাজয়ী মাবিয়া আক্তারের গল্প শোনাতেন সুমাইয়াদের। সেসব গল্পই কিশোরী সুমাইয়ার মনে জন্ম নেয় এক নতুন স্বপ্নের।
তারপর কাঁধে নিলেন লোহার ভার। ২০১৯ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় প্রথম পদক জিতে শুরু হয় যাত্রা। ২০২১ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে পান রৌপ্য। ২০২২ সালে জাতীয় জুনিয়র ভারোত্তোলনে হন সেরা খেলোয়াড়। তারপর থেকে আর থেমে থাকতে হয়নি। টানা তিনবার জাতীয় সিনিয়র ভারোত্তোলনে অংশ নিয়ে একবার রৌপ্য, দুবার ব্রোঞ্জ জিতেছেন। আর এবার চতুর্থবার এসে সরাসরি প্রথম হয়েছেন।
সুমাইয়ার সাফল্যের পেছনে আরেকজনের বড় অবদান আছে। তিনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোচ শাহরিয়া সুলতানা। সুমাইয়া বলেন, ‘আমার কোচ শাহরিয়া ম্যাম আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। তাঁর পরামর্শ মতো অনুশীলন করেছি। আজকের সাফল্যটা তাঁরই হাতের ফল।’
পদক হাতে নেওয়ার মুহূর্তে সবার আগে বাবার মুখটাই চোখে ভেসে ওঠেছিল সুমাইয়ার। শৈশবে চিকিৎসার অভাবে চোখের আলো হারানো বাবা মজিবর হোসেনের স্বপ্ন ছিল, মেয়ে বড় হয়ে মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেবে। সুমাইয়ারও ইচ্ছা ছিল বাবার চোখে আলো ফেরানোর। তবে সেটা পারলেও অন্ধ বাবার ‘চোখের আলো’ এখন তিনিই।
সুমাইয়া বলেন, ‘আমি যখন বিজয়ী হই, তখন সবচেয়ে বেশি খুশি হন আমার বাবা। যদিও তিনি চোখে দেখেন না, কিন্তু আমি জানি মনের চোখে তিনি আমার সাফল্য দেখেন। সোনা জেতার পর ওনাকে খুশি দেখেছি, সেটাই আমার সবচেয়ে বড় জয়।’
শুরুর দিকে পরিবার থেকে আপত্তি এসেছিল। সুমাইয়ার বাবা বলেন, ‘প্রথমে আমি মেয়েকে খেলাধুলা করতে দিই নাই। মানুষ হাসত, বলত মেয়েকে ভার তোলে! কিন্তু পরে সবাই বুঝাইল, মেয়েটা ভালো জায়গায় যাবে। এখন মেয়েই আমাদের চালায়। ওর টাকায় আমাদের সংসার চলে। আমি মসজিদে গিয়ে দোয়া চাই, আল্লাহ যেন ওকে আরও উঁচুতে তুলে দেন।’
সুমাইয়ার মা হোসনেয়ারা খাতুন বলেন, ‘ওর আব্বা প্রথমে রাজি ছিল না। কিন্তু আমি সব সময় মেয়েকে উৎসাহ দিয়েছি।’
সুমাইয়ার মতে, ‘এখনো সমাজ নারীদের ভারোত্তোলন চর্চার প্রতি সহনশীল নয়। আমাদের দেশে এখনো অনেকে ভাবে, মেয়েরা ভারোত্তোলন খেলতে পারে না। বাইরের দেশের মানুষরা এমন ভাবে না। কিন্তু এখানে অনেকেই ঠাট্টা করে। আমি চাই, ভারোত্তোলনও যেন ক্রিকেট বা ফুটবলের মতো জনপ্রিয় হয়।’
সুমাইয়া বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত এবং জাতীয় ভারোত্তোলন দলের একজন সদস্য। তাঁর ছোট বোন সুরাইয়াও আপুকে দেখে নেমেছে ভারোত্তোলনে। দুই বোনের লক্ষ্য একসঙ্গে দেশকে কিছু দেওয়া।
সুমাইয়ার শৈশবের অনুপ্রেরণা মুক্তিযোদ্ধা ও ভারোত্তোলন প্রশিক্ষক মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমি টঙ্গীর স্কুলগুলোতে যেতাম মেয়েদের খেলাধুলায় আগ্রহী করতে। তখন সুমাইয়া ছিল ভীষণ চঞ্চল, দৌড়ে সব সময় প্রথম হতো। একদিন ওকে বলেছিলাম, তুই পারবি, তুই বড় খেলোয়াড় হবি। আজ ও যখন ভালো করছে, মনে হয় আমার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। ওর মতো মেয়েরা আসলেই দেশের গর্ব।’
আগামী এসএ গেমসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন সুমাইয়া। সুমাইয়া বলেন, ‘সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন দেশের হয়ে বাইরের মঞ্চে ভালো কিছু করতে পারি। এই স্বপ্নই এখন আমার সবচেয়ে বড় প্রেরণা।’
