স্ট্রিম ডেস্ক
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভাষণে গত ২৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি ‘সাতটি অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধ করেছেন। তিনি নিজেকে জাতিসংঘের চেয়ে বড় শান্তির দূত হিসেবেও তুলে ধরেন। এমনকি নিজেকে একাধিকবার নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য বলেও দাবি করেন। একইসঙ্গে জাতিসংঘকে একটি অকার্যকর সংস্থা বলেও সমালোচনা করেন।
এটি তার প্রথম মেয়াদ (২০১৭–২০২১)-এর বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি। তখনও তিনি দাবি করেছিলেন, তিনি নতুন কোনো যুদ্ধ শুরু করেননি, বরং চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা কমিয়েছেন। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ফ্যাক্ট-চেকার, যেমন পলিটিফ্যাক্ট, সিএনএন ও সিবিএস নিউজ, তার এই দাবিকে ‘বেশিরভাগ মিথ্যা’ বা বিভ্রান্তিকর হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতেও, কিছু ক্ষেত্রে ট্রাম্প সাময়িক যুদ্ধবিরতি বা কূটনৈতিক সমঝোতায় ভূমিকা রেখেছেন। তবে তা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের চাপ, যেমন শুল্ক আরোপ বা হুমকি প্রদর্শনের মাধ্যমে। বাস্তবে তিনি যেসব সংঘাতের কথা বলেছেন, সেগুলোর কোনোটি পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। কিছু সংঘাত প্রচলিত অর্থে ‘যুদ্ধ’ও ছিল না। আবার কিছু ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা ছিল খুবই সীমিত।
২০২৫ সালেও বেশ কয়েকটি সংঘাতে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়েছে। ফলে এগুলোর কোনোটি সত্যিকার অর্থে ‘বন্ধ’ হয়েছে বলা যায় না।
১. কম্বোডিয়া–থাইল্যান্ড (সীমান্ত বিরোধ): ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি ২০২৫ সালের জুলাইয়ে ফোনালাপ ও বাণিজ্যিক চাপ প্রয়োগ করে কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের যুদ্ধবিরতি করিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের চাপের পর একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি হয় সত্য, তবে নতুন ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখা ও গোলাগুলির অভিযোগ এখনো চলছে। ফলে এটাকে সাময়িক যুদ্ধবিরতি বলা যায়, কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি।
২. কসোভো–সার্বিয়া (স্বাধীনতা ও জাতিগত টানাপোড়েন): ট্রাম্প বলেন, তিনি ২০২০ সালে একটি অর্থনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে কসোভো-সার্বিয়ার সংঘাত থামিয়েছেন। কসোভো ২০০৮ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করলেও সার্বিয়া এখনো তা স্বীকার করেনি। আর ২০২০ সালের সমঝোতাও মূলত অর্থনৈতিক বিষয়ে সীমিত ছিল। কিন্তু সার্বভৌমত্ব নিয়ে সমস্যা এখনো চলছে। ২০২৫ সালে নতুন সংঘর্ষও হয়েছে। তার মানে সংঘাত এখনো চলমান এবং সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি।
৩. কঙ্গো–রুয়ান্ডা (আঞ্চলিক মিলিশিয়া ও প্রক্সি যুদ্ধ): ২০২৫ সালের ২৭ জুন গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো ও রুয়ান্ডার মধ্যে ওয়াশিংটনে একটি শান্তিচুক্তি হয়। ট্রাম্প দিনটিকে ‘আফ্রিকার জন্য মহান দিন’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। কঙ্গো ও রুয়ান্ডার এই দীর্ঘ সংঘাতে ১৯৯০-র দশক থেকে ৬০ লাখের বেশি মানুষ মারা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কিছুটা শান্তি আসে। তবে সম্প্রতি জাতিসংঘ জানায়, গোমায় নতুন করে সংঘর্ষ বেড়েছে। উভয় পক্ষই চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ করছে। তার মানে চুক্তিটি নাজুক এবং সহিংসতাও চলমান।
