সজল মিত্র রিচার্ড
এশিয়া কাপ নামের যে ক্রিকেট-অঙ্গন, তার ইতিহাসের প্রতিটি পৃষ্ঠা যেন ভারত নামের মহাদেশের রঙে রাঙানো। শুরু থেকেই এই প্রতিযোগিতা যেন ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্য নির্ধারিত মঞ্চ, যেখানে তারা নিজেদের ব্যাট-বলের সিম্ফনি বাজিয়ে এশিয়ার অন্য সব শক্তিকে স্মরণ করিয়ে দেয়, শ্রেষ্ঠত্ব মানেই ভারত। শারজাহর মরুভূমি থেকে শুরু হওয়া এই যাত্রায় চার দশক পেরিয়ে গেছে। তবে সময় বদলেছে, প্রজন্ম বদলেছে, প্রতিদ্বন্দ্বীরা পাল্টেছে, কিন্তু এক জিনিস অপরিবর্তিত থেকেছে—ভারতের আধিপত্য।
যদি এশিয়ান ক্রিকেটকে ধরা হয় ক্রীড়া বাণিজ্যের এক মহাকাব্য, তবে এশিয়া কাপ হলো সেই মহাকাব্যের শ্রেষ্ঠ অধ্যায়, আর ভারত হলো তার অমোঘ প্রধান চরিত্র। প্রতিবারই ভারত আসে, মাঠে নামে, এবং গৌরবের সোনালি ট্রফি তুলে নেয়। এশিয়ার অন্য সব দেশ সেই গৌরবের আলোর চারপাশে ঘুরে বেড়ানো গ্রহ, আর ভারতীয় ক্রিকেট দল যেন সেই দেদীপ্যমান সূর্য, যার দীপ্তি ছড়িয়ে যায় সবখানে।
পরিসংখ্যান এখানে কেবল সংখ্যা নয়, একেকটি কবিতার পঙ্ক্তি। ১৫ বার অংশগ্রহণ করে ৯ বার শিরোপা জেতা, ১২ বার ফাইনালে পা রাখা। এ কেবল রেকর্ড নয়, বরং দৃঢ় পদচিহ্ন, যা মুছে ফেলা অসম্ভব। শ্রীলংকা ১৬ বার অংশ নিয়েও ৬ বার সাফল্য পেয়েছে। পাকিস্তান ভারতীয়দের বিপক্ষে রাইভ্যালরির পতাকা হাতে প্রতিবার মাঠে নামে, অথচ ১৫ বার অংশ নিয়ে মাত্র ২ বার ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছে তারা। বাংলাদেশ সমানসংখ্যকবার অংশ নিয়ে তিনবার ফাইনালে পৌঁছালেও প্রতিবারই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে তাদের। এই অঙ্কগুলো আসলে ইতিহাসের অনিবার্য সত্য। ভারত ছাড়া এশিয়া কাপের কোনো পূর্ণতা নেই।
প্রতিবারই ভারত দল মাঠে নামে এক অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস নিয়ে। প্রতিপক্ষের চোখে তারা হলো দৈত্যাকার কোনো শক্তি, যাকে পরাজিত করা মানে কেবল ম্যাচ জেতা নয়, বরং ইতিহাস বদলে ফেলা। পাকিস্তানের সঙ্গে যাদের দ্বন্দ্ব একসময় বিশ্বের সবচেয়ে উত্তেজনাকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে ধরা হতো, তারাও আজ ভারতের সামনে হার মানতে অভ্যস্ত। একই আসরে তিনবার দেখা হয়ে প্রতিবারই পরাজয়ের তিক্ততা। এমন কাহিনি এশিয়া কাপের পাতায় বারবার লেখা হয়েছে পাকিস্তানের জন্য। ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের সেই উক্তি, ‘ভারত-পাকিস্তান রাইভ্যালরি বলতে আর কিছু নেই।’ এই আসরেই সত্য প্রমাণিত হয়েছে।
ভারতের জয়গাথা কেবল পরিসংখ্যান বা সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি আসলে এক শিল্প, এক সংগীত। তাদের ব্যাটিং লাইনআপ যেন একেকটি সুরেলা যন্ত্র। ওপেনিংয়ে অভিষেক শর্মার ব্যাট হাতে ঝড় তোলার দৃশ্য যেন প্রলয়ঙ্করী বজ্রপাতের মতো। পাওয়ার প্লের প্রথম ছক্কাই প্রতিপক্ষের হৃদয়ে ত্রাস ছড়িয়ে দেয়। যখন মধ্যক্রমে নামেন তিলক, দুবে বা স্যামসন, তখন ব্যাটের প্রতিটি আঘাত যেন নিখুঁত শিল্পকর্মের আঁচড়। দর্শক গ্যালারিতে প্রতিটি চার, প্রতিটি ছক্কার সঙ্গে সঙ্গে আবেগের ঢেউ ওঠে। আর ম্যাচ যখন শেষের দিকে পৌঁছায়, তখন হার্দিক পান্ডিয়া কিংবা অক্ষর প্যাটেল ব্যাট হাতে নেমে খেলা ঘুরিয়ে দেওয়ার মায়াজাল ছড়ান। এই লোয়ার অর্ডার ভারতের মূল শক্তি। যেখানে অন্য দল ভেঙে পড়ে, সেখানে ভারত দাঁড়িয়ে যায় নতুন করে, আরও শক্তভাবে।
কিন্তু ভারতকে কেবল ব্যাটিংয়ের দল বলা হলে তা হবে এক ভয়ংকর অবিচার। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে আধুনিক ক্রিকেটের সূচনালগ্নে যে দলকে বলা হতো ব্যাটিং-নির্ভর দল, সেই বিশেষনীয় সীমাবদ্ধতার বেড়াজাল থেকে বাইরে বের হয়েছে তারা। বল হাতেও তাদের যে দাপট, তা যেন আকাশে বজ্রপাতের মতো আকস্মিক ও বিধ্বংসী। বুমরাহর আগুনে ডেলিভারি প্রতিবারই প্রতিপক্ষের উইকেটে শেষ ঘণ্টা বাজিয়ে দেয়। তার বোলিং মানেই যেন মৃত্যুদণ্ডের ঘোষণাপত্র। কুলদীপ যাদবের কব্জির ঘূর্ণি ব্যাটসম্যানদের ঘোরের মধ্যে ফেলে দেয়। কোন বল ভেতরে ঢুকছে, কোনটি বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে, তা বোঝার আগেই উইকেট খসে পড়ে। বরুণ চক্রবর্তীর রহস্যময় ডেলিভারি যেন অন্ধকারে অদৃশ্য এক ছুরিকাঘাত, যা প্রতিপক্ষকে হঠাৎ করে মাটিতে ফেলে দেয়।
শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ—সবাই চেষ্টা করেছে ভারতীয় এই ব্যাট-বলের সিম্ফনি ভাঙতে। কিন্তু শেষ দৃশ্যটি সবসময় একই থাকে। শ্রীলংকা কয়েকবার জিতলেও ভারতই তাদের সামনে দাঁড়িয়েছে অদম্য প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে। বাংলাদেশের জন্য ভারত হলো সেই স্বপ্নভঙ্গের প্রতীক। ৩ বার ফাইনালে গিয়েও ২ বার ট্রফি হাতছাড়া হয়েছে ভারতের কাছে। হয়তো বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের চোখে ভারত হলো সেই দুরন্ত স্বপ্ন, যাকে ছুঁতে গেলেই ধরা দেয় না, আরও দূরে সরে যায়।
ভারতের প্রতিটি জয় যেন ইতিহাসের নতুন পৃষ্ঠা। তাদের ধারাবাহিকতা বিস্ময়কর। একের পর এক আসরে তারা কেবল ম্যাচ জেতেনি, তারা ম্যাচ শাসন করেছে। প্রতিটি মুহূর্তে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। প্রতিপক্ষ যখন ভাবছে, এবার হয়তো সুযোগ আছে, ঠিক তখনই ভারতীয়রা জ্বলে উঠেছে আরও উজ্জ্বলভাবে। তাদের খেলার ভঙ্গি যেন এক মহাকাব্যের নায়কের মতো। অপরাজেয়, অদম্য।
এই সাফল্যের মূলে রয়েছে তাদের দলের গভীরতা, ঐক্য আর সংস্কৃতি। ভারতীয় ক্রিকেট মানেই কেবল মাঠের লড়াই নয়, এটি একটি জাতির আত্মবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি। কোটি মানুষের স্বপ্ন, কোটি মানুষের বিশ্বাস তাদের প্রতিটি ব্যাট-বল স্পর্শে জড়িয়ে থাকে। হয়তো সেই কারণেই তারা প্রতিবার মাঠে নামে এমন এক আত্মবিশ্বাস নিয়ে, যা প্রতিপক্ষের কাছে ভয়ংকর হয়ে ওঠে।
এশিয়া কাপের প্রতিটি আসর তাই ভারতের জন্য নতুন করে মহাকাব্যের অধ্যায় রচনা করার মঞ্চ। ট্রফি হাতে দলের উদযাপন, জাতীয় পতাকা উড়িয়ে জয়ধ্বনি, আর সমর্থকদের উন্মাদনা। সব মিলিয়ে এটি হয়ে ওঠে এক মহোৎসব। ক্রিকেটে অনেক রকম বিশ্বমঞ্চ আছে, কিন্তু এশিয়া কাপে ভারতের গৌরব যেন অনন্য। এখানে তারা কেবল অংশ নেয় না, তারা আসে, দেখে, জয় করে।
এশিয়া কাপ মানেই ভারত। তাদের ছাড়া এই আসরের কল্পনা করা যায় না। তারা এসেছে দৈত্যাকার শক্তি হয়ে, প্রতি আসরে জয় তুলে নিয়েছে, আর বাকিদের মনে গেঁথে দিয়েছে এক অনিবার্য সত্য। এশিয়ার ক্রিকেটের সম্রাট কেবল ভারতই। সংখ্যার খাতায়, আবেগের খাতায়, কবিতার খাতায়! সব জায়গাতেই ভারত একচ্ছত্র সম্রাট।
ভারতীয় দাপুটে পারফরমেন্সের এই জায়গায় ফাইনালের মহারণ শেষে ট্রফি দেয়ার বিতর্ক, পাকিস্তানের ভারতীয়দের বিপক্ষে উদযাপনে যুদ্ধের প্রতীকী অঙ্গভঙ্গি কিংবা ভারতীয়দের মাঠের বাইরের কথার অহমিকা নেতিবাচক খবর হয়ে থাকলেও মাঠের আধিপত্যবাদে সবকিছুকেই পেছনে ফেলেছে ভারতীয় ক্রিকেটাররা।
শেষ পর্যন্ত বলা যায়, এশিয়া কাপের ইতিহাস হলো এক অনন্ত কাব্য, যেখানে ভারতের নাম লেখা আছে প্রথম পঙ্ক্তিতে, শেষ পঙ্ক্তিতে, মাঝের প্রতিটি ছত্রে। যতদিন ক্রিকেট বাঁচবে, যতদিন এশিয়া কাপ চলবে, ততদিন এই গৌরবগাথা নতুন করে লেখা হবে। প্রতিবারই যেন প্রমাণিত হয়ে চলেছে, এশিয়া কাপ মানেই ভারতীয়দের জয়গাথা, তাদের গর্ব, তাদের অদম্য শক্তির অক্ষয় প্রতীক।
এশিয়া কাপ নামের যে ক্রিকেট-অঙ্গন, তার ইতিহাসের প্রতিটি পৃষ্ঠা যেন ভারত নামের মহাদেশের রঙে রাঙানো। শুরু থেকেই এই প্রতিযোগিতা যেন ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্য নির্ধারিত মঞ্চ, যেখানে তারা নিজেদের ব্যাট-বলের সিম্ফনি বাজিয়ে এশিয়ার অন্য সব শক্তিকে স্মরণ করিয়ে দেয়, শ্রেষ্ঠত্ব মানেই ভারত। শারজাহর মরুভূমি থেকে শুরু হওয়া এই যাত্রায় চার দশক পেরিয়ে গেছে। তবে সময় বদলেছে, প্রজন্ম বদলেছে, প্রতিদ্বন্দ্বীরা পাল্টেছে, কিন্তু এক জিনিস অপরিবর্তিত থেকেছে—ভারতের আধিপত্য।
