leadT1ad

হাসিনার শ্রমিকবিরোধী মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন ৪৮ হাজার শ্রমিক

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০: ২৭
হাসিনার শ্রমিকবিরোধী মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন ৪৮ হাজার শ্রমিক। স্ট্রিম গ্রাফিক

আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ আট বছরে শ্রমিকনেতা ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রায় সব মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে মোট ৪৭ হাজার ৭ শ ২৮ জন অভিযুক্ত এবং অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন।

তবে শ্রমিক হত্যার অভিযোগে গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানায় করা একটি মামলা এখনো প্রত্যাহার হয়নি। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

মামলাগুলো করেছে পুলিশ, মালিকপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে কারখানা বা কোম্পানির নিরাপত্তা কর্মকর্তা, মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা, নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আইন উপদেষ্টা এবং গাড়িচালকরা। অধিকাংশ মামলায় অভিযোগ ছিল বেআইনি সমাবেশ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা হামলার মতো ঘটনা। মূলত তৈরি পোশাক কারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে আন্দোলনের সূত্রেই এসব মামলা করা হয়েছিল।

সদ্য অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়া শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘মামলাগুলো প্রত্যাহারের ব্যাপারে আমরা শুরু থেকেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। জেনেভায় আইএলওর প্রধান কার্যালয়ে গিয়েও আমরা বিষয়টি জানিয়েছিলাম। আর এখন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশে নেমে আসার ক্ষেত্রে—অন্যান্য কারণের পাশাপাশি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তও ভূমিকা রেখেছে বলে আমি মনে করি।’

আমার নামে দুটি মামলা ছিল। আসলে আমি ফেডারেশনের নেতা হিসেবে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর কারণেই এসব মামলা দেওয়া হয়েছিল। বাবুল আক্তার, সভাপতি, বাংলাদেশ মুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়ন ফেডারেশন

যেভাবে মামলা প্রত্যাহার হলো

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শ্রমিকনেতা ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো প্রত্যাহারের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে বাংলাদেশ মুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়ন ফেডারেশন। সংগঠনটি মজুরি, কর্মপরিবেশ ও বিভিন্ন আইনি বিষয়ে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এবং এটি আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের (আইটিইউসি) সদস্য।

এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ২৮ নভেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ পাঠানো হয়। তবে জননিরাপত্তা বিভাগ এ বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

পরে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। বৈঠকে তিনি রাজনৈতিক কারণে হওয়া শ্রমিক ও শ্রমিকনেতাদের মামলাগুলো প্রত্যাহারের ওপর গুরুত্ব দেন। এর পর থেকেই প্রক্রিয়াটি গতি পায় বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পর স্বরাষ্ট্র, আইন এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের যৌথ বৈঠকে মামলাগুলো প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়।

বাংলাদেশ মুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আক্তার স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমার নামে দুটি মামলা ছিল। আসলে আমি ফেডারেশনের নেতা হিসেবে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর কারণেই এসব মামলা দেওয়া হয়েছিল।’

বাবুল আক্তার আরও জানান, ওই সময়ে দুই কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়া চলছিল। শ্রমিকরা ইউনিয়ন করতে চাইছিল তখন বাবুল আক্তার তাঁদের তাদের সহযোগিতা করেন। তাঁর মতে, সেই কারণেই শ্রমিকদের সঙ্গে তাঁকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি মামলা করে মালিকপক্ষ। দ্বিতীয় মামলাটিও প্রথাগতভাবে চলছিল, তবে সেখানে কোনো সাক্ষী ছিল না, কোনো প্রমাণও ছিল না। ফলে সেটি আদালতেই বাতিল হয়ে যেত। সরকার থেকেও মামলাগুলো প্রত্যাহারের বিষয়ে নির্দেশনা ছিল, না হলে হয়তো বছরখানেক সময় লাগত।

বাবুল আক্তার আরও বলেন, ‘আমি এটিকে অবশ্যই ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখি। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এই মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে।’

মালিকেরা তখনই মামলা করেন, যখন ফৌজদারি অপরাধ ঘটে। শ্রম আইন ভাঙার জন্য কোনো মালিক মামলা করেন না। তারপরও সরকারের অনুরোধে এবং দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে মালিকেরা মামলাগুলো প্রত্যাহার করেছেন। মাহমুদ হাসান খান, সভাপতি, বিজিএমইএ

মালিক-পুলিশের মামলায় ভরেছে শ্রমিকদের নাম, অবশেষে অব্যাহতি

২০২১ সালের ৬ আগস্ট গাজীপুরের টঙ্গী পশ্চিম থানায় করা এক মামলায় বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তারকে ১ নম্বর আসামি করা হয়। মামলাটি করেছিলেন তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) এ এস জামালউদ্দিন চৌধুরী।

সাত হাজার শ্রমিককে আসামি করা একটি মামলার বাদী ছিলেন কোনাবাড়ী থানার তৎকালীন এসআই সানির হাসান খান, যিনি বর্তমানে কক্সবাজারে কর্মরত। এত বিপুলসংখ্যক শ্রমিককে আসামি করার কারণ জানতে চেয়ে কয়েকবার কল দেওয়া হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান মামলা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে বলেন, ‘মালিকেরা তখনই মামলা করেন, যখন ফৌজদারি অপরাধ ঘটে। শ্রম আইন ভাঙার জন্য কোনো মালিক মামলা করেন না। তারপরও সরকারের অনুরোধে এবং দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে মালিকেরা মামলাগুলো প্রত্যাহার করেছেন।’

উল্লেখ্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে দায়ের হওয়া ৪৫ মামলার মধ্যে একটিমাত্র মামলাই এখন চলমান আছে। শ্রমিক হত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলাটি ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর কোনাবাড়ী থানায় অনন্ত গ্রুপের কারখানা এ বি এম ফ্যাশন কর্তৃপক্ষ করে। এর আগের দিন সন্ধ্যায় বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রির মৃত্যু হয়েছিল। এ মামলায় ৯ শ্রমিক এবং অজ্ঞাতনামা ৮০০ জন আসামি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আক্তার বলেন, ‘সব মামলা রাজনৈতিক ছিল না। অধিকার আদায়ের আন্দোলনের কারণেও আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। এসব মামলা প্রত্যাহারে বর্তমান সরকারের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। রাজনৈতিক সরকারের পক্ষে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন ছিল।’

Ad 300x250

ডাকসু নির্বাচনে নারীবিদ্বেষী সাইবার বুলিং: নারীর আত্মবিশ্বাসে আঘাত

বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি বন্ধে কাজ করবে ইউজিসি ও ইউএন উইমেন

হাসিনা-ঘনিষ্ঠদের পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণ: তিনটি রাজি, দুটি সময় চাইছে

স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য: নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকব না

কেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ এক হলো

সম্পর্কিত