leadT1ad

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া যুদ্ধ: বর্ডারে আটকা অনেক বাংলাদেশি, ট্রান্সপোর্ট নেই

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৪: ৩৪
কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

গত ২৪ জুলাই শুরু হওয়া থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া যুদ্ধের মধ্যে কম্বোডিয়ায় আটকা পড়েছেন বহু বাংলাদেশি। বাংলাদেশি কমিউনিটি ইন কম্বোডিয়ার সভাপতি মোতাহের হোসেন মিয়া স্ট্রিমকে বলেন, ‘কম্বোডিয়ায় প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই কম্বোডিয়ার রাজধানীর নম্পেনে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রটিতে ২০০ এর মতো বাংলাদেশি আশ্রয় নিয়েছেন। তবে এখনো বহু বাংলাদেশি আটকে আছেন সীমান্তবর্তী এলাকায়।’

মোতাহের হোসেন জানান, কম্বোডিয়ায় কাজ করা অধিকাংশ বাংলাদেশিই নির্মাণশ্রমিক। তাঁদের অনেকেই যুদ্ধাবস্থা থেকে সরে আসার সময় বেতন নিয়ে আসতে পারেননি। গোলাগুলি শুরু হওয়ার পর অনেক প্রকল্প থেকেই ম্যানেজারেরা পালিয়ে যান। তখন সেখানে কর্মরত বাংলাদেশিরা বেতন না নিয়েই চলে আসতে বাধ্য হন। স্ট্রিমকে বাংলাদেশি শ্রমিকরা জানান, এ সময় তাঁরা এক কাপড়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন।

আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা এক বাংলাদেশি নির্মাণশ্রমিক স্ট্রিমকে বলেন, ‘থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া বর্ডারে যে গোলাবর্ষণ হলো, ওই জায়গায়তেই আমরা কাজ করতেছিলাম। দেখা গেল যে স্থানীয় কম্বোডিয়ানরা চইলা আসল নিজ নিজ বাসায়। কিন্তু আমাদের আসার কোনো পরিস্থিতি নাই। আমাদের যেগুলা বস আছিল, গুলির শব্দ শুইনা পালাইছে সব।’

সীমান্ত এলাকা থেকে পালানোর সময় গাড়ি পাওয়া যাচ্ছিল না উল্লেখ করে ওই বাংলাদেশি বলেন, ‘অনেকের পক্ষে প্রজেক্ট থেকে আসা সম্ভব হয় নাই। আটকে রইসে। গাড়ি পায় নাই। গাড়ি তো সব বন্ধ কইরে দিসে। ১০ ডলার কি ১২ ডলার ভাড়া, সেখানে দেখা যাচ্ছে, ৫০, ১০০ এমনকি ১৫০ ডলারও চাচ্ছে। তাও গাড়ি পাওয়া যায় না।’

সীমান্ত এলাকায় আটকে পড়া শ্রমিকদের নিয়ে আমরা এখনো চিন্তিত। তাদের মালিকেরা পালিয়ে গেছেন এবং অনেক শ্রমিকের পাসপোর্ট নেই। পরিবহন সমস্যাও রয়েছে।’ মোতাহের হোসেন,সভাপতি, বাংলাদেশি কমিউনিটি ইন কম্বোডিয়া

তিনি আরও বলেন, ‘রাস্তা দিয়ে ঘুরতি ঘুরতি কাউন্টারে গিয়ে অনেক রিকোয়েস্ট কইরে, বড় ভাইদের এখান থেকে অনেক যোগাযোগ কইরে একটা বাস পাঠাইল রাত্তিরে। সকালবেলা আমগোরে তুইলে নিয়ে আসল। সারাদিন আসতে সময় লাগছে। রাত্তিরে আইসে পৌঁছাইসি নম্পেনে।’

নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ওই বাংলাদেশি বলেন, ‘বিষ্যুদবার দিন সকালবেলা আমার কার্ড জমা নিসে যে বেতন দেবে। কিন্তু গুলির শব্দ শুনে বস চইলে গেসে। রবিবার পর্যন্ত আমরা ওই জায়গায় ওইভাবেই আছিলাম। রবিবার সকাল থেকে যখন মনে করেন বারুদ-মারুদ সামনে আইসে পড়া ধরল, আমার উপরে আছিল টিন, সেই টিন যখন ঝড়ঝড়াইয়ে পড়া ধরল, তখন সবকিছু জিনিস থুইয়ে আমরা খালি হাতে চইলে আসছি।’

মোতাহের হোসেন জানান, এ যুদ্ধে ১০ জনের অধিক বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। তাঁদেরই একজনের সঙ্গে কথা হয় স্ট্রিমের। পায়ে বোমার আঘাত পেয়েছেন তিনি। স্ট্রিমকে সে সময়ের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘সকাল ৯টা থেকে বোমাবর্ষণ শুরু হয়। তারপর বস ডেকে বলে, আগে জীবন বাঁচান, কাজ পরে। মালসামান গুছায়ে আমরা বের হয়ে আসব, তখন রুমের সামনে একটা বোমা বিস্ফোরণ হয়। একদম আমার সামনেই। তখন সেটা মাটিতে ধাক্কা খেয়ে আমার পায়ে লাগে। আমি তখন সেখানে পড়ে যাই। পরে ট্রাকে করে সেখান থেকে চলে আসি। আমার মালসামান সব ওখানে। কিছুই নিয়ে আসতে পারি নাই।’

আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা এক বাংলাদেশি নির্মাণশ্রমিক স্ট্রিমকে বলেন, ‘থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া বর্ডারে যে গোলাবর্ষণ হলো, ওই জায়গায়তেই আমরা কাজ করতেছিলাম। দেখা গেল যে স্থানীয় কম্বোডিয়ানরা চইলা আসল নিজ নিজ বাসায়। কিন্তু আমাদের আসার কোনো পরিস্থিতি নাই। আমাদের যেগুলা বস আছিল, গুলির শব্দ শুইনা পালাইছে সব।

মোতাহের বলেন, ‘বাংলাদেশিরা শুক্রবার থেকে সংগঠনটিতে ফোন করা শুরু করেছে এবং আসতে শুরু করেছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় আটকে পড়া বাংলাদেশিদের নিয়ে আমরা এখনো চিন্তিত। তাদের মালিকেরা পালিয়ে গেছেন এবং অনেক শ্রমিকের পাসপোর্ট নেই। পরিবহন সমস্যাও রয়েছে।’

থাইল্যান্ডের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (এনএসসি) জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৭টার পরে সীমান্তের কাছে থাই সেনাদের নজরদারির জন্য কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী ড্রোন মোতায়েন করে। এর কিছুক্ষণ পরেই, রকেট-চালিত গ্রেনেডে সজ্জিত কম্বোডিয়ার বাহিনী সীমান্তের কাছে জড়ো হয়।

এনএসসির একজন মুখপাত্র দাবি করেন, উত্তেজনা কমানোর জন্য থাই সেনারা চিৎকার করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে, কিন্তু সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর কম্বোডিয়ার সেনারা সকাল ৮টা ২০মিনিটের দিকে গুলি চালায় বলে জানা গেছে, যার ফলে থাই বাহিনী প্রতিক্রিয়া জানায়।

থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে বিএম-২১ রকেট লঞ্চার এবং কামানের মতো ভারী অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ করেছে, যা থাইল্যান্ডের দিকের বাড়িঘর এবং পাবলিক অবকাঠামোতে আঘাত করেছে। এর মধ্যে একটি হাসপাতাল ও একটি জ্বালানি স্টেশনও রয়েছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত