অম্লান মোস্তাকিম হোসেন
‘রাইভালরি কখন বলা যায়? যখন দুইটি দল ১৫ থেকে ২০ বার মুখোমুখি হয় আর সেখানে স্কোরলাইন হয় ৭-৭ বা ৮-৭ তখন সেটাকে রাইভালরি বলা যায়। কিন্তু যখন ব্যবধান হয় ১৫-০ বা ১০-১, তখন সেটাকে কি ‘রাইভালরি’ বলা যায়? আমি ঠিক জানি না।’
চলতি এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচে জয়ের পর ভারত-পাকিস্তান রাইভালরি নিয়ে এমন মন্তব্য করেন ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। পাকিস্তান সমর্থকেরা এতে ‘গোস্বা’ করতে পারেন, পাকিস্তানি ক্রিকেটারদেরও এতে তেতে ওঠা উচিত। শত হলেও ক্রিকেটীয় ভদ্রতা বলে একটা ব্যাপার আছে! কিন্তু সূর্যকুমারের মন্তব্যে পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা যদিও তেতেও থাকেন, মাঠের ক্রিকেটে তার কোনো চিহ্ন নেই। এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচের পর সুপার ফোরেও একই চিত্রনাট্য–ভারতের কাছে পাকিস্তানের অসহায় আত্মসমর্পণ। শুধু এশিয়া কাপ নয়, কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে গত এক দশক ধরেই তো সেই একই গল্প।
আজ রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ ফাইনালে যখন দুই দল মুখোমুখি, তখন সূর্যকুমারের সেই কথাটা আবারও ভেসে বেড়াচ্ছে ইথারে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আদৌ কি ক্রিকেটীয় দ্বৈরথ বলে কিছু আছে? নাকি সেটা এখন হয়ে গেছে কাজীর গরুর মতো, যেটা শুধু কেতাবেই আছে, গোয়ালে আর নেই।
দেশভাগের সেই সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন সবসময়েই ছিল। কখনো ক্রিকেট সেই আগুনে ঘি ঢেলেছে আবার কখনো জল হয়ে সেই আগুন প্রশমিত করারও চেষ্টা করেছে। সূর্যকুমারের মন্তব্যটা অবশ্য ঘি ঢালার মতোই, তবে এই মন্তব্যের চেয়েও বেশি বিতর্ক উসকে দিয়েছে ভারতের ক্রিকেটারদের হাত না মেলানো। টসের সময় বা ম্যাচ শেষে ভারতের ক্রিকেটাররা এড়িয়ে গেছেন পাকিস্তানিদের, সেটা আইসিসি পর্যন্ত গড়িয়ে ঘোলা হয়েছে বিস্তর জল। কিন্তু সাংবাদিকদের কলমে যতই এই বিতর্ক জমজমাট থাকুক না কেন, মাঠে আসতে আসতে সব হাওয়া। সূর্যকুমারের অমন মন্তব্য বা ভারতীয়দের অমন আচরণের পরেও তাই পাকিস্তানের শাহিন শাহ আফ্রিদিরা বলে গেছেন, এসব নিয়ে তারা মাথা ঘামাতে চাইছেন না। হয়তো জবাবটা শাহিনরা মাঠেই দেবেন ঠিক করেছিলেন, কিন্তু সেখানে তো দুই দেশের পার্থক্য এখন কাশ্মীরের সীমান্তের চেয়েও বড়। শাহিনদের আপাতত তাই ঝিনুকের মতো সব নীরবে সয়ে যেতে হচ্ছে।
কিন্তু এমন তো ছিল না গল্পটা। নব্বই দশকে যাদের বেড়ে ওঠা, তাদের কাছে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই অন্যরকম উন্মাদনা। এই দুই দেশ তো বটেই, বাংলাদেশে পর্যন্ত জীবন প্রায় থমকে যেত দুই দেশের ম্যাচে। একদিকে ওয়াসিম-ওয়াকার, অন্যদিকে শচীন-সৌরভ, ব্যাটে-বলে লড়াই হতো ধুন্ধুমার। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে তখন পাকিস্তান এগিয়ে, কিন্তু বিশ্বকাপে আবার ভারত হাসত শেষ হাসি। ১৯৯৯ সালের চেন্নাই বা কলকাতা টেস্টের সেই রোমাঞ্চ এখনো নাইন্টিজ কিডদের মনে শিহরণ জাগাবে। সাহারা কাপে সৌরভের অতিমানবীয় পারফরম্যান্স, সাঈদ আনোয়ারের সেই রেকর্ডভাঙা ১৯৪, শোয়েব আখতারের বলে ইডেনে শচীনদের স্টাম্প উড়ে যাওয়া, অনিল কুম্বলের ফিরোজ শাহ কোটলায় ১০ উইকেট–তখন দুই দেশের লড়াই ছিল কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান। কোথায় গেল সেই সব দিন?
দিন বদলে যাওয়ার শুরুটা বোধ হয় ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটা যখন কেবল দাঁড়াতে শিখছে। টি-টোয়েন্টির ভবিষ্যৎ নিয়ে ক্রিকেট কুলীনরা যখন নাক সিঁটকাতেন কিছুটা, সেই সময় দুই দেশ মুখোমুখি ফাইনালে। আর সেই স্নায়ুক্ষয়ী ফাইনালে মিসবাহর সেই শট আর ধোনিদের জিতে যাওয়া- টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ লেখা হয়ে যায় সেখানেই।
এরপর আইপিএল নামের একটা যুগান্তকারী ধারণা দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের খোলনলচেই যেন বদলে দেয় ভারত। এখন ভাবলে অবিশ্বাস্য শোনায়, একটা সময় এই আইপিএলেও পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা ছিলেন। কিন্তু ২০০৯ এরপর সেই পথ বন্ধ হয়ে যায়, আইপিএলের বাড়বাড়ন্তের সাথে কিছুটা যেন একঘেয়ে হয়ে পড়তে থাকে পাকিস্তান ক্রিকেট।
২০১১ বিশ্বকাপেও দুই দেশের লড়াইটা মোটামুটি জমজমাট ছিল, এরপর থেকে পাল্লা হেলে পড়তে থাকে ভারতের দিকে। রাজনীতি মাঝেসাঝে একটু ‘ব্যালান্স’ করার চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি তাতে।
ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটে রাজনীতি তো সবসময়েই ছিল। সেই ১৯৯৯ সালে শিবসেনাদের দিল্লির পিচ খুঁড়ে খেলা বানচাল করা, বিসিসিআই কার্যালয় ঘেরাও- বারবারই দুই দেশের ক্রিকেট কেঁপেছে বাইরের হস্তক্ষেপে। তবে কারগিল যুদ্ধের পরেও দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সিরিজ থামেনি। যে কারগিল যুদ্ধে পাকিস্তানের সমরনায়ক ছিলেন পারভেজ মোশাররফ, তিনিই ছয় বছর পর নিজ দেশ লাহোরে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ভারত ক্রিকেটারদের। ক্রিকেট তখন রাজনীতির আগুনে পুড়তে থাকা দুই দেশের জন্য ফায়ার এক্সটিংগুইশার হিসেবে কাজ করেছিল বেশি।
কিন্তু ২০০৭ এরপর বদলে যেতে শুরু করে দৃশ্যপট। ২০০৮-এ মুম্বাই হামলার পর দুই দেশ আর দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেনি, তবে আইসিসির কল্যাণে দুই দেশের লড়াই হয়েছে নিয়মিতই। কিন্তু লড়াইটা আর জমেনি এরপর। সর্বশেষ ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি বা ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কেবল পাকিস্তান ভারতকে হারিয়েছে এবং সেটা ভালোভাবেই। কিন্তু এ ছাড়া দুই দেশের লড়াই মানেই ভারতের প্রায় একতরফা জয়। শেষ কবে ভারত-পাকিস্তানের কোনো রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের কথা মনে করতে পারেন? সম্ভবত ২০২২-এর মেলবোর্নে বিরাট কোহলিময় সেই ম্যাচ বাদ দিলে দুই দলের মাঠের লড়াই সেয়ানে সেয়ানে হয়েছে কবে মনে করা কঠিন।
আর এখানেই আবার দৃশ্যপটে রাজনীতি। মাঠের লড়াই যতই নিরুত্তাপ হোক, মাঠের বাইরেও ‘খেলা’ কম হয়নি। যেটা নতুন মাত্রা পায় পেহেলগাম-ট্র্যাজেডির পর। সেটার সূত্র ধরেই ‘হ্যান্ডশেকগেট’ আর এত নাটক। কিন্তু পাকিস্তান এতটাই পিছিয়ে ক্রিকেটীয় সামর্থ্যে, দুই দেশের দ্বৈরথে তাই রাজনীতিই এখন মূল ‘প্রোটাগনিস্ট’। আর পার্শ্বনায়ক হিসেবে আছে ‘মওকা মওকার’ ক্রিকেট বাণিজ্য, আইসিসি-এসিসির লভ্যাংশের ভাগাভাগি।
মজার ব্যাপার, টি-টোয়েন্টিতে ভারত অনেকটাই এগিয়ে থাকলেও ওয়ানডেতে এখনো দুই দলের লড়াইয়ে পাকিস্তানই এগিয়ে। সমস্যা হচ্ছে, ২০১৭ এরপর ওয়ানডেতে আর ভারতকে হারাতে পারেনি পাকিস্তান। আর আইসিসি টুর্নামেন্ট মানেই যেন হয়ে গেছে একতরফা লড়াই।
ভারতের এই উত্থানটা তাহলে কেন? আইপিএলের কথা তো বলা হলোই, ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাটা কাজে দিয়েছে এক্ষেত্রে। যে ভারতে একসময় পেসার মানেই ছিল মিডিয়াম বা স্লো, সেখানে এসেছে এখন জসপ্রিত বুমরাহর মতো বিশ্বমানের পেসার। শুধু বুমরাহ নয়, লম্বা সময় বিনিয়োগের পর সিরাজ-শামিদের তৈরি করতে পেরেছে ভারত। স্থিতিশীল বোর্ড, আইপিএল থেকে আসা অঢেল অর্থ আর দেশজুড়ে বিভিন্ন ক্রিকেট একাডেমিতে সেসবের সুচিন্তিত প্রয়োগ- ভারতের ক্রিকেটকে নিয়ে গেছে নতুন উচ্চতায়। আর সেখানে পাকিস্তানের ক্রিকেট পিছিয়ে পড়েছে অনেকটা পথ। বোর্ডের অস্থিরতা, একের পর এক অধিনায়ক আর কোচ ছাঁটাই চলেছে এর মধ্যে। শুধু গত ১৫ বছরেই ১০ বার কোচ বদলেছে পাকিস্তান!
এসবের ছাপই পড়েছে মাঠের খেলায়, যেখানে ওয়াঘা সীমান্তে পাকিস্তানকে একা রেখে ভারত এগিয়ে গেছে অনেকটা পথ। রোববারের খেলায় পাকিস্তান জিতে ‘অপমানের’ বদলা নিলেও গল্পটা বদলে যাবে না খুব একটা। ভারতের সাথে সেই নব্বইয়ের স্মৃতি ফিরিয়ে আনার জন্য পাকিস্তানকে বাইশ গজে এখনো বড় একটা পথই পাড়ি দিতে হবে।
‘রাইভালরি কখন বলা যায়? যখন দুইটি দল ১৫ থেকে ২০ বার মুখোমুখি হয় আর সেখানে স্কোরলাইন হয় ৭-৭ বা ৮-৭ তখন সেটাকে রাইভালরি বলা যায়। কিন্তু যখন ব্যবধান হয় ১৫-০ বা ১০-১, তখন সেটাকে কি ‘রাইভালরি’ বলা যায়? আমি ঠিক জানি না।’
চলতি এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচে জয়ের পর ভারত-পাকিস্তান রাইভালরি নিয়ে এমন মন্তব্য করেন ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। পাকিস্তান সমর্থকেরা এতে ‘গোস্বা’ করতে পারেন, পাকিস্তানি ক্রিকেটারদেরও এতে তেতে ওঠা উচিত। শত হলেও ক্রিকেটীয় ভদ্রতা বলে একটা ব্যাপার আছে! কিন্তু সূর্যকুমারের মন্তব্যে পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা যদিও তেতেও থাকেন, মাঠের ক্রিকেটে তার কোনো চিহ্ন নেই। এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচের পর সুপার ফোরেও একই চিত্রনাট্য–ভারতের কাছে পাকিস্তানের অসহায় আত্মসমর্পণ। শুধু এশিয়া কাপ নয়, কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে গত এক দশক ধরেই তো সেই একই গল্প।
আজ রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ ফাইনালে যখন দুই দল মুখোমুখি, তখন সূর্যকুমারের সেই কথাটা আবারও ভেসে বেড়াচ্ছে ইথারে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আদৌ কি ক্রিকেটীয় দ্বৈরথ বলে কিছু আছে? নাকি সেটা এখন হয়ে গেছে কাজীর গরুর মতো, যেটা শুধু কেতাবেই আছে, গোয়ালে আর নেই।
দেশভাগের সেই সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন সবসময়েই ছিল। কখনো ক্রিকেট সেই আগুনে ঘি ঢেলেছে আবার কখনো জল হয়ে সেই আগুন প্রশমিত করারও চেষ্টা করেছে। সূর্যকুমারের মন্তব্যটা অবশ্য ঘি ঢালার মতোই, তবে এই মন্তব্যের চেয়েও বেশি বিতর্ক উসকে দিয়েছে ভারতের ক্রিকেটারদের হাত না মেলানো। টসের সময় বা ম্যাচ শেষে ভারতের ক্রিকেটাররা এড়িয়ে গেছেন পাকিস্তানিদের, সেটা আইসিসি পর্যন্ত গড়িয়ে ঘোলা হয়েছে বিস্তর জল। কিন্তু সাংবাদিকদের কলমে যতই এই বিতর্ক জমজমাট থাকুক না কেন, মাঠে আসতে আসতে সব হাওয়া। সূর্যকুমারের অমন মন্তব্য বা ভারতীয়দের অমন আচরণের পরেও তাই পাকিস্তানের শাহিন শাহ আফ্রিদিরা বলে গেছেন, এসব নিয়ে তারা মাথা ঘামাতে চাইছেন না। হয়তো জবাবটা শাহিনরা মাঠেই দেবেন ঠিক করেছিলেন, কিন্তু সেখানে তো দুই দেশের পার্থক্য এখন কাশ্মীরের সীমান্তের চেয়েও বড়। শাহিনদের আপাতত তাই ঝিনুকের মতো সব নীরবে সয়ে যেতে হচ্ছে।
কিন্তু এমন তো ছিল না গল্পটা। নব্বই দশকে যাদের বেড়ে ওঠা, তাদের কাছে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই অন্যরকম উন্মাদনা। এই দুই দেশ তো বটেই, বাংলাদেশে পর্যন্ত জীবন প্রায় থমকে যেত দুই দেশের ম্যাচে। একদিকে ওয়াসিম-ওয়াকার, অন্যদিকে শচীন-সৌরভ, ব্যাটে-বলে লড়াই হতো ধুন্ধুমার। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে তখন পাকিস্তান এগিয়ে, কিন্তু বিশ্বকাপে আবার ভারত হাসত শেষ হাসি। ১৯৯৯ সালের চেন্নাই বা কলকাতা টেস্টের সেই রোমাঞ্চ এখনো নাইন্টিজ কিডদের মনে শিহরণ জাগাবে। সাহারা কাপে সৌরভের অতিমানবীয় পারফরম্যান্স, সাঈদ আনোয়ারের সেই রেকর্ডভাঙা ১৯৪, শোয়েব আখতারের বলে ইডেনে শচীনদের স্টাম্প উড়ে যাওয়া, অনিল কুম্বলের ফিরোজ শাহ কোটলায় ১০ উইকেট–তখন দুই দেশের লড়াই ছিল কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান। কোথায় গেল সেই সব দিন?