সুমাইয়াসহ স্থানীয় নারী ভারোত্তোলকরা বিশ্বাস করেন, সরকারি সহায়তা এবং স্থায়ী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি হলে আরও অনেক প্রতিভা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘টঙ্গীতে সরকার নির্ধারিত খেলাধুলার মাঠ বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নেই। তবে আমরাও চেষ্টা করছি ভালো একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও খেলার মাঠ তৈরির জন্য। যাতে আমাদের শিশু কিশোর-কিশোরীরা ভালো কিছু করতে পারে।’
টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকার ছোট্ট এক ভাড়া ঘর। ভেতরে মা, অন্ধ বাবা আর ছোট বোনকে নিয়ে থাকেন সুমাইয়া আক্তার। ঘরের এক কোণে সাজানো ট্রফি আর মেডেল। সম্প্রতি শেষ হওয়া ৪১তম পুরুষ ও ১৮তম মহিলা জাতীয় ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হিসেবে জিতেছেন স্বর্ণপদক। ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্ন্যাচে ৭০ কেজি আর ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ৯৬ কেজি মিলিয়ে তুলেছেন ১৬৬ কেজি।
ছোটবেলায় স্কুলের মাঠে দৌড়ে সবসময় প্রথম হতেন সুমাইয়া। তখন তাঁদের স্কুলে আসতেন ভারোত্তোলন প্রশিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান। বাংলাদেশের ভারোত্তোলন প্রসঙ্গ এলেই তাঁর নাম চলে আসে। এরশাদ নগর এলাকায় তিনি গড়ে তুলেছেন ভারোত্তোলন ও শরীরচর্চা ক্লাব। মেয়েদের ভারোত্তোলন চর্চায় উৎসাহ দেন তিনি। তাঁর হাতেই শুরু দেশের নারী ভারোত্তোলনের। মজিবুর রহমান এসএ গেমসে দুই সোনাজয়ী মাবিয়া আক্তারের গল্প শোনাতেন সুমাইয়াদের। সেসব গল্পই কিশোরী সুমাইয়ার মনে জন্ম নেয় এক নতুন স্বপ্নের।
তারপর কাঁধে নিলেন লোহার ভার। ২০১৯ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় প্রথম পদক জিতে শুরু হয় যাত্রা। ২০২১ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে পান রৌপ্য। ২০২২ সালে জাতীয় জুনিয়র ভারোত্তোলনে হন সেরা খেলোয়াড়। তারপর থেকে আর থেমে থাকতে হয়নি। টানা তিনবার জাতীয় সিনিয়র ভারোত্তোলনে অংশ নিয়ে একবার রৌপ্য, দুবার ব্রোঞ্জ জিতেছেন। আর এবার চতুর্থবার এসে সরাসরি প্রথম হয়েছেন।
সুমাইয়ার সাফল্যের পেছনে আরেকজনের বড় অবদান আছে। তিনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোচ শাহরিয়া সুলতানা। সুমাইয়া বলেন, ‘আমার কোচ শাহরিয়া ম্যাম আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। তাঁর পরামর্শ মতো অনুশীলন করেছি। আজকের সাফল্যটা তাঁরই হাতের ফল।’
পদক হাতে নেওয়ার মুহূর্তে সবার আগে বাবার মুখটাই চোখে ভেসে ওঠেছিল সুমাইয়ার। শৈশবে চিকিৎসার অভাবে চোখের আলো হারানো বাবা মজিবর হোসেনের স্বপ্ন ছিল, মেয়ে বড় হয়ে মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেবে। সুমাইয়ারও ইচ্ছা ছিল বাবার চোখে আলো ফেরানোর। তবে সেটা পারলেও অন্ধ বাবার ‘চোখের আলো’ এখন তিনিই।
সুমাইয়া বলেন, ‘আমি যখন বিজয়ী হই, তখন সবচেয়ে বেশি খুশি হন আমার বাবা। যদিও তিনি চোখে দেখেন না, কিন্তু আমি জানি মনের চোখে তিনি আমার সাফল্য দেখেন। সোনা জেতার পর ওনাকে খুশি দেখেছি, সেটাই আমার সবচেয়ে বড় জয়।’
শুরুর দিকে পরিবার থেকে আপত্তি এসেছিল। সুমাইয়ার বাবা বলেন, ‘প্রথমে আমি মেয়েকে খেলাধুলা করতে দিই নাই। মানুষ হাসত, বলত মেয়েকে ভার তোলে! কিন্তু পরে সবাই বুঝাইল, মেয়েটা ভালো জায়গায় যাবে। এখন মেয়েই আমাদের চালায়। ওর টাকায় আমাদের সংসার চলে। আমি মসজিদে গিয়ে দোয়া চাই, আল্লাহ যেন ওকে আরও উঁচুতে তুলে দেন।’
