গাজা সিটিতে ‘হলুদ রেখা’ অতিক্রম করে ইসরায়েলের অগ্রযাত্রার ফলে বহু ফিলিস্তিনি পরিবার কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, উত্তর গাজায় বহু পরিবার বর্তমানে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ইসরায়েলি সেনারা আরও ভেতরের দিকে অবস্থান নিয়েছে।
গাজার হামাস সরকারের তথ্য অধিদপ্তর জানায়, বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি সেনা ও ট্যাংক পূর্ব গাজা সিটিতে প্রায় ৩০০ মিটার ভেতরে অগ্রসর হয়েছে। এতে আটকা পড়েছে বহু পরিবার। গোলাবর্ষণের মধ্যে এসব পরিবারের ভাগ্য অজানা। তারা আরও জানায়, হলুদ রেখা লঙ্ঘনের এই পদক্ষেপ যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি স্পষ্ট অবজ্ঞা।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে হওয়া চুক্তিতে উল্লেখ থাকা হলুদ রেখা বরাবর গত মাসে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সময় ইসরায়েলি বাহিনী অবস্থান নিয়েছিল। এই রেখার মাধ্যমে ইসরায়েল উপকূলীয় এলাকার অর্ধেকের বেশি অংশে নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। রেখার কাছে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী নিয়মিত গুলি চালায়।
বৃহস্পতিবার গাজা সিটি থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খৌদারি জানান, শুজাইয়া এলাকার আরও ভেতরে নতুন অবস্থান চিহ্নিত করতে ইসরায়েলি সেনাদের হলুদ ব্লক ও চিহ্ন বসাতে দেখা গেছে। তবে পুরো সীমানা চিহ্নিত নয়, ফলে অনেকে জানেন না ঠিক কোথায় এই সীমারেখা।
তিনি জানান, ইসরায়েলি সেনাদের নতুন অগ্রযাত্রার পর আরও অনেক ফিলিস্তিনি নিজেদের বাড়িতে পৌঁছাতে পারছেন না। মানুষ বলছে, তারা যেন এক খাঁচায় বন্দি। তাদের ক্রমশ গাজার পশ্চিম অংশের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
‘এই দুঃস্বপ্ন কবে শেষ হবে?’
এই অগ্রযাত্রার মধ্যেই গাজা জুড়ে ইসরায়েলি হামলা আবার বেড়েছে। এতে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩২ জন নিহত এবং ৮৮ জন আহত হয়েছে।
চিকিৎসকরা জানান, খান ইউনুসের পূর্বে বনি সুহেইলায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিনজন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একটি শিশু ছিল। আহত হয়েছে আরও ১৫ জন।
আল জাজিরার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল প্রায় ৪০০ বার এই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
৩৬ বছর বয়সী মোহাম্মদ হামদুনা নামের গৃহহীন এক ফিলিস্তিনি এএফপিকে বলেন, প্রতিদিন মানুষ নিহত হচ্ছে। তিনি বলেন, তারা এখনো তাঁবুতে বাস করছেন, শহরগুলো ধ্বংসস্তূপ, সীমান্ত ক্রসিংগুলো বন্ধ, আর জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলোও পুরণের সুযোগ নেই।
তাফফাহ এলাকার ৩৩ বছর বয়সী লিনা কুরাজও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ যুদ্ধ আবার শুরু হতে পারে এই ভয় থেকেই তারা বাঁচতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবার আমরা আশা ফিরে পাই, তখনই আবার গোলাবর্ষণ শুরু হয়। এই দুঃস্বপ্ন কবে শেষ হবে?’
সূত্র: আল-জাজিরা