স্ট্রিম প্রতিবেদক
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) দেশের সব প্রকৌশল এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন। সরকারি চাকরিতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কোটা বাতিল করে বিএসসি প্রকৌশলীদের প্রতি বৈষম্য নিরসনসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা। সরকারের প্রকৌশল বিভাগে চাকরিতে নিয়োগ ব্যবস্থায় কোটা বৈষম্য নিয়ে গভীর অসন্তোষ থেকেই তাদের এই আন্দোলন। এর মূলে রয়েছে সরকারি চাকরিতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অতিরিক্ত কোটা সুবিধা।
বর্তমানে সরকারের প্রকৌশল বিভাগের ১০ম গ্রেডের (উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান) শতভাগ পদ ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের জন্য সংরক্ষিত। বিএসসি প্রকৌশলীরা এই পদে আবেদনই করতে পারেন না। অন্যদিকে, ৯ম গ্রেডের (সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান) ৩৩ শতাংশ পদ ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। এই পদগুলো পূরণ করা হয় ১০ম গ্রেডে দুই বছর চাকরি করা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের থেকে। দুই বছর চাকরির পরই তাদেরকে অটোপ্রমোশন দিয়ে ৯ম গ্রেডে নিয়ে আসা হয়।
এই কোটাপ্রথা চালু করা হয় ২০১৩ সালে। অভিযোগ রয়েছে, ডিপ্লোমা সিন্ডিকেট সে সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে বাধ্য করে কোটা চালু করেছে। সরকারও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় জনপ্রিয়তার সুবিধাকে নিজেদের করায়ত্ত্ব করার আশায় তাদের দাবি মেনে নেয়।
কোটার পাশাপাশি ২০২৪ সালে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কোর্সকে বিএসসি (পাস) সমমান মর্যাদাও দেওয়া। এই কোটা এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন বুয়েটসহ প্রকৌশল এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
২০২৪ সালের মে মাসে সরকার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দুই বছর ১০ম গ্রেডে চাকরির পর ‘বিএসসি সমমান’ মর্যাদাও দেয়। এই সিদ্ধান্তে বিশেষজ্ঞেরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে এরপর আর বিষয়টি নিয়ে পত্রিকায় কিছু লেখা ছাড়া তেমন কোনো কথা উঠেনি এবং কোন আন্দোলনও দানা বাধেনি। সে বছরের জুন থেকেই ফের শুরু হয় মূল কোটা সংস্কার আন্দোলন। সে আন্দোলন এবং গণ-অভ্যুত্থানের ডামাডোলে বিষয়টি চাপ পড়ে যায়।
এরপর ২০২৫ সালের এপ্রিলে এসে বুয়েটসহ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের চাকরিতে কোটা সংস্কারের বিষয়ে একটি নীরব আন্দোলন শুরু করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ তারা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে থাকেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শত শত শিক্ষার্থী গত ১৭-১৮ এপ্রিল ঢাকাসহ দেশের নানা স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। তারা ডিপ্লোমা ডিগ্রিকে স্নাতক ডিগ্রির সমমান স্বীকৃতি দেওয়াসহ চাকরিতে কোটা সংরক্ষণের জোরালো দাবি তোলে। এপ্রিলের শেষদিকে তারা ঢাকার অনেক পলিটেকনিক ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়।
তাঁদের সাতটি দাবির মধ্যে রয়েছে— বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের অনুপাত ১:৫ করা, ২০২১ সালের পর নিয়োগ পাওয়া ‘বিতর্কিত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের’ স্থানান্তর, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সকে চার বছর মেয়াদি করা এবং প্রতিটি সেমিস্টারকে পূর্ণ ছয় মাসের করার ব্যবস্থা। এছাড়া তারা দাবি জানায়, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (১০ম গ্রেড) পদে শুধু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের আবেদন করার সুযোগ থাকতে হবে। উপ-সহকারী প্রকৌশলী এবং সমমানের অন্যান্য পদও একান্তভাবে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে। এছাড়া প্রমোশন কোটা বাড়ানো এবং ক্যারিয়ারে ধারাবাহিকতা নিশ্চিত, শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকায়ন, ইংরেজি মাধ্যমে কোর্স, শিক্ষক সংকট দূর করা, ডিপ্লোমার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ক্রেডিট ট্রান্সফার’ ও ভর্তি সুগম করা।
এদিকে, সরকারের সঙ্গে দেনদরবারে কোটা সংস্কারের আশ্বাস না পেয়ে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা গত ৮ জুলাই তাদের ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে। এই সময়ে তারা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। কিন্তু কোনো ফল মেলেনি।
গত ৮ জুলাই বুয়েট শিক্ষার্থীরা তাদের তিন দফা দাবি তুলে ধরেন—
এক. ইঞ্জিনিয়ারিং ৯ম গ্রেডে (সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে) প্রবেশের জন্য সবার ক্ষেত্রে নিয়োগ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং ন্যূনতম যোগ্যতা হিসেবে বিএসসি ডিগ্রি থাকতে হবে। কোটার মাধ্যমে কিংবা অন্য নামে সমমান পদ তৈরি করে কোনো পদোন্নতি দেওয়া যাবে না।
তাদের অভিযোগ, ডিপ্লোমাধারীদেরও সরকারি চাকরির ৯ম গ্রেডে (সহকারী ইঞ্জিনিয়ার বা সমমান) সরাসরি নিয়োগ এবং কোটা প্রমোশন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে। এতে তাদের চার বছরের কঠোর শিক্ষা অবমূল্যায়িত হচ্ছে।
দুই. টেকনিক্যাল ১০ম গ্রেডের (উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে) নিয়োগ পরীক্ষা বিএসসি ও ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী উভয়ের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। বিএসসি প্রকৌশল ডিগ্রিধারীদের বেকারত্ব ঘুচাতে চাকরির সুযোগ বাড়ানোর জন্য এই দাবি করা হয়।
তিন. বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া কেউ প্রকৌশলী পদবি ব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া নন-অ্যাক্রিডেটেড বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় আইইবি-বিএইটিই-এর আওতায় আনতে হবে।
শিক্ষার্থীদের মতে, শুধু ডিপ্লোমাধারীরা ‘প্রকৌশলী’ উপাধি ব্যবহার করলে বিএসসি ডিগ্রিধারীদের সঙ্গে অবিচার হয়। এতে তাদের মেধা ও পরিশ্রমের অবমূল্যায়ন করা হয়।
এরপর গত ২২ আগস্ট বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য চত্বরে মিছিল করে। যার প্রতিক্রিয়ায় ২৬ আগস্ট ডিপ্লোমা প্রকৌশলী কল্যাণ ফাউন্ডেশন ঢাকার গাজীপুরে ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে তাদের ৭ দফা দাবি তুলে ধরে। অন্যদিকে, একই দিনে বুয়েট শিক্ষার্থীরা শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেন। এরপর বুধবার লং মার্চ কর্মসূচি দেয়।
প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ওয়ালি উল্লাহ জানান, মঙ্গলবার তিনি সারা দিন সচিবালয়ে কাটিয়েছেন কিন্তু কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। দীর্ঘদিনের অবহেলায় সরকার তাদের ‘ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছে’ বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যে কারণে এবার তারা লংমার্চ টু ঢাকা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সহসভাপতি শাকিল আহমেদ ইকবাল জানান, তারা পাঁচ মাস ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। এই সময়ে ১০০টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। কিন্তু কোনো ফল মেলেনি।
তিনি আরও জানান, এবার রাস্তায় নেমে আন্দোলনের সূত্রপাত হয় রংপুরের একটি ঘটনায়। গত সোমবার সেখানে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই পিএলসিতে (নেসকো নামে বেশি পরিচিত) কর্মরত রোকন নামে এক শিক্ষানবিশ প্রকৌশলীকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
শাকিল অভিযোগ করেন, রংপুরে ২০ থেকে ২৫ জন ব্যক্তি প্রকৌশলী রোকনকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। কারণ তিনি আন্দোলনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন জমা দিয়েছিলেন।
তারা অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার ও চাকরিচ্যুত করার দাবি জানান। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি পূরণে প্রজ্ঞাপন জারির আহ্বান জানান।
আন্দোলনকারীরা জানান, তিন দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এবং স্নাতক প্রকৌশলীকে হত্যার হুমকিদাতাদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বুধবার তাঁরা ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালন করে। এ সময় সংঘর্ষে ২ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। পরে বিএসসি ও ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের পেশাগত দাবিগুলোর যৌক্তিকতা নিরীক্ষা ও সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে সরকার একটি কমিটি গঠন করে।
এই আন্দোলন বাংলাদেশের প্রকৌশল পেশায় বিদ্যমান গভীর সংকটকে প্রতিফলিত করছে। ডিপ্লোমা ও বিএসসি ডিগ্রিধারীদের মধ্যে বিভাজন এখনো বড় বিতর্কের বিষয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বর্তমান ব্যবস্থায় প্রকৌশল পেশার যোগ্যতা ও মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়া শিক্ষার্থীরা অন্যায্য প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে। তাই পেশাগত স্বীকৃতি ও ন্যায্যতা নিশ্চিতে প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে নেমে এসেছেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী দেশের প্রকৌশল পরিসরে কোন ডিগ্রি কতটা স্বীকৃতি পাবে— এই বিতর্ক পুরো পেশাকে প্রভাবিত করছে।
ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যালায়েন্স (আইইএ) কারিগরি পেশার জন্য তিনটি স্তর নির্ধারণ করেছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রকৌশল শিক্ষা ও কর্মপরিধির মানদণ্ড হিসেবে কাজ করে।
আইইএ কারিগরি পেশাকে তিনটি স্তরে বিভক্ত করেছে। প্রতিটি স্তরে নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কর্মপরিধির নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। স্তরগুলো হলো:
১. প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার (ওয়াশিংটন অ্যাকর্ড, ১৯৮৯)
শিক্ষাগত যোগ্যতা: ৪ বছরের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি বা সমতুল্য।
কর্মপরিধি: জটিল ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যা সমাধান, ডিজাইন, ইনোভেশন এবং প্রকল্প নেতৃত্ব।
উপাধি: “পেশাদার প্রকৌশলী” বা সমতুল্য। (যেমন, বাংলাদেশে প্রকৌশলী)।
নীতি: শুধু ওয়াশিংটন অ্যাকর্ড-অনুমোদিত প্রোগ্রামের গ্র্যাজুয়েটরা এই উপাধি ব্যবহার করতে পারেন।
২. ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজিস্ট (সিডনি অ্যাকর্ড, ২০০১)
শিক্ষাগত যোগ্যতা: ৩ বছরের ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি ডিগ্রি বা অ্যাডভান্সড ডিপ্লোমা।
কর্মপরিধি: প্রযুক্তি প্রয়োগ, অপারেশন এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট।
উপাধি: “ইঞ্জিনিয়ারিয়ং টেকনোলজিস্ট” বা সমতুল্য। (যেমন “অ্যাসোসিয়েট ইঞ্জিনিয়ার)।
নীতি: ডিপ্লোমা ধারকরা এই স্তরে ক্লাসিফাইড হন এবং “প্রকৌশলী” উপাধি ব্যবহার করতে পারেন না।
৩. ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনিশিয়ান (ডাবলিন অ্যাকর্ড, ২০০২)
শিক্ষাগত যোগ্যতা: ২ বছরের ডিপ্লোমা বা সমতুল্য।
কর্মপরিধি: বেসিক টেকনিক্যাল সাপোর্ট, মেইনটেন্যান্স এবং অপারেশন।
উপাধি: “ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনিশিয়ান” বা সমতুল্য।
নীতি: এই স্তরের কর্মীরা প্রযুক্তিগত সহায়তায় কাজ করেন, কিন্তু প্রকৌশলী হিসেবে ডিজাইন বা নেতৃত্ব দিতে পারেন না।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইবি) ওয়াশিংটন অ্যাকর্ডের অনুস্বাক্ষরকারী দেশ। তাই বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েটরা “প্রকৌশলী” হিসেবে নিবন্ধিত হতে পারেন। তবে ডিপ্লোমাধারীরা, যারা বাংলাদেশ টেকনিক্যাল এডুকেশন বোর্ড (BTEB) থেকে “ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং” পান, প্রায়ই “ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার” বলে পরিচিত হন। এটি আইইএ’র গাইডলাইনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ, কারণ তারা টেকনোলজিস্ট বা টেকনিশিয়ান হিসেবে গণ্য হওয়ার কথা। বাংলাদেশে এই উপাধি ব্যবহার কঠোরভাবে আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, তবে আইইএ’র মান অনুযায়ী এটি অপব্যবহার হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
বিশ্বের অনেক দেশে (যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া) “প্রকৌশলী” উপাধি ব্যবহার এবং ডিজাইন স্বাক্ষর কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে পিই (প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার) লাইসেন্স ছাড়া কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন স্বাক্ষর করতে পারে না। এটি জননিরাপত্তার সাথে জড়িত বলে আইন দ্বারা বাধ্যতামূলক।
আন্তর্জাতিকভাবে ডিপ্লোমাধারীরা উদ্যোক্তা বা টেকনিক্যাল ম্যানেজার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন, তবে আইইএ’র মান অনুযায়ী তাদের “প্রকৌশলী” বলা যায় না। বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাক্ট (১৯৬৪) এই ধরনের নিয়ন্ত্রণের কথা বলে, কিন্তু ডিপ্লোমাধারীদের “ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার” বলার বিষয়টি সামাজিকভাবে প্রচলিত এবং আইনিভাবে কঠোরভাবে শাস্তিযোগ্য নয়। ডিপ্লোমাধারীরা অবশ্য বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে “প্রকৌশলী” হতে পারেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) দেশের সব প্রকৌশল এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন। সরকারি চাকরিতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কোটা বাতিল করে বিএসসি প্রকৌশলীদের প্রতি বৈষম্য নিরসনসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা। সরকারের প্রকৌশল বিভাগে চাকরিতে নিয়োগ ব্যবস্থায় কোটা বৈষম্য নিয়ে গভীর অসন্তোষ থেকেই তাদের এই আন্দোলন। এর মূলে রয়েছে সরকারি চাকরিতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অতিরিক্ত কোটা সুবিধা।
বর্তমানে সরকারের প্রকৌশল বিভাগের ১০ম গ্রেডের (উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান) শতভাগ পদ ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের জন্য সংরক্ষিত। বিএসসি প্রকৌশলীরা এই পদে আবেদনই করতে পারেন না। অন্যদিকে, ৯ম গ্রেডের (সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান) ৩৩ শতাংশ পদ ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। এই পদগুলো পূরণ করা হয় ১০ম গ্রেডে দুই বছর চাকরি করা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের থেকে। দুই বছর চাকরির পরই তাদেরকে অটোপ্রমোশন দিয়ে ৯ম গ্রেডে নিয়ে আসা হয়।
এই কোটাপ্রথা চালু করা হয় ২০১৩ সালে। অভিযোগ রয়েছে, ডিপ্লোমা সিন্ডিকেট সে সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে বাধ্য করে কোটা চালু করেছে। সরকারও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় জনপ্রিয়তার সুবিধাকে নিজেদের করায়ত্ত্ব করার আশায় তাদের দাবি মেনে নেয়।
কোটার পাশাপাশি ২০২৪ সালে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কোর্সকে বিএসসি (পাস) সমমান মর্যাদাও দেওয়া। এই কোটা এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন বুয়েটসহ প্রকৌশল এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
২০২৪ সালের মে মাসে সরকার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দুই বছর ১০ম গ্রেডে চাকরির পর ‘বিএসসি সমমান’ মর্যাদাও দেয়। এই সিদ্ধান্তে বিশেষজ্ঞেরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে এরপর আর বিষয়টি নিয়ে পত্রিকায় কিছু লেখা ছাড়া তেমন কোনো কথা উঠেনি এবং কোন আন্দোলনও দানা বাধেনি। সে বছরের জুন থেকেই ফের শুরু হয় মূল কোটা সংস্কার আন্দোলন। সে আন্দোলন এবং গণ-অভ্যুত্থানের ডামাডোলে বিষয়টি চাপ পড়ে যায়।
এরপর ২০২৫ সালের এপ্রিলে এসে বুয়েটসহ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের চাকরিতে কোটা সংস্কারের বিষয়ে একটি নীরব আন্দোলন শুরু করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ তারা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে থাকেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শত শত শিক্ষার্থী গত ১৭-১৮ এপ্রিল ঢাকাসহ দেশের নানা স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। তারা ডিপ্লোমা ডিগ্রিকে স্নাতক ডিগ্রির সমমান স্বীকৃতি দেওয়াসহ চাকরিতে কোটা সংরক্ষণের জোরালো দাবি তোলে। এপ্রিলের শেষদিকে তারা ঢাকার অনেক পলিটেকনিক ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়।
তাঁদের সাতটি দাবির মধ্যে রয়েছে— বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের অনুপাত ১:৫ করা, ২০২১ সালের পর নিয়োগ পাওয়া ‘বিতর্কিত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের’ স্থানান্তর, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সকে চার বছর মেয়াদি করা এবং প্রতিটি সেমিস্টারকে পূর্ণ ছয় মাসের করার ব্যবস্থা। এছাড়া তারা দাবি জানায়, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (১০ম গ্রেড) পদে শুধু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের আবেদন করার সুযোগ থাকতে হবে। উপ-সহকারী প্রকৌশলী এবং সমমানের অন্যান্য পদও একান্তভাবে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে। এছাড়া প্রমোশন কোটা বাড়ানো এবং ক্যারিয়ারে ধারাবাহিকতা নিশ্চিত, শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকায়ন, ইংরেজি মাধ্যমে কোর্স, শিক্ষক সংকট দূর করা, ডিপ্লোমার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ক্রেডিট ট্রান্সফার’ ও ভর্তি সুগম করা।
এদিকে, সরকারের সঙ্গে দেনদরবারে কোটা সংস্কারের আশ্বাস না পেয়ে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা গত ৮ জুলাই তাদের ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে। এই সময়ে তারা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। কিন্তু কোনো ফল মেলেনি।
গত ৮ জুলাই বুয়েট শিক্ষার্থীরা তাদের তিন দফা দাবি তুলে ধরেন—
এক. ইঞ্জিনিয়ারিং ৯ম গ্রেডে (সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে) প্রবেশের জন্য সবার ক্ষেত্রে নিয়োগ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং ন্যূনতম যোগ্যতা হিসেবে বিএসসি ডিগ্রি থাকতে হবে। কোটার মাধ্যমে কিংবা অন্য নামে সমমান পদ তৈরি করে কোনো পদোন্নতি দেওয়া যাবে না।
তাদের অভিযোগ, ডিপ্লোমাধারীদেরও সরকারি চাকরির ৯ম গ্রেডে (সহকারী ইঞ্জিনিয়ার বা সমমান) সরাসরি নিয়োগ এবং কোটা প্রমোশন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে। এতে তাদের চার বছরের কঠোর শিক্ষা অবমূল্যায়িত হচ্ছে।
দুই. টেকনিক্যাল ১০ম গ্রেডের (উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে) নিয়োগ পরীক্ষা বিএসসি ও ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী উভয়ের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। বিএসসি প্রকৌশল ডিগ্রিধারীদের বেকারত্ব ঘুচাতে চাকরির সুযোগ বাড়ানোর জন্য এই দাবি করা হয়।
তিন. বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া কেউ প্রকৌশলী পদবি ব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া নন-অ্যাক্রিডেটেড বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় আইইবি-বিএইটিই-এর আওতায় আনতে হবে।
শিক্ষার্থীদের মতে, শুধু ডিপ্লোমাধারীরা ‘প্রকৌশলী’ উপাধি ব্যবহার করলে বিএসসি ডিগ্রিধারীদের সঙ্গে অবিচার হয়। এতে তাদের মেধা ও পরিশ্রমের অবমূল্যায়ন করা হয়।
এরপর গত ২২ আগস্ট বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য চত্বরে মিছিল করে। যার প্রতিক্রিয়ায় ২৬ আগস্ট ডিপ্লোমা প্রকৌশলী কল্যাণ ফাউন্ডেশন ঢাকার গাজীপুরে ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে তাদের ৭ দফা দাবি তুলে ধরে। অন্যদিকে, একই দিনে বুয়েট শিক্ষার্থীরা শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেন। এরপর বুধবার লং মার্চ কর্মসূচি দেয়।
প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ওয়ালি উল্লাহ জানান, মঙ্গলবার তিনি সারা দিন সচিবালয়ে কাটিয়েছেন কিন্তু কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। দীর্ঘদিনের অবহেলায় সরকার তাদের ‘ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছে’ বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যে কারণে এবার তারা লংমার্চ টু ঢাকা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সহসভাপতি শাকিল আহমেদ ইকবাল জানান, তারা পাঁচ মাস ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। এই সময়ে ১০০টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। কিন্তু কোনো ফল মেলেনি।
