leadT1ad

হংকংয়ের অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯৪

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

নিহতের সংখ্যার দিকে থেকে এই অগ্নিকাণ্ড গত ৮০ বছরে হংকংয়ের সবচেয়ে প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ড।

হংকংয়ের তাই পো জেলার ওয়াং ফুক কোর্ট সরকারি আবাসিক কমপ্লেক্সের অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৭৬ জন। আহতদের মধ্যে ১২ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন এবং আরও ২৮ জনের অবস্থা গুরুতর।

বুধবারের বিকাল ৩টার দিকে (২৬ নভেম্বর ২০২৫) আগুন লাগার অল্প সময়ের মধ্যেই এটি কয়েক দশকের মধ্যে শহরের সবচেয়ে বড় দুর্যোগে পরিণত হয়। আটটি উচ্চ ভবনের মধ্যে সাতটিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন পুরোপুরি নেভাতে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সময় লেগে যায়।

কমপ্লেক্সটি ১৯৮০–র দশকে নির্মিত হয়। এতে প্রায় ২ হাজার ফ্ল্যাটে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ মানুষ বসবাস করেন। এখানকার বাসিন্দাদের বড় অংশই বয়স্ক। প্রায় ৩৬ শতাংশের বয়স ৬৫ বা তার বেশি। এ কারণেই হতাহতের ঘটনাও বেশি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখনো প্রায় ৩০০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধার অভিযান আজ শুক্রবার শেষ করার আশা করছে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।

নিহতের সংখ্যার দিকে থেকে এই অগ্নিকাণ্ড গত ৮০ বছরে হংকংয়ের সবচেয়ে প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ড। ১৯৪৮ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। ১৯৪৮ সালে একটি গুদামে আগুনে ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর এটাই সবচেয়ে বড় প্রাণহানির ঘটনা এ শহরে।

বুধবার দুপুর ৩টার কিছু আগে ৩২-তলা একটি ভবনে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। ওয়াং ফুক কোর্ট একটি ঘনবসতিপূর্ণ সরকারি আবাসিক এলাকা, যা নিউ টেরিটরিজের উত্তরাংশে অবস্থিত। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, আগুন শুরু হয়েছিল বাইরের বাঁশের মাচা থেকে, যা বড় ধরনের সংস্কারকাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল। বিকেলের মধ্যে আগুন পাশের ভবনগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। তীব্র বাতাস ও দাহ্য সামগ্রী আগুনকে আরও দ্রুত ছড়িয়ে দেয়।

সন্ধ্যার দিকে এই আগুনকে ‘লেভেল-৫’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যা হংকংয়ের অগ্নিকাণ্ড শ্রেণিবিন্যাসে সর্বোচ্চ সতর্ক সংকেত। আগুনের বিস্তারে বাঁশের মাচা বড় ভূমিকা রাখে। হংকংয়ে এখনো ঐতিহ্যগতভাবে বাঁশের মাচা ব্যবহৃত হলেও চীনের মূল ভূখণ্ডে এটি বহু আগেই বাদ দেওয়া হয়েছে। চীনে বাঁশের মাচার বদলে ধাতব কাঠামো ব্যবহার করা হয়।

মাচার চারপাশে থাকা সবুজ নেট ও ওয়াটারপ্রুফ ত্রিপল দ্রুত দাহ্য হয়ে ওঠে। মাচার কাঠামো ভেঙে ১০ থেকে ২০ তলা নিচে পড়ে আরও ছোট ছোট আগুনের সৃষ্টি করে। ভবনের ভেতরে ব্যবহৃত দাহ্য স্টাইরোফোমের কারণে আগুন করিডোরজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বাইরের দেওয়ালেও অগ্নিরোধক মানদণ্ড যথাযথভাবে মেনে চলা হয়েছিল কি না—তা এখন তদন্তাধীন।

তীব্র বাতাস আগুনকে আরও বেশি করে ছড়িয়ে দেয় এবং আটটির মধ্যে সাতটি ভবন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিছু বাসিন্দা জানান, তাদের ইউনিটে কোনো অগ্নিসংকেত বেজে ওঠেনি। ফলে তারা দেরিতে টের পান এবং বহু মানুষ উপরের তলার ফ্ল্যাটে আটকে পড়েন।