৪. পাকিস্তান–ভারত (কাশ্মীর সংঘাত): ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি ২০২৫ সালের মে মাসে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি করিয়েছেন। পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রশংসা করে। তবে ভারত এটিকে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা হিসেবে তুলে ধরে, কারণ ভারত বাইরের হস্তক্ষেপ মানে না। আগস্টে নতুন করে সীমান্ত সংঘর্ষ হয়। যুদ্ধবিরতি টিকে আছে, তবে মূল সমস্যা অমীমাংসিত।
৫. ইসরায়েল–ইরান (প্রক্সি যুদ্ধ ও সরাসরি হামলা): ট্রাম্প বলেন, তিনি ২০২৫ এর জুনে ইসরায়েল-ইরান ১২ দিনের যুদ্ধ থামিয়েছেন। ইসরায়েল ইরানে হামলা চালালে এই যুদ্ধ শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রও সেসময় ইরানের পারমাণবিক গবেষণাকেন্দ্রে হামলা চালায়। তবে যুদ্ধবিরতি হলেও পরবর্তী সময়ে আক্রমণ অব্যাহত ছিল। কোনো পারমাণবিক চুক্তিও হয়নি। লেবাননের হিজবুল্লাহসহ মধ্যপ্রাচ্যে প্রক্সি সংঘাত এখনো চলছে। সাময়িক যুদ্ধবিরতি হলেও উত্তেজনা বহাল রয়েছে।
৬. মিসর–ইথিওপিয়া (নীল নদের বাঁধ নিয়ে বিরোধ): ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি এই ‘যুদ্ধ’ও থামিয়েছেন। বাস্তবে এটি যুদ্ধ নয়। বিষয়টি ইথিওপিয়ার গ্র্যান্ড ইথিওপিয়ান রেনেসাঁস ড্যাম (জিইআরডি) ঘিরে পানির অধিকার নিয়ে বিরোধ। মিসর আশঙ্কা করছে, বাঁধের কারণে নীল নদে পানির প্রবাহ কমে যাবে। ২০২৫ সালে কোনো সশস্ত্র সংঘাত হয়নি। ট্রাম্প কিছু আলোচনার আয়োজন করেছিলেন, তবে সমাধান হয়নি। এটি একটি কূটনৈতিক টানাপোড়েন, কোনো যুদ্ধ হয়নি।
৭. আর্মেনিয়া–আজারবাইজান (নাগার্নো-কারাবাখ): ট্রাম্প বলেন, তিনি ২০২৫ সালের আগস্টে হোয়াইট হাউসে একটি শান্তি চুক্তি সম্পন্ন করেছেন। আজারবাইজান ২০২৩ সালে অঞ্চলটি দখল করে নেয়। এতে ১ লাখ আর্মেনীয় বাস্তুচ্যুত হয়। ২০২৫-এর মার্চের প্রাথমিক আলোচনার ভিত্তিতে চুক্তিটি হয়। তবে এটি এখনো অনুমোদিত হয়নি। আজারবাইজান সাংবিধানিক পরিবর্তনের দাবি করছে। সীমান্তে গোলাগুলি অব্যাহত। চুক্তিটি কাগজে-কলমে হলেও বাস্তবায়ন হয়নি।
ট্রাম্পের কূটনীতি কিছু ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি সাফল্য এনেছিল। যেমন— থাইল্যান্ড বা ভারতের ওপর শুল্কচাপ প্রয়োগ করে সংঘর্ষ প্রশমিত করা। তার প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে বিদেশে মার্কিন সেনা উপস্থিতিও কমিয়েছে। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সূচনা হয় ট্রাম্প আমলে স্বাক্ষরিত ২০২০ সালের দোহা চুক্তির মাধ্যমে, যদিও পূর্ণ প্রত্যাহার সম্পন্ন করেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের মাইকেল ও'হ্যানলন মনে করেন, ট্রাম্প ২-৩ ক্ষেত্রে ‘অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি’ আনতে পেরেছিলেন। তবে ‘সাতটি যুদ্ধ থামানো’ বলাটাকে তিনি ‘অতিশায়িত ও অকালপক্ক’ দাবি বলে মন্তব্য করেন।
আর আমেরিকান ফরেন পলিসি কাউন্সিলের ল্যারি হ্যাস বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই এগুলো আসলে ‘যুদ্ধই নয়’ অথবা ট্রাম্পের ভূমিকা ছিল সীমিত।
পলিটিফ্যাক্ট ট্রাম্পের দাবিকে ‘মোটের ওপর মিথ্যা’ আখ্যা দিয়েছে। কারণ অন্তত দুটি সংঘাতে (যেমন কঙ্গো-রুয়ান্ডা, কসোভো-সার্বিয়া) এখনো সহিংসতা চলছে। আবার দুটি (মিসর-ইথিওপিয়া, ইসরায়েল-ইরান) আদৌ যুদ্ধের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। কোনো স্বাধীন সংস্থা, এমনকি নোবেল কমিটিও, এগুলোকে যুদ্ধ-সমাপ্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