তিনি আরও জানান, এবার রাস্তায় নেমে আন্দোলনের সূত্রপাত হয় রংপুরের একটি ঘটনায়। গত সোমবার সেখানে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই পিএলসিতে (নেসকো নামে বেশি পরিচিত) কর্মরত রোকন নামে এক শিক্ষানবিশ প্রকৌশলীকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
শাকিল অভিযোগ করেন, রংপুরে ২০ থেকে ২৫ জন ব্যক্তি প্রকৌশলী রোকনকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। কারণ তিনি আন্দোলনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন জমা দিয়েছিলেন।
তারা অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার ও চাকরিচ্যুত করার দাবি জানান। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি পূরণে প্রজ্ঞাপন জারির আহ্বান জানান।
আন্দোলনকারীরা জানান, তিন দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এবং স্নাতক প্রকৌশলীকে হত্যার হুমকিদাতাদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বুধবার তাঁরা ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালন করে। এ সময় সংঘর্ষে ২ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। পরে বিএসসি ও ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের পেশাগত দাবিগুলোর যৌক্তিকতা নিরীক্ষা ও সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে সরকার একটি কমিটি গঠন করে।
এই আন্দোলন বাংলাদেশের প্রকৌশল পেশায় বিদ্যমান গভীর সংকটকে প্রতিফলিত করছে। ডিপ্লোমা ও বিএসসি ডিগ্রিধারীদের মধ্যে বিভাজন এখনো বড় বিতর্কের বিষয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বর্তমান ব্যবস্থায় প্রকৌশল পেশার যোগ্যতা ও মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়া শিক্ষার্থীরা অন্যায্য প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে। তাই পেশাগত স্বীকৃতি ও ন্যায্যতা নিশ্চিতে প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে নেমে এসেছেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী দেশের প্রকৌশল পরিসরে কোন ডিগ্রি কতটা স্বীকৃতি পাবে— এই বিতর্ক পুরো পেশাকে প্রভাবিত করছে।
ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যালায়েন্স (আইইএ) কারিগরি পেশার জন্য তিনটি স্তর নির্ধারণ করেছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রকৌশল শিক্ষা ও কর্মপরিধির মানদণ্ড হিসেবে কাজ করে।
আইইএ কারিগরি পেশাকে তিনটি স্তরে বিভক্ত করেছে। প্রতিটি স্তরে নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কর্মপরিধির নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। স্তরগুলো হলো:
১. প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার (ওয়াশিংটন অ্যাকর্ড, ১৯৮৯)
শিক্ষাগত যোগ্যতা: ৪ বছরের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি বা সমতুল্য।
কর্মপরিধি: জটিল ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যা সমাধান, ডিজাইন, ইনোভেশন এবং প্রকল্প নেতৃত্ব।
উপাধি: “পেশাদার প্রকৌশলী” বা সমতুল্য। (যেমন, বাংলাদেশে প্রকৌশলী)।
নীতি: শুধু ওয়াশিংটন অ্যাকর্ড-অনুমোদিত প্রোগ্রামের গ্র্যাজুয়েটরা এই উপাধি ব্যবহার করতে পারেন।
২. ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজিস্ট (সিডনি অ্যাকর্ড, ২০০১)
শিক্ষাগত যোগ্যতা: ৩ বছরের ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি ডিগ্রি বা অ্যাডভান্সড ডিপ্লোমা।
কর্মপরিধি: প্রযুক্তি প্রয়োগ, অপারেশন এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট।
উপাধি: “ইঞ্জিনিয়ারিয়ং টেকনোলজিস্ট” বা সমতুল্য। (যেমন “অ্যাসোসিয়েট ইঞ্জিনিয়ার)।
নীতি: ডিপ্লোমা ধারকরা এই স্তরে ক্লাসিফাইড হন এবং “প্রকৌশলী” উপাধি ব্যবহার করতে পারেন না।
৩. ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনিশিয়ান (ডাবলিন অ্যাকর্ড, ২০০২)
শিক্ষাগত যোগ্যতা: ২ বছরের ডিপ্লোমা বা সমতুল্য।
কর্মপরিধি: বেসিক টেকনিক্যাল সাপোর্ট, মেইনটেন্যান্স এবং অপারেশন।
উপাধি: “ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনিশিয়ান” বা সমতুল্য।
নীতি: এই স্তরের কর্মীরা প্রযুক্তিগত সহায়তায় কাজ করেন, কিন্তু প্রকৌশলী হিসেবে ডিজাইন বা নেতৃত্ব দিতে পারেন না।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইবি) ওয়াশিংটন অ্যাকর্ডের অনুস্বাক্ষরকারী দেশ। তাই বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েটরা “প্রকৌশলী” হিসেবে নিবন্ধিত হতে পারেন। তবে ডিপ্লোমাধারীরা, যারা বাংলাদেশ টেকনিক্যাল এডুকেশন বোর্ড (BTEB) থেকে “ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং” পান, প্রায়ই “ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার” বলে পরিচিত হন। এটি আইইএ’র গাইডলাইনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ, কারণ তারা টেকনোলজিস্ট বা টেকনিশিয়ান হিসেবে গণ্য হওয়ার কথা। বাংলাদেশে এই উপাধি ব্যবহার কঠোরভাবে আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, তবে আইইএ’র মান অনুযায়ী এটি অপব্যবহার হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
বিশ্বের অনেক দেশে (যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া) “প্রকৌশলী” উপাধি ব্যবহার এবং ডিজাইন স্বাক্ষর কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে পিই (প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার) লাইসেন্স ছাড়া কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন স্বাক্ষর করতে পারে না। এটি জননিরাপত্তার সাথে জড়িত বলে আইন দ্বারা বাধ্যতামূলক।
আন্তর্জাতিকভাবে ডিপ্লোমাধারীরা উদ্যোক্তা বা টেকনিক্যাল ম্যানেজার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন, তবে আইইএ’র মান অনুযায়ী তাদের “প্রকৌশলী” বলা যায় না। বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাক্ট (১৯৬৪) এই ধরনের নিয়ন্ত্রণের কথা বলে, কিন্তু ডিপ্লোমাধারীদের “ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার” বলার বিষয়টি সামাজিকভাবে প্রচলিত এবং আইনিভাবে কঠোরভাবে শাস্তিযোগ্য নয়। ডিপ্লোমাধারীরা অবশ্য বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে “প্রকৌশলী” হতে পারেন।
২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিজেপি সরকার মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘৃণা এবং অসহিষ্ণুতা প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। ২০২৪ সালে বিজেপির টানা তৃতীয়বারের মতো জয় ভারতীয় সমাজে এমন কিছু সাংবিধানিক, বিচারিক এবং সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে যা ভারতের মুসলিম জনগণের দৈনন্দিন জীবনের পরিস্থিতি আরও খারাপ
১৬ ঘণ্টা আগেরোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন খুব সহজ নয়। ২০২১ সাল থেকে মিয়ানমারে চলা গৃহযুদ্ধে রাখাইন রাজ্য অন্যত ম প্রধান যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। একদিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, অন্যদিকে আরাকান আর্মি—উভয় পক্ষই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।
১ দিন আগেইসরায়েলি আগ্রাসনে সৃষ্ট গাজার ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ও গণহত্যার দৃশ্য জার্মানদের মনে করিয়ে দিচ্ছে নিজেদের অতীত ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়—নামিবিয়া, লেনিনগ্রাদ, ওয়ারশ গেটো কিংবা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের ভয়াল স্মৃতি। তবুও আজ জার্মানির নেতারা হত্যাকারীদের পাশে দাঁড়িয়ে অস্ত্রচুক্তি করছে, গণহত্যাকে ‘মানবিক সংকট’ আখ্য
২ দিন আগেপ্রতিবছর ২৫ আগস্টকে স্মরণ করা হয় রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবস হিসেবে। ২০১৭ সালের এই সময়ে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সে সময়ে মিয়ানমারে অবস্থিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রের দ্বারা পরিচালিত সহিংসতা ও গণহত্যার শিকার হয়।
২ দিন আগে