সজল মিত্র রিচার্ড
বাংলাদেশ ক্রিকেটের গল্প যেন ক্রমশ বিষাদময় হয়ে উঠছে। একসময় যে দলকে বলা হতো উদীয়মান শক্তি, যে দল হঠাৎ করে বড় দলগুলোকে হারিয়ে পৃথিবীর ক্রিকেটমঞ্চে আলোড়ন তুলেছিল; সেই দল আজ নিজের ছায়াতেই হারিয়ে যাচ্ছে। মাঠে পরাজয়, বোর্ডে দ্বন্দ্ব, নির্বাচনে দুর্নীতির গন্ধ, আর ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়া মনোবল—সব মিলিয়ে এক দীর্ঘশ্বাসের ইতিহাস যেন প্রতিদিন নতুন করে লেখা হচ্ছে।
এশিয়া কাপের সাম্প্রতিক দৃশ্যই ধরা যাক। প্রত্যাশার পাহাড় নিয়ে মাঠে নেমেছিল লাল-সবুজের সৈনিকেরা। দর্শকেরা বুক ভরে আশা করেছিলেন, এবার হয়তো দেখা মিলবে পুরনো দিনের বাংলাদেশকে। কিন্তু প্রথম ম্যাচ থেকেই যেন সবকিছু উল্টেপাল্টে গেল। ওপেনাররা সঠিক শুরু দিতে ব্যর্থ, মিডল অর্ডার চাপ সামলাতে অক্ষম, শেষদিকে কোনো দৃঢ়তা নেই। একের পর এক ব্যর্থতায় ভেঙে পড়ল দল, আর প্রতিপক্ষের সামনে দাঁড়াতেই পারল না। যে এশিয়া কাপে গ্যালারিতে ঢেউ খেলেছিল স্লোগান, শেষ পর্যন্ত তা মিলিয়ে গেল পরাজয়ের শোকে। চোখে ভেসে উঠল শুধু হতাশ সমর্থকের মুখ।
শুধু এশিয়া কাপ নয়, গত এক বছরের সার্বিক খতিয়ানও একই রকম কষ্টের কথা বলে। প্রতিপক্ষ হিসেবে অফ ফর্মের পাকিস্তানকে বাদ দিলে ফলাফল অনেকটাই বিবর্ণ। খর্ব শক্তির জিম্বাবুয়ের সঙ্গে হারতে হয়েছে টেস্ট ম্যাচে। পাকিস্তান বাদে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ খেলেছে সাতটি ম্যাচ, জয়ের আশা বিসর্জন দিয়ে আশার প্রদীপ ড্র দিয়ে জ্বালিয়েছে মাত্র ২টি ম্যাচে। ভারতের সঙ্গে দুটি টেস্টে হেরে গেছে প্রথমটিতে ২৮০ রানের ব্যবধান দিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে দুই ম্যাচের সিরিজে হেরে গেছে এক ইনিংস ও ২৭৩ রানের ব্যবধান দিয়ে। তুলনায় ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ ম্যাচ জিতেছে, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডও প্রায় সমানভাবে জয় নিয়েছে। উইকেটে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ ইনিংস গড়ার ধৈর্য নেই, বোলারদের ধার কমে গেছে, ফিল্ডারদের হাতে ধরা দিচ্ছে না সহজ ক্যাচ। লাল বলের খেলায় বাংলাদেশ যেন এখন নিজের অবস্থান হারাতে বসেছে।
ওয়ানডে ফরম্যাট একসময় দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য হতাশার প্রতীক। গত বছরে ১৮ ম্যাচ খেলে জয় এসেছে মাত্র পাঁচটিতে। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পরাশক্তিরা এই সময়ের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে প্রায় ৮০ শতাংশ ম্যাচ জয় করেছে। শুরুতেই দ্রুত উইকেট হারানো, মিডল অর্ডারে ব্যাটসম্যানদের আত্মসমর্পণ আর শেষ মুহূর্তে প্রয়োজনীয় রান তুলতে ব্যর্থ—সব মিলিয়ে ওয়ানডে ফরম্যাটের আস্থা ভেঙে পড়েছে। যে ফরম্যাট একদিন মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও রিয়াদদের হাত ধরে বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল, আজ তা হয়ে উঠেছে পরাজয়ের আরেক নাম।