প্রসঙ্গত, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে নতুন কোনো বড় যুদ্ধ শুরু হয়নি। আর এই বিষয়টিকেই তিনি প্রায়ই বড় করে তুলে ধরেন। তবে মার্কিন ড্রোন হামলা ও মিত্রদের (যেমন ইয়েমেনে সৌদি আরব) সহায়তা অব্যাহত ছিল।
একই ভাষণে ট্রাম্প জাতিসংঘের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের অনেক সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে লাগানো হচ্ছে না। সংগঠনটি মূলত শক্ত ভাষায় চিঠি লিখে থেমে যায়, কিন্তু তাতে যুদ্ধ থামে না। তার মতে, যুদ্ধ থামাতে হলে প্রয়োজন বাস্তব পদক্ষেপ।
ট্রাম্প অভিযোগ করেন, তিনি যে সংঘাতগুলো ‘সমাধান’ করেছেন, জাতিসংঘ সেগুলো উপেক্ষা করছে। নিজেকে তিনি ‘কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া নেতা’ হিসেবে তুলে ধরেন এবং বলেন, এসব সাফল্যের জন্য তার নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া উচিত।
এই অবস্থান ট্রাম্পের বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানবিরোধী দীর্ঘদিনের সন্দেহপ্রবণ মনোভাবের প্রতিফলন বলে মনে করা হয়। প্রথম মেয়াদে তিনি জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর তহবিল কমিয়েছিলেন এবং ২০১৮ সালের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নেননি। সমালোচকরা, বিশেষ করে মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, এসব মন্তব্যকে ‘বিভেদ সৃষ্টিকারী’ আখ্যা দেন। তাদের মতে, এতে জলবায়ু পরিবর্তন ও মহামারির মতো বৈশ্বিক সহযোগিতা দুর্বল হয়।
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে গ্যালাপের এক জরিপে দেখা যায়, ৫৮ শতাংশ মার্কিন নাগরিক জাতিসংঘকে ‘অকার্যকর কিন্তু প্রয়োজনীয়’ মনে করেন। অর্থাৎ জনগণ অসন্তুষ্ট হলেও জাতিসংঘের বিলুপ্তির পক্ষে নয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই নোবেল শান্তি পুরস্কারকে কাঙ্ক্ষিত স্বীকৃতি হিসেবে দেখেছেন। তার কাছে এটি হবে নিজের ‘মাস্টার ডিল মেকার’ ও ‘শান্তি প্রতিষ্ঠাতা’ ভাবমূর্তির প্রমাণ। প্রথম মেয়াদে (২০১৭–২০২১) তিনি বারাক ওবামার ২০০৯ সালের নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, যেটিকে তিনি ‘কোটায় প্রাপ্ত’ বলে ব্যঙ্গ করেছিলেন।
২০২৫ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে এসে ট্রাম্পের এই দাবি আরও জোরালো হয়েছে। সাম্প্রতিক গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব এবং কয়েকটি বৈশ্বিক সংঘাতের কথিত সমাধানকে তিনি পুরস্কারের যৌক্তিকতা হিসেবে উপস্থাপন করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণে ‘সাতটি অমীমাংসিত যুদ্ধ’ থামানোর দাবি করে ট্রাম্প বলেন, ‘সবাই বলছে প্রতিটি অর্জনের জন্য আমার নোবেল পাওয়া উচিত।’ এমনকি নরওয়ে তাকে নোবেল পুরস্কার না দিলে শুল্ক আরোপের হুমকিও দেন।
তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, জরিপ এবং নরওয়ের নোবেল কমিটি তার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য বলে মনে করে। তাদের মতে, ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক লবিং, নীতি-বিরোধী অবস্থান (যেমন শান্তির দাবি জানালেও ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়া) এবং বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করার ভূমিকা পুরস্কারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের ফল ঘোষণা হবে আগামী ১০ অক্টোবর এবং পুরস্কার বিতরণ হবে ১০ ডিসেম্বর। তার আগেই ট্রাম্প এই হুমকি দিলেন।
নরওয়েজীয় নোবেল কমিটির নিয়ম অনুযায়ী, নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘস্থায়ী শান্তির ক্ষেত্রে দৃঢ় অবদান। ট্রাম্পের উল্লেখিত সংঘাতগুলোর ক্ষেত্রে এটি পূরণ হয় না। কারণ সেগুলোতে স্থায়ী সমাধান বা সম্পূর্ণ শান্তি আসেনি।
