হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিস থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সৈন্য পাঠানোর সম্ভাবনাকে তিনি নাকচ করছেন না। ট্রাম্পের এই যুদ্ধংদেহী মনোভাব মার্কিন প্রশাসনের চলমান আগ্রাসী নীতিরই প্রতিফলন।
এরমধ্যে গত শনিবার (১৫ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক জলসীমায় একটি নৌকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী হামলায় চারজন নিহত হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় মাদক পাচারকারী সন্দেহে বিভিন্ন নৌকায় হামলা চালিয়ে মার্কিন বাহিনী এখন পর্যন্ত অন্তত ৮৩ জনকে হত্যা করেছে।
গত আগস্ট থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় সাগরে প্রায় আধা ডজন যুদ্ধজাহাজসহ এক বিশাল সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে। ওয়াশিংটনের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা হলো, এই অভিযানের লক্ষ্য মাদক পাচার রোধ করা। কিন্তু সামরিক উত্তেজনার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আলোচনার এক ক্ষীণ দ্বারও খোলা রেখেছেন। গতকাল সোমবার (১৭ নভেম্বর) ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘একটি নির্দিষ্ট সময়ে, আমি তার (মাদুরোর) সঙ্গে কথা বলব।’ এর কয়েক ঘণ্টা পরেই ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোও টেলিভিশনে জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের যে কারও সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলতে প্রস্তুত।
আলোচনা ও আগ্রাসনের এই দোলাচলে যুক্তরাষ্ট্র-ভেনেজুয়েলা সম্পর্ক এক ভয়ংকর অনিশ্চয়তার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। ভেনেজুয়েলার উপকূল থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে মার্কিন মেরিন সেনারা গত এক মাসে দ্বিতীয়বারের মতো সামরিক মহড়া চালাচ্ছে। যদিও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর প্রধানমন্ত্রী কামলা পারসাদ-বিসেসার স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তাঁর দেশের ভূমি ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে কোনো আক্রমণের জন্য ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। তবু, এই সামরিক মহড়া ও ক্যারিবীয় সাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি মাদুরো সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ বলে অভিযোগ করেছে ভেনেজুয়েলা।
যুক্তরাষ্ট্র-ভেনেজুয়েলার এই পরিস্থিতি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং কয়েক দশক ধরে চলমান তেল, মতাদর্শ ও ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের জটিল সংঘাতের সর্বশেষ অধ্যায়।
ভেনেজুয়েলার উত্তর: প্রতিরোধ ও ‘গণযুদ্ধের’ প্রস্তুতি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক আস্ফালনের মুখে ভেনেজুয়েলাও হাত গুটিয়ে বসে নেই। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকার সম্ভাব্য আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বহুমুখী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এই প্রতিরোধের মূল লক্ষ্য হলো যেকোনো ধরনের সামরিক হস্তক্ষেপকে আক্রমণকারী শক্তির জন্য এক রক্তাক্ত ও দীর্ঘস্থায়ী দুঃস্বপ্নে পরিণত করা। ভেনেজুয়েলা ভালোভাবেই জানে, প্রচলিত যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পেরে ওঠা অসম্ভব। তাই তাদের কৌশলটি দাঁড়িয়ে আছে প্রতিরোধ ও ‘অপ্রতিসম যুদ্ধ’ (অ্যাসিমমেট্রিক ওয়ারফেয়ার) এর ওপর ভিত্তি করে।
এর প্রথম ধাপ হিসেবে ভেনেজুয়েলার নিয়মিত সশস্ত্র বাহিনী দেশজুড়ে ব্যাপক সামরিক মহড়া চালাচ্ছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সার্বভৌমত্ব রক্ষার মহড়া’। দুই লক্ষাধিক সৈন্যকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত অবস্থায় রাখা হয়েছে ও রাশিয়ার কাছ থেকে কেনা অত্যাধুনিক এস-৩০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও সুখোই যুদ্ধবিমানগুলোকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে। এই সামরিক প্রস্তুতির উদ্দেশ্য কেবল শক্তি প্রদর্শনই নয়, বরং ‘ভেনেজুয়েলায় হামলা চালানো কোনো সহজ বিষয় হবে না’ ওয়াশিংটনকে এই বার্তা দেওয়া।
তবে মাদুরো সরকারের সবচেয়ে বড় বাজি হলো এর বেসামরিক মিলিশিয়া বাহিনী। হুগো শ্যাভেজের সময় থেকে গড়ে ওঠা লাখ লাখ সাধারণ নাগরিককে নিয়ে গঠিত ‘বলিভারিয়ান মিলিশিয়া’কে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। কারখানার শ্রমিক, কৃষক, সরকারি কর্মচারী এবং পাড়া-মহল্লার সাধারণ অনুগত নাগরিকদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে দেশব্যাপী প্রতিরোধ নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, সম্ভাব্য আগ্রাসনকে এক দীর্ঘস্থায়ী ও রক্তক্ষয়ী ‘গণযুদ্ধে’ পরিণত করা। যদি মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলার শহরগুলোতে প্রবেশ করেও, তাদের কেবল নিয়মিত সেনাবাহিনীর সঙ্গে নয়, বরং অলিগলিতে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার সশস্ত্র বেসামরিক যোদ্ধার সঙ্গেও লড়তে হবে।
এমন প্রস্তুতি যেকোনো দখলদার বাহিনীর জন্য এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করবে। এই কৌশল একদিকে যেমন দেশের প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করছে, তেমনই অন্যদিকে অভ্যন্তরীণভাবে মাদুরো সরকারের নিয়ন্ত্রণকেও আরও পোক্ত করছে।
শিকড়ের সন্ধানে: তেল, মতাদর্শ ও মনরো ডকট্রিন
যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যকার সংঘাতের শিকড় প্রোথিত আছে এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলমান জটিল সম্পর্কের গভীরে। বিশ শতকের শুরুতে ভেনেজুয়েলায় যখন বিপুল পরিমাণ তেলের সন্ধান পাওয়া গেল, তখন থেকেই দেশটি আমেরিকার জন্য ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। দুটি বিশ্বযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ে ভেনেজুয়েলা ছিল আমেরিকার জ্বালানি নিরাপত্তার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। এই অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতার পাশাপাশি ছিল ‘মনরো ডকট্রিন’। ১৮২৩ সাল থেকে চলে আসা এই মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা হলো, পুরো লাতিন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বলয়ের অংশ বা ‘বাড়ির পেছনের উঠান’। এই অঞ্চলে বাইরের কোনো শক্তির হস্তক্ষেপ বা আমেরিকার স্বার্থবিরোধী কোনো সরকারের উত্থান ওয়াশিংটন কখনোই মেনে নেয়নি।
বিশ শতকের বেশিরভাগ সময়জুড়ে ভেনেজুয়েলার সরকারগুলো ছিল কমবেশি মার্কিনপন্থী। তেলের বিনিময়ে সম্পর্ক ছিল স্থিতিশীল। কিন্তু ১৯৯৯ সালে হুগো শ্যাভেজ ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে যায়। শ্যাভেজ কেবল সাধারণ প্রেসিডেন্ট ছিলেন না; ছিলেন ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের ‘বলিভারিয়ান বিপ্লব’-এর প্রবক্তা। শ্যাভেজ তাঁর সমাজতান্ত্রিক ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী নীতির মাধ্যমে সরাসরি মার্কিন আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানান। তিনি ভেনেজুয়েলার তেল সম্পদকে জাতীয়করণ করেন এবং সেই অর্থ সামাজিক প্রকল্পে ব্যয় করে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। শ্যাভেজের উত্থান ওয়াশিংটনের জন্য ছিল সরাসরি মতাদর্শিক আঘাত।
২০০২ সালে শ্যাভেজের বিরুদ্ধে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে, যার পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোপন মদত ছিল বলে ব্যাপকভাবে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনাই দুই দেশের মধ্যে যে অবিশ্বাসের গভীর প্রাচীর তৈরি করেছিল তা আর কখনোই ভাঙা সম্ভব হয়নি।
শ্যাভেজ থেকে মাদুরো
২০১৩ সালে হুগো শ্যাভেজের মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরি হিসেবে নিকোলাস মাদুরো ক্ষমতা গ্রহণ করেন। সমালোচকরা অভিযোগ করেন, শ্যাভেজের মতো ক্যারিশমা বা রাজনৈতিক বিচক্ষণতা মাদুরোর ছিল না। একই সময়ে বিশ্ববাজারে তেলের দামের ভয়াবহ পতন এবং বহু বছরের দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার ফলে ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করে।
এই সংকটকে আরও ঘনীভূত করে তোলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। প্রথমে ওবামা প্রশাসন ও পরে ট্রাম্প প্রশাসন ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতির অধীনে ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পিডিভিএসএ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলো ভেনেজুয়েলাকে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ফলে দেশটির তেল উৎপাদন ও রপ্তানির ক্ষমতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। এর ফলে ভেনেজুয়েলায় লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্য ও ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দেয়।
বর্তমান পরিস্থিতি: আলোচনা ও আগ্রাসনের দ্বৈত খেলা
গত এক মাসের পরিস্থিতি এই দীর্ঘদিনের সংঘাতকে এক নতুন ও বিপজ্জনক মোড়ে নিয়ে এসেছে। একদিকে ক্যারিবীয় সাগরে মার্কিন রণতরীর উপস্থিতি এবং ছোট ছোট নৌকায় সামরিক হামলা এক ধরনের ‘ছায়া যুদ্ধ’-এর ইঙ্গিত দিচ্ছে। মাদক পাচার দমনের নামে চালানো এই অভিযানগুলোকে অনেক বিশ্লেষকই বৃহত্তর সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি বা ‘মহড়া’ হিসেবে দেখছেন। ওয়াশিংটন মাদুরোকে একটি ‘সন্ত্রাসী’ মাদক কার্টেলের নেতা হিসেবে অভিযুক্ত করছে এবং এই বয়ানকে সামনে এনে সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বৈধতা তৈরির চেষ্টা করছে।