সুমাইয়ার মা হোসনেয়ারা খাতুন বলেন, ‘ওর আব্বা প্রথমে রাজি ছিল না। কিন্তু আমি সব সময় মেয়েকে উৎসাহ দিয়েছি।’
সুমাইয়ার মতে, ‘এখনো সমাজ নারীদের ভারোত্তোলন চর্চার প্রতি সহনশীল নয়। আমাদের দেশে এখনো অনেকে ভাবে, মেয়েরা ভারোত্তোলন খেলতে পারে না। বাইরের দেশের মানুষরা এমন ভাবে না। কিন্তু এখানে অনেকেই ঠাট্টা করে। আমি চাই, ভারোত্তোলনও যেন ক্রিকেট বা ফুটবলের মতো জনপ্রিয় হয়।’
সুমাইয়া বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত এবং জাতীয় ভারোত্তোলন দলের একজন সদস্য। তাঁর ছোট বোন সুরাইয়াও আপুকে দেখে নেমেছে ভারোত্তোলনে। দুই বোনের লক্ষ্য একসঙ্গে দেশকে কিছু দেওয়া।
সুমাইয়ার শৈশবের অনুপ্রেরণা মুক্তিযোদ্ধা ও ভারোত্তোলন প্রশিক্ষক মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমি টঙ্গীর স্কুলগুলোতে যেতাম মেয়েদের খেলাধুলায় আগ্রহী করতে। তখন সুমাইয়া ছিল ভীষণ চঞ্চল, দৌড়ে সব সময় প্রথম হতো। একদিন ওকে বলেছিলাম, তুই পারবি, তুই বড় খেলোয়াড় হবি। আজ ও যখন ভালো করছে, মনে হয় আমার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। ওর মতো মেয়েরা আসলেই দেশের গর্ব।’
আগামী এসএ গেমসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন সুমাইয়া। সুমাইয়া বলেন, ‘সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন দেশের হয়ে বাইরের মঞ্চে ভালো কিছু করতে পারি। এই স্বপ্নই এখন আমার সবচেয়ে বড় প্রেরণা।’
সুমাইয়াসহ স্থানীয় নারী ভারোত্তোলকরা বিশ্বাস করেন, সরকারি সহায়তা এবং স্থায়ী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি হলে আরও অনেক প্রতিভা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘টঙ্গীতে সরকার নির্ধারিত খেলাধুলার মাঠ বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নেই। তবে আমরাও চেষ্টা করছি ভালো একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও খেলার মাঠ তৈরির জন্য। যাতে আমাদের শিশু কিশোর-কিশোরীরা ভালো কিছু করতে পারে।’
ফোন বেজে উঠলেই বুক ধড়ফড় করে, মাথায় চলে আসে নানান চিন্তা? পরিচিত নাম দেখেও আঙুল যায় না ‘রিসিভ’-এ? এমন ভয় বা অস্বস্তি কেন হয়, টেলিফোবিয়া কি রোগ? আর এই সমস্যা কীভাবে সামলানো যায়? এসব জানা যাবে এ লেখায়।
১ দিন আগেআজ ১৮ অক্টোবর, আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুদিন। ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর কনসার্টে গান গাওয়ার সময় আইয়ুব বাচ্চুর শোকে প্রকাশ্যে কেঁদেছিলেন জেমস। আদতেই কি তাঁদের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল? প্রকাশ্যে একজন কি আরেকজনকে প্রশংসা করতেন?
৩ দিন আগেআজ আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুদিন। ব্যান্ড সংগীতকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে তাঁর ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এক প্রজন্মের রুচি, সংগীতবোধ আর অ্যাটিটিউড তৈরি হয়েছে আইয়ুব বাচ্চুদের হাত ধরে।
৩ দিন আগেফকির লালন সাঁই যুগের পরিক্রমায় উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠেছেন। প্রথমত গানের বাণীর ভেতর দিয়ে প্রকাশিত তাঁর ভাব-দর্শন ও মনুষ্যজ্ঞানের প্রজ্ঞা বিশ্বের নানান দেশের বিদ্বান-পণ্ডিতদের আগ্রহের কারণ হয়ে উঠেছে। দ্বিতীয়ত, লালন সাঁই প্রবর্তিত সাধকের জীবনাচার, শুভ্র বসন, সাধুসঙ্গের প্রেমময় ঐতিহ্য লালনের প্রত
৪ দিন আগে