leadT1ad

‘তৃতীয় বিশ্ব’ থেকে অভিবাসন স্থগিত করার ঘোষণা ট্রাম্পের

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ‘থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রিজ’ বা তথাকথিত উন্নয়নশীল দেশসমূহ থেকে আসা সমস্ত অভিবাসন স্থায়ীভাবে স্থগিত করবেন। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর ২০২৫) তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক ঘোষণায় তিনি একথা জানান।

তার ভাষায়, মার্কিন অভিবাসন ব্যবস্থা ‘পুরোপুরি পুনরুদ্ধার’ না হওয়া পর্যন্ত এই বিরতি বহাল থাকবে। বুধবার (২৬ নভেম্বর ২০২৫) ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যের ওপর হামলার পর ট্রাম্পের এই ঘোষণা আসলো। ওই ঘটনায় একজন সেনা সদস্য মারা যান এবং হামলাকারী একজন আফগান বংশোদ্ভূত বলে জানা যায়।

ট্রাম্পের এই ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ২০২৫ সালের অন্যান্য নীতিগত লক্ষ্য—যেমন প্রকল্প ২০২৫ এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ওই প্রকল্পে ব্যাপক অভিবাসী বহিষ্কার, বৈধ অভিবাসন সীমিতকরণ এবং বাইডেন সরকারের সময়ে অনুমোদিত অভিবাসন বাতিলের পরিকল্পনা রয়েছে। ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি বাইডেন প্রশাসনের অনুমোদিত ‘লাখ লাখ প্রবেশাধিকার’ বাতিল করবেন, অ-নাগরিকদের ফেডারেল সুবিধা বন্ধ করবেন এবং দেশে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করা বা ‘উপকারবিহীন’ অভিবাসীদের বহিষ্কার করবেন।

প্রেক্ষাপট ও কারণ

গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের কাছে দুজন ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ন্যাশনাল গার্ড সদস্য গুলিবিদ্ধ হন। এতে একজন মারা যান এবং সন্দেহভাজন হামলাকারীকে আটক করা হয়। তাকে বলা হয় বাইডেন সরকারের সময় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা আফগান অভিবাসী। এরপর ট্রাম্প রাজধানীতে আরও ৫০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েনের অনুরোধ জানান। তিনি দাবি করেন, অভিবাসন নীতি ব্যর্থ হওয়ায় নিরাপত্তা দুর্বল হয়েছে এবং দেশবাসীর জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আগে তার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কেও তিনি এমন যুক্তি ব্যবহার করেছিলেন।

ট্রাম্প তার পোস্টে লেখেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থা স্বাভাবিক ও শক্তিশালী না হওয়া পর্যন্ত সব তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে স্থগিত করব। বাইডেন প্রশাসনের সময়ে অনুমোদিত লাখ লাখ অভিবাসন অনুমোদন বাতিল করব, এমনকি স্বয়ংক্রিয় স্বাক্ষরে দেওয়া অনুমোদনও। এবং যারা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য মোটের ওপর কোনও উপকার বয়ে আনে না, তাদের দেশ থেকে অপসারণ করব।’

ট্রাম্প তার পোস্টে আরও জানান, ‘অ-নাগরিকদের’ জন্য সব ধরনের ফেডারেল সুবিধা ও ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়া হবে। দেশে শান্তি ও স্থিতি ব্যাহতকারী অভিবাসীদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে। পাশাপাশি যারা রাষ্ট্রের ওপর বোঝা, নিরাপত্তা ঝুঁকি বা ‘পশ্চিমা সভ্যতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হবে, তাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হবে।

তিনি কোনো দেশের তালিকা দেননি, তবে তার প্রশাসন আফগানিস্তান, বুরুন্ডি, লাওস, টোগো ও ভেনেজুয়েলাসহ ১৯টি দেশের গ্রিন কার্ড যাচাই করার পরিকল্পনার কথা জানায়। ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে এসব গ্রিন কার্ড বাতিল হতে পারে।

নীতিগত মূল দিকসমূহ

ট্রাম্পের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে—

স্থায়ী অভিবাসন স্থগিত: নির্দিষ্ট উন্নয়নশীল দেশসমূহ থেকে অভিবাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। এতে পরিবারভিত্তিক গ্রহণ, কর্মভিসা ও শরণার্থী গ্রহণ—সবই প্রভাবিত হবে।

বাইডেন–যুগের অনুমোদন বাতিল: আশ্রয় আবেদন, শরণার্থী মর্যাদা ও অন্যান্য অভিবাসন অনুমোদনসহ লাখ লাখ অনুমোদন বাতিল। অনেক ক্ষেত্রে আপিলের সুযোগও থাকবে না।

অ-নাগরিকদের সুবিধা বন্ধ: অনিবন্ধিত বা নতুন অভিবাসীদের জন্য ফেডারেল ভর্তুকি, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য সহায়তা বন্ধ করা হবে।

নির্বাসন ও নাগরিকত্ব প্রত্যাহার: যারা নিরাপত্তা ঝুঁকি বা ‘দেশের জন্য নিট-সম্পদ নয়’ বলে বিবেচিত হবে, তাদের বহিষ্কার করা হবে এবং নাগরিকত্ব প্রত্যাহারও সম্ভব।

কার্যকরী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন: নীতি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে। বিদ্যমান ভিসা ও অভিবাসন নথিরও পুনর্মূল্যায়ন হবে।

এসব পদক্ষেপ ট্রাম্পের প্রকল্প-২০২৫ পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, যেখানে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ, বহিষ্কার এবং বৈধ পথ সংকোচনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

প্রতিক্রিয়া ও সম্ভাব্য প্রভাব

ঘোষণাটি যুক্তরাষ্ট্রে তীব্র বিভাজন সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্পের সমর্থক, বিশেষ করে ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ গোষ্ঠী, একে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঠিক প্রয়োগ হিসেবে দেখছে। তাদের ভাষায়—‘ট্রাম্প সবসময় ঠিক।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে উদযাপন করেছে এবং সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া দেখে আনন্দ প্রকাশ করেছে।

অন্যদিকে মানবাধিকার সংগঠন, অভিবাসী সহায়তা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনা এসেছে তীব্রভাবে। অনেকেই একে বৈষম্যমূলক, অভিবাসী-বিদ্বেষী এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছে। আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিল সতর্ক করেছে—এর ফলে পরিবার বিচ্ছিন্নতা, অর্থনৈতিক ক্ষতি ও মানসিক বিপর্যয় বাড়তে পারে। আফ্রিকাসহ বহু অঞ্চলে ক্ষোভ দেখা গেছে। কিছু প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে—‘এটি আমাদের নিজের দেশে উদ্দীপনা জাগানোর মতো সতর্কবার্তা।’

এই নীতির কারণে আইনি চ্যালেঞ্জ আসতে পারে, কারণ অতীতে এমন নিষেধাজ্ঞা আদালতের পর্যালোচনার মুখে পড়েছিল। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি হতে পারে, কারণ অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার ও উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কূটনৈতিক সম্পর্কেও টানাপড়েন সৃষ্টি হতে পারে। বহিষ্কার ও আটকে দেশেও অস্থিরতাও বাড়তে পারে।

এই ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে এক বড় পরিবর্তন। বাস্তবায়ন শুরু হলে এর আইনি, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক প্রভাব সামনে আসবে। তবে নিশ্চিত ভাবে বলা যায়—ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে আগ্রাসী ও কঠোর অবস্থান নিচ্ছে এবং এর ফলাফল যুক্তরাষ্ট্র ও বাইরের বিশ্ব উভয় ক্ষেত্রেই দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত