ইতিমধ্যেই হাজার হাজার বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে গ্রেপ্তার, আটক বা বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের অনেকে আবার পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা।
স্ট্রিম ডেস্ক
ভারতে ‘অবৈধ’ অভিবাসী ধরপাকড় অভিযানে হাজার হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে। দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ। আটককৃতদের বেশিরভাগই মুসলিম ও বাংলাভাষী। সরকার বলছে, যাদের আটক করা হয়েছে, তাঁরা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, একটি বিশেষ ধর্ম ও ভাষার মানুষকে টার্গেট করে এই অভিযান চালানো হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস কয়েকজন আটক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে। দিল্লির বস্তিতে আবর্জনা সংগ্রহ করেন এমন একজন জানান, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী-সন্তানসহ তাঁকে নিজ দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আসামের একজন কৃষক বলেছেন, তাঁর মাকে পুলিশ কয়েক সপ্তাহ ধরে আটকে রেখেছে। পশ্চিম ভারতের গুজরাট রাজ্যের একটি মাজারের ষাটোর্ধ্ব খাদেম অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ তাকে চোখ বেঁধে মারধর করে নৌকায় তুলে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।
এসব ঘটনা থেকেই প্রমাণ হয়, ভারত সরকার ‘অভিবাসীদের’ ওপর ব্যাপক দমন অভিযান চালাচ্ছে। তারা এই অভিযানকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য পদক্ষেপ হিসেবে দেখাচ্ছে। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, এ বছরের এপ্রিল মাসে কাশ্মীরে এক সন্ত্রাসী হামলার পর এই অভিযান তীব্র হয়। ওই হামলার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে।
এটি ধীরে ধীরে এক ভয়ভীতি দেখানোর প্রচারাভিযানে রূপ নিয়েছে। এর প্রধান লক্ষ্য মুসলিম সম্প্রদায়। বিশেষ করে তাদের ওপরই বেশি দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে, যাদের ভাষা শুনে ‘বহিরাগত’ বলে চিহ্নিত করা যায়। অথচ তাদের কেউই পাকিস্তান থেকে আসেননি।
ইতিমধ্যেই হাজার হাজার বাংলা ভাষাভাষীকে গ্রেপ্তার, আটক বা বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের মধ্যে অনেকেই আবার পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। রাজ্যটি ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এবং বাংলাই এর প্রধান ভাষা। কাজের জন্য পশ্চিমবঙ্গের তরুণ-তরুণীরা নিয়মিতই ভারতের অন্যান্য বড় শহরে পাড়ি জমান। আর সেসব শহর থেকেই তাদের আটক করা হচ্ছে।
ধারণা করা হয়, ভারতে বর্তমানে নথিভুক্ত হননি এমন কয়েক লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছেন। তারা বৈধ-অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়েছেন। দুই দেশের মধ্যকার সীমান্তে ফাঁকফোকর বেশি হওয়ায় অনুপ্রবেশ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়ে। ভারতের কয়েকটি রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষীদের বসবাস বেশি এমন এলাকায় হানা দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের কাছে প্রমাণ আছে যে সেখানে অবৈধ অভিবাসীরা বসবাস করছে।
গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে দিল্লির উপকণ্ঠে অবস্থিত গুরগাঁও শহরে প্রশাসন এক বিশেষ অভিযান শুরু করে। তারা একে বলছে ‘যাচাই অভিযান’, যার উদ্দেশ্য অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করা।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গুরগাঁওয়ে পুলিশ বহু মানুষকে আটক করেছিল। তবে পরে বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে, শত শত গরিব বাংলা ভাষাভাষী মানুষ শহর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। অভিযানের শুরু থেকেই তাদের ভেতরে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কারণ, তারা আশঙ্কা করছেন, পুলিশ যেকোনো মুহূর্তে তাদের ধরে নিয়ে যাবে।
গুরগাঁও পুলিশের জনসংযোগ কর্মকর্তা সন্দীপ কুমার জানান, যাচাই অভিযানে ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আটক করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১০ জনকে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মানুষ শহর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে— এমন দাবি সত্য নয়, গুজব।
ভারতের চারটি রাজ্যের যেসব এলাকায় পুলিশ হানা দিয়েছে, সেখানকার এক ডজনেরও বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। সাক্ষাৎকারে মুসলিম ও হিন্দু দুই ধর্মের বাংলা ভাষাভাষী বাসিন্দারাই জানিয়েছেন, তারা সরকারের এই ধরপাকড় অভিযানে আতঙ্কিত।
অভিজিত পাল (১৮) নামে একজন বলেন, তিনি পশ্চিমবঙ্গ থেকে গুরগাঁও এসেছিলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতে। বস্তিতে অভিযানের সময় পুলিশ তাঁকে আটক করে। তিনি বলেন, রাজ্যের পরিচয়পত্র দেখানোর পরেও পুলিশ তাঁকে পাঁচ দিন ধরে আটকে রাখে। পরে সমাজকর্মীরা তাঁর ভারতীয় নাগরিকত্বের আরও কিছু কাগজপত্র জমা দিলে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। ভারতে এখনো কোটি কোটি মানুষের নাগরিকত্ব প্রমাণের মতো যথাযথ কাগজপত্র নেই।
ভবিষ্যতে আবার আটক হওয়ার ভয়ে অভিজিত গুরগাঁও ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে গেছেন। তিনি বলেন, ‘শুধু বাংলাভাষী হওয়ার কারণে আবারও আটক হওয়ার ভয়ে আমি গুরগাঁও ছেড়ে চলে এসেছি।’ এখন তিনি বেকার।
মানবাধিকার সংগঠন ও আইনজীবীরা এই অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, এসব অভিযানে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মানা হচ্ছে না। তারা অভিযোগ করেছেন, ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এপ্রিলের সন্ত্রাসী হামলাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক দমননীতিকে আরও জোরদার করছে।
বিজেপি-শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে এপ্রিলের পর থেকে হাজার হাজার মুসলিমকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের অধিকাংশকেই রোহিঙ্গা বা বাংলাদেশি বলে দাবি করা হয়েছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গুজরাটে অন্তত ৬ হাজার ৫০০ জন, কাশ্মীরে ২ হাজার জন এবং রাজস্থানে প্রায় ২৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। শুধু রাজস্থানেই মে মাসে তিনটি নতুন আটক কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। সুপান্থ সিনহা নামে ওই রাজ্যের একজন আইনজীবী জানিয়েছেন, আটককৃতদের আসল সংখ্যা সম্ভবত এক হাজারের কাছাকাছি।
ভারত থেকে বাংলাদেশে কতজনকে পাঠানো হয়েছে, তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। বাংলাদেশি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মে থেকে জুলাইয়ের মধ্যে প্রায় ২ হাজার জনকে ভারত থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কোনো সংখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জুলাই মাসে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বহিষ্কারের পর যেসব ব্যক্তি নিজেকে ভারতের নাগরিক প্রমাণ করতে পেরেছেন, তাদের অনেককেই আবার ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সংগঠনটির এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, এই অভিযান মূলত দরিদ্র মুসলিম অভিবাসী শ্রমিকদের টার্গেট করে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের এই দমননীতি সমাজের প্রান্তিক মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে।
৫৯ বছর বয়সী আমের শেখ পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজস্থানে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিলেন। গত জুন মাসে পুলিশ তাঁকে আটক করে। রাজ্য সরকারের দেওয়া পরিচয়পত্র ও জন্মসনদ থাকা সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে এই ঘটনা ঘটে। আমের শেখ তিন দিন পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। পরে পরিবারের লোকজন তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি। এ তথ্য জানিয়েছেন তাঁর চাচা আজমাউল শেখ।