টি–টোয়েন্টি তো আরও ভীতিকর। ছোট ফরম্যাটের খেলায় প্রয়োজন ঝড়ো ব্যাটিং, আগ্রাসী বোলিং ও তীক্ষ্ণ ফিল্ডিং। কিন্তু বাংলাদেশ দল এখানে সবচেয়ে দুর্বল। এক বছরের পরিসংখ্যান প্রমাণ করে দেয়, ম্যাচে নামলেই হার নিশ্চিত। প্রতিপক্ষ যখন ঝড় তোলে, বাংলাদেশ তখন নির্বাক দর্শক হয়ে যায়। ফিল্ডিংয়ে অমনোযোগ, বোলিংয়ে পরিকল্পনার অভাব আর ব্যাটিংয়ে কল্পনাহীনতা মিলিয়ে টি–টোয়েন্টি যেন বাংলাদেশের জন্য এক আতঙ্ক।
কিন্তু মাঠের ব্যর্থতার বাইরেও আরেকটি নাটক চলছে সমান্তরালভাবে। বোর্ডরুমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে তামিম ইকবাল ও উপদেষ্টা আসিফের বিতর্ক। সাবেক অধিনায়ক তামিমের সঙ্গে বোর্ডের উপদেষ্টার খোলা দ্বন্দ্ব যেন ক্রিকেটের অন্দরমহলে বিষ ছড়িয়েছে। কার প্রতি আস্থা রাখা উচিত, কে কতটা দায়িত্বশীল, কার কাছে থাকা উচিত অধিনায়কত্বের সুতো এসব নিয়ে চলা কথার ঝড় সংবাদমাধ্যমে জায়গা পাচ্ছে বারবার। ফলাফল, মাঠের খেলোয়াড়রাও বিভক্ত হয়ে পড়ছেন অদৃশ্য রেখায়। দলীয় চেতনা, যা একসময় বাংলাদেশকে এক করেছে, আজ তা ভেঙে পড়ছে অহংকার আর অবিশ্বাসের কারণে।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিসিবির নির্বাচন। যে বোর্ডের দায়িত্ব খেলোয়াড়দের জন্য সুযোগ তৈরি করা, ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ক্ষমতার সমীকরণে। নির্বাচন ঘিরে উঠে এসেছে নানা অভিযোগ। ভোটার তালিকায় বিতর্কিত ক্লাবগুলোর অন্তর্ভুক্তি, মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, আর্থিক স্বচ্ছতার অভাব সব মিলিয়ে বোর্ড আজ আস্থাহীনতার প্রতীক। বলা হচ্ছে, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থে নিয়ম ভেঙে কাজ করছেন। কোটি কোটি টাকার ব্যাংক লেনদেন নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন, যেগুলো পরে নানা ব্যাখ্যা দিয়ে ঢাকার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সমর্থকদের মনে আস্থার সংকট থেকে গেছে অটুট।
বোর্ডের দুর্নীতির অভিযোগ আর মাঠের ব্যর্থতা যেন একে অপরের প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঠে যেখানে দেখা যাচ্ছে হারের ধারাবাহিকতা, বোর্ডে সেখানে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে নতুন বিতর্ক। দুই দিকের এই সমান্তরাল অন্ধকার ক্রিকেটকে টেনে নামাচ্ছে এক অজানা খাদে।
সমর্থকের হৃদয়ে এখন বেদনার স্রোত। গ্যালারিতে আর আগের মতো উল্লাস নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ ঝরে পড়ছে প্রতিটি পোস্টে। একসময় খেলার দিনে রাস্তাঘাট শুনশান হয়ে যেত, আজ তা নেই। কারণ মানুষ জানে, শেষ পর্যন্ত গল্পটা একই হবে হতাশা আর পরাজয়। কেউ বলছেন খেলোয়াড়রা মানসিকভাবে প্রস্তুত নয়, কেউ বলছেন বোর্ডে স্বচ্ছতা ফিরলেই মাঠে জিতবে বাংলাদেশ। আবার কেউ প্রশ্ন করছেন, এই ক্রিকেট কি তবে কেবলই অতীতের স্মৃতি হয়ে যাবে?
