আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে দেশব্যাপী অবৈধ মোবাইল ফোন বন্ধের ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার (এনইআইআর) ব্যবস্থা চালুর আগে বাজারে থাকা সব অননুমোদিত হ্যান্ডসেট এককালীন বৈধ করার বিশেষ সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
একইসঙ্গে, স্মার্টফোনের উচ্চমূল্যকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের অন্তরায়’ হিসেবে বিবেচনা করে সংস্থাটি মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন ও আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শুল্ক ও ভ্যাট যৌক্তিকভাবে কমানোর জন্যও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে বলেছে।
বিটিআরসি’র এই পদক্ষেপকে ‘সময়োপযোগী ও জরুরি’ বলে অভিহিত করে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। রোববার (৯ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই ব্যবস্থা রাজস্ব সুরক্ষা, ভোক্তা নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় কৌশলগত ভূমিকা রাখবে।
গত ৪ নভেম্বর বিটিআরসি’র স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আমিনুল হকের সই করা এক চিঠিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মাধ্যমে এনবিআরকে এই সুপারিশগুলো পাঠানো হয়।
বিটিআরসি’র সূত্র বলছে, এনইআইআর চালুর ঘোষণায় বাজারে একটি বড় সংকট তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ খাতের সংশ্লিষ্টরা বিটিআরসিকে জানিয়েছে, বাজারে যে পরিমাণ অননুমোদিত হ্যান্ডসেট রয়েছে, তার একটি বিশাল অংশ আগামী ১৬ ডিসেম্বর সিস্টেম চালু হলে অবিক্রীত থেকে যাবে এবং নেটওয়ার্কে ব্যবহার করা যাবে না। এতে বিক্রেতারা বিশাল আর্থিক লোকসানের সম্মুখীন হবেন।
এই সংকট কাটাতে, স্বল্প এবং যৌক্তিক সময় প্রদান করে ইতোমধ্যে বাজারে প্রবেশ করা অননুমোদিত হ্যান্ডসেটগুলো বিটিআরসির ডাটাবেজে সংযুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
বিটিআরসি এনবিআরকে জানিয়েছে, কারিগরি দিক দিয়ে এই সংযুক্তি সম্ভব, তবে এর জন্য কী পরিমাণ শুল্ক প্রযোজ্য হবে সে বিষয়ে এনবিআরের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। চিঠিতে স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়াতে দেশের অভ্যন্তরে কারখানায় মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন এবং বিদেশ থেকে হ্যান্ডসেট আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর আশু ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।
তবে শুল্ক কমানোর ক্ষেত্রে দেশীয় শিল্পের স্বার্থ রক্ষার কথাও বলা হয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এবং দেশে প্রস্তুতকৃত মোবাইল সেটের শুল্কের মধ্যে এমনভাবে সামঞ্জস্য বিধান করতে বলা হয়েছে, যাতে দেশের অভ্যন্তরে স্থাপিত মোবাইল হ্যান্ডসেট শিল্প এবং এখাতে কর্মরত সবার স্বার্থ রক্ষা হয়।
বিটিআরসি জানিয়েছে, দেশে অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট বন্ধ, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সেবায় আর্থিক জালিয়াতি শনাক্তকরণ, মোবাইল হ্যান্ডসেট চুরি রোধ এবং সরকারের রাজস্ব ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতেই আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এনইআইআর চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই ব্যবস্থা চালুর জন্য মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (এমআইওবি) এবং খোদ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকেও বিটিআরসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।
এনবিআরের তথ্যমতে, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ হ্যান্ডসেট আসায় সরকার বছরে আনুমানিক ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তবে রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি স্মার্টফোনের দাম কমানোকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে বিটিআরসি।
সংস্থাটির মতে, প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে স্মার্টফোনের বিকল্প নেই। কিন্তু বাংলাদেশ ২০১৮ সালে ফোর-জি যুগে প্রবেশ করলেও স্মার্টফোন ব্যবহারের হার এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অনেক দেশের তুলনায় কম (আনুমানিক ৬৩ শতাংশ)। এর ফলে দেশের ৩৭ শতাংশ মানুষ ফোর-জি নেটওয়ার্কের মধ্যে বাস করেও শুধু স্মার্টফোন না থাকায় ইন্টারনেটের সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত হ্যান্ডসেটের শুল্ক প্রায় ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ, যা স্মার্টফোন ব্যবহারের পথে অন্যতম বাধা।
এদিকে, বিটিআরসি’র এনইআইআর চালুর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে রোববার পৃথক বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ এই পদক্ষেপকে সময়োপযোগী ও জরুরি বলে অভিহিত করে বলেন, এই ব্যবস্থা চালু হলে অবৈধ, চোরাই, নকল ও রিফারবিশড হ্যান্ডসেটের রমরমা বাজার বন্ধ হবে, যা গ্রাহকদের মানসম্পন্ন ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চুরি হওয়া ফোন সহজেই ব্লক করা যাবে।
সংগঠনটির তরফ থেকে আরো জানানো হয়, অবৈধ ডিভাইস প্রায়ই অপরাধমূলক কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়। এনইআইআর চালুর ফলে প্রতিটি হ্যান্ডসেটের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ায় তা জাতীয় নিরাপত্তা ও সাইবার অপরাধ দমনে ভূমিকা রাখবে। এছাড়া অবৈধ ফোন নেটওয়ার্কে সিগন্যাল বিঘ্নিত করে, যা বন্ধ হলে সেবার মানও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।