কিন্তু একই সময়ে, আলোচনার প্রস্তাব দেওয়ার পেছনেও রয়েছে কঠিন বাস্তবতা। ২০১৯ সালে আমেরিকা ও তার মিত্ররা বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়াইদোকে ভেনেজুয়েলার ‘অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের মাধ্যমে মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার সেই প্রচেষ্টা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়। মাদুরো সামরিক বাহিনীর আনুগত্য ধরে রাখতে সক্ষম হন এবং রাশিয়া, চীন ও কিউবার মতো মিত্রদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও সামরিক সমর্থন লাভ করেন। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো বুঝতে পারছে, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মাদুরোকে সরানো সম্ভব নয়, আবার ইরাকের মতো পুরোদস্তুর যুদ্ধও হবে অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আলোচনার প্রস্তাব হতে পারে চাপ প্রয়োগের কৌশলেরই অংশ, যার মাধ্যমে হয়তো মাদুরোকে কিছু ছাড় দিতে বাধ্য করা যাবে, অথবা আলোচনার ব্যর্থতাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে ভবিষ্যতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।
ভূ-রাজনৈতিক দাবাখেলা
ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর কেবল দ্বিপাক্ষিক বিষয় নয়। এটি এক জটিল আন্তর্জাতিক দাবাখেলায় পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রধান খেলোয়াড়দের একজন হলো রাশিয়া। মস্কো ভেনেজুয়েলাকে শুধু অস্ত্রই সরবরাহ করে না, বরং জাতিসংঘে কূটনৈতিক রক্ষাকবচও প্রদান করে। আমেরিকার ‘বাড়ির উঠানে’ শক্তিশালী সামরিক ও রাজনৈতিক মিত্র ধরে রাখা রাশিয়ার জন্য ভূ-রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হলো চীন। বেইজিং ভেনেজুয়েলায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থেই চীন এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা চায় এবং মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের ঘোর বিরোধী। এর পাশাপাশি কিউবা ও ইরানের মতো দেশগুলোও ভেনেজুয়েলাকে মতাদর্শিক ও কৌশলগত সমর্থন দিয়ে আসছে। এই আন্তর্জাতিক সমর্থনই মাদুরো সরকারকে মার্কিন চাপের মুখে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম দ্য ডিপ্লোম্যাটের বিশ্লেষণ।
সামনে কী আছে? যুদ্ধ, সমঝোতা নাকি অচলাবস্থা?
এই উত্তেজনার পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতের পথ কয়েকটি সম্ভাব্য দিকে প্রবাহিত হতে পারে।
প্রথমত, পূর্ণমাত্রার মার্কিন সামরিক অভিযান। আল-জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, এমন সম্ভাবনা কম, তবে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এর পরিণতি হবে ভয়াবহ, যা পুরো লাতিন আমেরিকাকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
দ্বিতীয় সম্ভাবনা হলো, সীমিত আকারের সামরিক হামলা। মাদক কার্টেলের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বা অর্থনৈতিক স্থাপনায় আঘাত হানা হতে পারে, যার মূল উদ্দেশ্য হবে মাদুরো সরকারকে দুর্বল করে দেওয়া। তবে এর ঝুঁকি হলো, এই ধরনের হামলা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়ে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
তৃতীয় ও সবচেয়ে যৌক্তিক পথ হলো একটি কূটনৈতিক সমঝোতা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক বিশ্লেষণে দাবি করা হয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে আমেরিকা হয়তো কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার বিনিময়ে ভেনেজুয়েলায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা আদায় করার চেষ্টা করতে পারে। তবে দুই পক্ষের মধ্যেকার গভীর অবিশ্বাসের কারণে এই পথও অত্যন্ত কঠিন।
চতুর্থ ও সবচেয়ে সম্ভাব্য পরিস্থিতি হলো, বর্তমান অচলাবস্থা চলতে থাকা। আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা ও চাপ বজায় রাখবে, আর মাদুরো তার আন্তর্জাতিক মিত্রদের সহায়তায় ক্ষমতায় টিকে থাকবেন।
যুক্তরাষ্ট্র-ভেনেজুয়েলা সংঘাত হলো ঐতিহাসিক আধিপত্যবাদ, তেল-নির্ভর অর্থনীতি, মতাদর্শিক বিভেদ ও নতুন বিশ্বব্যবস্থার ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার এক বিষাক্ত মিশ্রণ। ক্যারিবীয় সাগরের বাতাসে যে বারুদের গন্ধ, তা কেবল দুটি দেশের সংঘাতের নয়, বরং এক পরিবর্তনশীল বিশ্বের বিপজ্জনক অনিশ্চয়তারই প্রতিধ্বনি।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য ডিপ্লোম্যাট, আরব নিউজ, সিএনএন ও বিবিসি।