তবু ক্রিকেট আশার খেলা। যতই অন্ধকার থাকুক, আলো আসবেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটকেও সেই আলো ফিরিয়ে আনতে হবে। খেলোয়াড়দের জন্য প্রয়োজন কঠোর অনুশীলন, মানসিক দৃঢ়তা আর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। বোর্ডের জন্য চাই সৎ নেতৃত্ব, স্বচ্ছ আর্থিক ব্যবস্থা, আর দুর্নীতিমুক্ত নির্বাচন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আস্থা ফিরিয়ে আনা। সমর্থক, খেলোয়াড় ও বোর্ড তিন পক্ষের বিশ্বাস যদি একত্রে গড়ে ওঠে, তবে আবারও বাংলাদেশ ক্রিকেট নতুন করে জেগে উঠতে পারে।
আজকের বাংলাদেশ ক্রিকেট তাই এক দ্বিধার মোড়ে দাঁড়িয়ে। একদিকে মাঠের হতাশা, অন্যদিকে বোর্ডের দ্বন্দ্ব। এশিয়া কাপের ব্যর্থতা, টেস্ট-ওয়ানডে-টি২০ তে ধস, তামিম-আসিফের বিতর্ক আর নির্বাচনের কাদামাটি। সব মিলিয়ে এক বিষাদময় দৃশ্যকাব্য। তবু ইতিহাস বলে, অন্ধকারের পরেই আসে ভোর। বাংলাদেশের ক্রিকেটও হয়তো একদিন আবার উজ্জ্বল আলোয় স্নান করবে। গ্যালারিতে তখন আবার প্রতিধ্বনিত হবে জয়ের স্লোগান, পতপত করে উড়বে লাল-সবুজের পতাকা। পরাজয়ের নয়, জয়ের স্মৃতিই তখন লিখবে নতুন কাব্য। নয়তো যে অন্ধকার টানেলে ঢুকছে দেশের ক্রিকেটের ট্রেন, সেই ট্রেন থেকে বের হওয়া সত্যিই দুঃস্বাধ্য।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের গল্প যেন ক্রমশ বিষাদময় হয়ে উঠছে। একসময় যে দলকে বলা হতো উদীয়মান শক্তি, যে দল হঠাৎ করে বড় দলগুলোকে হারিয়ে পৃথিবীর ক্রিকেটমঞ্চে আলোড়ন তুলেছিল; সেই দল আজ নিজের ছায়াতেই হারিয়ে যাচ্ছে। মাঠে পরাজয়, বোর্ডে দ্বন্দ্ব, নির্বাচনে দুর্নীতির গন্ধ, আর ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়া মনোবল—সব মিলিয়ে এক দীর্ঘশ্বাসের ইতিহাস যেন প্রতিদিন নতুন করে লেখা হচ্ছে।
এশিয়া কাপের সাম্প্রতিক দৃশ্যই ধরা যাক। প্রত্যাশার পাহাড় নিয়ে মাঠে নেমেছিল লাল-সবুজের সৈনিকেরা। দর্শকেরা বুক ভরে আশা করেছিলেন, এবার হয়তো দেখা মিলবে পুরনো দিনের বাংলাদেশকে। কিন্তু প্রথম ম্যাচ থেকেই যেন সবকিছু উল্টেপাল্টে গেল। ওপেনাররা সঠিক শুরু দিতে ব্যর্থ, মিডল অর্ডার চাপ সামলাতে অক্ষম, শেষদিকে কোনো দৃঢ়তা নেই। একের পর এক ব্যর্থতায় ভেঙে পড়ল দল, আর প্রতিপক্ষের সামনে দাঁড়াতেই পারল না। যে এশিয়া কাপে গ্যালারিতে ঢেউ খেলেছিল স্লোগান, শেষ পর্যন্ত তা মিলিয়ে গেল পরাজয়ের শোকে। চোখে ভেসে উঠল শুধু হতাশ সমর্থকের মুখ।
শুধু এশিয়া কাপ নয়, গত এক বছরের সার্বিক খতিয়ানও একই রকম কষ্টের কথা বলে। প্রতিপক্ষ হিসেবে অফ ফর্মের পাকিস্তানকে বাদ দিলে ফলাফল অনেকটাই বিবর্ণ। খর্ব শক্তির জিম্বাবুয়ের সঙ্গে হারতে হয়েছে টেস্ট ম্যাচে। পাকিস্তান বাদে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ খেলেছে সাতটি ম্যাচ, জয়ের আশা বিসর্জন দিয়ে আশার প্রদীপ ড্র দিয়ে জ্বালিয়েছে মাত্র ২টি ম্যাচে। ভারতের সঙ্গে দুটি টেস্টে হেরে গেছে প্রথমটিতে ২৮০ রানের ব্যবধান দিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে দুই ম্যাচের সিরিজে হেরে গেছে এক ইনিংস ও ২৭৩ রানের ব্যবধান দিয়ে। তুলনায় ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ ম্যাচ জিতেছে, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডও প্রায় সমানভাবে জয় নিয়েছে। উইকেটে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ ইনিংস গড়ার ধৈর্য নেই, বোলারদের ধার কমে গেছে, ফিল্ডারদের হাতে ধরা দিচ্ছে না সহজ ক্যাচ। লাল বলের খেলায় বাংলাদেশ যেন এখন নিজের অবস্থান হারাতে বসেছে।
