মারুফ ইসলাম
আফগানিস্তানে তালেবানদের উত্থানের শুরু থেকেই ‘ঘৃণার চোখে’ দেখে এসেছে ভারত। সেই ১৯৯৪ সালে তালেবানদের উত্থানের সময় থেকে বহুবার ‘তালেবানবিরোধী’ বক্তব্য দিয়েছেন ভারত সরকারের নীতিনির্ধারকেরা।
তালেবানের প্রতি ভারতের ঘৃণা এতটাই প্রবল ছিল যে, ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবান কাবুল দখল করার সঙ্গে সঙ্গে ভারত আফগানিস্তানে তাদের দূতাবাস এবং চারটি কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়। আফগান শিক্ষার্থী, রোগী, ব্যবসায়ী ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তাসহ সব শ্রেণির মানুষের জন্য ভিসা প্রদানও বন্ধ করে দেওয়া হয়। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে, এক ক্লিকেই হাজার হাজার আফগানকে আগের দেওয়া প্রায় সব ভিসা বাতিল করেছিল ভারত।
সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরে পেহেলগাম হামলার পরও তালেবানকে একহাত নিয়েছে মোদি সরকার। ওই হামলার পরপরই তালেবানকে সন্দেহ করে ভারত এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সরাসরি টেলিফোন করে তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিকে তীব্র ভর্সৎনা করে বলেন, ‘আফগান ভূখণ্ড যেন কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের উর্বরভূমি না হয়।’
তবে ওই ঘটনার মাত্র ছয়মাস পরই উল্টোচিত্র দেখা যাচ্ছে। গত ৯ অক্টোবর ভারত সফরে এসেছেন তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। তাঁর সঙ্গে হাসিমুখে বৈঠক করছেন ছয় মাস আগে হুংকার দেওয়া এস জয়ঙ্কর। দৃঢ়তার সঙ্গে বলছেন, ‘আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং স্বাধীনতার প্রতি ভারতের পূর্ণ প্রতিশ্রুতি রয়েছে।’
শুধু তাই নয়, মোদি সরকারের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নীতিনির্ধারকদের একজন মনে করা হয় যাঁকে, সেই অজিত দোভালের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন আমির খান মুত্তাকি। ভারতের এই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কী ধরনের আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারতি জানা না গেলেও অজিত দোভালের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ধারণা করা হচ্ছে, অজিত দোভালের ভিডিওটি দেওবন্দ মাদরাসায় (দারুল উলুম দেওবন্দ) দেওয়া একটি বক্তৃতা। সেখানে অজিত দোভালকে বলতে শোনা যায়, ‘আজকের দিনে আফগানিস্তানে ভারতই সবচেয়ে জনপ্রিয় দেশ। সেখানে ভারতীয়রা সবচেয়ে বেশি সম্মানিত। সবাই তাদের ভালোবাসে। আমরা তাদের সঙ্গে সেভাবেই আচরণ করব, যেভাবে দরকার।’
অজিত দোভাল আরও বলেন, ‘মুসলিম যুবসমাজের মধ্যে কাজ করতে হবে এবং আমাদের মুসলিম সংগঠনগুলোর মাধ্যমে তাদের (আফগানদের) সঙ্গে কাজ করতে হবে।’
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই দেওবন্দেই গত ১১ অক্টোবর সফরে গিয়েছিলেন আমির খান মুত্তাকি। সেখানে তিনি দেওবন্দ গ্রন্থাগারে অসংখ্য শিক্ষার্থীর উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
বলে রাখা ভালো, দেওবন্দকে আফগানরা মুসলিম সম্প্রদায়ের আদর্শ ও আন্দোলনের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করে। এই দেওবন্দের আদলে পাকিস্তানের পাখতুনখাওয়াতে নির্মিত দারুল উলূম হাক্কানিয়াতে পড়াশোনা করেছেন বিখ্যাত তালেবান কমান্ডার মোল্লা ওমর, জালালুদ্দিন হাক্কানি এবং মোল্লা আবদুল গনি বারাদার। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ‘তালেবান বিশ্ববিদ্যালয়’ নামেও পরিচিত।
সুতরাং, ভারতের দেওবন্দের সঙ্গে তালেবানদের আগে থেকেই এক ধরনের সম্পর্ক রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেই সম্পর্কের মধ্যে এবার সংযোগ তৈরি করে দিলেন অজিত দোভাল।
কিন্তু কেন? ভারতের লাভ কী এতে? উদ্দেশ্যই বা কী? বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এর নেপথ্যে রয়েছে গভীর কৌশলগত স্বার্থ এবং আঞ্চলিক প্রভাব বলয় ধরে রাখার প্রতিযোগিতা। জয়শঙ্কর ও অজিত দোভালের মতো শীর্ষ নীতিনির্ধারকেরা যখন অতীতের ঘৃণা ভুলে ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ হওয়ার চেষ্টা করছেন, তখন বুঝতে হবে, এটি কোনো আবেগপ্রসূত সিদ্ধান্ত নয়, বরং সুচিন্তিত কৌশল।
তালেবানের প্রতি ভারতের নীতি বরাবরই ছিল চরম বিদ্বেষমূলক। ১৯৯০-এর দশকে তালেবান-শাসিত আফগানিস্তানকে ভারত তার ‘কৌশলগত’ নীতির অংশ হিসেবে দেখেনি। ভারত তখন স্পষ্টভাবেই পাকিস্তানের পরোক্ষ প্রভাব বলয় হিসেবে তালেবানকে দেখেছে।
১৯৯৯ সালের কান্দাহার বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা ভারতের তালেবানবিরোধিতা আরও গভীর করেছিল। কিন্তু ২০২১ সালে তালেবানের কাবুল দখলের পর খেলার মাঠ সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। পশ্চিমা-সমর্থিত আশরাফ ঘানি সরকারের সঙ্গে ভারতের যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, তা এক লহমায় শেষ হয়ে যায়।
ভারত দ্রুতই বুঝতে পারে, তালেবানকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। তারা এখন আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রক শক্তি। এই পরিস্থিতিতে ভারতের সামনে দুটি পথ ছিল; হয় চিরন্তন বিরোধিতা বজায় রাখা, অথবা বাস্তববাদী কূটনীতি অনুসরণ করা। দিল্লি দ্বিতীয় পথটি বেছে নিয়েছে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বেশ কয়েকটি কারণকে প্রাধান্য দিয়ে তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চাচ্ছে ভারত। কারণগুলো হচ্ছে—সন্ত্রাস দমন, পাকিস্তানের প্রভাব হ্রাস, আঞ্চলিক সংযোগ ও বাণিজ্য, উন্নয়নমূলক বিনিয়োগের সুরক্ষা ইত্যাদি।
বিষয়গুলো যদি একটু বড় পরিসরে বিশ্লেষণ করে দেখা যাক। যেমন, সন্ত্রাস দমন প্রসঙ্গ। আফগানিস্তানের মাটি যেন ভারতের বিরুদ্ধে, বিশেষত কাশ্মীরে কোনো সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য ব্যবহৃত না হয়, তা নিশ্চিত করা ভারতের প্রধান এবং মৌলিক উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য সাধন করতে ভারত এখন তালেবানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে এই বিষয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি আদায় করার চেষ্টা করছে। মুত্তাকি এরই মধ্যে অবশ্য এই বিষয়ে ভারতকে আশ্বাস দিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত: পাকিস্তানের প্রভাব হ্রাস করা। ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে তালেবানের ঘনিষ্ঠতা ছিল। কিন্তু তালেবান ক্ষমতায় আসার পর অপ্রত্যাশিতভাবে পাকিস্তান ও তালেবানের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। ভারত এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কাবুলে নিজস্ব প্রভাব পুনরুদ্ধার করতে এবং চীন-পাকিস্তানের প্রভাব মোকাবিলা করতে উঠেপড়ে লেগেছে। কারণ আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে এমন সুযোগ ভারতের জন্য আবার কবে আসবে, কে জানে!
এরপর আঞ্চলিক সংযোগ ও বাণিজ্য প্রসঙ্গে বলা যাক। ইরান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে ভারতের জন্য আফগানিস্তান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট রুট। চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্য পথ চালু রাখা এবং ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডরকে কাজে লাগানোর জন্য তালেবান সরকারের সহযোগিতা অপরিহার্য।
সবশেষে নজর দেওয়া যাক উন্নয়নমূলক বিনিয়োগ নিয়ে। গত দুই দশকে ভারত আফগানিস্তানে বহু উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। স্বাভাকিভাবেই এই বিনিয়োগের সুরক্ষা চায় ভারত। এ ছাড়া আফগানিস্তানে ভারতের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম মসৃণভাবে পরিচালনার জন্যও কাবুলের নতুন শাসকের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন জরুরি।
এই সবকিছু মিলিয়ে তালেবানকে কাছে টানার চেষ্টা করছে ভারত।
তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা পরিদর্শনের আগ্রহ এবং ভারতের তাতে সায় দেওয়ার বিষয়টি ভারত-তালেবান সম্পর্কের সবচেয়ে প্রতীকী এবং বিশ্লেষণমূলক দিক।
বলা প্রয়োজন, দেওবন্দ হলো সুন্নি ইসলামের এক ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাকেন্দ্র। এর রয়েছে শত বছরের পুরোনো নিজস্ব ধর্মীয় ও আদর্শিক প্রভাব বলয়। ঐতিহাসিকভাবে আফগানিস্তানের দেওবন্দি ভাবধারা এই মাদরাসা থেকেই সৃষ্টি হয়েছিল। তালেবানের বহু শীর্ষ নেতার ধর্মীয় গুরু বা আদর্শিক পূর্বপুরুষরা এই দেওবন্দি ঘরানার। তাই মুত্তাকির দেওবন্দ সফর নিঃসন্দেহে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার বার্তা বহন করে।
তবে শুধু আধ্যাত্মিক সম্পর্কই শেষ কথা নয়। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের মতো একজন ব্যক্তি যখন এই সংযোগকে গুরুত্ব দেন, তখন এর কারণ নিছক ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক নয়, বরং তা গভীর নিরাপত্তা ও কৌশলগত। দোভাল হয়তো এই দেওবন্দ সংযোগের মাধ্যমে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে চান। যেমন, তালেবানের আদর্শিক দুর্বলতা অনুসন্ধান করা। এর অর্থ হচ্ছে, দেওবন্দের উলেমাদের মাধ্যমে তালেবানের অভ্যন্তরে থাকা আরও নমনীয় অংশ বা প্রগতিশীল ভাবধারার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা। এর মাধ্যমে তালেবানের উগ্রবাদী অবস্থানকে আদর্শগতভাবে দুর্বল করার বা প্রভাব ফেলানোর একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশল নেওয়া।
অজিত দোভায় সম্ভবত পাকিস্তানের আধ্যাত্মিক তত্ত্বকেও চ্যালেঞ্জ করতে চান। অর্থাৎ তিনি এই বার্তা দিতে চান যে, তালেবানের বৌদ্ধিক ও আধ্যাত্মিক উৎস ভারত (দেওবন্দ) থেকে আহরিত, পাকিস্তান থেকে নয়। মুত্তাকির এই সফরের মাধ্যমে অজিত সেই বার্তাটি আরও স্পষ্ট করলেন বলে ধরে নেওয়া যায়।
অজিতের আরকেটি লক্ষ্য হচ্ছে, ভারতের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা রক্ষা করা। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, ভারতে মুসলিমদের একটি বড় অংশ দেওবন্দি ঘরানার অনুসারী। তালেবানের সঙ্গে কোনো আদর্শিক বা ধর্মীয় সম্পৃক্ততা তৈরি হলে ভারতে এর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রভাব অবশ্যই পড়বে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দোভাল এই স্পর্শকাতর সম্পর্ককে সাবধানে পরিচালনা করতে চাইছেন, যাতে তা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি না হয়।
মুত্তাকি এরই মধ্যে ভারতকে ‘আফগানিস্তানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে জয়শঙ্কর কাবুলে ভারতীয় দূতাবাস পুনরায় খোলার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে মনে হচ্ছে, তালেবানবে কাছে টানা ভারতের জন্য অনিবার্যই হয়ে উঠেছে।
ভারত-ভিত্তিক থিংক ট্যাংক ‘অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন’-এর বিশেষজ্ঞ ভি পন্ত ও শিবম শেখাওয়াত বলেন, ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে তালেবান নিজেদের অভ্যন্তরীণ জনগণের কাছে এই বার্তা দিয়ে চায় যে, তাঁদের নেতৃত্বে আফগানিস্তান একটি স্থিতিশীল, কার্যকর এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে নিজের জায়গা করে নিতে সক্ষম।
এদিকে কৌশলগত বিষয়ক বিশ্লেষক ব্রহ্ম চেলানি সামাজিকমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, মুত্তাকির এই দিল্লি সফর ‘ভারত-তালেবান সম্পর্কের সতর্ক পুনর্গঠন’, যেখানে উভয় পক্ষই তাদের কৌশলগত স্বার্থকে এগিয়ে নিতে বাস্তবসম্মত সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। চেলানির মতে, এই সফর আফগানিস্তানের আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্যে সম্ভাব্য পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিচ্ছে।
প্রতিবেশির প্রভাব প্রতিবেশির ওপর পড়বে—এটাই স্বাভাবিক। ফলে ভারতের যেকোনো নীতিকৌশলের প্রভাব বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীনের ওপর পড়তে বাধ্য।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার বিশ্লেষক ও ইসলামাবাদের প্রতিনিধি আবিদ হুসাইন এক নিবন্ধে লিখেছেন, ভারত যদি তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে পাকিস্তান ও চীনকে চাপে রাখার নীতি গ্রহণ করে থাকে, তবে বাংলাদেশকে তার কূটনীতি ও সামরিকনীতি নতুন করে সাজাতে হবে। বিশেষ করে তালেবানের ব্যাপারে ভারতের নতুন সিদ্ধান্তগুলো গভীরভাবে তলিয়ে দেখতে হবে।
এরপর চীন যদি দেখে, তালেবানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটিয়ে ভারত এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে চাচ্ছে, তাহলে চীন তা শক্ত হাতেই মোকাবিলা করতে চাইবে। ফলে, তালেবানের সঙ্গে ভারত কী কী কাজ করতে যাচ্ছে, তা দেখেই চীনকে তার নীতি ও ভূমিকা সমন্বয় করতে হবে।
তবে প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের ওপর প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি। কারণ আফগানিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানের একটি প্রভাবশালী পক্ষ হিসেবে কাজ করছিল। এখন হঠাৎ পক্ষ ত্যাগ করে পাকিস্তানের চিরবৈরী ভারতের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব পাততে চলেছে তালেবান সরকার। ফলে পাকিস্তান খুব সহজভাবে বিষয়টি হজম করবে বলে মনে হয় না।
পাকিস্তান এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার অভিযোগ করছে যে, আফগান ভূখণ্ডে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান ও অন্যান্য জঙ্গীগোষ্ঠী আশ্রয়ে রয়েছে। ভারতের সঙ্গে তালেবানের বন্ধুত্ব যত গভীর হবে, সামনের দিনগুলোতে পাকিস্তানের তরফ থেকে এই ধরনের অভিযোগ ও দাবিগুলো তত বাড়তে থাকবে। একই সঙ্গে আফগান সীমান্তে পাকিস্তার তার সতর্কতাও বাড়াতে বাধ্য হবে।
তথ্যসূত্র: ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইন্ডিয়া টুডে, ব্লুমবার্গ ও আল জাজিরা
আফগানিস্তানে তালেবানদের উত্থানের শুরু থেকেই ‘ঘৃণার চোখে’ দেখে এসেছে ভারত। সেই ১৯৯৪ সালে তালেবানদের উত্থানের সময় থেকে বহুবার ‘তালেবানবিরোধী’ বক্তব্য দিয়েছেন ভারত সরকারের নীতিনির্ধারকেরা।
তালেবানের প্রতি ভারতের ঘৃণা এতটাই প্রবল ছিল যে, ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবান কাবুল দখল করার সঙ্গে সঙ্গে ভারত আফগানিস্তানে তাদের দূতাবাস এবং চারটি কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়। আফগান শিক্ষার্থী, রোগী, ব্যবসায়ী ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তাসহ সব শ্রেণির মানুষের জন্য ভিসা প্রদানও বন্ধ করে দেওয়া হয়। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে, এক ক্লিকেই হাজার হাজার আফগানকে আগের দেওয়া প্রায় সব ভিসা বাতিল করেছিল ভারত।
সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরে পেহেলগাম হামলার পরও তালেবানকে একহাত নিয়েছে মোদি সরকার। ওই হামলার পরপরই তালেবানকে সন্দেহ করে ভারত এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সরাসরি টেলিফোন করে তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিকে তীব্র ভর্সৎনা করে বলেন, ‘আফগান ভূখণ্ড যেন কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের উর্বরভূমি না হয়।’
তবে ওই ঘটনার মাত্র ছয়মাস পরই উল্টোচিত্র দেখা যাচ্ছে। গত ৯ অক্টোবর ভারত সফরে এসেছেন তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। তাঁর সঙ্গে হাসিমুখে বৈঠক করছেন ছয় মাস আগে হুংকার দেওয়া এস জয়ঙ্কর। দৃঢ়তার সঙ্গে বলছেন, ‘আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং স্বাধীনতার প্রতি ভারতের পূর্ণ প্রতিশ্রুতি রয়েছে।’
শুধু তাই নয়, মোদি সরকারের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নীতিনির্ধারকদের একজন মনে করা হয় যাঁকে, সেই অজিত দোভালের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন আমির খান মুত্তাকি। ভারতের এই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কী ধরনের আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারতি জানা না গেলেও অজিত দোভালের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ধারণা করা হচ্ছে, অজিত দোভালের ভিডিওটি দেওবন্দ মাদরাসায় (দারুল উলুম দেওবন্দ) দেওয়া একটি বক্তৃতা। সেখানে অজিত দোভালকে বলতে শোনা যায়, ‘আজকের দিনে আফগানিস্তানে ভারতই সবচেয়ে জনপ্রিয় দেশ। সেখানে ভারতীয়রা সবচেয়ে বেশি সম্মানিত। সবাই তাদের ভালোবাসে। আমরা তাদের সঙ্গে সেভাবেই আচরণ করব, যেভাবে দরকার।’
অজিত দোভাল আরও বলেন, ‘মুসলিম যুবসমাজের মধ্যে কাজ করতে হবে এবং আমাদের মুসলিম সংগঠনগুলোর মাধ্যমে তাদের (আফগানদের) সঙ্গে কাজ করতে হবে।’
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই দেওবন্দেই গত ১১ অক্টোবর সফরে গিয়েছিলেন আমির খান মুত্তাকি। সেখানে তিনি দেওবন্দ গ্রন্থাগারে অসংখ্য শিক্ষার্থীর উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
বলে রাখা ভালো, দেওবন্দকে আফগানরা মুসলিম সম্প্রদায়ের আদর্শ ও আন্দোলনের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করে। এই দেওবন্দের আদলে পাকিস্তানের পাখতুনখাওয়াতে নির্মিত দারুল উলূম হাক্কানিয়াতে পড়াশোনা করেছেন বিখ্যাত তালেবান কমান্ডার মোল্লা ওমর, জালালুদ্দিন হাক্কানি এবং মোল্লা আবদুল গনি বারাদার। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ‘তালেবান বিশ্ববিদ্যালয়’ নামেও পরিচিত।
সুতরাং, ভারতের দেওবন্দের সঙ্গে তালেবানদের আগে থেকেই এক ধরনের সম্পর্ক রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেই সম্পর্কের মধ্যে এবার সংযোগ তৈরি করে দিলেন অজিত দোভাল।
কিন্তু কেন? ভারতের লাভ কী এতে? উদ্দেশ্যই বা কী? বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এর নেপথ্যে রয়েছে গভীর কৌশলগত স্বার্থ এবং আঞ্চলিক প্রভাব বলয় ধরে রাখার প্রতিযোগিতা। জয়শঙ্কর ও অজিত দোভালের মতো শীর্ষ নীতিনির্ধারকেরা যখন অতীতের ঘৃণা ভুলে ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ হওয়ার চেষ্টা করছেন, তখন বুঝতে হবে, এটি কোনো আবেগপ্রসূত সিদ্ধান্ত নয়, বরং সুচিন্তিত কৌশল।
তালেবানের প্রতি ভারতের নীতি বরাবরই ছিল চরম বিদ্বেষমূলক। ১৯৯০-এর দশকে তালেবান-শাসিত আফগানিস্তানকে ভারত তার ‘কৌশলগত’ নীতির অংশ হিসেবে দেখেনি। ভারত তখন স্পষ্টভাবেই পাকিস্তানের পরোক্ষ প্রভাব বলয় হিসেবে তালেবানকে দেখেছে।
১৯৯৯ সালের কান্দাহার বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা ভারতের তালেবানবিরোধিতা আরও গভীর করেছিল। কিন্তু ২০২১ সালে তালেবানের কাবুল দখলের পর খেলার মাঠ সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। পশ্চিমা-সমর্থিত আশরাফ ঘানি সরকারের সঙ্গে ভারতের যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, তা এক লহমায় শেষ হয়ে যায়।
ভারত দ্রুতই বুঝতে পারে, তালেবানকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। তারা এখন আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রক শক্তি। এই পরিস্থিতিতে ভারতের সামনে দুটি পথ ছিল; হয় চিরন্তন বিরোধিতা বজায় রাখা, অথবা বাস্তববাদী কূটনীতি অনুসরণ করা। দিল্লি দ্বিতীয় পথটি বেছে নিয়েছে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বেশ কয়েকটি কারণকে প্রাধান্য দিয়ে তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চাচ্ছে ভারত। কারণগুলো হচ্ছে—সন্ত্রাস দমন, পাকিস্তানের প্রভাব হ্রাস, আঞ্চলিক সংযোগ ও বাণিজ্য, উন্নয়নমূলক বিনিয়োগের সুরক্ষা ইত্যাদি।
বিষয়গুলো যদি একটু বড় পরিসরে বিশ্লেষণ করে দেখা যাক। যেমন, সন্ত্রাস দমন প্রসঙ্গ। আফগানিস্তানের মাটি যেন ভারতের বিরুদ্ধে, বিশেষত কাশ্মীরে কোনো সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য ব্যবহৃত না হয়, তা নিশ্চিত করা ভারতের প্রধান এবং মৌলিক উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য সাধন করতে ভারত এখন তালেবানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে এই বিষয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি আদায় করার চেষ্টা করছে। মুত্তাকি এরই মধ্যে অবশ্য এই বিষয়ে ভারতকে আশ্বাস দিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত: পাকিস্তানের প্রভাব হ্রাস করা। ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে তালেবানের ঘনিষ্ঠতা ছিল। কিন্তু তালেবান ক্ষমতায় আসার পর অপ্রত্যাশিতভাবে পাকিস্তান ও তালেবানের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। ভারত এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কাবুলে নিজস্ব প্রভাব পুনরুদ্ধার করতে এবং চীন-পাকিস্তানের প্রভাব মোকাবিলা করতে উঠেপড়ে লেগেছে। কারণ আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে এমন সুযোগ ভারতের জন্য আবার কবে আসবে, কে জানে!
এরপর আঞ্চলিক সংযোগ ও বাণিজ্য প্রসঙ্গে বলা যাক। ইরান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে ভারতের জন্য আফগানিস্তান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট রুট। চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্য পথ চালু রাখা এবং ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডরকে কাজে লাগানোর জন্য তালেবান সরকারের সহযোগিতা অপরিহার্য।
সবশেষে নজর দেওয়া যাক উন্নয়নমূলক বিনিয়োগ নিয়ে। গত দুই দশকে ভারত আফগানিস্তানে বহু উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। স্বাভাকিভাবেই এই বিনিয়োগের সুরক্ষা চায় ভারত। এ ছাড়া আফগানিস্তানে ভারতের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম মসৃণভাবে পরিচালনার জন্যও কাবুলের নতুন শাসকের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন জরুরি।
এই সবকিছু মিলিয়ে তালেবানকে কাছে টানার চেষ্টা করছে ভারত।
তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা পরিদর্শনের আগ্রহ এবং ভারতের তাতে সায় দেওয়ার বিষয়টি ভারত-তালেবান সম্পর্কের সবচেয়ে প্রতীকী এবং বিশ্লেষণমূলক দিক।
বলা প্রয়োজন, দেওবন্দ হলো সুন্নি ইসলামের এক ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাকেন্দ্র। এর রয়েছে শত বছরের পুরোনো নিজস্ব ধর্মীয় ও আদর্শিক প্রভাব বলয়। ঐতিহাসিকভাবে আফগানিস্তানের দেওবন্দি ভাবধারা এই মাদরাসা থেকেই সৃষ্টি হয়েছিল। তালেবানের বহু শীর্ষ নেতার ধর্মীয় গুরু বা আদর্শিক পূর্বপুরুষরা এই দেওবন্দি ঘরানার। তাই মুত্তাকির দেওবন্দ সফর নিঃসন্দেহে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার বার্তা বহন করে।
তবে শুধু আধ্যাত্মিক সম্পর্কই শেষ কথা নয়। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের মতো একজন ব্যক্তি যখন এই সংযোগকে গুরুত্ব দেন, তখন এর কারণ নিছক ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক নয়, বরং তা গভীর নিরাপত্তা ও কৌশলগত। দোভাল হয়তো এই দেওবন্দ সংযোগের মাধ্যমে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে চান। যেমন, তালেবানের আদর্শিক দুর্বলতা অনুসন্ধান করা। এর অর্থ হচ্ছে, দেওবন্দের উলেমাদের মাধ্যমে তালেবানের অভ্যন্তরে থাকা আরও নমনীয় অংশ বা প্রগতিশীল ভাবধারার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা। এর মাধ্যমে তালেবানের উগ্রবাদী অবস্থানকে আদর্শগতভাবে দুর্বল করার বা প্রভাব ফেলানোর একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশল নেওয়া।
অজিত দোভায় সম্ভবত পাকিস্তানের আধ্যাত্মিক তত্ত্বকেও চ্যালেঞ্জ করতে চান। অর্থাৎ তিনি এই বার্তা দিতে চান যে, তালেবানের বৌদ্ধিক ও আধ্যাত্মিক উৎস ভারত (দেওবন্দ) থেকে আহরিত, পাকিস্তান থেকে নয়। মুত্তাকির এই সফরের মাধ্যমে অজিত সেই বার্তাটি আরও স্পষ্ট করলেন বলে ধরে নেওয়া যায়।
অজিতের আরকেটি লক্ষ্য হচ্ছে, ভারতের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা রক্ষা করা। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, ভারতে মুসলিমদের একটি বড় অংশ দেওবন্দি ঘরানার অনুসারী। তালেবানের সঙ্গে কোনো আদর্শিক বা ধর্মীয় সম্পৃক্ততা তৈরি হলে ভারতে এর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রভাব অবশ্যই পড়বে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দোভাল এই স্পর্শকাতর সম্পর্ককে সাবধানে পরিচালনা করতে চাইছেন, যাতে তা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি না হয়।
মুত্তাকি এরই মধ্যে ভারতকে ‘আফগানিস্তানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে জয়শঙ্কর কাবুলে ভারতীয় দূতাবাস পুনরায় খোলার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে মনে হচ্ছে, তালেবানবে কাছে টানা ভারতের জন্য অনিবার্যই হয়ে উঠেছে।
ভারত-ভিত্তিক থিংক ট্যাংক ‘অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন’-এর বিশেষজ্ঞ ভি পন্ত ও শিবম শেখাওয়াত বলেন, ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে তালেবান নিজেদের অভ্যন্তরীণ জনগণের কাছে এই বার্তা দিয়ে চায় যে, তাঁদের নেতৃত্বে আফগানিস্তান একটি স্থিতিশীল, কার্যকর এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে নিজের জায়গা করে নিতে সক্ষম।
এদিকে কৌশলগত বিষয়ক বিশ্লেষক ব্রহ্ম চেলানি সামাজিকমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, মুত্তাকির এই দিল্লি সফর ‘ভারত-তালেবান সম্পর্কের সতর্ক পুনর্গঠন’, যেখানে উভয় পক্ষই তাদের কৌশলগত স্বার্থকে এগিয়ে নিতে বাস্তবসম্মত সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। চেলানির মতে, এই সফর আফগানিস্তানের আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্যে সম্ভাব্য পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিচ্ছে।
প্রতিবেশির প্রভাব প্রতিবেশির ওপর পড়বে—এটাই স্বাভাবিক। ফলে ভারতের যেকোনো নীতিকৌশলের প্রভাব বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীনের ওপর পড়তে বাধ্য।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার বিশ্লেষক ও ইসলামাবাদের প্রতিনিধি আবিদ হুসাইন এক নিবন্ধে লিখেছেন, ভারত যদি তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে পাকিস্তান ও চীনকে চাপে রাখার নীতি গ্রহণ করে থাকে, তবে বাংলাদেশকে তার কূটনীতি ও সামরিকনীতি নতুন করে সাজাতে হবে। বিশেষ করে তালেবানের ব্যাপারে ভারতের নতুন সিদ্ধান্তগুলো গভীরভাবে তলিয়ে দেখতে হবে।
এরপর চীন যদি দেখে, তালেবানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটিয়ে ভারত এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে চাচ্ছে, তাহলে চীন তা শক্ত হাতেই মোকাবিলা করতে চাইবে। ফলে, তালেবানের সঙ্গে ভারত কী কী কাজ করতে যাচ্ছে, তা দেখেই চীনকে তার নীতি ও ভূমিকা সমন্বয় করতে হবে।
তবে প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের ওপর প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি। কারণ আফগানিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানের একটি প্রভাবশালী পক্ষ হিসেবে কাজ করছিল। এখন হঠাৎ পক্ষ ত্যাগ করে পাকিস্তানের চিরবৈরী ভারতের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব পাততে চলেছে তালেবান সরকার। ফলে পাকিস্তান খুব সহজভাবে বিষয়টি হজম করবে বলে মনে হয় না।
পাকিস্তান এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার অভিযোগ করছে যে, আফগান ভূখণ্ডে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান ও অন্যান্য জঙ্গীগোষ্ঠী আশ্রয়ে রয়েছে। ভারতের সঙ্গে তালেবানের বন্ধুত্ব যত গভীর হবে, সামনের দিনগুলোতে পাকিস্তানের তরফ থেকে এই ধরনের অভিযোগ ও দাবিগুলো তত বাড়তে থাকবে। একই সঙ্গে আফগান সীমান্তে পাকিস্তার তার সতর্কতাও বাড়াতে বাধ্য হবে।
তথ্যসূত্র: ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইন্ডিয়া টুডে, ব্লুমবার্গ ও আল জাজিরা
সফররত তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন থেকে নারী সাংবাদিকদের বাদ দেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার।
১ দিন আগেপাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাবুলের ‘সার্বভৌম ভূখণ্ড’ লঙ্ঘন করার অভিযোগ তুলেছে আফগানিস্তান। গত শুক্রবার (১০ অক্টোবর) তালেবানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তানের এসব কর্মকাণ্ড ‘নজিরবিহীন, হিংসাত্মক ও উসকানিমূলক’। এই অভিযোগ আসার আগের রাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে দুটি বিকট বিস্ফোরণ ঘ
২ দিন আগেদক্ষিণ এশিয়ায়— বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল হঠাৎ করে জন্ম নেয়নি। এর পেছনে রয়েছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ধর্মীয় মিশ্রণ, ঔপনিবেশিক শাসকদের কৌশল, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন এবং উপনিবেশ-পরবর্তী আত্মপরিচয়ের সংকট।
২ দিন আগেএআই প্রযুক্তির উন্নতির অর্থ হল এখন অতি-বাস্তবসম্মত ভয়েসওভার ও সাউন্ডবাইট তৈরি করা সম্ভব। প্রকৃতপক্ষে, নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, আসল মানুষের কণ্ঠ থেকে আলাদা করা যায় না এআই-জেনারেটেড ভয়েস। এই এক্সপ্লেইনারে আমরা এআইয়ের সম্ভাব্য প্রভাবগুলো বিশ্লেষণ করব।
৩ দিন আগে