leadT1ad

বেহাল দশায় ঢামেক-ঢাবি-শিল্পকলা-বিএমইউয়ের শৌচাগার

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের টয়লেট। স্ট্রিম ছবি

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। গেটের সামনে যেতেই নাকে আসে উৎকট গন্ধ। ওই গন্ধের ভেতর এগিয়ে গিয়ে মর্গের পাশে পাওয়া গেল টয়লেট। টয়লেটের সামনে ভিড় করে আছেন কয়েকজন নারী-পুরুষ। এখানে তিনটি টয়লেট থাকলেও বন্ধ রয়েছে একটি। ফলে জরুরি হলেও সিরিয়াল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের।

সামনে থাকা সাত-আটজনের পর সিরিয়াল পেয়ে ভেতরে ঢুকে দেখা গেল, সেখানে বসে জরুরি কাজ সারার অবস্থা নেই। কমোডগুলোতে হলদে দাগ পড়ে গেছে। মেঝেতে কাদা, ময়লা। দেয়ালগুলো নোংরা। পানির বন্দোবস্ত থাকলেও ব্যবহারের বদনাটি ধরা যাচ্ছে না, এতই নোংরা! বেহাল অবস্থায় থাকা এই টয়লেট দুটি নারী-পুরুষ উভয়েই ব্যবহার করছেন।

শরীয়তপুর থেকে বোনকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে এসেছে আনোয়ার হোসেন। শৌচকর্ম সেরে বের হলে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। স্ট্রিমকে আনোয়ার বলেন, ‘আমি গ্রামের মানুষ। গ্রামের টয়লেট ব্যবস্থা তো খুব একটা ভালো না। টিন, বাঁশ দিয়ে তৈরি করা। কিন্তু এই হাসপাতালের টয়লেটের থেকে আমাদের ওখানের টয়লেট ভালো। এখানে বসাই যাচ্ছে না। গন্ধে টেকা যাচ্ছে না। চারপাশের দেয়াল আর নিচের দিকে তাকানোই যাচ্ছে না।’

আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘এখানে টয়লেট মাত্র তিনটা। তার মধ্যে দেখলাম একটা বন্ধ। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সিরিয়াল পেলাম। নাক, চোখ বন্ধ করে জরুরি কাজ শেষে বেরিয়ে এলাম। আশপাশে ভালো কোনো টয়লেট থাকলে অবশ্যই এটা ব্যবহার করতাম না।’

এসব বিষয়ে জানতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানকে বারবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভি করেননি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টয়লেটের মতোই বেহাল দশা বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির মাঠের গণশৌচাগারটির। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, সাধারণের জন্য তৈরি করা টয়লেট দুটোর একটিতে অনবরত পড়ছে পানি। বদনা ভরে সে পানিতে ভেসে যাচ্ছে ফ্লোর। কিন্তু ঠিক করা হচ্ছে না পানির ট্যাপটি। পানি জমা ফ্লোরে জুতো নিয়ে ঢুকে যাচ্ছেন মানুষ। ফলে তৈরি হচ্ছে কাদা। আর কমডে পড়েছে হলদে ছাপ।

বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির মাঠের গণশৌচাগার। স্ট্রিম ছবি
বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির মাঠের গণশৌচাগার। স্ট্রিম ছবি

এই টয়লেট ছাড়াও গণশৌচাগারটিতে প্রস্রাবের জন্য আছে দুটি টয়লেট। তবে সেখানে রয়েছে পানি সংকট। যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ব্যবহৃত টিস্যু। টয়লেটের পাশে, একটা ছাদের নিচে দেখা গেল ডাস্টবিন। সেখানে ফেলা হচ্ছে ময়লা। সেই ময়লা থেকে ছড়িয়ে পড়ছে গন্ধ।

আনিসুর রহমান নামে একজন শিল্পকলার শৌচাগারটি ব্যবহার করেন। জানতে চাইলে আনিছুর বলেন, ‘শিল্পকলা এখন সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প। হয়তো এ জন্যই টয়লেটের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো। আগে ভয়াবহ অবস্থা ছিল। এখন যা দেখছেন, এটা অনেক ভালো অবস্থা।’

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে শিল্পকলা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক রেজাউদ্দিন স্টালিন স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্ব নিয়ে এসব বিষয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু করেছি। আগের মহাপরিচালকেরা কে কী করেছেন, সেটা আমি জানি না। তবে আমি এসব বিষয়ে কোনো ছাড় দেব না। দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে।’

এবার যাওয়া যাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশের শীর্ষ এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) দুই তলায় কয়েকটি টয়লেট। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, টয়লেটগুলোতে পানি নেই। একটি হ্যান্ড শাওয়ারে পানি আসে টিপটিপ করে। ওই পানিতেই জরুরি কাজ সেরে বের হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামসুদ্দোহা নবাব।

‘কত দিন ধরে পানি নেই’—জানতে চাইলে নবাব স্ট্রিমকে বলেন, ‘পানি নাই বেশ কয়েকদিন হলো। অন্তত পাঁচ সাতদিন তো দিন হবেই। কিন্তু এটা ঠিক করা হচ্ছে না। এভাবেই পড়ে আছে।’

টিএসসির ক্যাফেটেরিয়ার বিপরীত পাশে রয়েছে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা বেশ কয়েকটি টয়লেট। পুরুষদের টয়লেটে ঢুকে দেখা গেল, একটি টয়লেটের গেট বন্ধ। একটির কমোড ভেঙে গেছে। আর একটি হাই কমোডে জমে আছে ময়লা। বাকি টয়লেটগুলো চলমান থাকলেও ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।

টিএসসির দ্বিতীয় তলার টয়লেট। স্ট্রিম ছবি
টিএসসির দ্বিতীয় তলার টয়লেট। স্ট্রিম ছবি

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. এ কে এম নূর আলম সিদ্দিকী স্ট্রিমকে বলেন, ‘টিএসসি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পরিচালনার জন্য আলাদা আলাদা দায়িত্বশীল লোক আছেন। টয়েল পরিষ্কার রাখা, পানির সরবরাহ দেওয়া তাঁদের দায়িত্ব। তাঁদের নেতৃত্বে ক্লিনার আছে। কিন্তু ক্লিনারটা ঠিক মতো দায়িত্ব পালন করে না। ফলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। আমি এ ব্যাপারে দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।’

তবে ভিন্ন চিত্রও আছে। যেমন শাহবাগের বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (বিএমইউ)। অতীতে এটি পিজি হাসপাতাল নামে পরিচিত ছিল। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের নিচ তলায় দুটো টয়লেট পাওয়া গেল। এর মধ্যে একটির দরজায় দেখা গেল, তালা। অন্যটি ব্যবহার করছেন হাসপাতালে আসা সাধারণ মানুষ। টয়লেটটির দরজায় লেখা রয়েছে ‘টয়লেটের জুতা ব্যবহার করিবেন’।

টয়লেটটির দরজায় লেখা রয়েছে ‘টয়লেটের জুতা ব্যবহার করিবেন’।
টয়লেটটির দরজায় লেখা রয়েছে ‘টয়লেটের জুতা ব্যবহার করিবেন’।

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখা গেল, ব্যবহারকারীরা নিজেদের জুতা বাইরে রেখে টয়লেটের জুতা পরিধান করছেন। কাজ শেষে আবার বেরিয়ে আসছেন। এমনই একজন রাসেল আহমেদ। টাঙ্গাইল থেকে রোগী নিয়ে ঢাকা এসেছেন তিনি। স্ট্রিমকে রাসেল বলেন, ‘অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের চেয়ে এখানের টয়লেট ভালো পেয়েছি। একটু সতর্ক হলেই টয়গুলো পরিষ্কার রাখা যায়, কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারটা এড়িয়ে যায়। সাধারণ মানুষের দিকে নজর দেয় না।’

আজ (১৯ নভেম্বর) বিশ্ব টয়লেট দিবস। বিশ্বজুড়ে স্যানিটেশন সংকট মোকাবিলা, সচেতনতা তৈরি ও নিরাপদ স্যানিটেশন সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করতে দিবসটি পালিত হয়। জাতিসংঘের ২০২৫ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন মানুষ এখনও ‘নিরাপদ স্যানিটেশন’ সুবিধা পাচ্ছে না। অর্থাৎ বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষই মৌলিক এই অধিকার থেকে বঞ্চিত। শুধু তাই নয়, ৩৫৪ মিলিয়ন মানুষ আজও খোলা জায়গায় প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটাতে বাধ্য হচ্ছে, যা গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য।

Ad 300x250

সম্পর্কিত