মিয়ানমারের মানবিক বিপর্যয়, হত্যা, ধ্বংস আর বাস্তুচ্যুতি নিয়ে লিখেছেন রোহিঙ্গা কবিরা।
স্ট্রিম ডেস্ক

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট। নদী, পাহাড়, সমুদ্র পেরিয়ে এই দিনে বাংলাদেশে নেমেছিল রোহিঙ্গাদের ঢল। সীমান্তের ওইপারে তখন চলছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনীরদের অমানবিক নিধনযজ্ঞ। মিয়ানমারের মানবিক বিপর্যয়, হত্যা, ধ্বংস আর বাস্তুচ্যুতি নিয়ে লিখেছেন রোহিঙ্গা কবিরা। ইংরেজি থেকে দুই কবির কবিতা অনুবাদ করেছেন জাভেদ হুসেন
পঁচিশ আগস্ট
মোহাম্মদ রেজুয়ান
পঁচিশ আগস্ট ভোরে ঢুকে পড়ল শোকের অন্ধকারে
আমার গ্রামের নারীরা, কালো লেপে ঢাকা
কান্নার কালো ছায়ার মতো।
রাইফেলের গর্জন বজ্রধ্বনির চেয়ে তীক্ষ্ণ।
গুলিরা অন্ধকার আকাশে ঘুরছে, ক্ষুধার্ত পঙ্গপালের মতো।
রাইফেল আর একে ফোরটিসেভেনের আওয়াজ হাসির মতো বাজছে।
আগুনের জিহ্বা চেটে দিচ্ছে আমাদের গ্রামের প্রতিটি ঘরের শরীর।
শিশুরা কাঁদতে কাঁদতে মায়ের ভাঙা তাঁবুর তলায় খুঁজছে আশ্রয়।
স্ত্রীকে খুঁজছে স্বামী, স্বামীকে খুঁজছে স্ত্রী।
মায়েরা ডাকছে শিশুর নাম ধরে ।
অঙ্গহীন মানুষ হাতে ধরে নিজের ছিন্ন পা,
অন্ধ মানুষ তাকিয়ে আছে অন্ধকারের দিকে।
চোখের জল প্রজাপতির মতো গড়িয়ে মুছে দিচ্ছে দরজার সীমানা।
শিশুর লাশ চেপে আছে মায়ের পিঠে,
মাথা ও বুকে গুলি, শুয়ে আছে।
পঁচিশ আগস্ট আমাদের কষ্ট বিক্রি করেছে মিষ্টি ছোপ মেরে।
শিশু, স্ত্রী, স্বামী—সবাই সমাধিক্ষেত্রের শৌচাগারে কাটায় জীবন।
ওহ, পঁচিশ আগস্ট! কী নির্মম! কী নির্মম!
তুমি আমার ভাইকে করেছ চুরি, আমার প্রিয় ভাই।
তুমি তার গলা কেটে পাঠিয়ে দিয়েছে মাটির কোলে, ওর বন্ধুদের কাছে।
ওহ, আগস্ট!
নিষ্ঠুর ক্ষুধার্ত দানব,
তুমি নির্দোষ রোহিঙ্গাদের খেয়েছ ছিঁড়ে ছিঁড়ে,
আইসিসির চোখের সামনে।
জাতিসংঘ চুপ।
আমাদের হত্যা করে মুছে ফেলতে চেয়েছ আমাদের ছায়া।
কিন্তু আগামীকাল লাজারাসের মতো আমরা দাঁড়াবো উঠে,
আমাদের ছায়া আবার দীর্ঘ, কালো হয়ে উঠবে বেড়ে।
আর কোনো গণহত্যা নয়, আর কোনো কষ্ট নয়!

একজন রোহিঙ্গা রিফিউজি
মাইয়ু আলি
আমি বরং বাংলাদেশে মারা যেতে পারি,
আমার দেহ অন্তত পাবে শেষকৃত্যের মর্যাদা।
কিন্তু মিয়ানমারে ফেরানো—অবিবেচনা,
সেখানে শেষকৃত্য? তার নিশ্চয়তা নেই।
কক্সবাজারে আমার হৃদয় জর্জরিত,
আমার বোনেরা পাচারের শিকার, ধরে নিয়ে গেছে আমার ভাইদের।
প্রত্যেক শরণার্থী চায় ঘরে ফিরে যেতে,
তাহলে আমি কেন নিজেকে অস্বীকার করব?
রাতের শেষ না হওয়া দুঃস্বপ্নের মধ্যেও,
আমি চিৎকার করি—ন্যায়ের জন্য।
আমি চাই শুধু নিজের ঘরে ফিরে বাঁচতে,
চাই জীবন, চাই বেঁচে থাকতে।
যে পৃথিবী আমি চিনতাম, তা নেই আর,
আমার মানুষেরা নিহত হয়েছে, ঘরবাড়ি হয়েছে ধ্বংস।
বাংলাদেশ থেকে পালাচ্ছি এই নিয়ে চতুর্থবার,
আমার জীবন ব্যয় হয়েছে শুধু টিকে থাকতে চেয়ে।
প্রত্যাবাসনের পথে নিজেকে প্রশ্ন করি—
‘এ কি শেষবার?’
‘আবার বাঁচবার সৌভাগ্য কি হবে আমার?’
কিন্তু এবার অন্য কিছু।
আমার হৃদয় বলছে—
পালানো নয়, এবার লড়াই।
জীবনের জন্য লড়াই,
অধিকারকে ফিরে পাওয়ার লড়াই।
আমি চাই ঘরে ফিরে শান্তিতে বাঁচতে,
যে জীবন আমার, সেই জীবন আমার হোক।
কবি পরিচিতি
মোহাম্মদ রেজুয়ান মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বাংলাদেশে আসেন। গণহত্যার একজন বেঁচে থাকা সাক্ষী তিনি। সেই বিষণ্ন দিনটিকে স্মরণ করে এই কবিতা লিখেছিলেন রেজুয়ান। কবিতাটি নেওয়া হয়েছে রিফিউজি ইন্টারন্যাশনাল থেকে। প্রকাশকাল সেপ্টেম্বর ২০২০।
মাইয়ু আলি তরুণ রোহিঙ্গা কবি, লেখক ও মানবিককর্মী। তাঁর ব্লগে (rohingyablogger.com) কবিতা ও প্রবন্ধ লিখেন। তাঁর প্রবন্ধ আল জাজিরা, সিএনএন ও ফিন্যানশিয়াল টাইমসে প্রকাশিত হয়েছে। মাইয়ুর কবিতা মডার্ন পোয়েট্রি ইন ট্রান্সলেশন-এ প্রকাশিত হয়েছে। কবিতাটি নেওয়া হয়েছে ওয়ার্ল্ড লিটরেচার টুডে, বসন্ত সংখ্যা ২০১৯ থেকে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট। নদী, পাহাড়, সমুদ্র পেরিয়ে এই দিনে বাংলাদেশে নেমেছিল রোহিঙ্গাদের ঢল। সীমান্তের ওইপারে তখন চলছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনীরদের অমানবিক নিধনযজ্ঞ। মিয়ানমারের মানবিক বিপর্যয়, হত্যা, ধ্বংস আর বাস্তুচ্যুতি নিয়ে লিখেছেন রোহিঙ্গা কবিরা। ইংরেজি থেকে দুই কবির কবিতা অনুবাদ করেছেন জাভেদ হুসেন
পঁচিশ আগস্ট
মোহাম্মদ রেজুয়ান
পঁচিশ আগস্ট ভোরে ঢুকে পড়ল শোকের অন্ধকারে
আমার গ্রামের নারীরা, কালো লেপে ঢাকা
কান্নার কালো ছায়ার মতো।
রাইফেলের গর্জন বজ্রধ্বনির চেয়ে তীক্ষ্ণ।
গুলিরা অন্ধকার আকাশে ঘুরছে, ক্ষুধার্ত পঙ্গপালের মতো।
রাইফেল আর একে ফোরটিসেভেনের আওয়াজ হাসির মতো বাজছে।
আগুনের জিহ্বা চেটে দিচ্ছে আমাদের গ্রামের প্রতিটি ঘরের শরীর।
শিশুরা কাঁদতে কাঁদতে মায়ের ভাঙা তাঁবুর তলায় খুঁজছে আশ্রয়।
স্ত্রীকে খুঁজছে স্বামী, স্বামীকে খুঁজছে স্ত্রী।
মায়েরা ডাকছে শিশুর নাম ধরে ।
অঙ্গহীন মানুষ হাতে ধরে নিজের ছিন্ন পা,
অন্ধ মানুষ তাকিয়ে আছে অন্ধকারের দিকে।
চোখের জল প্রজাপতির মতো গড়িয়ে মুছে দিচ্ছে দরজার সীমানা।
শিশুর লাশ চেপে আছে মায়ের পিঠে,
মাথা ও বুকে গুলি, শুয়ে আছে।
পঁচিশ আগস্ট আমাদের কষ্ট বিক্রি করেছে মিষ্টি ছোপ মেরে।
শিশু, স্ত্রী, স্বামী—সবাই সমাধিক্ষেত্রের শৌচাগারে কাটায় জীবন।
ওহ, পঁচিশ আগস্ট! কী নির্মম! কী নির্মম!
তুমি আমার ভাইকে করেছ চুরি, আমার প্রিয় ভাই।
তুমি তার গলা কেটে পাঠিয়ে দিয়েছে মাটির কোলে, ওর বন্ধুদের কাছে।
ওহ, আগস্ট!
নিষ্ঠুর ক্ষুধার্ত দানব,
তুমি নির্দোষ রোহিঙ্গাদের খেয়েছ ছিঁড়ে ছিঁড়ে,
আইসিসির চোখের সামনে।
জাতিসংঘ চুপ।
আমাদের হত্যা করে মুছে ফেলতে চেয়েছ আমাদের ছায়া।
কিন্তু আগামীকাল লাজারাসের মতো আমরা দাঁড়াবো উঠে,
আমাদের ছায়া আবার দীর্ঘ, কালো হয়ে উঠবে বেড়ে।
আর কোনো গণহত্যা নয়, আর কোনো কষ্ট নয়!

একজন রোহিঙ্গা রিফিউজি
মাইয়ু আলি
আমি বরং বাংলাদেশে মারা যেতে পারি,
আমার দেহ অন্তত পাবে শেষকৃত্যের মর্যাদা।
কিন্তু মিয়ানমারে ফেরানো—অবিবেচনা,
সেখানে শেষকৃত্য? তার নিশ্চয়তা নেই।
কক্সবাজারে আমার হৃদয় জর্জরিত,
আমার বোনেরা পাচারের শিকার, ধরে নিয়ে গেছে আমার ভাইদের।
প্রত্যেক শরণার্থী চায় ঘরে ফিরে যেতে,
তাহলে আমি কেন নিজেকে অস্বীকার করব?
রাতের শেষ না হওয়া দুঃস্বপ্নের মধ্যেও,
আমি চিৎকার করি—ন্যায়ের জন্য।
আমি চাই শুধু নিজের ঘরে ফিরে বাঁচতে,
চাই জীবন, চাই বেঁচে থাকতে।
যে পৃথিবী আমি চিনতাম, তা নেই আর,
আমার মানুষেরা নিহত হয়েছে, ঘরবাড়ি হয়েছে ধ্বংস।
বাংলাদেশ থেকে পালাচ্ছি এই নিয়ে চতুর্থবার,
আমার জীবন ব্যয় হয়েছে শুধু টিকে থাকতে চেয়ে।
প্রত্যাবাসনের পথে নিজেকে প্রশ্ন করি—
‘এ কি শেষবার?’