তুলনায় বলা যায়, পূর্বের পুরস্কারপ্রাপ্তরা যেমন বারাক ওবামা (২০০৯), তার কূটনৈতিক দূরদর্শিতা ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার জন্য পুরস্কৃত হন। তবে ওবামার পুরস্কারও তখনকার সময়ে অকালপক্ক বা আগে দেওয়া হিসেবে সমালোচিত হয়েছিল।
নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি ট্রাম্পের ২০২৫ সালের দাবির বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করেনি। কারণ কমিটি কখনো মনোনয়ন বা আলোচনার বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলে না।
ট্রাম্প ২০২০ ও ২০২১ সালে মনোনীত হয়েছিলেন। তখন আব্রাহাম অ্যাকর্ডস ও কসোভো-সার্বিয়া আলোচনার জন্য তার নাম ওঠে। তবে ২০২০ সালের পুরস্কার পেয়েছিল বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। আর ২০২১ সালের পুরস্কার পেয়েছিলেন সাংবাদিক মারিয়া রেসা ও দিমিত্রি মুরাতভ।
তবে এবার কোনো প্রমাণ নেই যে ট্রাম্প ২০২৫ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃত্ব ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প এই মূল্যবোধকে ক্ষুণ্ণ করেছেন।
কমিটির চেয়ারম্যান জর্গেন ভাটনে ফ্রাইডনেস বলেন, ‘সব রাজনীতিবিদই এটি চান, কিন্তু আমরা সবসময় একই নিয়মে কাজ করি।’ জোর করে মনোনয়ন দাবি করা বা পুরস্কার চাওয়া অনেকের কাছে অগ্রহণযোগ্য। এটি ট্রাম্পের এমি অ্যাওয়ার্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের ঘটনাকে মনে করিয়ে দেয়।
ট্রাম্প মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম বদলে ‘ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার’ রেখেছেন। এছাড়া তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও জাতিসংঘভিত্তিক বিভিন্ন সমঝোতা থেকে সরে গেছেন। এসব পদক্ষেপ শান্তির আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সমালোচকরা বলেন, ট্রাম্প আসলে যুদ্ধ বাড়িয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, ইয়েমেনে সৌদি জোটকে সমর্থন দিয়ে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করেছেন। আবার ইউএসএইডের তহবিল কমিয়ে দুর্ভিক্ষ ও রোগব্যাধি বাড়িয়েছেন।
সেপ্টেম্বরে অ্যাক্সিওসের এক জরিপে দেখা গেছে, ৫৮ শতাংশ মার্কিন নাগরিক মনে করেন ট্রাম্প নোবেল পুরস্কারের যোগ্য নন।
সব মিলিয়ে ট্রাম্প তার আংশিক সাফল্যকে বড় করে তুলে ধরছেন। তবে তার কাজের ধরন ও নীতি নোবেল জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, তিনি আসলে সেই বৈশ্বিক ব্যবস্থাকেই দুর্বল করছেন, এই পুরস্কার যা রক্ষা করতে চায়। গাজায় শান্তি স্থায়ী হলে তার ভাবমূর্তি কিছুটা বাড়তে পারে। তবে এতে নোবেল পুরস্কার জয়ের সম্ভাবনা নেই।
তথ্যসূত্র: সিএনএন, এপি, আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, এবিসি নিউজ, সিবিএস নিউজ, গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভাষণে গত ২৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি ‘সাতটি অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধ করেছেন। তিনি নিজেকে জাতিসংঘের চেয়ে বড় শান্তির দূত হিসেবেও তুলে ধরেন। এমনকি নিজেকে একাধিকবার নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য বলেও দাবি করেন। একইসঙ্গে জাতিসংঘকে একটি অকার্যকর সংস্থা বলেও সমালোচনা করেন।
এটি তার প্রথম মেয়াদ (২০১৭–২০২১)-এর বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি। তখনও তিনি দাবি করেছিলেন, তিনি নতুন কোনো যুদ্ধ শুরু করেননি, বরং চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা কমিয়েছেন। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ফ্যাক্ট-চেকার, যেমন পলিটিফ্যাক্ট, সিএনএন ও সিবিএস নিউজ, তার এই দাবিকে ‘বেশিরভাগ মিথ্যা’ বা বিভ্রান্তিকর হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতেও, কিছু ক্ষেত্রে ট্রাম্প সাময়িক যুদ্ধবিরতি বা কূটনৈতিক সমঝোতায় ভূমিকা রেখেছেন। তবে তা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের চাপ, যেমন শুল্ক আরোপ বা হুমকি প্রদর্শনের মাধ্যমে। বাস্তবে তিনি যেসব সংঘাতের কথা বলেছেন, সেগুলোর কোনোটি পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। কিছু সংঘাত প্রচলিত অর্থে ‘যুদ্ধ’ও ছিল না। আবার কিছু ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা ছিল খুবই সীমিত।
২০২৫ সালেও বেশ কয়েকটি সংঘাতে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়েছে। ফলে এগুলোর কোনোটি সত্যিকার অর্থে ‘বন্ধ’ হয়েছে বলা যায় না।
১. কম্বোডিয়া–থাইল্যান্ড (সীমান্ত বিরোধ): ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি ২০২৫ সালের জুলাইয়ে ফোনালাপ ও বাণিজ্যিক চাপ প্রয়োগ করে কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের যুদ্ধবিরতি করিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের চাপের পর একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি হয় সত্য, তবে নতুন ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখা ও গোলাগুলির অভিযোগ এখনো চলছে। ফলে এটাকে সাময়িক যুদ্ধবিরতি বলা যায়, কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি।
২. কসোভো–সার্বিয়া (স্বাধীনতা ও জাতিগত টানাপোড়েন): ট্রাম্প বলেন, তিনি ২০২০ সালে একটি অর্থনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে কসোভো-সার্বিয়ার সংঘাত থামিয়েছেন। কসোভো ২০০৮ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করলেও সার্বিয়া এখনো তা স্বীকার করেনি। আর ২০২০ সালের সমঝোতাও মূলত অর্থনৈতিক বিষয়ে সীমিত ছিল। কিন্তু সার্বভৌমত্ব নিয়ে সমস্যা এখনো চলছে। ২০২৫ সালে নতুন সংঘর্ষও হয়েছে। তার মানে সংঘাত এখনো চলমান এবং সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি।
৩. কঙ্গো–রুয়ান্ডা (আঞ্চলিক মিলিশিয়া ও প্রক্সি যুদ্ধ): ২০২৫ সালের ২৭ জুন গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো ও রুয়ান্ডার মধ্যে ওয়াশিংটনে একটি শান্তিচুক্তি হয়। ট্রাম্প দিনটিকে ‘আফ্রিকার জন্য মহান দিন’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। কঙ্গো ও রুয়ান্ডার এই দীর্ঘ সংঘাতে ১৯৯০-র দশক থেকে ৬০ লাখের বেশি মানুষ মারা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কিছুটা শান্তি আসে। তবে সম্প্রতি জাতিসংঘ জানায়, গোমায় নতুন করে সংঘর্ষ বেড়েছে। উভয় পক্ষই চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ করছে। তার মানে চুক্তিটি নাজুক এবং সহিংসতাও চলমান।
৪. পাকিস্তান–ভারত (কাশ্মীর সংঘাত): ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি ২০২৫ সালের মে মাসে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি করিয়েছেন। পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রশংসা করে। তবে ভারত এটিকে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা হিসেবে তুলে ধরে, কারণ ভারত বাইরের হস্তক্ষেপ মানে না। আগস্টে নতুন করে সীমান্ত সংঘর্ষ হয়। যুদ্ধবিরতি টিকে আছে, তবে মূল সমস্যা অমীমাংসিত।
৫. ইসরায়েল–ইরান (প্রক্সি যুদ্ধ ও সরাসরি হামলা): ট্রাম্প বলেন, তিনি ২০২৫ এর জুনে ইসরায়েল-ইরান ১২ দিনের যুদ্ধ থামিয়েছেন। ইসরায়েল ইরানে হামলা চালালে এই যুদ্ধ শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রও সেসময় ইরানের পারমাণবিক গবেষণাকেন্দ্রে হামলা চালায়। তবে যুদ্ধবিরতি হলেও পরবর্তী সময়ে আক্রমণ অব্যাহত ছিল। কোনো পারমাণবিক চুক্তিও হয়নি। লেবাননের হিজবুল্লাহসহ মধ্যপ্রাচ্যে প্রক্সি সংঘাত এখনো চলছে। সাময়িক যুদ্ধবিরতি হলেও উত্তেজনা বহাল রয়েছে।
৬. মিসর–ইথিওপিয়া (নীল নদের বাঁধ নিয়ে বিরোধ): ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি এই ‘যুদ্ধ’ও থামিয়েছেন। বাস্তবে এটি যুদ্ধ নয়। বিষয়টি ইথিওপিয়ার গ্র্যান্ড ইথিওপিয়ান রেনেসাঁস ড্যাম (জিইআরডি) ঘিরে পানির অধিকার নিয়ে বিরোধ। মিসর আশঙ্কা করছে, বাঁধের কারণে নীল নদে পানির প্রবাহ কমে যাবে। ২০২৫ সালে কোনো সশস্ত্র সংঘাত হয়নি। ট্রাম্প কিছু আলোচনার আয়োজন করেছিলেন, তবে সমাধান হয়নি। এটি একটি কূটনৈতিক টানাপোড়েন, কোনো যুদ্ধ হয়নি।
৭. আর্মেনিয়া–আজারবাইজান (নাগার্নো-কারাবাখ): ট্রাম্প বলেন, তিনি ২০২৫ সালের আগস্টে হোয়াইট হাউসে একটি শান্তি চুক্তি সম্পন্ন করেছেন। আজারবাইজান ২০২৩ সালে অঞ্চলটি দখল করে নেয়। এতে ১ লাখ আর্মেনীয় বাস্তুচ্যুত হয়। ২০২৫-এর মার্চের প্রাথমিক আলোচনার ভিত্তিতে চুক্তিটি হয়। তবে এটি এখনো অনুমোদিত হয়নি। আজারবাইজান সাংবিধানিক পরিবর্তনের দাবি করছে। সীমান্তে গোলাগুলি অব্যাহত। চুক্তিটি কাগজে-কলমে হলেও বাস্তবায়ন হয়নি।
ট্রাম্পের কূটনীতি কিছু ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি সাফল্য এনেছিল। যেমন— থাইল্যান্ড বা ভারতের ওপর শুল্কচাপ প্রয়োগ করে সংঘর্ষ প্রশমিত করা। তার প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে বিদেশে মার্কিন সেনা উপস্থিতিও কমিয়েছে। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সূচনা হয় ট্রাম্প আমলে স্বাক্ষরিত ২০২০ সালের দোহা চুক্তির মাধ্যমে, যদিও পূর্ণ প্রত্যাহার সম্পন্ন করেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের মাইকেল ও'হ্যানলন মনে করেন, ট্রাম্প ২-৩ ক্ষেত্রে ‘অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি’ আনতে পেরেছিলেন। তবে ‘সাতটি যুদ্ধ থামানো’ বলাটাকে তিনি ‘অতিশায়িত ও অকালপক্ক’ দাবি বলে মন্তব্য করেন।
আর আমেরিকান ফরেন পলিসি কাউন্সিলের ল্যারি হ্যাস বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই এগুলো আসলে ‘যুদ্ধই নয়’ অথবা ট্রাম্পের ভূমিকা ছিল সীমিত।
পলিটিফ্যাক্ট ট্রাম্পের দাবিকে ‘মোটের ওপর মিথ্যা’ আখ্যা দিয়েছে। কারণ অন্তত দুটি সংঘাতে (যেমন কঙ্গো-রুয়ান্ডা, কসোভো-সার্বিয়া) এখনো সহিংসতা চলছে। আবার দুটি (মিসর-ইথিওপিয়া, ইসরায়েল-ইরান) আদৌ যুদ্ধের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। কোনো স্বাধীন সংস্থা, এমনকি নোবেল কমিটিও, এগুলোকে যুদ্ধ-সমাপ্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
প্রসঙ্গত, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে নতুন কোনো বড় যুদ্ধ শুরু হয়নি। আর এই বিষয়টিকেই তিনি প্রায়ই বড় করে তুলে ধরেন। তবে মার্কিন ড্রোন হামলা ও মিত্রদের (যেমন ইয়েমেনে সৌদি আরব) সহায়তা অব্যাহত ছিল।
একই ভাষণে ট্রাম্প জাতিসংঘের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের অনেক সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে লাগানো হচ্ছে না। সংগঠনটি মূলত শক্ত ভাষায় চিঠি লিখে থেমে যায়, কিন্তু তাতে যুদ্ধ থামে না। তার মতে, যুদ্ধ থামাতে হলে প্রয়োজন বাস্তব পদক্ষেপ।