যদি এশিয়ান ক্রিকেটকে ধরা হয় ক্রীড়া বাণিজ্যের এক মহাকাব্য, তবে এশিয়া কাপ হলো সেই মহাকাব্যের শ্রেষ্ঠ অধ্যায়, আর ভারত হলো তার অমোঘ প্রধান চরিত্র। প্রতিবারই ভারত আসে, মাঠে নামে, এবং গৌরবের সোনালি ট্রফি তুলে নেয়। এশিয়ার অন্য সব দেশ সেই গৌরবের আলোর চারপাশে ঘুরে বেড়ানো গ্রহ, আর ভারতীয় ক্রিকেট দল যেন সেই দেদীপ্যমান সূর্য, যার দীপ্তি ছড়িয়ে যায় সবখানে।
পরিসংখ্যান এখানে কেবল সংখ্যা নয়, একেকটি কবিতার পঙ্ক্তি। ১৫ বার অংশগ্রহণ করে ৯ বার শিরোপা জেতা, ১২ বার ফাইনালে পা রাখা। এ কেবল রেকর্ড নয়, বরং দৃঢ় পদচিহ্ন, যা মুছে ফেলা অসম্ভব। শ্রীলংকা ১৬ বার অংশ নিয়েও ৬ বার সাফল্য পেয়েছে। পাকিস্তান ভারতীয়দের বিপক্ষে রাইভ্যালরির পতাকা হাতে প্রতিবার মাঠে নামে, অথচ ১৫ বার অংশ নিয়ে মাত্র ২ বার ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছে তারা। বাংলাদেশ সমানসংখ্যকবার অংশ নিয়ে তিনবার ফাইনালে পৌঁছালেও প্রতিবারই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে তাদের। এই অঙ্কগুলো আসলে ইতিহাসের অনিবার্য সত্য। ভারত ছাড়া এশিয়া কাপের কোনো পূর্ণতা নেই।
প্রতিবারই ভারত দল মাঠে নামে এক অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস নিয়ে। প্রতিপক্ষের চোখে তারা হলো দৈত্যাকার কোনো শক্তি, যাকে পরাজিত করা মানে কেবল ম্যাচ জেতা নয়, বরং ইতিহাস বদলে ফেলা। পাকিস্তানের সঙ্গে যাদের দ্বন্দ্ব একসময় বিশ্বের সবচেয়ে উত্তেজনাকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে ধরা হতো, তারাও আজ ভারতের সামনে হার মানতে অভ্যস্ত। একই আসরে তিনবার দেখা হয়ে প্রতিবারই পরাজয়ের তিক্ততা। এমন কাহিনি এশিয়া কাপের পাতায় বারবার লেখা হয়েছে পাকিস্তানের জন্য। ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের সেই উক্তি, ‘ভারত-পাকিস্তান রাইভ্যালরি বলতে আর কিছু নেই।’ এই আসরেই সত্য প্রমাণিত হয়েছে।
ভারতের জয়গাথা কেবল পরিসংখ্যান বা সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি আসলে এক শিল্প, এক সংগীত। তাদের ব্যাটিং লাইনআপ যেন একেকটি সুরেলা যন্ত্র। ওপেনিংয়ে অভিষেক শর্মার ব্যাট হাতে ঝড় তোলার দৃশ্য যেন প্রলয়ঙ্করী বজ্রপাতের মতো। পাওয়ার প্লের প্রথম ছক্কাই প্রতিপক্ষের হৃদয়ে ত্রাস ছড়িয়ে দেয়। যখন মধ্যক্রমে নামেন তিলক, দুবে বা স্যামসন, তখন ব্যাটের প্রতিটি আঘাত যেন নিখুঁত শিল্পকর্মের আঁচড়। দর্শক গ্যালারিতে প্রতিটি চার, প্রতিটি ছক্কার সঙ্গে সঙ্গে আবেগের ঢেউ ওঠে। আর ম্যাচ যখন শেষের দিকে পৌঁছায়, তখন হার্দিক পান্ডিয়া কিংবা অক্ষর প্যাটেল ব্যাট হাতে নেমে খেলা ঘুরিয়ে দেওয়ার মায়াজাল ছড়ান। এই লোয়ার অর্ডার ভারতের মূল শক্তি। যেখানে অন্য দল ভেঙে পড়ে, সেখানে ভারত দাঁড়িয়ে যায় নতুন করে, আরও শক্তভাবে।
কিন্তু ভারতকে কেবল ব্যাটিংয়ের দল বলা হলে তা হবে এক ভয়ংকর অবিচার। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে আধুনিক ক্রিকেটের সূচনালগ্নে যে দলকে বলা হতো ব্যাটিং-নির্ভর দল, সেই বিশেষনীয় সীমাবদ্ধতার বেড়াজাল থেকে বাইরে বের হয়েছে তারা। বল হাতেও তাদের যে দাপট, তা যেন আকাশে বজ্রপাতের মতো আকস্মিক ও বিধ্বংসী। বুমরাহর আগুনে ডেলিভারি প্রতিবারই প্রতিপক্ষের উইকেটে শেষ ঘণ্টা বাজিয়ে দেয়। তার বোলিং মানেই যেন মৃত্যুদণ্ডের ঘোষণাপত্র। কুলদীপ যাদবের কব্জির ঘূর্ণি ব্যাটসম্যানদের ঘোরের মধ্যে ফেলে দেয়। কোন বল ভেতরে ঢুকছে, কোনটি বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে, তা বোঝার আগেই উইকেট খসে পড়ে। বরুণ চক্রবর্তীর রহস্যময় ডেলিভারি যেন অন্ধকারে অদৃশ্য এক ছুরিকাঘাত, যা প্রতিপক্ষকে হঠাৎ করে মাটিতে ফেলে দেয়।
শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ—সবাই চেষ্টা করেছে ভারতীয় এই ব্যাট-বলের সিম্ফনি ভাঙতে। কিন্তু শেষ দৃশ্যটি সবসময় একই থাকে। শ্রীলংকা কয়েকবার জিতলেও ভারতই তাদের সামনে দাঁড়িয়েছে অদম্য প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে। বাংলাদেশের জন্য ভারত হলো সেই স্বপ্নভঙ্গের প্রতীক। ৩ বার ফাইনালে গিয়েও ২ বার ট্রফি হাতছাড়া হয়েছে ভারতের কাছে। হয়তো বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের চোখে ভারত হলো সেই দুরন্ত স্বপ্ন, যাকে ছুঁতে গেলেই ধরা দেয় না, আরও দূরে সরে যায়।
ভারতের প্রতিটি জয় যেন ইতিহাসের নতুন পৃষ্ঠা। তাদের ধারাবাহিকতা বিস্ময়কর। একের পর এক আসরে তারা কেবল ম্যাচ জেতেনি, তারা ম্যাচ শাসন করেছে। প্রতিটি মুহূর্তে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। প্রতিপক্ষ যখন ভাবছে, এবার হয়তো সুযোগ আছে, ঠিক তখনই ভারতীয়রা জ্বলে উঠেছে আরও উজ্জ্বলভাবে। তাদের খেলার ভঙ্গি যেন এক মহাকাব্যের নায়কের মতো। অপরাজেয়, অদম্য।
এই সাফল্যের মূলে রয়েছে তাদের দলের গভীরতা, ঐক্য আর সংস্কৃতি। ভারতীয় ক্রিকেট মানেই কেবল মাঠের লড়াই নয়, এটি একটি জাতির আত্মবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি। কোটি মানুষের স্বপ্ন, কোটি মানুষের বিশ্বাস তাদের প্রতিটি ব্যাট-বল স্পর্শে জড়িয়ে থাকে। হয়তো সেই কারণেই তারা প্রতিবার মাঠে নামে এমন এক আত্মবিশ্বাস নিয়ে, যা প্রতিপক্ষের কাছে ভয়ংকর হয়ে ওঠে।
এশিয়া কাপের প্রতিটি আসর তাই ভারতের জন্য নতুন করে মহাকাব্যের অধ্যায় রচনা করার মঞ্চ। ট্রফি হাতে দলের উদযাপন, জাতীয় পতাকা উড়িয়ে জয়ধ্বনি, আর সমর্থকদের উন্মাদনা। সব মিলিয়ে এটি হয়ে ওঠে এক মহোৎসব। ক্রিকেটে অনেক রকম বিশ্বমঞ্চ আছে, কিন্তু এশিয়া কাপে ভারতের গৌরব যেন অনন্য। এখানে তারা কেবল অংশ নেয় না, তারা আসে, দেখে, জয় করে।
এশিয়া কাপ মানেই ভারত। তাদের ছাড়া এই আসরের কল্পনা করা যায় না। তারা এসেছে দৈত্যাকার শক্তি হয়ে, প্রতি আসরে জয় তুলে নিয়েছে, আর বাকিদের মনে গেঁথে দিয়েছে এক অনিবার্য সত্য। এশিয়ার ক্রিকেটের সম্রাট কেবল ভারতই। সংখ্যার খাতায়, আবেগের খাতায়, কবিতার খাতায়! সব জায়গাতেই ভারত একচ্ছত্র সম্রাট।
ভারতীয় দাপুটে পারফরমেন্সের এই জায়গায় ফাইনালের মহারণ শেষে ট্রফি দেয়ার বিতর্ক, পাকিস্তানের ভারতীয়দের বিপক্ষে উদযাপনে যুদ্ধের প্রতীকী অঙ্গভঙ্গি কিংবা ভারতীয়দের মাঠের বাইরের কথার অহমিকা নেতিবাচক খবর হয়ে থাকলেও মাঠের আধিপত্যবাদে সবকিছুকেই পেছনে ফেলেছে ভারতীয় ক্রিকেটাররা।
শেষ পর্যন্ত বলা যায়, এশিয়া কাপের ইতিহাস হলো এক অনন্ত কাব্য, যেখানে ভারতের নাম লেখা আছে প্রথম পঙ্ক্তিতে, শেষ পঙ্ক্তিতে, মাঝের প্রতিটি ছত্রে। যতদিন ক্রিকেট বাঁচবে, যতদিন এশিয়া কাপ চলবে, ততদিন এই গৌরবগাথা নতুন করে লেখা হবে। প্রতিবারই যেন প্রমাণিত হয়ে চলেছে, এশিয়া কাপ মানেই ভারতীয়দের জয়গাথা, তাদের গর্ব, তাদের অদম্য শক্তির অক্ষয় প্রতীক।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও ক্রিকেট অঙ্গন আবারও উত্তাল হয়েছে সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে।
১২ ঘণ্টা আগেএশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচের পর সুপার ফোরেও একই চিত্রনাট্য–ভারতের কাছে পাকিস্তানের অসহায় আত্মসমর্পণ। শুধু এশিয়া কাপ নয়, কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে গত এক দশক ধরেই তো সেই একই গল্প।
১৮ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ ক্রিকেটের গল্প যেন ক্রমশ বিষাদময় হয়ে উঠছে। একসময় যে দলকে বলা হতো উদীয়মান শক্তি, যে দল হঠাৎ করে বড় দলগুলোকে হারিয়ে পৃথিবীর ক্রিকেটমঞ্চে আলোড়ন তুলেছিল; সেই দল আজ নিজের ছায়াতেই হারিয়ে যাচ্ছে।
১ দিন আগেদুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উজ্জ্বল আলোয় গতরাত যেন এক উৎসবমুখর মঞ্চ। মরুভূমির বুকে সবুজ ঘাসের কার্পেট বিছানো সেই মঞ্চে মিলেছিল দুই দলের স্বপ্ন।
৩ দিন আগে