দুর্নীতি, অসদাচরণ এবং সংস্থায় অসাধু সিন্ডিকেট গড়ে তোলার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় স্থায়ীভাবে বরখাস্ত হয়েছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) উপপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন (নিপু)। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী তাঁকে গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
গত ১১ নভেম্বর বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী এক অফিস আদেশে এ সিদ্ধান্ত জানান। আদেশে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে। আমজাদ হোসেন বিটিআরসির প্রশাসন বিভাগের উপপরিচালক ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি সাবেক চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ছিলেন। দায়িত্বে থাকাকালে তিনি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
বিটিআরসিতে অসাধু সিন্ডিকেট তৈরিতে তাঁর জড়িত থাকার বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। কমিশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিপীড়ন এবং চাকরিতে বৈষম্য তৈরির অভিযোগও ছিল তাঁর বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের পর গত বছরের ১১ আগস্ট তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে বিভাগীয় মামলা ও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। অভিযোগ যাচাইয়ে তিন সদস্যের তদন্ত বোর্ড গঠন করে কমিশন। তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ এবং বিটিআরসি চাকরি প্রবিধানমালা-২০২২ অনুযায়ী অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। কমিটির সুপারিশ ও বিধিমালার আলোকে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্তের গুরুদণ্ড দেওয়া হয়।
তদন্তে আমজাদের বিপুল অবৈধ সম্পদের তথ্য উঠে এসেছে। তাঁর নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে শতকোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। তাঁর স্ত্রী আফসানা আহমেদ এবং আত্মীয়স্বজনদের নামে ঢাকা শহরে ১০টি ফ্ল্যাট ও ৫০ শতাংশ জমি রয়েছে।
এ ছাড়া ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৭১৮ টাকা বিল-ভাউচার না দিয়ে আত্মসাৎ, বন্ধ করপোরেট সিম সচলের আশ্বাস দিয়ে ৫ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়া এবং নিবন্ধনহীন বিদেশি মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানকে ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (ভিএএস) সেবার অনুমোদন দিয়ে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে। সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের সভার নামে আপ্যায়ন খাতে ভাউচার ছাড়া ৫৩ লাখ টাকা তছরুপ এবং পরে সেই নথি গায়েব করার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রভাব খাটিয়ে বিটিআরসিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন আমজাদ হোসেন। সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদের সময় নিয়ম বহির্ভূতভাবে তাকে একান্ত সচিব (পিএস) করা হয়। এই পদের অপব্যবহার করে তিনি টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, নিয়োগ বাণিজ্য এবং লাইসেন্স প্রদানে জালিয়াতি করতেন। রেডিয়েশন পরিমাপক সংক্রান্ত ১৫ কোটি টাকার দরপত্র নিয়ন্ত্রণে বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও তদন্তে উঠে এসেছে।
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন দমাতেও আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি দলীয় বিবেচনায় প্রায় পাঁচ শতাধিক আইএসপি লাইসেন্স প্রদান করেছিলেন। আন্দোলনের সময় লাইসেন্স বাতিলের ভয় দেখিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০ হাজার কর্মচারীকে তিনি ছাত্রদের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে বাধ্য করেছিলেন।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আমজাদ ও তাঁর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাঁকে বরখাস্ত করা হলো।
চূড়ান্ত বরখাস্তের আদেশ