ট্রাম্প অভিযোগ করেন, তিনি যে সংঘাতগুলো ‘সমাধান’ করেছেন, জাতিসংঘ সেগুলো উপেক্ষা করছে। নিজেকে তিনি ‘কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া নেতা’ হিসেবে তুলে ধরেন এবং বলেন, এসব সাফল্যের জন্য তার নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া উচিত।
এই অবস্থান ট্রাম্পের বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানবিরোধী দীর্ঘদিনের সন্দেহপ্রবণ মনোভাবের প্রতিফলন বলে মনে করা হয়। প্রথম মেয়াদে তিনি জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর তহবিল কমিয়েছিলেন এবং ২০১৮ সালের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নেননি। সমালোচকরা, বিশেষ করে মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, এসব মন্তব্যকে ‘বিভেদ সৃষ্টিকারী’ আখ্যা দেন। তাদের মতে, এতে জলবায়ু পরিবর্তন ও মহামারির মতো বৈশ্বিক সহযোগিতা দুর্বল হয়।
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে গ্যালাপের এক জরিপে দেখা যায়, ৫৮ শতাংশ মার্কিন নাগরিক জাতিসংঘকে ‘অকার্যকর কিন্তু প্রয়োজনীয়’ মনে করেন। অর্থাৎ জনগণ অসন্তুষ্ট হলেও জাতিসংঘের বিলুপ্তির পক্ষে নয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই নোবেল শান্তি পুরস্কারকে কাঙ্ক্ষিত স্বীকৃতি হিসেবে দেখেছেন। তার কাছে এটি হবে নিজের ‘মাস্টার ডিল মেকার’ ও ‘শান্তি প্রতিষ্ঠাতা’ ভাবমূর্তির প্রমাণ। প্রথম মেয়াদে (২০১৭–২০২১) তিনি বারাক ওবামার ২০০৯ সালের নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, যেটিকে তিনি ‘কোটায় প্রাপ্ত’ বলে ব্যঙ্গ করেছিলেন।
২০২৫ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে এসে ট্রাম্পের এই দাবি আরও জোরালো হয়েছে। সাম্প্রতিক গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব এবং কয়েকটি বৈশ্বিক সংঘাতের কথিত সমাধানকে তিনি পুরস্কারের যৌক্তিকতা হিসেবে উপস্থাপন করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণে ‘সাতটি অমীমাংসিত যুদ্ধ’ থামানোর দাবি করে ট্রাম্প বলেন, ‘সবাই বলছে প্রতিটি অর্জনের জন্য আমার নোবেল পাওয়া উচিত।’ এমনকি নরওয়ে তাকে নোবেল পুরস্কার না দিলে শুল্ক আরোপের হুমকিও দেন।
তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, জরিপ এবং নরওয়ের নোবেল কমিটি তার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য বলে মনে করে। তাদের মতে, ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক লবিং, নীতি-বিরোধী অবস্থান (যেমন শান্তির দাবি জানালেও ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়া) এবং বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করার ভূমিকা পুরস্কারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের ফল ঘোষণা হবে আগামী ১০ অক্টোবর এবং পুরস্কার বিতরণ হবে ১০ ডিসেম্বর। তার আগেই ট্রাম্প এই হুমকি দিলেন।
নরওয়েজীয় নোবেল কমিটির নিয়ম অনুযায়ী, নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘস্থায়ী শান্তির ক্ষেত্রে দৃঢ় অবদান। ট্রাম্পের উল্লেখিত সংঘাতগুলোর ক্ষেত্রে এটি পূরণ হয় না। কারণ সেগুলোতে স্থায়ী সমাধান বা সম্পূর্ণ শান্তি আসেনি।
তুলনায় বলা যায়, পূর্বের পুরস্কারপ্রাপ্তরা যেমন বারাক ওবামা (২০০৯), তার কূটনৈতিক দূরদর্শিতা ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার জন্য পুরস্কৃত হন। তবে ওবামার পুরস্কারও তখনকার সময়ে অকালপক্ক বা আগে দেওয়া হিসেবে সমালোচিত হয়েছিল।
নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি ট্রাম্পের ২০২৫ সালের দাবির বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করেনি। কারণ কমিটি কখনো মনোনয়ন বা আলোচনার বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলে না।
ট্রাম্প ২০২০ ও ২০২১ সালে মনোনীত হয়েছিলেন। তখন আব্রাহাম অ্যাকর্ডস ও কসোভো-সার্বিয়া আলোচনার জন্য তার নাম ওঠে। তবে ২০২০ সালের পুরস্কার পেয়েছিল বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। আর ২০২১ সালের পুরস্কার পেয়েছিলেন সাংবাদিক মারিয়া রেসা ও দিমিত্রি মুরাতভ।
তবে এবার কোনো প্রমাণ নেই যে ট্রাম্প ২০২৫ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃত্ব ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প এই মূল্যবোধকে ক্ষুণ্ণ করেছেন।
কমিটির চেয়ারম্যান জর্গেন ভাটনে ফ্রাইডনেস বলেন, ‘সব রাজনীতিবিদই এটি চান, কিন্তু আমরা সবসময় একই নিয়মে কাজ করি।’ জোর করে মনোনয়ন দাবি করা বা পুরস্কার চাওয়া অনেকের কাছে অগ্রহণযোগ্য। এটি ট্রাম্পের এমি অ্যাওয়ার্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের ঘটনাকে মনে করিয়ে দেয়।
ট্রাম্প মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম বদলে ‘ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার’ রেখেছেন। এছাড়া তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও জাতিসংঘভিত্তিক বিভিন্ন সমঝোতা থেকে সরে গেছেন। এসব পদক্ষেপ শান্তির আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সমালোচকরা বলেন, ট্রাম্প আসলে যুদ্ধ বাড়িয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, ইয়েমেনে সৌদি জোটকে সমর্থন দিয়ে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করেছেন। আবার ইউএসএইডের তহবিল কমিয়ে দুর্ভিক্ষ ও রোগব্যাধি বাড়িয়েছেন।
সেপ্টেম্বরে অ্যাক্সিওসের এক জরিপে দেখা গেছে, ৫৮ শতাংশ মার্কিন নাগরিক মনে করেন ট্রাম্প নোবেল পুরস্কারের যোগ্য নন।
সব মিলিয়ে ট্রাম্প তার আংশিক সাফল্যকে বড় করে তুলে ধরছেন। তবে তার কাজের ধরন ও নীতি নোবেল জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, তিনি আসলে সেই বৈশ্বিক ব্যবস্থাকেই দুর্বল করছেন, এই পুরস্কার যা রক্ষা করতে চায়। গাজায় শান্তি স্থায়ী হলে তার ভাবমূর্তি কিছুটা বাড়তে পারে। তবে এতে নোবেল পুরস্কার জয়ের সম্ভাবনা নেই।
তথ্যসূত্র: সিএনএন, এপি, আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, এবিসি নিউজ, সিবিএস নিউজ, গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বজুড়ে চরম ডানপন্থী মতাদর্শ বেড়েছে। এর বৈশিষ্ট্য হলো উগ্র জাতীয়তাবাদ, অভিবাসনবিরোধিতা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি অবিশ্বাস এবং নানা ষড়যন্ত্রমূলক ধারণা। আগে এসব মতাদর্শ মূলত ইন্টারনেটের প্রান্তিক প্ল্যাটফর্ম বা সংগঠিত গোষ্ঠীতে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন এগুলো মূলধারার সামাজিক যোগায
১৩ ঘণ্টা আগে২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা যুদ্ধের অবসানের জন্য ২০ দফার প্রস্তাব ঘোষণা করেন। প্রস্তাবটি হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশ করা হয়।
১ দিন আগেএই পদক্ষেপে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের অচলাবস্থাও আরও তীব্র হয়েছে। যদিও ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে শেষ মুহূর্তে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন, তবুও নিষেধাজ্ঞা এড়ানো যায়নি।
১ দিন আগেগবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ইউরোপীয়দের তুলনায় দ্বিগুণ, জাপানিদের তুলনায় ছয় গুণ এবং চীনাদের তুলনায় বিশ গুণ বেশি। সাধারণত, অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে হার্টের সমস্যা আট থেকে দশ বছর আগেই দেখা দেয়।
২ দিন আগে