স্ট্রিম প্রতিবেদক
‘বিচার বিভাগের যেভাবে কাজ করার কথা—তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ সেভাবে কাজ করেনি। তারা বিচারিক ক্ষমতা বহির্ভূত কাজ করেছেন।’ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানিতে পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া এই বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, আপিল বিভাগ এই রায় দিতে গিয়ে বাংলাদেশের সংসদের বা নির্বাহী বিভাগের কাজও করে ফেলেছে। তারা ক্ষমতার বাইরে গিয়ে বা এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন, যার ফলে এটা রায়ের একটা ভুল দিক।
বুধবার (২২ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে এ সংক্রান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে বিএনপি মহাসচিবের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আগের দিন মঙ্গলবার প্রথম দিনের মতো শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার শুনানির পর এই মামলার কার্যক্রম মুলতবি করা হয়েছে।
আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া বলেন, আদালতের রায়ের মাধ্যমে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হলেও বর্তমান সাংবিধানিক বাস্তবতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা সম্ভব নয়। ফলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকেই আগামী জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। তিনি বলেন, (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে এলেও), বর্তমান সরকার ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পরে নতুন সরকার গঠিত হবে। সেই সংসদ ভেঙে যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করা যাবে। রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে এলেও বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সাংবিধানিক বাস্তবতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা সম্ভব নয়। ফলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই আগামী নির্বাচন সম্পন্ন করবে।
তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যদি ফিরে আসেও আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের জন্য একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গঠন করতে হবে না। এবং এটা করা সম্ভবও হবে না। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা করার যেই বিধান ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, সংবিধানের এ সংক্রান্ত বিধান মতে সংসদ ভেঙে দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। কাজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করতে হলে এবং ওইরকম একটা সরকার গঠন করতে হলে এটা শুধুমাত্র সংসদ ভেঙে দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে করা সম্ভব। এবং আমাদের সংসদ কিন্তু এক বছরেরও আগে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। কাজেই এই বিধান এখানে প্রযোজ্য নয়। গত এক বছর আগে এই সময় পার হয়ে গেছে। কাজেই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরে এলেও এখন আর একটা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী গঠন করার কোনো সুযোগ নেই। ফলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই আগামী নির্বাচনটা সম্পন্ন করবে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, আগামী নির্বাচন করার দায়িত্ব তারা তখনই পেয়েছে। দ্বিতীয়ত, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন চাইলেও নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে পারবে না, কারণ এটা সংসদ ভেঙে দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে করতে হয়। সেই সময় আমরা বহু আগে পার হয়ে এসেছি।
শরীফ ভূঁইয়ার মতে, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় হয়তো কিছু ভুল-ত্রুটি আছে বা সেটাকে আরো ইমপ্রুভ করা সম্ভব। বিগত ১/১১-এর সরকারের সময়কার অভিজ্ঞতার আলোকে অনেকে বলার চেষ্টা করেন যে, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে দেশে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত সরকার এসেছিল। এটাকে অনেকে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ত্রুটির ফল। তবে এটা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার কোনো ত্রুটির কারণে নয়, বরং ওই সময়কার রাষ্ট্রপতি সংবিধান লঙ্ঘন করে নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছেন, তার ফল। সেই থেকে সংকট শুরু হয়ে। কাজেই এই সংকট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে নয় বরং তৎকালীন রাষ্ট্রপতির সংবিধান লঙ্ঘনের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। এই ত্রুটি-বিচ্যুতির ব্যাপারে আদালত কোনো পর্যবেক্ষণ দিতে পারে। আদালতের এখতিয়ার হলো কোনো আইন বা সংবিধান সংশোধন; এটা সঠিক কিনা, তা দেখা। এই পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। আর আইনকে ইমপ্রুভ করার দায়িত্ব লেজিসলেচারের। এই দায়িত্ব বিচার বিভাগ নিতে পারে না।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এই রায়ের ফলে ফিরে এলেও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ওপরে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ বর্তমান সরকার গঠিত হয়েছে একটা ভিন্ন সাংবিধানিক ব্যবস্থায়, এটা কিন্তু সংবিধানের কোনো লিখিত অনুচ্ছেদের অধীনে গঠিত হয়নি। বিপ্লব পরবর্তী জনগণের আকাঙ্ক্ষা স্বরূপ, দেশের সরকার পালিয়ে যাওয়ার ফলে তৈরি হওয়া শূন্যতা এবং দেশে একটা সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে এই সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকারকে জনগণ কয়েকটা জিনিস করার ম্যান্ডেট দিয়েছে। এর মধ্যে একটা হলো দেশ পরিচালনা করা। তারপরে হলো বিপ্লব পরবর্তী আকাঙ্ক্ষাকে রূপায়ন করার জন্য সংস্কার করা। সবশেষে একটা নির্বাচন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া। কাজেই এই সরকার ওভাবেই তার ক্ষমতা হস্তান্তর করে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবে। যেভাবে এটা গঠিত হয়েছে, যেই আকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে গঠিত হয়েছে, সেই আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করে একটা নির্বাচন করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে এই সরকার যাবে। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সাথে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতায় থাকা না থাকার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।
১৪ বছর আগে, ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দেয় তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। আদালতের রায়ের পর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী এই সরকারব্যবস্থা বাদ দেওয়া হয়। গত বছর জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৭ আগস্ট ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি আবেদন করেন। এরপর ১৭ অক্টোবর আবেদন করেন বিএনপির মহাসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছর আরেকটি আবেদন করেন। এ ছাড়া একটি সংগঠন ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়।
গত ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের শুনানি শেষে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির এবং বিএনপির মহাসচিবের করা রিভিউ আবেদন থেকে উদ্ভূত আপিলের সঙ্গে রিভিউ আবেদনগুলো শুনানির জন্য যুক্ত হবে বলে উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে আপিল শুনানির জন্য ২১ অক্টোবর কার্যতালিকায় আসবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার বিষয়টি কার্যতালিকায় আসে।
সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট রিট খারিজ করে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে।
এ রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারীপক্ষ। এই আপিল মঞ্জুর করে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেয়।
সেই রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বাতিলসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ–সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
‘বিচার বিভাগের যেভাবে কাজ করার কথা—তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ সেভাবে কাজ করেনি। তারা বিচারিক ক্ষমতা বহির্ভূত কাজ করেছেন।’ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানিতে পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া এই বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, আপিল বিভাগ এই রায় দিতে গিয়ে বাংলাদেশের সংসদের বা নির্বাহী বিভাগের কাজও করে ফেলেছে। তারা ক্ষমতার বাইরে গিয়ে বা এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন, যার ফলে এটা রায়ের একটা ভুল দিক।
বুধবার (২২ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে এ সংক্রান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে বিএনপি মহাসচিবের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আগের দিন মঙ্গলবার প্রথম দিনের মতো শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার শুনানির পর এই মামলার কার্যক্রম মুলতবি করা হয়েছে।
আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া বলেন, আদালতের রায়ের মাধ্যমে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হলেও বর্তমান সাংবিধানিক বাস্তবতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা সম্ভব নয়। ফলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকেই আগামী জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। তিনি বলেন, (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে এলেও), বর্তমান সরকার ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পরে নতুন সরকার গঠিত হবে। সেই সংসদ ভেঙে যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করা যাবে। রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে এলেও বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সাংবিধানিক বাস্তবতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা সম্ভব নয়। ফলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই আগামী নির্বাচন সম্পন্ন করবে।
তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যদি ফিরে আসেও আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের জন্য একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গঠন করতে হবে না। এবং এটা করা সম্ভবও হবে না। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা করার যেই বিধান ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, সংবিধানের এ সংক্রান্ত বিধান মতে সংসদ ভেঙে দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। কাজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করতে হলে এবং ওইরকম একটা সরকার গঠন করতে হলে এটা শুধুমাত্র সংসদ ভেঙে দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে করা সম্ভব। এবং আমাদের সংসদ কিন্তু এক বছরেরও আগে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। কাজেই এই বিধান এখানে প্রযোজ্য নয়। গত এক বছর আগে এই সময় পার হয়ে গেছে। কাজেই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরে এলেও এখন আর একটা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী গঠন করার কোনো সুযোগ নেই। ফলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই আগামী নির্বাচনটা সম্পন্ন করবে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, আগামী নির্বাচন করার দায়িত্ব তারা তখনই পেয়েছে। দ্বিতীয়ত, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন চাইলেও নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে পারবে না, কারণ এটা সংসদ ভেঙে দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে করতে হয়। সেই সময় আমরা বহু আগে পার হয়ে এসেছি।
শরীফ ভূঁইয়ার মতে, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় হয়তো কিছু ভুল-ত্রুটি আছে বা সেটাকে আরো ইমপ্রুভ করা সম্ভব। বিগত ১/১১-এর সরকারের সময়কার অভিজ্ঞতার আলোকে অনেকে বলার চেষ্টা করেন যে, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে দেশে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত সরকার এসেছিল। এটাকে অনেকে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ত্রুটির ফল। তবে এটা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার কোনো ত্রুটির কারণে নয়, বরং ওই সময়কার রাষ্ট্রপতি সংবিধান লঙ্ঘন করে নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছেন, তার ফল। সেই থেকে সংকট শুরু হয়ে। কাজেই এই সংকট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে নয় বরং তৎকালীন রাষ্ট্রপতির সংবিধান লঙ্ঘনের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। এই ত্রুটি-বিচ্যুতির ব্যাপারে আদালত কোনো পর্যবেক্ষণ দিতে পারে। আদালতের এখতিয়ার হলো কোনো আইন বা সংবিধান সংশোধন; এটা সঠিক কিনা, তা দেখা। এই পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। আর আইনকে ইমপ্রুভ করার দায়িত্ব লেজিসলেচারের। এই দায়িত্ব বিচার বিভাগ নিতে পারে না।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এই রায়ের ফলে ফিরে এলেও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ওপরে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ বর্তমান সরকার গঠিত হয়েছে একটা ভিন্ন সাংবিধানিক ব্যবস্থায়, এটা কিন্তু সংবিধানের কোনো লিখিত অনুচ্ছেদের অধীনে গঠিত হয়নি। বিপ্লব পরবর্তী জনগণের আকাঙ্ক্ষা স্বরূপ, দেশের সরকার পালিয়ে যাওয়ার ফলে তৈরি হওয়া শূন্যতা এবং দেশে একটা সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে এই সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকারকে জনগণ কয়েকটা জিনিস করার ম্যান্ডেট দিয়েছে। এর মধ্যে একটা হলো দেশ পরিচালনা করা। তারপরে হলো বিপ্লব পরবর্তী আকাঙ্ক্ষাকে রূপায়ন করার জন্য সংস্কার করা। সবশেষে একটা নির্বাচন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া। কাজেই এই সরকার ওভাবেই তার ক্ষমতা হস্তান্তর করে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবে। যেভাবে এটা গঠিত হয়েছে, যেই আকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে গঠিত হয়েছে, সেই আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করে একটা নির্বাচন করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে এই সরকার যাবে। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সাথে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতায় থাকা না থাকার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।
১৪ বছর আগে, ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দেয় তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। আদালতের রায়ের পর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী এই সরকারব্যবস্থা বাদ দেওয়া হয়। গত বছর জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৭ আগস্ট ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি আবেদন করেন। এরপর ১৭ অক্টোবর আবেদন করেন বিএনপির মহাসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছর আরেকটি আবেদন করেন। এ ছাড়া একটি সংগঠন ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়।
গত ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের শুনানি শেষে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির এবং বিএনপির মহাসচিবের করা রিভিউ আবেদন থেকে উদ্ভূত আপিলের সঙ্গে রিভিউ আবেদনগুলো শুনানির জন্য যুক্ত হবে বলে উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে আপিল শুনানির জন্য ২১ অক্টোবর কার্যতালিকায় আসবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার বিষয়টি কার্যতালিকায় আসে।
সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট রিট খারিজ করে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে।
এ রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারীপক্ষ। এই আপিল মঞ্জুর করে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেয়।
সেই রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বাতিলসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ–সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
সহপাঠীকে ধর্ষণ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
৩ ঘণ্টা আগেজ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও অবৈধ গ্যাস ব্যবহার বন্ধে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার ডেমরা এলাকায় অভিযান চালিয়েছে তিতাস গ্যাসের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে দুটি ওয়াশিং প্ল্যান্টের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ সংযোগে ব্যবহৃত পাইপলাইন ও সরঞ্জাম অপসারণ করা হয়।
৪ ঘণ্টা আগেদেশব্যাপী চলমান টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির প্রথম ১০ দিনে লক্ষ্যমাত্রার ৮৫ শতাংশ অর্জন করেছে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)। নানা গুজব ও শঙ্কা সত্ত্বেও বুধবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যা পর্যন্ত ১ কোটি ৫০ লাখেরও বেশি শিশুকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগেমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সতর্ক হতে বলা হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগে