leadT1ad

রাশিয়া ইউরোপে হামলা করবে না, লিখিতভাবে নিশ্চয়তা দিতে প্রস্তুত পুতিন

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫২
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে কিরগিজস্তানের বিশকেকে যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনের পর রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন সংবাদ সম্মেলন করছেন। ছবি: স্পুতনিক/রয়টার্স।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়া ইউরোপের অন্য কোনো দেশে আক্রমণ করবে না, এ বিষয়ে তিনি লিখিতভাবে নিশ্চয়তা দিতে প্রস্তুত। তাঁর দাবি, মস্কো ইউরোপ আক্রমণের পরিকল্পনা করছে, এই অভিযোগ ‘মিথ্যা’, ‘অমূলক’ এবং ‘পুরোপুরি ভিত্তিহীন’।

পুতিন অভিযোগগুলোকে ‘হাস্যকর’ বলেও উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা কখনোই তা করতে চাইনি। যদি তারা লিখিত নিশ্চয়তা চায়, সেটিও আমরা বিনা প্রশ্নেই দেব।’

বৃহস্পতিবার কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে রাশিয়া-নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন (সিএসটিও) এর শীর্ষ বৈঠকে পুতিন এসব কথা বলেন।

তবে ইউরোপীয় নেতারা তার এই বক্তব্যে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ইউক্রেনে হামলার আগেও পুতিন বহুবার অস্বীকার করেছিলেন। অথচ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া তবুও ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ চালায়।

ইউক্রেন যুদ্ধ ও শান্তি আলোচনায় অবস্থান

ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে কোনো সমাধান কি সম্ভব, এই প্রশ্নে পুতিন কিছুটা আশাবাদী সুরে কথা বলেন। তিনি জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত খসড়া শান্তি প্রস্তাব ভবিষ্যৎ আলোচনার ভিত্তি হতে পারে।

তিনি দাবি করেন, রাশিয়া চাইলে ‘গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত’ আলোচনায় যেতে পারে। তবে প্রয়োজন হলে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে এবং আরও নতুন অঞ্চল দখল করতে রাশিয়া প্রস্তুত বলেও সতর্ক করেন।

পুতিন আবারও আগের শর্তই পুনর্ব্যক্ত করেন। ইউক্রেনীয় বাহিনীকে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণ সরে যেতে হবে, এমনকি সেসব জায়গা থেকেও যেখানে এখনো রুশ বাহিনী সরাসরি নিয়ন্ত্রণে নেই। তার ভাষায়, ‘যদি ইউক্রেন সেনা প্রত্যাহার করে, যুদ্ধ থেমে যাবে। না করলে আমরা সামরিকভাবেই তা নিশ্চিত করব।’

ইউক্রেন বলছে, সৈন্য প্রত্যাহার মানে হবে রাশিয়ার জন্য কিয়েভ দখলের পথ খুলে দেওয়া।

জেলেনস্কিকে ‘অবৈধ’ আখ্যা, আলোচনার পথ অনিশ্চিত

পুতিন ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আগ্রহী। তবে তিনি আবারও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ‘অবৈধ সরকারপ্রধান’ বলে অভিহিত করেছেন। তার দাবি, জেলেনস্কির মেয়াদ ২০২৪ সালের মে মাসে শেষ হওয়ার পর নির্বাচন না হওয়ায় কিয়েভ সরকার আইনগতভাবে বৈধ নয়। তাই তাদের সঙ্গে কোনো চুক্তি করা ‘আইনি দিক থেকে অসম্ভব’।

পুতিন বলেন, ‘আমরা শেষ পর্যন্ত সমঝোতা চাই। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে তা প্রায় অসম্ভব।’ তার দাবি, নির্বাচন না হওয়ায় জেলেনস্কি তার বৈধতা হারিয়েছেন এবং যে কোনো শান্তি চুক্তি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেই কার্যকর হবে। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিকভাবেও রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোকে মান্যতা দিতে হবে।

ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ আন্দ্রিয় ইয়ারমাক বৃহস্পতিবার জানান, জেলেনস্কি কোনোভাবেই ভূখণ্ড ছাড়বেন না। তিনি বলেন, ‘যতদিন জেলেনস্কি প্রেসিডেন্ট, কেউ ভাববেন না যে আমরা মাটি ছেড়ে দেব।’

শান্তি প্রস্তাব, মার্কিন ভূমিকা ও কূটনৈতিক আলোচনা

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জন্য একটি ২৮ দফা শান্তি প্রস্তাব প্রকাশ করে, যা বহু বিশ্লেষকের মতে রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক। এতে ইউক্রেনকে ব্যাপক ছাড় দিতে বলা হয়। যেমন কিছু এলাকা ছেড়ে দেওয়া ও ন্যাটোতে যোগদানের লক্ষ্য ত্যাগ করা।

তবে ইউক্রেনের আপত্তির পর আলোচনার মাধ্যমে প্রস্তাবে পরিবর্তন আসে। ইউক্রেনের প্রথম উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই কিসলিৎসা জানান, প্রস্তাব থেকে ইউক্রেন ৬ লাখের বেশি সৈন্য রাখতে পারবে না এবং যুদ্ধাপরাধীদের সাধারণ ক্ষমা করতে হবে, এই দুটি ধারা বাতিল করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি বলেন, জেনেভায় আগের বৈঠকে আলোচিত কাঠামো ধরে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অতিরিক্ত বৈঠক হবে। তিনি আরও জানান, আগামী সপ্তাহে নতুন বৈঠক আছে।

একইসঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল—যার মধ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফও আছেন—আগামী সপ্তাহে মস্কো সফর করবে। সেখানে ইউক্রেন ও ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা হবে।

পুতিন জানান, রুশ প্রতিনিধি দল আলোচনায় তাদের মূল দাবি উত্থাপন করবে। বিশেষত তারা প্রশ্ন তুলবে সেই প্রস্তাব নিয়ে, যেখানে বলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র শুধু ক্রিমিয়া ও অন্যান্য অধিকৃত অঞ্চলে রাশিয়ার ‘প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ’ স্বীকৃতি দেবে। পুতিনের ভাষায়—‘আমাদের আলোচনার প্রধান বিষয় সেটিই হবে।’

সংক্ষেপে বলা যায় যে পুতিন দাবি করেছেন—রাশিয়ার ইউরোপে আক্রমণের কোনও পরিকল্পনা নেই এবং চাইলে লিখিত প্রতিশ্রুতিও দিতে পারে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানে তিনি কঠোর শর্ত দিয়েছেন এবং তাতে কিয়েভ-পক্ষের সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা কম। আন্তর্জাতিকভাবে শান্তি প্রস্তাব নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হলেও, যুদ্ধ শেষ হওয়ার বাস্তব সম্ভাব্যতা এখনো অনিশ্চিত।

সূত্র: আল-জাজিরা

Ad 300x250

সম্পর্কিত