হংকংয়ের তাই পো জেলার ওয়াং ফুক কোর্ট সরকারি আবাসিক কমপ্লেক্সে বুধবার রাতভরও আগুন জ্বলছিল।
হংকংয়ের তাই পো জেলার ওয়াং ফুক কোর্ট সরকারি আবাসিক কমপ্লেক্সে বুধবার রাতভরও আগুন জ্বলছিল।

শতাধিক বাসিন্দাকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়। সেখানে খাদ্য, পোশাক ও অর্থ সহায়তা পৌঁছাতে থাকে। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপে তল্লাশি চালাচ্ছেন। অনেকে চরম দুশ্চিন্তা ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে ভবন থেকে পালিয়ে আসার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন।

চেন নামে উদ্ধার হওয়া এক বৃদ্ধ জানিয়েছেন, বিদেশে থাকা মেয়ের ফোনেই তিনি সতর্ক হয়ে লিফট ধরে বেরিয়ে আসেন।

আরেক বাসিন্দা চিয়াং বলেন, ‘অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সেখানে শিশুরাও ছিল।’

আগুনের উৎস ও বিস্তারের বিষয়ে তদন্ত চলছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত নিম্নমানের জাল, প্লাস্টিক শিট ও বাঁশের মাঁচা আগুন ছড়াতে বড় ভূমিকা রেখেছে।

বিশেষজ্ঞ গুয়ান ইয়ো বলেন, জ্বলনশীল উপকরণ দিয়ে এমন ঘের নির্মাণ করা ছিল ‘দুর্ঘটনার অপেক্ষায় থাকা।’

আরেক বিশেষজ্ঞ চার্লস জেনিংসের মতে, এত উঁচু ভবনের বাইরের দিকে লাগা আগুন মোকাবিলা করা কোনো দমকল বাহিনীর জন্যই অত্যন্ত কঠিন।

বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। কারণ অ্যালার্ম সিস্টেম সংস্কারের সময় বন্ধ রাখা হয়েছিল। শ্রমিকদের ধূমপানের অভিযোগ রয়েছে। সংস্কার কাজের দায়িত্বে থাকা তিনজনকে গ্রেপ্তার এবং দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়েছে।

অগ্নিরোধী উপকরণ বাধ্যতামূলক করা ও সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থার সংস্কারের দাবি উঠছে।

চায়না টাইপিং ইন্স্যুরেন্স দুই বিলিয়ন হংকং ডলার পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দাবি আসতে পারে বলে প্রস্তুতি নিয়েছে এবং পৃথক টাস্কফোর্স গঠন করেছে।

আগুনের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক পোস্টে বলা হয়, ‘এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়।’ বেশ কয়েকজন বাসিন্দা সাক্ষাৎকারে জানান, আগুন লাগলেও ভবনের অ্যালার্ম বাজেনি।

ওয়াং ফুক কোর্টের একজন ফ্ল্যাটমালিক কিকো মা জানান, সংস্কারকাজ চলায় অ্যালার্ম সিস্টেম বন্ধ রাখা হয়েছিল। নির্মাণশ্রমিকরা নিয়মিত ফায়ার এস্কেপ ব্যবহার করতেন, তাই অ্যালার্ম বারবার বাজা ঠেকাতে এটি বন্ধ করে রাখা হয়।

৩৩ বছর বয়সী এই বাসিন্দা বর্তমানে পরিবারের সঙ্গে কানাডায় থাকেন। তবে তিনি বছরে কয়েকবার ওই অ্যাপার্টমেন্টে আসেন।

কিকো মার দাবি, ‘এই অগ্নিকাণ্ড এটি রোধ করা সম্ভব ছিল। কিন্তু িঅনেকে নিজের দায়িত্ব পালন করেননি।’

তিনি অভিযোগ করেন, নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের ও দাহ্য উপকরণ ব্যবহার করেছে।

তিনি আরও বলেন, বাসিন্দারা প্রায়ই দেখতেন শ্রমিকেরা ভবনে ধূমপান করছে। জানালার ধারে সিগারেটের অবশিষ্টাংশও পাওয়া যেত।

তার ভাষায়, ‘সেসময় মানুষ বারবার জিজ্ঞেস করতো, যদি আগুন লাগে তাহলে কী হবে? সবাই খুব চিন্তিত ছিল।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত