leadT1ad

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: স্কুল ড্রেসে পালানো নারীকে খুঁজছে পুলিশ

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৫৯
মোহাম্মদপুর থানা ভবনের একটি চিত্র। ছবি: সংগৃহীত

বাবা বাসা থেকে বের হন সকাল ৭টায়। আর ৭টা ১৫ মিনিটে বোরকা পরে বাসায় ঢুকে চারদিন আগে কাজ নেওয়া আয়েশা নাম বলা ছুটা গৃহকর্মী। ৯টা ৩৬ মিনিটে স্কুল ড্রেস আর মুখে মাস্ক পরে বাসা থেকে বের হয় এক নারী। পরে বেলা ১১টার দিকে বাসায় ফেরে বাবা মেয়ে আর স্ত্রীর রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। এর মধ্যে বাসার আলমারি ও ভ্যানিটি ভ্যাগ তছনছ অবস্থায় পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আয়েশা নাম বলা গৃহকর্মীও উধাও। পুলিশ বলছে, বোরকা পরিহিত গৃহকর্মী আর স্কুল ড্রেস পরা নারী একই ব্যক্তি।

আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ঘটনাটি ঘটেছে। বাবা, বাসার নিরাপত্তাকর্মী আর ভবনে থাকা একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আজ সন্ধ্যায় এসব তথ্য দিয়েছে পুলিশ।

নিহত দুইজন হলেন—মা লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)। পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি ছুরি আলামত হিসেবে উদ্ধার করেছে। আলামতের সূত্র ধরে জোড়া খুনে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে ওই স্কুল ড্রেস পরিহিত নারীকে খুঁজছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। তাঁকে গ্রেপ্তারে একাধিক টিম মাঠে নেমেছে।

সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুর থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন স্ট্রিমকে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়ার পরপরই র‌্যাব, পুলিশ, সিআইডি ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সিআইডির ক্রাইমসিন টিম ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করেছেন ল্যাবে পরীক্ষার জন্য। প্রধান সন্দেহভাজন গৃহকর্মীর পরিচয় ও অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড সেবিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।’

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা স্ট্রিমকে জানান, নাফিসা মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণিরদ শিক্ষার্থী, আর মা লায়লা আফরোজ ছিলেন গৃহিনী। মেয়েটির বাবা এ জেড আজিজুল ইসলাম পেশায় শিক্ষক। তিনি উত্তরার সানবিমস স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক। স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে মোহাম্মদপুরের ওই বাসায় প্রায় ১৩ বছর ধরে ভাড়া থাকছেন। তাদের গ্রামের বাড়ি নাটোরে।

এ জেড আজিজুল ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, ‘সোমবার সকাল ৭টার দিকে বাসা থেকে বের হই। পরে সকাল ১১টার দিকেই বাসায় ঢুকেই স্ত্রীর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখি। পরে আশপাশের লোকজন এসে পুলিশকে খবর দেন। কে বা কারা কী কারণে এই খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে তার কিছুই বলতে পারি না।’

তিনি আরও জানান, চারদিন আগে কাজে যোগ দেন আয়েশা নামের ওই গৃহকর্মী। তার বয়স আনুমানিক ২০ বছর। কাজে যোগ দেওয়ার সময় তার নাম বলেছিলেন আয়েশা। কিন্তু সেই নামের কোনো কাগজপত্র জমা দেননি। আগুনে তার বাবা-মা মারা গেছে, কাগজপত্রও পুড়ে গেছে বলে দাবি করেছিল। জেনেভা ক্যাম্পে থাকেন এমন পরিচয় দিয়েই বাসায় কাজ নিয়েছিলেন ভবনের এক নিরাপত্তাকর্মীর মাধ্যমে। কাজে যোগ দেওয়ার দিন থেকেই ওই গৃহকর্মী বোরকা পরে আসা-যাওয়া করতেন।

পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা স্ট্রিমকে বলেন, ‘ঘটনার পরপরই পুলিশ ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভবনে স্থাপিত একাধিক সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখতে পান, সকাল ৭ টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে ওই বাসায় ঢোকেন গৃহকর্মী আয়েশা। পরে স্কুল ড্রেস পরে বেরিয়ে যান ৯টা ৩৬ মিনিটে। ধারণা করা হচ্ছে স্কুলড্রেসটি ছিল খুন হওয়া শিক্ষার্থী নাফিসার।’

তার ভাষ্য, হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে কেবল একজনকেই স্কুল ড্রেস পরে ওই বাসা থেকে বের হতে দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে মা ও মেয়েকে হত্যার পর মেয়ের স্কুল ইউনিফরম পরে ও মুখে মাস্ক লাগিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যান সন্দেহভাজন গৃহকর্মী আয়েশা। এসময় তার কাঁধে স্কুল ব্যাগও দেখা গেছে।

মোহাম্মদপুর থানার ওসি মেজবাহ আরও বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজে দেখা বোরকা পরে প্রবেশ ও স্কুল ড্রেস পরে বের হওয়া ব্যক্তি একই। তিনিই আমাদের প্রধান সন্দেহভাজন। তাকে গ্রেপ্তার করতে পারলেই এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা সহজ হবে। ভবনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।’

নিরাপত্তাকর্মীরা পুলিশকে জানিয়েছে, সোমবার সকালে মেয়েটি বোরকা পরে এসেছিলেন। তারপর আর কেউ বোরকা পরে বের হননি। তবে স্কুলছাত্রীর পোষাক পরে মুখে মাস্ক লাগিয়ে একজনকে বের হতে দেখেছেন। তবে সেই স্কুল ছাত্রী কে? সে বিষয়ে কিছুই জানেন না তাঁরা।

এদিকে, গৃহকর্তা আজিজুলের ভাষ্য, বাসায় এসে প্রথমে দরজায় নক করে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে, দেখতে পান দরজা খোলা। প্রথমে তিনি প্রবেশ করে ড্রইং রুমে মেয়ে নাফিসার রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখেন এবং পাশের রুমে একটু দূরে স্ত্রীর রক্তাক্ত দেহ দেখতে পান। বেঁচে থাকতে পারে ধারণা করে অন্যান্য প্রতিবেশীদের সহায়তায় মেয়েকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

গৃহকর্তা আজিজুল আরও বলেন, ‘চার দিন আগে একটি মেয়েটি কাজের খোঁজ করতে আসে। বোরকা পরিহিত অবস্থায় ওই মেয়েটি আসলে দারোয়ান তাকে আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দেন। আমার স্ত্রী মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে কাজে রেখে দেন। পরে আমি স্ত্রীর মুখে শুনেছি, মেয়েটার নাম আয়েশা।’

আয়েশা তাদেরকে জানিয়েছে তাদের গ্রামের বাড়ি রংপুরে, জেনিভা ক্যাম্পে চাচা-চাচির সঙ্গে থাকে। বাবা মা আগুনে পুড়ে মারা গেছে, তার শরীরেও আগুনে পোড়ার ক্ষত রয়েছে বলে জানিয়েছে। স্থায়ী গৃহকর্মী না হওয়ায় তার কোনো কাজপত্র রাখা হয়নি বলে জানান আজিজুল।

শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিকেল কলেজ মর্গের প্রধান ডোম শ্রী যতন কুমার স্ট্রিমকে বলেন, ‘মা ও মেয়ের মরদেহের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। পুলিশের মাধ্যমে মরদেহ দুটি পরিবারের সদস্যদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’

তিনি আরও জানান, মা ও মেয়ের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ধারাল অস্ত্রের অনেক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, আজ সকালে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে একটি আবাসিক ভবনের সপ্তম তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে প্রথমে মায়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে মেয়ের মরদেহ হাসপাতাল থেকেই মর্গে পাঠানো হয়।

সিআইডির ক্রাইমসিন টিমের এক কর্মকর্তা জানান, বাসায় ধস্তাধস্তির আলামত রয়েছে, মেঝেতে এবং দেয়ালে রক্তের দাগ রয়েছে। আলমারি ও ভ্যানিটি ব্যাগ তছনছ অবস্থায় পাওয়া গেছে। এ থেকে তাদের ধারণা, বাসা থেকে কিছু খোয়া যেতে পারে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত