leadT1ad

‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে কেমন করে বাংলাদেশ?

অম্লান মোস্তাকিম হোসেন
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০: ৪২
‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে কেমন করে বাংলাদেশ। স্ট্রিম গ্রাফিক

এশিয়া কাপের মঞ্চ। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। ফাইনালে উঠতে হলে জিততেই হবে। এই তিন সমীকরণে কিছু কি মনে পড়ে যাচ্ছে আপনার? আরব আমিরাতে আজ রাতে পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার বাংলাদেশের এই সমীকরণ ঠিক যেন সাত বছর এবং নয় বছর আগের এশিয়া কাপেরই সমীকরণ। কেমন করেছিল বাংলাদেশ তখন? ডু অর ডাই ম্যাচে বাংলাদেশ কি আসলেই চাপে পড়ে যায়?

জানলে অবাক হবেন, ব্যাপারটা আসলে ঠিক উল্টো। বাংলাদেশের এশিয়া ফাইনাল হারের যতই দুঃস্মৃতি থাক, ফাইনালে উঠতে হলে জিততেই হবে এমন সমীকরণের সামনে বাংলাদেশকে ঠেকানো কঠিন। বিশেষ করে প্রতিপক্ষ যখন পাকিস্তান।

২০১৮ আমিরাতের সেই এশিয়া কাপের কথা মনে করা যাক। কব্জির ইনজুরির কারণে টুর্নামেন্টের শুরুতেই দল থেকে ছিটকে পড়েন তামিম ইকবাল। মরার ওপর খাঁড়ার ঘা-এর মতো, সুপার ফোরের শেষ এই ম্যাচে বাংলাদেশকে হারাতে হলো সাকিব আল হাসানকেও। বাংলাদেশের সামনে তখন টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ার শঙ্কা। সুপার ফোরের শেষ ম্যাচটা অঘোষিত সেমিফাইনাল, ফাইনালে উঠতে হলে পাকিস্তানকে হারাতেই হবে।

সাকিব-তামিমহীন সেই ম্যাচে বাংলাদেশের ভরসা হয়ে উঠেছিলেন মুশফিকুর রহিম। ১ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করা মুশফিকের ৯৯ রানের ইনিংসটাই পথ দেখিয়েছিল বাংলাদেশকে। সঙ্গে মোহাম্মদ মিঠুনের ৬০ রানটা বাংলাদেশকে দিয়েছিল ২৩৯ রানের পুঁজি।

ইমাম উল হক আর শোয়েব মালিকের সাবলীল ব্যাটিংও সাক্ষ্য দিচ্ছিল যে টার্গেটটা যথেষ্ট নয়। এরপর মিড উইকেটে মাশরাফি বিন মুর্তজার সুপারম্যানের মতো এক ক্যাচে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন শোয়েব মালিক। ৩ উইকেটে ৮৫ রান তুলে পাকিস্তান তখন ভালোমতোই ছিল পথে। এরপর সেই যে পথ হারাল, আর ঘুরে দাঁড়াতে পারল না।

তাতে অবশ্যই বড় অবদান ছিল মোস্তাফিজুর রহমানের। বাবর আজমকে আউট করে ইনিংসের শুরুতেই পাকিস্তানকে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা দিয়েছিলেন তিনি, নিয়েছিলেন আরও ৩ উইকেট। ৩৭ রানের জয়টা বাংলাদেশকে তুলে দিয়েছিল আরেকটা এশিয়া কাপের ফাইনালে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য পারেনি বাংলাদেশ, তবে সেটা অন্য গল্প।

২০১৮ সালের এশিয়া কাপ ছিল ওয়ানডে ফরম্যাটে, তবে তার দুই বছর আগে দেশের মাটিতে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপের হিসেব নিকেশও ছিল প্রায় একই। তখন অবশ্য সুপার ফোর ফরম্যাট ছিল না। ভারতের কাছে হেরে শুরু হয়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশের এশিয়া কাপ অভিযান।

পাকিস্তানকে হারালে ফাইনাল, এমন সমীকরণের ম্যাচে শুরুতে পাকিস্তান ব্যাট করে বাংলাদেশকে ছুঁড়ে দেয় ১২৯ রানের লক্ষ্য। এই অল্প রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়েই ১৭ দশমিক ২ ওভারে হারিয়ে ফেলে ৫ উইকেট। সাকিব আল হাসান যখন ফিরে যান, তখনও বাংলাদেশকে ১৬ বলে করতে হবে ২৬ রান। স্বীকৃত ব্যাটার বলতে কেবল মাহমুদউল্লাহ। মোহাম্মদ আমিরের বলে দুই চার মেরে মাশরাফি বিন মুর্তজা গ্যালারিতে যে গর্জন তুললেন, মোহাম্মদ সামির বলে ছয় মেরে মাহমুদউল্লাহ সেটাকে নিয়ে গেলেন প্রবল উল্লাসে। দুজন মিলে পাঁচ বল বাকি থাকতেই শেষ করে ফেলেন কাজটা। বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া কাপ ফাইনালে।

এমনকি ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ম্যাচেও বাংলাদেশের জন্য একই সমীকরণ। শ্রীলঙ্কার সাথে ডু আর ডাই ম্যাচে বাংলাদেশকে জিততেই হতো। বৃষ্টি বাধায় অবশ্য সেই ম্যাচে বাংলাদেশের লক্ষ্য নেমে এসেছিল ২১২ রানে, সেটা সহজ হয়ে যায় তামিম ইকবালের ৫৭ বলে ৫৯ রানের ইনিংসে।

ভারতের সাথে বাংলাদেশের পয়েন্ট সমান হয়, তবে হেড টু হেডে ভারতকে আগেই হারানোয় বাংলাদেশ জানত, জিতলেই উঠে যাবে ফাইনালে। সেই সুযোগটা হাতছাড়া করেনি বাংলাদেশ।

তবে ২০২২ ও ২০২৩-এর এশিয়া কাপের স্মৃতিটাই ভুলে যেতে চাইবে বাংলাদেশ। এই দুবার ফাইনালের অনেক আগেই বাংলাদেশের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায়, ‘ডু অর ডাই সিচুয়েশনটা’ তৈরি হওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। এশিয়া কাপ বাদ দিলে সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাদেশের ‘করো নয়তো মরোর’ হিসেবনিকেশ খুব একটা আশাপ্রদ নয়। সর্বশেষ গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানকে হারাতে পারলে সেমিতে ওঠার একটা অপ্রত্যাশিত সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেটা পারা দূরে থাক, কাজে লাগানোরও চেষ্টা করেনি বাংলাদেশ। এছাড়া ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সেমির সুযোগ এসে যাওয়ার পরেও ডু অর ডাই ম্যাচে পারেনি বাংলাদেশ।

তবে সেগুলো এশিয়া কাপ ছিল না, আর প্রতিপক্ষও পাকিস্তান ছিল না। ইতিহাস যদি ফিরে আসে তাহলে বাংলাদেশের এবারও পা ফসকানোর কারণ নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, দানে দানে এবার কি তিন দান হবে বাংলাদেশের?

Ad 300x250

সম্পর্কিত