ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক অংশীদার ৬৯টি দেশের ওপর আরোপ করা শুল্কহারের তালিকা দেওয়া হয়। তাতে দেখা যায়, ১০ থেকে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। অধিকাংশ দেশের ক্ষেত্রে নতুন এ শুল্ক ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
স্ট্রিম ডেস্ক
নতুন পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) হোয়াইট হাউস এক বিবৃতি দিয়ে সংশোধিত শুল্কহারের এ ঘোষণা দেয়।
ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক অংশীদার ৬৯টি দেশের ওপর আরোপ করা শুল্কহারের তালিকা দেওয়া হয়। তাতে দেখা যায়, ১০ থেকে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। অধিকাংশ দেশের ক্ষেত্রে নতুন এ শুল্ক ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের এ কার্যকলাপে এটাই ফুটে উঠে যে—আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কাঠামো ঢেলে সাজাতে তিনি আগের যেকোনো সময়ের চেয়েও বেশি তৎপর। গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘অভিধানের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর শব্দ “ট্যারিফ”। এটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় শব্দ।’
গত ২ এপ্রিল নতুন শুল্ক ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। দিনটিকে ‘মুক্তির দিন’ বা লিবারেশন ডে বলে অভিহিত করেছিলেন ট্রাম্প। যদিও এই শুল্ক ১ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত ছিল। এরপর অধিকাংশ দেশের শুল্কহার কমানো হয়েছে। নতুন ঘোষিত শুল্কহারে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৪০টি দেশের পণ্যে দেশটি ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে। কিছু দেশের জন্য এ হার আরও বেশি হবে। আর যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে এ হার ১০ শতাংশ।
তবে নতুন এই শুল্ক তালিকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম হলো চীন। যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার চীন এই তালিকায় নেই। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের খেলায় কে কতদূর এগিয়ে।
সর্বশেষ গত ২৯ জুলাই সুইডেনে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শীর্ষ কর্মকর্তারা আলোচনায় বসেছিলেন। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ছিলেন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট। আর চীনের পক্ষে ছিলেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী হ্য লিফেং।
তবে সেই আলোচনা থেকে ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো সমঝোতা হয়নি। আসছে ১২ আগস্ট শুল্ক বিরতির সেই মেয়াদ শেষ হবে। স্কট বেসেন্ট ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, নতুন করে আর মেয়াদ বাড়ানো হবে কিনা—সে সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে একান্তই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর।
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের সুইডিশ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ‘রোসেনবাদে’ অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের লক্ষ্য ছিল—বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দুই দেশের মধ্যে তৈরি হওয়া নতুন বাণিজ্য সংকট কাটানো।
এপ্রিলের পর দুই দেশের মধ্যে এটি ছিল তৃতীয় দফার বৈঠক। এই বৈঠকের দুদিন আগেই কেবল ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য ট্রাম্প নতুন বাণিজ্যচুক্তি ঘোষণা করেছিলেন। মূলত এপ্রিল থেকেই দেশ দুটি একে অপরের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি হারে শুল্ক আরোপ করেছিল।
এর আগে ১২ মে জেনেভায় অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় দুই দেশ ৯০ দিনের শুল্ক বিরতিতে সম্মত হয়। এর ফলে এক দীর্ঘমেয়াদি অচলাবস্থার কিছুটা অবসান হয়েছিল। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র তাদের শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করে। অন্যদিকে, চীনও তাদের শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে।
কিন্তু নতুন কোনো চুক্তি না হলে, এই শুল্ক আবার তিন অঙ্কের ঘরে ফিরবে। এতে এক ধরনের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
তৃতীয় দফার আলোচনার পর চীনের উপ-বাণিজ্যমন্ত্রী লি চেংগাং বলেন, উভয় দেশই একটি স্থিতিশীল ও সুস্থ বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব বুঝতে পারছে। আলোচনা ‘খোলামেলা ও গঠনমূলক’ ছিল।
অন্যদিকে, ট্রেজারি সেক্রেটারি বেসেন্ট সাংবাদিকদের জানান, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি জাপান ও ইইউর সঙ্গে চুক্তি করে যে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা আলোচনায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। চীনের ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। বাগাড়াম্বর দূর করতে এই আলোচনা খুব গঠনমূলক ছিল।
তিনি আরও বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কথা না বলে কোনো ব্যাপারেই তারা একমত হতে পারেন না।
বেসেন্ট বলেন, তিনি ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এ নিয়ে ব্রিফ করবেন।
বেসেন্ট মনে করিয়ে দেন, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখলে চীনকেও উচ্চ শুল্কের মুখে পড়তে হতে পারে। ভারতকেও এ ধরনের শাস্তির হুমকি দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে প্রযুক্তি রপ্তানি—বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ব্যবহৃত চিপ—ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন, উচ্চ প্রযুক্তির আমেরিকান সেমিকন্ডাক্টর চিপ চীনের সামরিক বাহিনী ব্যবহার করতে পারে।
এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসন এনভিডিয়ার তৈরি ‘এইচ২০’ চিপের রপ্তানি বন্ধ করতে যাচ্ছিল। তবে এনভিডিয়ার সিইও জেনসেন হুয়াংয়ের সরাসরি অনুরোধে ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।
আলোচনা চলাকালে যুক্তরাজ্যের ফিন্যান্সিয়াল টাইমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ দিলে, চীন পাল্টা বিরল মাটির খনিজ পদার্থ রপ্তানিতে বিধিনিষেধ দিত। মূলত চীনের এই পদক্ষেপ এড়াতেই যুক্তরাষ্ট্র সাময়িকভাবে প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ তুলে নেয়।
বিরল মাটি (rare earth) হলো ১৭টি রাসায়নিক উপাদানে গঠিত এমন এক বিরল খনিজ যা আধুনিক প্রযুক্তি ও শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য। এই খাতেও চীন শীর্ষস্থানে আছে। দুই দেশের বাণিজ্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বিষয়টি।
চীন দীর্ঘদিন ধরে বিরল মাটির খনিজ (মিনারেল) পদার্থের খনন ও প্রক্রিয়াকরণ করে আসছে। পাশাপাশি তারা চুম্বকের মতো সংশ্লিষ্ট উপাদান উৎপাদনেও প্রভাব বিস্তার করে আসছে।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের ফিরে আসার পর থেকে এই শিল্পে চীনের একচ্ছত্র আধিপত্য মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদের কাছে প্রধান উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই চীনের বাণিজ্যনীতির সমালোচনা করে আসছেন। আমদানি কোটার বিধিনিষেধ, সরকারি ভর্তুকি ও কর রেয়াত—এসব দিয়ে চীন ‘অন্যায্য বাণিজ্য চর্চা’ করছে বলে অভিযোগ তুলেন তিনি। ১৯৭৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ২০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। আর এই ঘাটতিকে ট্রাম্প ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ (ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি) বলে অভিহিত করেছেন।
৯ এপ্রিল অনেক দেশের উপর শুল্ক স্থগিত করলেও চীনের উপর থেকে শুল্ক স্থগিত করেননি তিনি। জবাবে চীনও পাল্টা আমদানি শুল্ক আরোপ করে। দুই দেশের এই পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপে পরিস্থিতি দ্রুতই উত্তেজনাকর হয়ে উঠে। ১১ এপ্রিলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে চীন ১২৫ শতাংশ হারে শুল্ক বসিয়ে দেয়।
পরবর্তীতে গত মে মাসে বেসেন্ট এবং হ্য লিফেংয়ের চুক্তির মধ্য দিয়ে সেই উত্তেজনার পারদ নামে। এই চুক্তির ফলে ৯০ দিনের জন্য দ্বিপাক্ষিক শুল্ক ১১৫ শতাংশ কমানো হয়।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যে ৩০ শতাংশ এবং চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে।
এই সপ্তাহের আলোচনার ফলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং ট্রাম্পের মধ্যে বছরের শেষ দিকে একটি সম্ভাব্য বৈঠকের পথ তৈরি হতে পারে। যদিও ট্রাম্প গত মঙ্গলবার জানিয়েছেন, তিনি নিজে থেকে এমন বৈঠকের উদ্যোগ নেবেন না।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের অর্থনীতির অধ্যাপক থমাস স্যাম্পসন আল-জাজিরাকে বলেন, তিনি মনে করেন, মুখোমুখি বৈঠক ‘গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে’। একই সঙ্গে আবার এটি নিছক মুচকি হাসি আর কুশল বিনিময়সভায়ও পরিণত হতে পারে।
অর্থনীতির এই অধ্যাপক বলেন, চীনের বিরল মাটি নিয়ন্ত্রণ এবং ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের চীন-বিরোধী মনোভাব—এই দুই কারণে যুক্তরাষ্ট্র-চীন আলোচনা অন্যান্য এশিয়ান দেশের তুলনায় অনেক জটিল।
তবে তিনি এ-ও বলেন, ‘স্টকহোম বৈঠকের পরিবেশ আগের তুলনায় অনেক ইতিবাচক। উভয় পক্ষই মনে হচ্ছে সংঘাত এড়াতে চাইছে।’
নতুন করে আলোচনা শুরু করা গেলে অতীতের তুলনায় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ সংযত হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন স্যাম্পসন।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট শুক্রবার বলেছেন, ‘চীনের সঙ্গে আলোচনা সঠিক পথে এগোচ্ছে। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি যোগাযোগে আছে।’
বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ, আর এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র-চীন আলোচনার বাইরে গত সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছেন ট্রাম্প।
গত রোববার ট্রাম্প ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন এ বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দেন। এর মধ্য দিয়ে দুই বৃহৎ অর্থনীতির জায়ান্টের মধ্যে মাসব্যাপী চলা অচলাবস্থার নিরসন হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, ইইউ এখন তাদের রপ্তানির ওপর গড় ১৫ শতাংশ শুল্ক মেনে নিয়েছে। আর ইইউর পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার কমে গিয়ে ১ শতাংশের নিচে নামবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের জ্বালানি কিনবে। এ ছাড়া দেশটিতে অতিরিক্ত ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
যদিও ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু বলেছেন, ইউরোপ কার্যত এই চুক্তিতে ট্রাম্পের চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছে। চুক্তির দিনটিকে তিনি ইউরোপের জন্য ‘অন্ধকার দিন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এছাড়াও, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের সঙ্গে শুল্ক সংক্রান্ত চুক্তি সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আল-জাজিরা অবলম্বনে
নতুন পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) হোয়াইট হাউস এক বিবৃতি দিয়ে সংশোধিত শুল্কহারের এ ঘোষণা দেয়।
ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক অংশীদার ৬৯টি দেশের ওপর আরোপ করা শুল্কহারের তালিকা দেওয়া হয়। তাতে দেখা যায়, ১০ থেকে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। অধিকাংশ দেশের ক্ষেত্রে নতুন এ শুল্ক ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের এ কার্যকলাপে এটাই ফুটে উঠে যে—আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কাঠামো ঢেলে সাজাতে তিনি আগের যেকোনো সময়ের চেয়েও বেশি তৎপর। গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘অভিধানের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর শব্দ “ট্যারিফ”। এটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় শব্দ।’
গত ২ এপ্রিল নতুন শুল্ক ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। দিনটিকে ‘মুক্তির দিন’ বা লিবারেশন ডে বলে অভিহিত করেছিলেন ট্রাম্প। যদিও এই শুল্ক ১ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত ছিল। এরপর অধিকাংশ দেশের শুল্কহার কমানো হয়েছে। নতুন ঘোষিত শুল্কহারে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৪০টি দেশের পণ্যে দেশটি ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে। কিছু দেশের জন্য এ হার আরও বেশি হবে। আর যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে এ হার ১০ শতাংশ।
তবে নতুন এই শুল্ক তালিকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম হলো চীন। যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার চীন এই তালিকায় নেই। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের খেলায় কে কতদূর এগিয়ে।
সর্বশেষ গত ২৯ জুলাই সুইডেনে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শীর্ষ কর্মকর্তারা আলোচনায় বসেছিলেন। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ছিলেন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট। আর চীনের পক্ষে ছিলেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী হ্য লিফেং।
তবে সেই আলোচনা থেকে ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো সমঝোতা হয়নি। আসছে ১২ আগস্ট শুল্ক বিরতির সেই মেয়াদ শেষ হবে। স্কট বেসেন্ট ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, নতুন করে আর মেয়াদ বাড়ানো হবে কিনা—সে সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে একান্তই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর।
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের সুইডিশ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ‘রোসেনবাদে’ অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের লক্ষ্য ছিল—বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দুই দেশের মধ্যে তৈরি হওয়া নতুন বাণিজ্য সংকট কাটানো।
এপ্রিলের পর দুই দেশের মধ্যে এটি ছিল তৃতীয় দফার বৈঠক। এই বৈঠকের দুদিন আগেই কেবল ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য ট্রাম্প নতুন বাণিজ্যচুক্তি ঘোষণা করেছিলেন। মূলত এপ্রিল থেকেই দেশ দুটি একে অপরের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি হারে শুল্ক আরোপ করেছিল।
এর আগে ১২ মে জেনেভায় অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় দুই দেশ ৯০ দিনের শুল্ক বিরতিতে সম্মত হয়। এর ফলে এক দীর্ঘমেয়াদি অচলাবস্থার কিছুটা অবসান হয়েছিল। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র তাদের শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করে। অন্যদিকে, চীনও তাদের শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে।
কিন্তু নতুন কোনো চুক্তি না হলে, এই শুল্ক আবার তিন অঙ্কের ঘরে ফিরবে। এতে এক ধরনের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
তৃতীয় দফার আলোচনার পর চীনের উপ-বাণিজ্যমন্ত্রী লি চেংগাং বলেন, উভয় দেশই একটি স্থিতিশীল ও সুস্থ বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব বুঝতে পারছে। আলোচনা ‘খোলামেলা ও গঠনমূলক’ ছিল।
অন্যদিকে, ট্রেজারি সেক্রেটারি বেসেন্ট সাংবাদিকদের জানান, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি জাপান ও ইইউর সঙ্গে চুক্তি করে যে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা আলোচনায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। চীনের ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। বাগাড়াম্বর দূর করতে এই আলোচনা খুব গঠনমূলক ছিল।
তিনি আরও বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কথা না বলে কোনো ব্যাপারেই তারা একমত হতে পারেন না।
বেসেন্ট বলেন, তিনি ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এ নিয়ে ব্রিফ করবেন।
বেসেন্ট মনে করিয়ে দেন, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখলে চীনকেও উচ্চ শুল্কের মুখে পড়তে হতে পারে। ভারতকেও এ ধরনের শাস্তির হুমকি দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে প্রযুক্তি রপ্তানি—বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ব্যবহৃত চিপ—ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন, উচ্চ প্রযুক্তির আমেরিকান সেমিকন্ডাক্টর চিপ চীনের সামরিক বাহিনী ব্যবহার করতে পারে।
এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসন এনভিডিয়ার তৈরি ‘এইচ২০’ চিপের রপ্তানি বন্ধ করতে যাচ্ছিল। তবে এনভিডিয়ার সিইও জেনসেন হুয়াংয়ের সরাসরি অনুরোধে ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।
আলোচনা চলাকালে যুক্তরাজ্যের ফিন্যান্সিয়াল টাইমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ দিলে, চীন পাল্টা বিরল মাটির খনিজ পদার্থ রপ্তানিতে বিধিনিষেধ দিত। মূলত চীনের এই পদক্ষেপ এড়াতেই যুক্তরাষ্ট্র সাময়িকভাবে প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ তুলে নেয়।
বিরল মাটি (rare earth) হলো ১৭টি রাসায়নিক উপাদানে গঠিত এমন এক বিরল খনিজ যা আধুনিক প্রযুক্তি ও শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য। এই খাতেও চীন শীর্ষস্থানে আছে। দুই দেশের বাণিজ্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বিষয়টি।
চীন দীর্ঘদিন ধরে বিরল মাটির খনিজ (মিনারেল) পদার্থের খনন ও প্রক্রিয়াকরণ করে আসছে। পাশাপাশি তারা চুম্বকের মতো সংশ্লিষ্ট উপাদান উৎপাদনেও প্রভাব বিস্তার করে আসছে।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের ফিরে আসার পর থেকে এই শিল্পে চীনের একচ্ছত্র আধিপত্য মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদের কাছে প্রধান উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই চীনের বাণিজ্যনীতির সমালোচনা করে আসছেন। আমদানি কোটার বিধিনিষেধ, সরকারি ভর্তুকি ও কর রেয়াত—এসব দিয়ে চীন ‘অন্যায্য বাণিজ্য চর্চা’ করছে বলে অভিযোগ তুলেন তিনি। ১৯৭৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ২০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। আর এই ঘাটতিকে ট্রাম্প ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ (ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি) বলে অভিহিত করেছেন।
৯ এপ্রিল অনেক দেশের উপর শুল্ক স্থগিত করলেও চীনের উপর থেকে শুল্ক স্থগিত করেননি তিনি। জবাবে চীনও পাল্টা আমদানি শুল্ক আরোপ করে। দুই দেশের এই পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপে পরিস্থিতি দ্রুতই উত্তেজনাকর হয়ে উঠে। ১১ এপ্রিলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে চীন ১২৫ শতাংশ হারে শুল্ক বসিয়ে দেয়।
পরবর্তীতে গত মে মাসে বেসেন্ট এবং হ্য লিফেংয়ের চুক্তির মধ্য দিয়ে সেই উত্তেজনার পারদ নামে। এই চুক্তির ফলে ৯০ দিনের জন্য দ্বিপাক্ষিক শুল্ক ১১৫ শতাংশ কমানো হয়।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যে ৩০ শতাংশ এবং চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে।
এই সপ্তাহের আলোচনার ফলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং ট্রাম্পের মধ্যে বছরের শেষ দিকে একটি সম্ভাব্য বৈঠকের পথ তৈরি হতে পারে। যদিও ট্রাম্প গত মঙ্গলবার জানিয়েছেন, তিনি নিজে থেকে এমন বৈঠকের উদ্যোগ নেবেন না।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের অর্থনীতির অধ্যাপক থমাস স্যাম্পসন আল-জাজিরাকে বলেন, তিনি মনে করেন, মুখোমুখি বৈঠক ‘গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে’। একই সঙ্গে আবার এটি নিছক মুচকি হাসি আর কুশল বিনিময়সভায়ও পরিণত হতে পারে।
অর্থনীতির এই অধ্যাপক বলেন, চীনের বিরল মাটি নিয়ন্ত্রণ এবং ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের চীন-বিরোধী মনোভাব—এই দুই কারণে যুক্তরাষ্ট্র-চীন আলোচনা অন্যান্য এশিয়ান দেশের তুলনায় অনেক জটিল।
তবে তিনি এ-ও বলেন, ‘স্টকহোম বৈঠকের পরিবেশ আগের তুলনায় অনেক ইতিবাচক। উভয় পক্ষই মনে হচ্ছে সংঘাত এড়াতে চাইছে।’
নতুন করে আলোচনা শুরু করা গেলে অতীতের তুলনায় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ সংযত হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন স্যাম্পসন।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট শুক্রবার বলেছেন, ‘চীনের সঙ্গে আলোচনা সঠিক পথে এগোচ্ছে। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি যোগাযোগে আছে।’
বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ, আর এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র-চীন আলোচনার বাইরে গত সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছেন ট্রাম্প।
গত রোববার ট্রাম্প ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন এ বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দেন। এর মধ্য দিয়ে দুই বৃহৎ অর্থনীতির জায়ান্টের মধ্যে মাসব্যাপী চলা অচলাবস্থার নিরসন হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, ইইউ এখন তাদের রপ্তানির ওপর গড় ১৫ শতাংশ শুল্ক মেনে নিয়েছে। আর ইইউর পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার কমে গিয়ে ১ শতাংশের নিচে নামবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের জ্বালানি কিনবে। এ ছাড়া দেশটিতে অতিরিক্ত ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
যদিও ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরু বলেছেন, ইউরোপ কার্যত এই চুক্তিতে ট্রাম্পের চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছে। চুক্তির দিনটিকে তিনি ইউরোপের জন্য ‘অন্ধকার দিন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এছাড়াও, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের সঙ্গে শুল্ক সংক্রান্ত চুক্তি সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আল-জাজিরা অবলম্বনে
উচ্চ শুল্কহারের ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তা এখনো বাস্তবে রূপ নেয়নি বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা।
১ দিন আগেফ্রান্সভিত্তিক বার্তাসংস্থা এএফপির ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে অন্তত ১৪২টি দেশ ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে অথবা স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
২ দিন আগেসুনামি হওয়ার প্রধান কারণ হলো ভূমিকম্প। টেকটনিক প্লেটের নড়চড়া এর কারণ। পৃথিবীর ভূ-ভাগের তলদেশের কঠিন অংশকে বলা হয় টেকটনিক প্লেট। সমুদ্রের তলদেশে যখন টেকটনিক প্লেটের হঠাৎ উত্থান-পতন ঘটে, তখন একটা বিশাল আকারের জলরাশি ছড়িয়ে পড়ে।
৩ দিন আগেআজ আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস। বাঘ যেমন আমাদের জীববৈচিত্র্যের প্রতীক, তেমনি একে বনাঞ্চলের রক্ষাকর্তাও বলা হয়। সুন্দরবনে এখন বাঘের সংখ্যা কত? বাঘ দিবসে তথ্য-উপাত্তসহ সে কথা জানাচ্ছেন দেশের শীর্ষ বাঘ-গবেষক।
৪ দিন আগে