জুনের শেষ দিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে ২৭ বছর বয়সী ড্যানিশ শেখকে। তাঁর জন্ম পশ্চিমবঙ্গে। তিনি বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করতেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও আট বছরের ছেলে। পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে থাকার পর তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একটি জঙ্গলে ফেলে দিয়ে তাদেরকে হেঁটে বাংলাদেশে চলে যেতে বলা হয়। ড্যানিশ শেখের পরিবারের কাছে ভারতের কয়েক দশকের পুরনো জমির মালিকানার কাগজপত্র ও বৈধ পরিচয়পত্র রয়েছে। তবুও তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং তারা এখনো সেখানে আটকে আছেন। তাঁর স্ত্রী সুনালী খাতুন নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘আমরা জানি না, কবে বাড়ি ফিরতে পারব।’
৬০ বছর বয়সী ইমরান হোসেন জানান, গুজরাটে তাঁর এলাকায় অভিযানের সময় পুলিশ তাঁকে আটক করে। এরপর চোখ বেঁধে মারধর করা হয় এবং একটি নৌকায় ওঠানো হয়। টানা পাঁচ দিন নদী পথে চলার পর তিনি বাংলাদেশে পৌঁছান। তিনি এখনো রাতে ঘুমাতে পারেন না। ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমি ঘুমাতে গেলে এখনো মানুষের কান্নার শব্দ শুনতে পাই।’
ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি নেতারা বহুদিন ধরেই দাবি করে আসছেন, বাংলাদেশ থেকে আসা ‘অনুপ্রবেশকারীরা’ ভারতীয় পরিচয়কে হুমকির মুখে ফেলছে। বিশেষ করে আসামের মতো সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোকে তারা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা গত জুলাই মাসে সামাজিকমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তাঁর রাজ্যে উদ্বেগজনকহারে অবৈধ অভিবাসীর উপস্থিতির দাবি করেন। তিনি বলেন, তাঁর সরকার ‘সীমান্তে সাহসিকতার সঙ্গে অব্যাহত মুসলিম অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করছে।’
আসামের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মুসলিম। বাংলা ভাষাভাষী নাগরিক পরিচয় নিয়ে এই রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরেই টানাপোড়েন চলছে। সাম্প্রতিক বহিষ্কার অভিযানে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ১৯৫০ সালের একটি পুরোনো আইন প্রয়োগ করেছেন। এই আইনে রাজ্য প্রশাসন বিদ্যমান ট্রাইব্যুনাল বা আদালতের প্রক্রিয়া এড়িয়েই সন্দেহভাজন অনিবন্ধিত অভিবাসীদের সরাসরি বহিষ্কার করতে পারে।
‘এটা খুবই ভীতিকর’, বলেন মোহসিন ভাট। তিনি আসামে নাগরিকত্ব বিষয়ক বিচার নিয়ে গবেষণা করেছেন।
আসামের কৃষক মালেক অস্টার গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাঁর মাকে মুক্ত করার উপায় খুঁজছেন। তিনি জানান, জুন মাসের শুরুর দিকে পুলিশ তাঁর মাকে আটক করে নিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো পুলিশ জানাচ্ছে না, তাঁর মা কোথায় আছেন।
মালেক অস্টার বলেন, ‘আমার মায়ের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, এমনকি রেশন কার্ডও আছে। তবুও পুলিশ সেগুলো গ্রহণ করেনি। কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি না কেন এরকম করছে তাঁরা।’ তিনি আরও জানান, তাদের পরিবার কখনো বাংলাদেশে যায়নি। তবুও, ভারতের অনেক বাংলা ভাষাভাষীর মতো তিনিও ক্রমে নিজেকে বহিরাগত অনুভব করছেন। তাঁর ভাষায়, ‘এই ধরপাকড়ের কারণে আমি বাইরে গেলে বাংলায় কথা বলতে ভয় পাই।’
ভারতে ‘অবৈধ’ অভিবাসী ধরপাকড় অভিযানে হাজার হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে। দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ। আটককৃতদের বেশিরভাগই মুসলিম ও বাংলাভাষী। সরকার বলছে, যাদের আটক করা হয়েছে, তাঁরা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, একটি বিশেষ ধর্ম ও ভাষার মানুষকে টার্গেট করে এই অভিযান চালানো হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস কয়েকজন আটক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে। দিল্লির বস্তিতে আবর্জনা সংগ্রহ করেন এমন একজন জানান, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী-সন্তানসহ তাঁকে নিজ দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আসামের একজন কৃষক বলেছেন, তাঁর মাকে পুলিশ কয়েক সপ্তাহ ধরে আটকে রেখেছে। পশ্চিম ভারতের গুজরাট রাজ্যের একটি মাজারের ষাটোর্ধ্ব খাদেম অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ তাকে চোখ বেঁধে মারধর করে নৌকায় তুলে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।
এসব ঘটনা থেকেই প্রমাণ হয়, ভারত সরকার ‘অভিবাসীদের’ ওপর ব্যাপক দমন অভিযান চালাচ্ছে। তারা এই অভিযানকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য পদক্ষেপ হিসেবে দেখাচ্ছে। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, এ বছরের এপ্রিল মাসে কাশ্মীরে এক সন্ত্রাসী হামলার পর এই অভিযান তীব্র হয়। ওই হামলার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে।
এটি ধীরে ধীরে এক ভয়ভীতি দেখানোর প্রচারাভিযানে রূপ নিয়েছে। এর প্রধান লক্ষ্য মুসলিম সম্প্রদায়। বিশেষ করে তাদের ওপরই বেশি দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে, যাদের ভাষা শুনে ‘বহিরাগত’ বলে চিহ্নিত করা যায়। অথচ তাদের কেউই পাকিস্তান থেকে আসেননি।
ইতিমধ্যেই হাজার হাজার বাংলা ভাষাভাষীকে গ্রেপ্তার, আটক বা বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের মধ্যে অনেকেই আবার পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। রাজ্যটি ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এবং বাংলাই এর প্রধান ভাষা। কাজের জন্য পশ্চিমবঙ্গের তরুণ-তরুণীরা নিয়মিতই ভারতের অন্যান্য বড় শহরে পাড়ি জমান। আর সেসব শহর থেকেই তাদের আটক করা হচ্ছে।
ধারণা করা হয়, ভারতে বর্তমানে নথিভুক্ত হননি এমন কয়েক লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছেন। তারা বৈধ-অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়েছেন। দুই দেশের মধ্যকার সীমান্তে ফাঁকফোকর বেশি হওয়ায় অনুপ্রবেশ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়ে। ভারতের কয়েকটি রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষীদের বসবাস বেশি এমন এলাকায় হানা দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের কাছে প্রমাণ আছে যে সেখানে অবৈধ অভিবাসীরা বসবাস করছে।
গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে দিল্লির উপকণ্ঠে অবস্থিত গুরগাঁও শহরে প্রশাসন এক বিশেষ অভিযান শুরু করে। তারা একে বলছে ‘যাচাই অভিযান’, যার উদ্দেশ্য অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করা।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গুরগাঁওয়ে পুলিশ বহু মানুষকে আটক করেছিল। তবে পরে বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে, শত শত গরিব বাংলা ভাষাভাষী মানুষ শহর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। অভিযানের শুরু থেকেই তাদের ভেতরে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কারণ, তারা আশঙ্কা করছেন, পুলিশ যেকোনো মুহূর্তে তাদের ধরে নিয়ে যাবে।
গুরগাঁও পুলিশের জনসংযোগ কর্মকর্তা সন্দীপ কুমার জানান, যাচাই অভিযানে ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আটক করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১০ জনকে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মানুষ শহর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে— এমন দাবি সত্য নয়, গুজব।
ভারতের চারটি রাজ্যের যেসব এলাকায় পুলিশ হানা দিয়েছে, সেখানকার এক ডজনেরও বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। সাক্ষাৎকারে মুসলিম ও হিন্দু দুই ধর্মের বাংলা ভাষাভাষী বাসিন্দারাই জানিয়েছেন, তারা সরকারের এই ধরপাকড় অভিযানে আতঙ্কিত।
অভিজিত পাল (১৮) নামে একজন বলেন, তিনি পশ্চিমবঙ্গ থেকে গুরগাঁও এসেছিলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতে। বস্তিতে অভিযানের সময় পুলিশ তাঁকে আটক করে। তিনি বলেন, রাজ্যের পরিচয়পত্র দেখানোর পরেও পুলিশ তাঁকে পাঁচ দিন ধরে আটকে রাখে। পরে সমাজকর্মীরা তাঁর ভারতীয় নাগরিকত্বের আরও কিছু কাগজপত্র জমা দিলে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। ভারতে এখনো কোটি কোটি মানুষের নাগরিকত্ব প্রমাণের মতো যথাযথ কাগজপত্র নেই।
ভবিষ্যতে আবার আটক হওয়ার ভয়ে অভিজিত গুরগাঁও ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে গেছেন। তিনি বলেন, ‘শুধু বাংলাভাষী হওয়ার কারণে আবারও আটক হওয়ার ভয়ে আমি গুরগাঁও ছেড়ে চলে এসেছি।’ এখন তিনি বেকার।
মানবাধিকার সংগঠন ও আইনজীবীরা এই অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, এসব অভিযানে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মানা হচ্ছে না। তারা অভিযোগ করেছেন, ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এপ্রিলের সন্ত্রাসী হামলাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক দমননীতিকে আরও জোরদার করছে।
বিজেপি-শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে এপ্রিলের পর থেকে হাজার হাজার মুসলিমকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের অধিকাংশকেই রোহিঙ্গা বা বাংলাদেশি বলে দাবি করা হয়েছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গুজরাটে অন্তত ৬ হাজার ৫০০ জন, কাশ্মীরে ২ হাজার জন এবং রাজস্থানে প্রায় ২৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। শুধু রাজস্থানেই মে মাসে তিনটি নতুন আটক কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। সুপান্থ সিনহা নামে ওই রাজ্যের একজন আইনজীবী জানিয়েছেন, আটককৃতদের আসল সংখ্যা সম্ভবত এক হাজারের কাছাকাছি।
ভারত থেকে বাংলাদেশে কতজনকে পাঠানো হয়েছে, তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। বাংলাদেশি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মে থেকে জুলাইয়ের মধ্যে প্রায় ২ হাজার জনকে ভারত থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কোনো সংখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জুলাই মাসে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বহিষ্কারের পর যেসব ব্যক্তি নিজেকে ভারতের নাগরিক প্রমাণ করতে পেরেছেন, তাদের অনেককেই আবার ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সংগঠনটির এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, এই অভিযান মূলত দরিদ্র মুসলিম অভিবাসী শ্রমিকদের টার্গেট করে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের এই দমননীতি সমাজের প্রান্তিক মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে।
৫৯ বছর বয়সী আমের শেখ পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজস্থানে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিলেন। গত জুন মাসে পুলিশ তাঁকে আটক করে। রাজ্য সরকারের দেওয়া পরিচয়পত্র ও জন্মসনদ থাকা সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে এই ঘটনা ঘটে। আমের শেখ তিন দিন পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। পরে পরিবারের লোকজন তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি। এ তথ্য জানিয়েছেন তাঁর চাচা আজমাউল শেখ।
জুনের শেষ দিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে ২৭ বছর বয়সী ড্যানিশ শেখকে। তাঁর জন্ম পশ্চিমবঙ্গে। তিনি বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করতেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও আট বছরের ছেলে। পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে থাকার পর তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একটি জঙ্গলে ফেলে দিয়ে তাদেরকে হেঁটে বাংলাদেশে চলে যেতে বলা হয়। ড্যানিশ শেখের পরিবারের কাছে ভারতের কয়েক দশকের পুরনো জমির মালিকানার কাগজপত্র ও বৈধ পরিচয়পত্র রয়েছে। তবুও তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং তারা এখনো সেখানে আটকে আছেন। তাঁর স্ত্রী সুনালী খাতুন নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘আমরা জানি না, কবে বাড়ি ফিরতে পারব।’
৬০ বছর বয়সী ইমরান হোসেন জানান, গুজরাটে তাঁর এলাকায় অভিযানের সময় পুলিশ তাঁকে আটক করে। এরপর চোখ বেঁধে মারধর করা হয় এবং একটি নৌকায় ওঠানো হয়। টানা পাঁচ দিন নদী পথে চলার পর তিনি বাংলাদেশে পৌঁছান। তিনি এখনো রাতে ঘুমাতে পারেন না। ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমি ঘুমাতে গেলে এখনো মানুষের কান্নার শব্দ শুনতে পাই।’
ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি নেতারা বহুদিন ধরেই দাবি করে আসছেন, বাংলাদেশ থেকে আসা ‘অনুপ্রবেশকারীরা’ ভারতীয় পরিচয়কে হুমকির মুখে ফেলছে। বিশেষ করে আসামের মতো সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোকে তারা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা গত জুলাই মাসে সামাজিকমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তাঁর রাজ্যে উদ্বেগজনকহারে অবৈধ অভিবাসীর উপস্থিতির দাবি করেন। তিনি বলেন, তাঁর সরকার ‘সীমান্তে সাহসিকতার সঙ্গে অব্যাহত মুসলিম অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করছে।’
আসামের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মুসলিম। বাংলা ভাষাভাষী নাগরিক পরিচয় নিয়ে এই রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরেই টানাপোড়েন চলছে। সাম্প্রতিক বহিষ্কার অভিযানে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ১৯৫০ সালের একটি পুরোনো আইন প্রয়োগ করেছেন। এই আইনে রাজ্য প্রশাসন বিদ্যমান ট্রাইব্যুনাল বা আদালতের প্রক্রিয়া এড়িয়েই সন্দেহভাজন অনিবন্ধিত অভিবাসীদের সরাসরি বহিষ্কার করতে পারে।
‘এটা খুবই ভীতিকর’, বলেন মোহসিন ভাট। তিনি আসামে নাগরিকত্ব বিষয়ক বিচার নিয়ে গবেষণা করেছেন।
আসামের কৃষক মালেক অস্টার গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাঁর মাকে মুক্ত করার উপায় খুঁজছেন। তিনি জানান, জুন মাসের শুরুর দিকে পুলিশ তাঁর মাকে আটক করে নিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো পুলিশ জানাচ্ছে না, তাঁর মা কোথায় আছেন।
মালেক অস্টার বলেন, ‘আমার মায়ের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, এমনকি রেশন কার্ডও আছে। তবুও পুলিশ সেগুলো গ্রহণ করেনি। কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি না কেন এরকম করছে তাঁরা।’ তিনি আরও জানান, তাদের পরিবার কখনো বাংলাদেশে যায়নি। তবুও, ভারতের অনেক বাংলা ভাষাভাষীর মতো তিনিও ক্রমে নিজেকে বহিরাগত অনুভব করছেন। তাঁর ভাষায়, ‘এই ধরপাকড়ের কারণে আমি বাইরে গেলে বাংলায় কথা বলতে ভয় পাই।’
গতকাল শনিবার (১৬ আগস্ট) প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) বরাতে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডন সর্বশেষ এ তথ্য জানিয়েছে। পিডিএমএ জানিয়েছে, খাইবার পাখতুনখাওয়ায় বুনের শহরে সর্বোচ্চ মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া গিলগিট-বালতিস্তানে ১২ ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে ১১ জন মারা গেছেন।
১০ ঘণ্টা আগেএবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ওয়াশিংটনে বৈঠকে বসছেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এর আগে,ট্রাম্প আলাস্কায় ইউক্রেন ইস্যুতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
১ দিন আগেমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আলাস্কায় আলোচনায় বসে ‘কিছু বড় অগ্রগতি’ অর্জন করেছেন। তবে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
১ দিন আগেপ্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারকর্মীদের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ছুটির কারণে দুর্ঘটনার সময় দরগাটি ভক্তে ঠাসা ছিল।
২ দিন আগে