অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে ট্রলারডুবিতে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার দুই তরুণের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় উপজেলার ননীক্ষির ইউনিয়নের পশ্চিম লওখন্ডা গ্রামের পাঁচজনসহ আরও ছয় যুবক নিখোঁজ রয়েছেন। এ খবরে মৃতদের বাড়িতে এখন শোকের মাতম চলছে।
গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাতে লিবিয়ার আল খুমস উপকূল অঞ্চল থেকে আরও অনেকের সঙ্গে মুকসুদপুরের ছয়জন একটি ট্রলারে ইতালির উদ্দেশ্যে ভূমধ্যসাগরে যাত্রা করেন। তবে দুর্ঘটনার খবর গত সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাতে জানাতে পারে তাঁদের পরিবার।
মৃতরা হলেন মুকসুদপুরের পশ্চিম লওখন্ডা গ্রামের জাহিদ শেখের ছেলে আনিস শেখ ও একই গ্রামের আকোব আলী শেখের ছেলে এনামুল শেখ। ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ রয়েছেন পশ্চিম লওখন্ডা গ্রামের আওলাদ শেখের ছেলে ইব্রাহিম শেখ, একই গ্রামের হায়দার শেখের ছেলে ধলা শেখ, ইকরাম মীনার ছেলে দুলাল মীনা, হায়দার মীনার ছেলে আশিক মীনা ও খালেক মোল্যার ছেলে সোহেল মোল্যা এবং উপজেলার কাশালিয়া ইউনিয়নের গুনহর গ্রামের হাফিজ মীনার ছেলে নিয়াজ মীনা।
আজ বুধবার (১৯ নভেম্বর) বিকালে পশ্চিম লওখন্ডা গ্রামে গিয়ে নিহতদের পরিবারে শোকাবহ পরিবেশ দেখা যায়। একই সঙ্গে পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তরুণদের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে লিবিয়ার থেকে একটি ট্রলারে ভূমধ্যসাগরে যাত্রা করেন তরুণরা। সাগরের মাঝপথে ইতালির কোস্টগার্ড তাঁদের ধাওয়া করলে ট্রলারটি ডুবে যায়। এতে এনামুল শেখ ও আনিস শেখ ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অন্যরাও নিখোঁজ হন বলে প্রবাসী স্বজনদের মাধ্যমে তারা নিশ্চিত হয়েছেন।
এনামুল শেখের পিতা আকোব আলী শেখ বলেন, “এক মাস আগে মাদারীপুরের দালাল এনামুলের মাধ্যমে ২১ লাখ টাকার বিনিময়ে আমার ছেলেকে লিবিয়া পাঠিয়েছিলাম। এক মাস পরে তাকে ‘গেম’ দিয়েছে। ২১ লাখ টাকার বিনিময়ে আমার ছেলে লাশ হলো। সরকারের কাছে দাবি, আমার ছেলের লাশটা দেশে আনতে ব্যবস্থা করে দিন।”
জেলা প্রশাসক আরিফ-উজ-জামান বলেন, বিষয়টি মৌখিকভাবে জানতে পেরেছি। অফিসিয়াল কাগজপত্র পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাতেও লিবিয়ার আল খুমজ এলাকায় ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে চার বাংলাদেশির মৃত্যু হয়।
অবৈধপথে ইউরোপযাত্রা সম্পর্কে ব্র্যাক-এর অভিবাসন কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান স্ট্রিমকে বলেন, ‘মূল কারণ হচ্ছে দেশের মধ্যে কর্মসংস্থান ও সুশাসনের অভাব। এই সমস্যার সমাধান না করলে বাকি কারণগুলো সমাধান করা কঠিন।...ঢাকার আশপাশ, মাদারীপুর ও সিলেট অঞ্চলে দালাল চক্র গড়ে উঠেছে। …সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শতাধিক গ্রুপ আছে লোকজনকে নানা রকম প্রলোভন দেখায়। এজন্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয়া হওয়া জরুরি, যেন এই চক্রগুলো ভাঙা যায়।’