ওয়ানডে ফরম্যাট একসময় দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য হতাশার প্রতীক। গত বছরে ১৮ ম্যাচ খেলে জয় এসেছে মাত্র পাঁচটিতে। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পরাশক্তিরা এই সময়ের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে প্রায় ৮০ শতাংশ ম্যাচ জয় করেছে। শুরুতেই দ্রুত উইকেট হারানো, মিডল অর্ডারে ব্যাটসম্যানদের আত্মসমর্পণ আর শেষ মুহূর্তে প্রয়োজনীয় রান তুলতে ব্যর্থ—সব মিলিয়ে ওয়ানডে ফরম্যাটের আস্থা ভেঙে পড়েছে। যে ফরম্যাট একদিন মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও রিয়াদদের হাত ধরে বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল, আজ তা হয়ে উঠেছে পরাজয়ের আরেক নাম।
টি–টোয়েন্টি তো আরও ভীতিকর। ছোট ফরম্যাটের খেলায় প্রয়োজন ঝড়ো ব্যাটিং, আগ্রাসী বোলিং ও তীক্ষ্ণ ফিল্ডিং। কিন্তু বাংলাদেশ দল এখানে সবচেয়ে দুর্বল। এক বছরের পরিসংখ্যান প্রমাণ করে দেয়, ম্যাচে নামলেই হার নিশ্চিত। প্রতিপক্ষ যখন ঝড় তোলে, বাংলাদেশ তখন নির্বাক দর্শক হয়ে যায়। ফিল্ডিংয়ে অমনোযোগ, বোলিংয়ে পরিকল্পনার অভাব আর ব্যাটিংয়ে কল্পনাহীনতা মিলিয়ে টি–টোয়েন্টি যেন বাংলাদেশের জন্য এক আতঙ্ক।
কিন্তু মাঠের ব্যর্থতার বাইরেও আরেকটি নাটক চলছে সমান্তরালভাবে। বোর্ডরুমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে তামিম ইকবাল ও উপদেষ্টা আসিফের বিতর্ক। সাবেক অধিনায়ক তামিমের সঙ্গে বোর্ডের উপদেষ্টার খোলা দ্বন্দ্ব যেন ক্রিকেটের অন্দরমহলে বিষ ছড়িয়েছে। কার প্রতি আস্থা রাখা উচিত, কে কতটা দায়িত্বশীল, কার কাছে থাকা উচিত অধিনায়কত্বের সুতো এসব নিয়ে চলা কথার ঝড় সংবাদমাধ্যমে জায়গা পাচ্ছে বারবার। ফলাফল, মাঠের খেলোয়াড়রাও বিভক্ত হয়ে পড়ছেন অদৃশ্য রেখায়। দলীয় চেতনা, যা একসময় বাংলাদেশকে এক করেছে, আজ তা ভেঙে পড়ছে অহংকার আর অবিশ্বাসের কারণে।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিসিবির নির্বাচন। যে বোর্ডের দায়িত্ব খেলোয়াড়দের জন্য সুযোগ তৈরি করা, ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ক্ষমতার সমীকরণে। নির্বাচন ঘিরে উঠে এসেছে নানা অভিযোগ। ভোটার তালিকায় বিতর্কিত ক্লাবগুলোর অন্তর্ভুক্তি, মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, আর্থিক স্বচ্ছতার অভাব সব মিলিয়ে বোর্ড আজ আস্থাহীনতার প্রতীক। বলা হচ্ছে, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থে নিয়ম ভেঙে কাজ করছেন। কোটি কোটি টাকার ব্যাংক লেনদেন নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন, যেগুলো পরে নানা ব্যাখ্যা দিয়ে ঢাকার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সমর্থকদের মনে আস্থার সংকট থেকে গেছে অটুট।
বোর্ডের দুর্নীতির অভিযোগ আর মাঠের ব্যর্থতা যেন একে অপরের প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঠে যেখানে দেখা যাচ্ছে হারের ধারাবাহিকতা, বোর্ডে সেখানে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে নতুন বিতর্ক। দুই দিকের এই সমান্তরাল অন্ধকার ক্রিকেটকে টেনে নামাচ্ছে এক অজানা খাদে।
সমর্থকের হৃদয়ে এখন বেদনার স্রোত। গ্যালারিতে আর আগের মতো উল্লাস নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ ঝরে পড়ছে প্রতিটি পোস্টে। একসময় খেলার দিনে রাস্তাঘাট শুনশান হয়ে যেত, আজ তা নেই। কারণ মানুষ জানে, শেষ পর্যন্ত গল্পটা একই হবে হতাশা আর পরাজয়। কেউ বলছেন খেলোয়াড়রা মানসিকভাবে প্রস্তুত নয়, কেউ বলছেন বোর্ডে স্বচ্ছতা ফিরলেই মাঠে জিতবে বাংলাদেশ। আবার কেউ প্রশ্ন করছেন, এই ক্রিকেট কি তবে কেবলই অতীতের স্মৃতি হয়ে যাবে?
তবু ক্রিকেট আশার খেলা। যতই অন্ধকার থাকুক, আলো আসবেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটকেও সেই আলো ফিরিয়ে আনতে হবে। খেলোয়াড়দের জন্য প্রয়োজন কঠোর অনুশীলন, মানসিক দৃঢ়তা আর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। বোর্ডের জন্য চাই সৎ নেতৃত্ব, স্বচ্ছ আর্থিক ব্যবস্থা, আর দুর্নীতিমুক্ত নির্বাচন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আস্থা ফিরিয়ে আনা। সমর্থক, খেলোয়াড় ও বোর্ড তিন পক্ষের বিশ্বাস যদি একত্রে গড়ে ওঠে, তবে আবারও বাংলাদেশ ক্রিকেট নতুন করে জেগে উঠতে পারে।
আজকের বাংলাদেশ ক্রিকেট তাই এক দ্বিধার মোড়ে দাঁড়িয়ে। একদিকে মাঠের হতাশা, অন্যদিকে বোর্ডের দ্বন্দ্ব। এশিয়া কাপের ব্যর্থতা, টেস্ট-ওয়ানডে-টি২০ তে ধস, তামিম-আসিফের বিতর্ক আর নির্বাচনের কাদামাটি। সব মিলিয়ে এক বিষাদময় দৃশ্যকাব্য। তবু ইতিহাস বলে, অন্ধকারের পরেই আসে ভোর। বাংলাদেশের ক্রিকেটও হয়তো একদিন আবার উজ্জ্বল আলোয় স্নান করবে। গ্যালারিতে তখন আবার প্রতিধ্বনিত হবে জয়ের স্লোগান, পতপত করে উড়বে লাল-সবুজের পতাকা। পরাজয়ের নয়, জয়ের স্মৃতিই তখন লিখবে নতুন কাব্য। নয়তো যে অন্ধকার টানেলে ঢুকছে দেশের ক্রিকেটের ট্রেন, সেই ট্রেন থেকে বের হওয়া সত্যিই দুঃস্বাধ্য।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উজ্জ্বল আলোয় গতরাত যেন এক উৎসবমুখর মঞ্চ। মরুভূমির বুকে সবুজ ঘাসের কার্পেট বিছানো সেই মঞ্চে মিলেছিল দুই দলের স্বপ্ন।
২ দিন আগেআরব আমিরাতে আজ রাতে পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার বাংলাদেশের এই সমীকরণ ঠিক যেন সাত বছর এবং নয় বছর আগের এশিয়া কাপেরই সমীকরণ। কেমন করেছিল বাংলাদেশ তখন? ডু অর ডাই ম্যাচে বাংলাদেশ কি আসলেই চাপে পড়ে যায়?
৩ দিন আগেএস্তাদিও মনুমন্তোল। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসের একটি ফুটবল মাঠ। ৮৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এই মাঠ আজ শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) কানায় কানায় ছিল পূর্ণ। ফুটবল পাগল আর্জেন্টাইনদের জন্য এটি খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু আজ মাঠে আসা দর্শকদের মন খারাপ ছিল খেলা শুরুর আগেই। কারণ ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ
২৩ দিন আগেনেপালকে ৪-০ গোলে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ম্যাচে হ্যাট্ট্রিকসহ চার গোল করেছেন আগের তিন ম্যাচে নিষিদ্ধ থাকা সাগরিকা।
২১ জুলাই ২০২৫