‘আবার বাঁচবার সৌভাগ্য কি হবে আমার?’
কিন্তু এবার অন্য কিছু।
আমার হৃদয় বলছে—
পালানো নয়, এবার লড়াই।
জীবনের জন্য লড়াই,
অধিকারকে ফিরে পাওয়ার লড়াই।
আমি চাই ঘরে ফিরে শান্তিতে বাঁচতে,
যে জীবন আমার, সেই জীবন আমার হোক।
কবি পরিচিতি
মোহাম্মদ রেজুয়ান মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বাংলাদেশে আসেন। গণহত্যার একজন বেঁচে থাকা সাক্ষী তিনি। সেই বিষণ্ন দিনটিকে স্মরণ করে এই কবিতা লিখেছিলেন রেজুয়ান। কবিতাটি নেওয়া হয়েছে রিফিউজি ইন্টারন্যাশনাল থেকে। প্রকাশকাল সেপ্টেম্বর ২০২০।
মাইয়ু আলি তরুণ রোহিঙ্গা কবি, লেখক ও মানবিককর্মী। তাঁর ব্লগে (rohingyablogger.com) কবিতা ও প্রবন্ধ লিখেন। তাঁর প্রবন্ধ আল জাজিরা, সিএনএন ও ফিন্যানশিয়াল টাইমসে প্রকাশিত হয়েছে। মাইয়ুর কবিতা মডার্ন পোয়েট্রি ইন ট্রান্সলেশন-এ প্রকাশিত হয়েছে। কবিতাটি নেওয়া হয়েছে ওয়ার্ল্ড লিটরেচার টুডে, বসন্ত সংখ্যা ২০১৯ থেকে।

বাংলা গদ্যরীতির শুরু হয়েছিল তিনটি পৃথক ছাঁচ ধরে; যথাক্রমে জনবুলি অসংস্কৃত ছাঁচে উইলিয়াম কেরির ‘কথোপকথন’, আরবি-ফারসিমিশ্রিত ছাঁচে রাম রাম বসুর ‘প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ এবং সংস্কৃত ব্যাকরণে তৎসম শব্দবহুল ছাঁচে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের ‘বত্রিশ সিংহাসনে’র মাধ্যমে।
১৯ ঘণ্টা আগে
অস্কারের দৌড়ে থাকা নতুন সিনেমা ‘হ্যামনেট’। উইলিয়াম ও অ্যাগনেস শেক্সপিয়ারের সংসার জীবনকে কল্পনায় তুলে ধরেছে এই সিনেমা। এতে দেখানো হয়েছে সন্তান হারানোর তীব্র বেদনা।
১ দিন আগে
ভোজনরসিক বাঙালির খাদ্যাভ্যাসে পিঠার প্রচলন বহু পুরোনো। বিভিন্ন মুখরোচক আর বাহারি স্বাদের পিঠার প্রচলন ছিল আদিকাল থেকেই। এর সন্ধান পাওয়া যায় ১০০ বছরের পুরোনো রেসিপি বইতেও। এমন তিনটি বাহারি পিঠার রেসিপি ‘মিষ্টান্ন-পাক’ বই থেকে তুলে ধরা হলো স্ট্রিমের পাঠকদের জন্য।
১ দিন আগে
‘পিঠা’ শব্দটি শোনা মাত্রই চোখে ভেসে ওঠে শীতের সকালের কুয়াশা, আগুন জ্বলা চুলা, গরম–গরম ভাপা পিঠা, গুড় আর খেজুর রসের ঘ্রাণ। কিন্তু ‘পিঠা’ শব্দটি এসেছে কোথা থেকে এবং কীভাবে বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে পিঠা এত গভীরভাবে মিশে গেছে, তা কি জানেন?
২ দিন আগে