দিন বদলে যাওয়ার শুরুটা বোধ হয় ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটা যখন কেবল দাঁড়াতে শিখছে। টি-টোয়েন্টির ভবিষ্যৎ নিয়ে ক্রিকেট কুলীনরা যখন নাক সিঁটকাতেন কিছুটা, সেই সময় দুই দেশ মুখোমুখি ফাইনালে। আর সেই স্নায়ুক্ষয়ী ফাইনালে মিসবাহর সেই শট আর ধোনিদের জিতে যাওয়া- টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ লেখা হয়ে যায় সেখানেই।
এরপর আইপিএল নামের একটা যুগান্তকারী ধারণা দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের খোলনলচেই যেন বদলে দেয় ভারত। এখন ভাবলে অবিশ্বাস্য শোনায়, একটা সময় এই আইপিএলেও পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা ছিলেন। কিন্তু ২০০৯ এরপর সেই পথ বন্ধ হয়ে যায়, আইপিএলের বাড়বাড়ন্তের সাথে কিছুটা যেন একঘেয়ে হয়ে পড়তে থাকে পাকিস্তান ক্রিকেট।
২০১১ বিশ্বকাপেও দুই দেশের লড়াইটা মোটামুটি জমজমাট ছিল, এরপর থেকে পাল্লা হেলে পড়তে থাকে ভারতের দিকে। রাজনীতি মাঝেসাঝে একটু ‘ব্যালান্স’ করার চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি তাতে।
ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটে রাজনীতি তো সবসময়েই ছিল। সেই ১৯৯৯ সালে শিবসেনাদের দিল্লির পিচ খুঁড়ে খেলা বানচাল করা, বিসিসিআই কার্যালয় ঘেরাও- বারবারই দুই দেশের ক্রিকেট কেঁপেছে বাইরের হস্তক্ষেপে। তবে কারগিল যুদ্ধের পরেও দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সিরিজ থামেনি। যে কারগিল যুদ্ধে পাকিস্তানের সমরনায়ক ছিলেন পারভেজ মোশাররফ, তিনিই ছয় বছর পর নিজ দেশ লাহোরে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ভারত ক্রিকেটারদের। ক্রিকেট তখন রাজনীতির আগুনে পুড়তে থাকা দুই দেশের জন্য ফায়ার এক্সটিংগুইশার হিসেবে কাজ করেছিল বেশি।
কিন্তু ২০০৭ এরপর বদলে যেতে শুরু করে দৃশ্যপট। ২০০৮-এ মুম্বাই হামলার পর দুই দেশ আর দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেনি, তবে আইসিসির কল্যাণে দুই দেশের লড়াই হয়েছে নিয়মিতই। কিন্তু লড়াইটা আর জমেনি এরপর। সর্বশেষ ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি বা ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কেবল পাকিস্তান ভারতকে হারিয়েছে এবং সেটা ভালোভাবেই। কিন্তু এ ছাড়া দুই দেশের লড়াই মানেই ভারতের প্রায় একতরফা জয়। শেষ কবে ভারত-পাকিস্তানের কোনো রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের কথা মনে করতে পারেন? সম্ভবত ২০২২-এর মেলবোর্নে বিরাট কোহলিময় সেই ম্যাচ বাদ দিলে দুই দলের মাঠের লড়াই সেয়ানে সেয়ানে হয়েছে কবে মনে করা কঠিন।
আর এখানেই আবার দৃশ্যপটে রাজনীতি। মাঠের লড়াই যতই নিরুত্তাপ হোক, মাঠের বাইরেও ‘খেলা’ কম হয়নি। যেটা নতুন মাত্রা পায় পেহেলগাম-ট্র্যাজেডির পর। সেটার সূত্র ধরেই ‘হ্যান্ডশেকগেট’ আর এত নাটক। কিন্তু পাকিস্তান এতটাই পিছিয়ে ক্রিকেটীয় সামর্থ্যে, দুই দেশের দ্বৈরথে তাই রাজনীতিই এখন মূল ‘প্রোটাগনিস্ট’। আর পার্শ্বনায়ক হিসেবে আছে ‘মওকা মওকার’ ক্রিকেট বাণিজ্য, আইসিসি-এসিসির লভ্যাংশের ভাগাভাগি।
মজার ব্যাপার, টি-টোয়েন্টিতে ভারত অনেকটাই এগিয়ে থাকলেও ওয়ানডেতে এখনো দুই দলের লড়াইয়ে পাকিস্তানই এগিয়ে। সমস্যা হচ্ছে, ২০১৭ এরপর ওয়ানডেতে আর ভারতকে হারাতে পারেনি পাকিস্তান। আর আইসিসি টুর্নামেন্ট মানেই যেন হয়ে গেছে একতরফা লড়াই।
ভারতের এই উত্থানটা তাহলে কেন? আইপিএলের কথা তো বলা হলোই, ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাটা কাজে দিয়েছে এক্ষেত্রে। যে ভারতে একসময় পেসার মানেই ছিল মিডিয়াম বা স্লো, সেখানে এসেছে এখন জসপ্রিত বুমরাহর মতো বিশ্বমানের পেসার। শুধু বুমরাহ নয়, লম্বা সময় বিনিয়োগের পর সিরাজ-শামিদের তৈরি করতে পেরেছে ভারত। স্থিতিশীল বোর্ড, আইপিএল থেকে আসা অঢেল অর্থ আর দেশজুড়ে বিভিন্ন ক্রিকেট একাডেমিতে সেসবের সুচিন্তিত প্রয়োগ- ভারতের ক্রিকেটকে নিয়ে গেছে নতুন উচ্চতায়। আর সেখানে পাকিস্তানের ক্রিকেট পিছিয়ে পড়েছে অনেকটা পথ। বোর্ডের অস্থিরতা, একের পর এক অধিনায়ক আর কোচ ছাঁটাই চলেছে এর মধ্যে। শুধু গত ১৫ বছরেই ১০ বার কোচ বদলেছে পাকিস্তান!
এসবের ছাপই পড়েছে মাঠের খেলায়, যেখানে ওয়াঘা সীমান্তে পাকিস্তানকে একা রেখে ভারত এগিয়ে গেছে অনেকটা পথ। রোববারের খেলায় পাকিস্তান জিতে ‘অপমানের’ বদলা নিলেও গল্পটা বদলে যাবে না খুব একটা। ভারতের সাথে সেই নব্বইয়ের স্মৃতি ফিরিয়ে আনার জন্য পাকিস্তানকে বাইশ গজে এখনো বড় একটা পথই পাড়ি দিতে হবে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের গল্প যেন ক্রমশ বিষাদময় হয়ে উঠছে। একসময় যে দলকে বলা হতো উদীয়মান শক্তি, যে দল হঠাৎ করে বড় দলগুলোকে হারিয়ে পৃথিবীর ক্রিকেটমঞ্চে আলোড়ন তুলেছিল; সেই দল আজ নিজের ছায়াতেই হারিয়ে যাচ্ছে।
৯ ঘণ্টা আগেদুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উজ্জ্বল আলোয় গতরাত যেন এক উৎসবমুখর মঞ্চ। মরুভূমির বুকে সবুজ ঘাসের কার্পেট বিছানো সেই মঞ্চে মিলেছিল দুই দলের স্বপ্ন।
২ দিন আগেআরব আমিরাতে আজ রাতে পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার বাংলাদেশের এই সমীকরণ ঠিক যেন সাত বছর এবং নয় বছর আগের এশিয়া কাপেরই সমীকরণ। কেমন করেছিল বাংলাদেশ তখন? ডু অর ডাই ম্যাচে বাংলাদেশ কি আসলেই চাপে পড়ে যায়?
৩ দিন আগেএস্তাদিও মনুমন্তোল। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসের একটি ফুটবল মাঠ। ৮৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এই মাঠ আজ শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) কানায় কানায় ছিল পূর্ণ। ফুটবল পাগল আর্জেন্টাইনদের জন্য এটি খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু আজ মাঠে আসা দর্শকদের মন খারাপ ছিল খেলা শুরুর আগেই। কারণ ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ
২৩ দিন আগে