leadT1ad

গণ-অভ্যুত্থানের পর নির্বাচন: দেশে দেশে কী ঘটেছে?

পৃথিবীজুড়ে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বারবার হয়েছে গণ-অভ্যুত্থান। তা কি শেষ পর্যন্ত জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পেরেছিল? নাকি ভিন্ন কোনো চেহারায় আবার ফিরে এসেছে পুরোনো শাসন? গণ-অভ্যুত্থানগুলোর পর জনগণ তাদের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করার জন্য চেয়েছিল নির্বাচন। কী হয়েছিল তার ফলাফল? বিগত তিন দশকের প্রেক্ষাপটে দেখা যাক নির্বাচন ও গণ-অভ্যুত্থানের সম্পর্ক।

প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১৪: ৫২
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ১৯
গণ-অভ্যুত্থানের পর নির্বাচন: দেশে দেশে কী ঘটেছে? স্ট্রিম গ্রাফিক

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রমজানের আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের বর্ষপূর্তিতে ৫ আগস্ট মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন।

শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই দীর্ঘ দিনের স্বৈরশাসন ও দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকদের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান শুধু সরকারের পতন ঘটায়নি, বরং অনেক ক্ষেত্রে সমাজের রাজনৈতিক কাঠামো, শাসন ব্যবস্থা ও মানুষের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের দৃষ্টিকোণও বদলে দিয়েছে। বাংলাদেশে যেমন, তেমনি নিকট অতীতে তিউনিসিয়া, মিসর, ইয়েমেন, সুদান, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশেই গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছে। এতে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পাশাপাশি দেখা দিয়েছিল অস্থিরতাও। পরে এসব দেশের কোনো কোনোটিতে নির্বাচন হয়েছে। স্থিতি পেয়েছে অনেক দেশ। এখন প্রশ্ন হলো, চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা পেরিয়ে বাংলাদেশ কি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে স্থিতিময় ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হবে?

বিশ্বে যেসব দেশে গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছিল, নির্বাচনের আগে-পরে কেমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল তারা? ইতিহাসের দিকে তাকালেই এ প্রশ্নের উত্তর যেমন মিলবে, একইভাবে সেসব দেশের সেই সময়কার রাজনৈতিক বাস্তবতাও বোঝা যাবে। এমনকি তখনকার কোনো কোনো দেশের পরিস্থিতি বর্তমান বাংলাদেশের সঙ্গে বহু অংশে মিলেও যেতে পারে।

ইন্দোনেশিয়া (১৯৯৮)

৩২ বছর ধরে একনায়কতান্ত্রিকভাবে ইন্দোনেশিয়া শাসন করেন মোহাম্মাদ সুহার্তো। তাঁর শাসনামলে ব্যাপক দুর্নীতি, দমননীতি আর অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়। ১৯৯৮ সালের জানুয়ারিতে এর বিরুদ্ধে শুরু হয় ছাত্র আন্দোলন। মে মাসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় তিন ছাত্র। এই হত্যাকাণ্ড সুহার্তোর শাসনের বিরুদ্ধে সারাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয়। এ অবস্থায় সেনাবাহিনীর ভেতরে বিভাজন দেখা দেয় এবং অনেক ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা সুহার্তোর ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেন। অতঃপর তীব্র গণ-আন্দোলনের চাপের মুখে ১৯৯৮ সালে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি।

ইন্দোনেশিয়া ১৩ মে, ১৯৯৮। সংগৃহীত ছবি
ইন্দোনেশিয়া ১৩ মে, ১৯৯৮। সংগৃহীত ছবি

নির্বাচনের আগের পরিস্থিতি

সুহার্তোর পদত্যাগের পর তৎকালীন উপ-প্রেসিডেন্ট বিজে হাবিবি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন। এ সময় একাধিক বড় শহরে সহিংসতা দেখা দেয়। বিশেষ করে জাতিগত দাঙ্গা ও সামরিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক থাকলেও পরিবর্তন শুরু হয় ধীরে ধীরে। এ সময় যেমন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বাড়ে, তেমনি নতুন রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি সংস্কার আনা হয় নির্বাচনী ব্যবস্থায়।

নির্বাচন

সরকার পতনের এক বছর পর ১৯৯৯ সালের ৭ জুন ইন্দোনেশিয়ায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর এ নির্বাচনের মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হয় দেশটি। দীর্ঘ স্বৈরশাসনের পর এই নির্বাচন প্রথমবারের মতো হয় প্রতিযোগিতামূলক। প্রায় ৪৮টি রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নেয়। ভোটার উপস্থিতি ছিল প্রায় ৯০ শতাংশ। সুহার্তোর পতনের পর নিয়মিত নির্বাচন এবং ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়ায় ধাপে ধাপে গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুত হয়েছে।

মিসরে ১৯৮১ সাল থেকে স্বৈরশাসক হিসেবে ক্ষমতায় ছিলেন হোসনি মুবারক। ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে দমন-পীড়ন, দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও পুলিশের নৃশংসতার বিরুদ্ধে দেশটিতে ব্যাপক গণ-আন্দোলনের সূচনা ঘটে।

নেপাল (২০০৬)

নেপালের রাজা জ্ঞানেন্দ্র ২০০৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সংসদ ভেঙে সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও সাধারণ মানুষের গণ-আন্দোলন শুরু হয়, যার মূল দাবি ছিল গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও মাওবাদীদের সঙ্গে শান্তি স্থাপন। নেপালের সাতটি প্রধান রাজনৈতিক দল ‘সেভেন পার্টি অ্যালায়েন্স’ নামে একজোট হয়। দলে দলে রাস্তায় নেমে আসে মানুষ, কারফিউ ভেঙে তারা প্রতিবাদ করে এবং রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। দেশের প্রধান শহরগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এরপর দীর্ঘ আন্দোলনের চাপে পড়ে রাজা জ্ঞানেন্দ্র ২০০৬ সালের ২৪ এপ্রিল সংসদ পুনর্বহাল করতে বাধ্য হন।

এরপর গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্বে ছিলেন গিরিজা প্রসাদ কৈরালা। একই সময়ে দশ বছরের রক্তক্ষয়ী মাওবাদী গেরিলা যুদ্ধের পর মাওবাদীরা অস্ত্র ত্যাগ করে মূলধারার রাজনীতিতে যোগ দিতে রাজি হয়। ২১ নভেম্বর ২০০৬ সালে মাওবাদী নেতৃবৃন্দ ও সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তি।

২০০৬ সালে রাজা জ্ঞানেন্দ্রের পতন হয় নেপালে। ছবি: উইকিপিডিয়া
২০০৬ সালে রাজা জ্ঞানেন্দ্রের পতন হয় নেপালে। ছবি: উইকিপিডিয়া

নির্বাচনের আগের পরিস্থিতি

এই সময়কালে রাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়েও বড় প্রশ্ন উঠতে থাকে। জনগণের মধ্যে তীব্র হয়ে ওঠে রাজবিরোধী মনোভাব। রাজা জ্ঞানেন্দ্র ধীরে ধীরে নির্বাসিত রাজনীতিক হয়ে পড়েন। অন্তর্বর্তী সংসদে রাজতন্ত্র বিলুপ্তির ব্যাপারে নীতিগতভাবে একমত হয় অধিকাংশ দল। একাধিক বোমা বিস্ফোরণ ও সহিংস ঘটনার মধ্যেও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল সত্যিকারের গণতন্ত্রের।

এ বাস্তবতায় প্রস্তুতি শুরু হয় সংবিধানসভা নির্বাচনের, যার প্রধান লক্ষ্য ছিল একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান রচনা এবং রাজতন্ত্র থাকবে কি না, তা চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ। দেশজুড়ে রাজনৈতিক সভা, প্রচারণা ও নাগরিক অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে। এই সময় মাওবাদীরা প্রথমবারের মতো সরাসরি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে।

নির্বাচন

সরকার পতনের প্রায় দুই বছর পর ২০০৮ সালের ১০ এপ্রিল নতুন সংবিধান রচনা ও রাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য অনুষ্ঠিত হয় সংবিধানসভা নির্বাচন। এখানে মাওবাদীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। শুধু তা-ই নয়, এ সময় রাজতন্ত্রও বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রজাতন্ত্রে রূপ নেয় দেশটি। তবে এরপর দীর্ঘ সময় ধরে সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে একাধিকবার সরকারের পরিবর্তন ঘটে। ২০১৫ সালে নতুন সংবিধান গৃহীত হয়, যদিও সেটি দেশজুড়ে সৃষ্টি করে বিতর্ক। পরবর্তী বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে স্থানীয়, প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর এর মধ্য দিয়ে সংসদীয় প্রজাতন্ত্র হিসেবে একটি স্থিতিশীল কাঠামো অর্জনের চেষ্টা করে যাচ্ছে নেপাল।

সুদানে এখন পর্যন্ত কোনো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। বাশিরের পতনের পর সেনাবাহিনী প্রথমে এককভাবে ক্ষমতা নেয়। তবে জনগণ বেসামরিক শাসনের দাবি তুলেছিল। এ নিয়ে বিক্ষোভও হয়।

তিউনিসিয়া (২০১১)

প্রেসিডেন্ট জিনে আল আবিদিন বেন আলি ১৯৮৭ সাল থেকে তিউনিসিয়া শাসন করছিলেন। তাঁর শাসন ছিল স্বৈরতান্ত্রিক। তিউনিসিয়ায় তখন ব্যাপক দুর্নীতি, বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও রাজনৈতিক দমন-পীড়ন চলছিল। এই প্রেক্ষাপটে ২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর মোহাম্মদ বুয়াজিজি পুলিশি অপমানের প্রতিবাদে প্রকাশ্যে গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মাহুতি দেন। বুয়াজিজির আত্মাহুতির পর রাস্তায় নেমে আসে হাজারো মানুষ। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয় তরুণেরা, বিশেষত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও শ্রমজীবী মানুষ। সরকারবিরোধী স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে রাজধানী তিউনিস থেকে শুরু করে অন্য সব প্রদেশ। জনতার এ অবিরাম চাপের মুখে পুলিশ গুলি চালায়, বহু মানুষ নিহত হয়। তবে তাতেও আন্দোলন থামেনি। প্রেসিডেন্ট বেন আলি কড়া দমন-পীড়ন চালানোর চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি দেশ ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

তিউনিসিয়ায় গণ-অভ্যুত্থানে রাস্তায় নেমে আসে মানুষ। ছবি: আল-জাজিরা
তিউনিসিয়ায় গণ-অভ্যুত্থানে রাস্তায় নেমে আসে মানুষ। ছবি: আল-জাজিরা

নির্বাচনের আগের পরিস্থিতি

বেন আলির পতনের পর তিউনিসিয়ায় এক ধরনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিল। অন্তর্বর্তী সরকারে পুরোনো প্রশাসনের লোকজন থাকায় জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা ছিল। মাঝেমধ্যে বিক্ষোভ হলেও বড় ধরনের সহিংসতা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলো সংগঠিত হতে শুরু করে। বিশেষত ইসলামপন্থী ও উদার বামপন্থীদের দেখা দেয় মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য। তবু পরিস্থিতি মোটামুটি শান্ত ছিল।

নির্বাচন

সরকার পতনের ৯ মাস পর ২০১১ সালের ২৩ অক্টোবর নতুন সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে সংবিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ইসলামপন্থী এননাহদা পার্টি জয়লাভ করে। নতুন সংবিধান প্রণয়নে কাজ শুরু করে তারা। তবে রাজনৈতিক বিভাজন ও ধারাবাহিক বিক্ষোভ চলতেই থাকে। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী হত্যাকাণ্ড এবং নানা রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশজুড়ে বেড়ে যায় সহিংসতা। ২০১৪ সালে তিউনিসিয়া প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট ও সংসদীয় নির্বাচন সম্পন্ন করে। গণতান্ত্রিক পথে এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

মিসর (২০১১)

মিসরে ১৯৮১ সাল থেকে স্বৈরশাসক হিসেবে ক্ষমতায় ছিলেন হোসনি মুবারক। ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে দমন-পীড়ন, দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও পুলিশের নৃশংসতার বিরুদ্ধে দেশটিতে ব্যাপক গণ-আন্দোলনের সূচনা ঘটে। প্রতিবাদের শুরু থেকেই নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর হাতে দমনের চেষ্টা করে আন্দোলনকারীদের। গুলিবর্ষণ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া আর সংঘর্ষে নিহত ও আহত হন বহু মানুষ। এ সময় জনগণ ও আন্তর্জাতিক সমর্থনের কারণে আন্দোলন অব্যাহত থাকে। আন্দোলনটি চলে টানা ১৮ দিন। অবশেষে ১১ ফেব্রুয়ারি হোসনি মুবারক পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর মিসরের সামরিক বাহিনী দেশটির শাসনভার গ্রহণ করে।

টানা ১৮ দিনের আন্দোলনে মিশরে পতন হয় হোসনি মুবারকের। ছবি: ওয়াশিংটন ইন্সটিটিউট
টানা ১৮ দিনের আন্দোলনে মিশরে পতন হয় হোসনি মুবারকের। ছবি: ওয়াশিংটন ইন্সটিটিউট

নির্বাচনের আগের পরিস্থিতি

মুবারকের পদত্যাগের পর দেশটি পরিচালনা করে সেনাবাহিনী। কিন্তু জনগণের মধ্যে ছিল সেনাশাসন নিয়ে ভীষণ উদ্বেগ। ফলে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে ফের বিক্ষোভ শুরু হয়। দেখা দেয় সহিংসতা ও সংঘর্ষ। এ সময় রাজনৈতিক দলগুলোকে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হলেও ইসলামী দল মুসলিম ব্রাদারহুড ঘিরে বিভাজন বাড়তে থাকে। স্পষ্ট হয় সেনা ও জনগণের দ্বন্দ্ব। সব মিলিয়ে মসরে গড়ে ওঠে এক অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশ।

নির্বাচন

সরকার পতনের এক বছর চার মাস পর ২০১২ সালের ১৬-১৭ জুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ মুরসি জয়ী হন। তিনি ছিলেন মিসরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। তাঁর শাসনকালে নীল নদখ্যাত এ দেশ রাজনৈতিকভাবে ভীষণ দোলাচলে ছিল। ধর্মীয় দল ও বেসামরিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংঘাত, অর্থনৈতিক সংকট আর বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে মুরসিতে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। সামরিক-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। এরপর থেকে মিসরে আবারও শুরু হয় সেনাশাসন। সামরিক শাসনের অধীনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে দেশটি বিভিন্ন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

ইয়েমেন (২০১১)

ইয়েমেনে আলী আবদুল্লাহ সালেহ ১৯৭৮ সাল থেকে ক্ষমতায় ছিলেন। দীর্ঘ শাসনকালে তাঁর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, ব্যাপক দুর্নীতি, বেকারত্ব ও সংখ্যালঘুদের দমনের অভিযোগ ছিল। ২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ ইয়েমেনেও পৌঁছলে সেখানে সালেহবিরোধী গণ-আন্দোলন শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। দ্রুত শক্তিশালী হয় আন্দোলন। কিন্তু সরকারের কঠোর দমন-পীড়ন, সহিংসতা আর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় বহু বিক্ষোভকারী। আন্দোলনের তীব্রতায় ইয়েমেন ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতায় ডুবে যায়। অবশেষে টানা চাপের মুখে সালেহ ২০১১ সালের ২৩ নভেম্বর ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, যা দেশটির অন্তর্বর্তী সরকার গঠন আর ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ প্রশস্ত করে।

২০১১ সালে ইয়েমেনে সালেহবিরোধী আন্দোলন। ছবি: সংগৃহীত
২০১১ সালে ইয়েমেনে সালেহবিরোধী আন্দোলন। ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনের আগের পরিস্থিতি

সালেহের পদত্যাগের পরেও ইয়েমেনে পরিস্থিতি ছিল খুব অস্থির। হুতি বিদ্রোহ আর দক্ষিণপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা একাধিক স্থানে সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছিল। নির্বাচনের আগে ও পরেও দেশের অনেক অঞ্চলে নিয়মিত বিক্ষোভ, সন্ত্রাসী হামলা ও সংঘর্ষ চলতে থাকে। মানসুর হাদির একক প্রার্থিতার নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে দেখা দেয় হতাশা ও আস্থাহীনতা। তাই নির্বাচন হলেও দেশটি শান্তি ও গণতন্ত্রের দিকে পুরোপুরি অগ্রসর হতে পারেনি।

নির্বাচন

সালেহের ক্ষমতা হস্তান্তর চুক্তির প্রায় তিন মাস পর ২০১২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মানসুর আবদুর রব হাদি একমাত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

দীর্ঘ রাজনৈতিক সংকট ও বিশৃঙ্খলার পর এ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন একটি নেতৃত্বের অধীনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ইয়েমেন। তবে পরবর্তী বছরগুলোয় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। ফলে নির্বাচন ও ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর বিঘ্নিত হয় বারবার। বর্তমানে এখানে নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রায় অচল অবস্থায় রয়েছে। বিভিন্ন কারণে নিয়মিত নির্বাচনের আয়োজন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শুরু থেকেই নির্বাচন দাবি করে আসছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি।

সুদান (২০১৯)

ওমর আল-বাশির প্রায় ৩০ বছর (১৯৮৯–২০১৯) ধরে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে সুদান শাসন করেন। তাঁর সরকারের মূল্যস্ফীতি, দুর্নীতি ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভ শুরু হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে গণ-আন্দোলন। তরুণ প্রজন্ম, নারী সমাজ ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের সমর্থনে আন্দোলনটি দিন দিন বিস্তৃত হতে থাকে। এখানে বিক্ষোভকারীরা শুধু অর্থনৈতিক সমস্যার প্রতিবাদ করেনি, বরং বাশির সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক শাসন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দাবি তুলেছিল।

সরকার প্রথমে কঠোর দমননীতি অবলম্বন করলেও আন্দোলন থামানো যায়নি। বিক্ষোভ চলাকালে বহু বিক্ষোভকারী নিহত ও আহত হন। এতে জনগণের প্রতিবাদ আরও তীব্র হয়। সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনী নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। অবশেষে ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল সেনাবাহিনী বাশিরকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় তারা।

সুদানের আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মত। ছবি: নিউইয়র্ক টাইমস
সুদানের আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মত। ছবি: নিউইয়র্ক টাইমস

বর্তমান পরিস্থিতি

সুদানে এখন পর্যন্ত কোনো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। বাশিরের পতনের পর সেনাবাহিনী প্রথমে এককভাবে ক্ষমতা নেয়। তবে জনগণ বেসামরিক শাসনের দাবি তুলেছিল। এ নিয়ে বিক্ষোভও হয়। ২০১৯ সালের ৩ জুন সেনাবাহিনী হামলা চালায় বিক্ষোভকারীদের ওপর। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরে একই বছরের আগস্টে সমঝোতার ভিত্তিতে গঠিত হয় সেনা-বেসামরিক অন্তর্বর্তী সরকার। এরপরও ক্ষমতা ভাগাভাগিতে নানা সময়ই এখানে সমস্যা দেখা গেছে।

২০২১ সালে সুদানে আবারও সেনা অভ্যুত্থান হয়। এ সময় বেসামরিক নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। এরপর থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা বেড়ে চলেছে দেশটিতে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আধাসামরিক সংগঠন আরএসএফের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধ এখনো চলছে।

নির্বাচন

বাশিরের পতনের পর সেনা ও বেসামরিক প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার বা অন্তর্বর্তী শাসন পরিষদ গঠিত হয়। এ সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল দীর্ঘদিনের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের পর সুদানের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন নিশ্চিত করা। আন্দোলনের নেতারা দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানালেও সামরিক পক্ষ ছিল নির্বাচন স্থগিত বা বিলম্বের পক্ষে। ফলে আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও এখনো এ দেশে কোনো স্থায়ী শান্তি বা নির্বাচন সম্ভব হয়নি।

শ্রীলঙ্কা (২০২২)

প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও তাঁর পরিবার দীর্ঘ সময় ধরে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে প্রভাবশালী ছিলেন। তবে ২০২২ সালের শুরুতে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জ্বালানি ঘাটতির কারণে জনগণের মধ্যে যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়, সে ধারাবাহিকতায় একসময় রাস্তায় নামে তারা। শিক্ষার্থী, কর্মজীবী, ব্যবসায়ী, কৃষক—সবাই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শুরুতে বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ। তবে কিছু কিছু এলাকায় সংঘর্ষ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলন-বিক্ষেোভের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবি।

অবশেষে ২০২২ সালের ১৩ জুলাই প্রচণ্ড জন-আন্দোলনের চাপ সামলাতে না পেরে রাজাপাকসে পদত্যাগ করেন। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার মতো তিনিও বিদেশে পালিয়ে যান।

শ্রীলংকায় আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে জনতার সংঘর্ষ। ছবি: হিউম্যান রাইট ওয়াচ
শ্রীলংকায় আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে জনতার সংঘর্ষ। ছবি: হিউম্যান রাইট ওয়াচ

নির্বাচনের আগের পরিস্থিতি

গোতাবায়ার পদত্যাগের পর বিক্ষোভ কিছুটা কমলেও ছিল অর্থনৈতিক সংকট। খাদ্য, জ্বালানি ও বিদ্যুতের ঘাটতি চলছিল। প্রশাসনিক ব্যর্থতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও জনবিচ্ছিন্নতায় চরম অস্থিরতার মধ্যে ছিল পুরো দেশ।

নির্বাচন

রাজাপাকসের পদত্যাগের এক সপ্তাহের মধ্যে শ্রীলঙ্কার সংসদে ভোটাভুটির মাধ্যমে রণিল বিক্রমাসিংহে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এরপর থেকে অর্থনৈতিক সংকট ও সামাজিক অস্থিরতা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও দেশব্যাপী স্থিরতা পুরোপুরি আসেনি। তবে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকের বিজয় দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নতুন আশা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও তাঁর পরিবার দীর্ঘ সময় ধরে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে প্রভাবশালী ছিলেন। তবে ২০২২ সালের শুরুতে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জ্বালানি ঘাটতির কারণে জনগণের মধ্যে যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়, সে ধারাবাহিকতায় একসময় রাস্তায় নামে তারা।

বাংলাদেশ (১৯৯০)

১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ দুইবার স্বৈরশাসনের মুখোমুখি হয়েছে। একবার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে, আরেকবার শেখ হাসিনার শাসনকালে।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। দীর্ঘসময় ধরে স্বৈরশাসন চালান তিনি। তাঁর শাসনামলে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, দুর্নীতি ও নির্বাচনী অনিয়ম বেড়ে যায়। এসব কারণে জনগণের মধ্যে তৈরি হয় ব্যাপক ক্ষোভ। ক্রমাগত বিক্ষোভ, ছাত্র আন্দোলন ও বিরোধী দলগুলোর চাপের মুখে অবশেষে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগে বাধ্য হন এরশাদ।

বাংলাদেশে ১৯৯০ সালে পতন হয় স্বৈরাচার এরশাদের। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে ১৯৯০ সালে পতন হয় স্বৈরাচার এরশাদের। ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনের আগের পরিস্থিতি

এরশাদের পতনের পর গঠিত হয় একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তখন দেশের পরিস্থিতি ছিল তুলনামূলকভাবে শান্ত। রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয় এবং জনগণের মধ্যেও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের আশাবাদ তৈরি হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, এই সময় সরকার বা সেনাবাহিনী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেনি।

নির্বাচন

সরকার পতনের ঠিক ২ মাস ২১ দিন পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। এরপর থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে শেখ হাসিনার শাসনকালে যেসব নির্বাচন হয়েছে, তাতে ব্যাপকভাবে কারচুপি করা হয়েছে। ফলে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে নানা বিতর্ক, বিরোধ ও জন-অসন্তোস হাসিনা সরকারের সময় বারবার মাথাচাঁড়া দিয়েছে।

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর নির্বাচন পরিস্থিতি

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শুরু থেকেই নির্বাচন দাবি করে আসছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি।

অবশেষে গেল ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাব, যেন নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।’

জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

ইউনূসের এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। তবে জামায়াত বলেছে, সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের ঘোষণা বিশ্বাসঘাতকতা। আর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি বলেছে, নির্বাচনের সময় ঘোষণা নিয়ে তাদের আপত্তি নেই। তবে নির্বাচনের আগে সংস্কারকে দৃশ্যমান করা ও সংস্কার বাস্তবায়ন করা এ সরকারের অবশ্য কর্তব্য।

এমন পরিস্থিতিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে বলেছেন, রমজানের আগে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে নির্বাচন করার জন্য আমাদের চিঠি দেবেন। আমরা প্রত্যাশা করি, চিঠিটা দ্রুত পেয়ে যাব।’

বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, বিভিন্ন দেশে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নির্বাচনের আগে নানাভাবে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল। আবার কোথাও কোথাও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের নজিরও রয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কী ঘটবে, তা সময়ই বলে দেবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত