রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসুদ ও রাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মারের মধ্যে বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে রেজিস্ট্রারের দপ্তরে এই ঘটনা ঘটে। রাতে বাগবিতণ্ডার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাসজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সভাপতি নিয়োগের একটি ফাইল নিয়ে জিএস সালাহউদ্দিন ও রেজিস্ট্রারের মধ্যে এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এ প্রসঙ্গে জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগ ২৩ দিন ধরে আন্দোলন করছে। গত বৃহস্পতিবার উপাচার্য ফাইলটি সই করে রেজিস্ট্রার দপ্তরে পাঠিয়েছেন। কিন্তু আজও (রোববার) তা কার্যকর হয়নি। বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আমার কাছে এসে জানতে চায়, কেন কাগজ ইস্যু হচ্ছে না। আমি বিষয়টি জানতে রেজিস্ট্রারকে ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। পরে অফিসে গিয়ে কথা বলতে চাইলে পিএস জানায়, স্যার বিএনপি নেতাদের সঙ্গে মিটিংয়ে আছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরে আমি উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে যাই, কিন্তু তিনি ছিলেন না। দ্বিতীয়বার গেলে একই কথা বলা হয়। তাই আমি ভেতরে ঢুকে জানতে চাই ফাইলটি কবে ইস্যু হবে। তখন তিনি বলেন, আজকেই। এরপরই আমাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। রেজিস্ট্রার শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও সব সময় খারাপ ব্যবহার করেন। তাঁকে তো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুত্তার মতো আচরণ করার জন্য বসানো হয়নি।’
আম্মারের দাবি, একপর্যায়ে রেজিস্ট্রার তাঁর দিকে তেড়ে আসেন। এই ঘটনার ভিডিও করছিলেন—এমন এক শিক্ষার্থীর ফোন কেড়ে নেওয়ারও চেষ্টা করেন। রাকসুর জিএস বলেন, ‘ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়, তিনি আমাকে গেট আউট বলে চিৎকার করছেন। আমি সেখানে কোনো অপ্রয়োজনীয় কারণে যাইনি; দায়িত্বের জায়গা থেকে যাচাই করতে গিয়েছিলাম।’
অন্যদিকে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসুদ বলেন, ‘ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সভাপতি নিয়োগ বিষয়ে শনিবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমি সকালে থেকেই বিষয়টি বাস্তবায়নের কাজ করছিলাম। সেই সময় এনসিপির (ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি) রাজশাহী মহানগরের নেতারা সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন এবং বাইরে দুজন ডিনও অপেক্ষা করছিলেন।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এই সময় জিএস সালাহউদ্দিন অপেক্ষা না করে হঠাৎ চেম্বারে ঢুকে পড়ে এবং বেয়াদবি করে। সে অভিযোগ তোলে যে আমি ফাইল আটকে রেখেছি। অথচ তখনই বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছিল। তার এই আচরণ প্রশাসনিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী। তাই আমি তাকে গেট আউট বলেছি। সে ছাত্র রিলেটেড বিষয় না থাকলে রেজিস্ট্রার অফিসে এসে এভাবে কথা বলতে পারে না।’
রেজিস্ট্রার আরও বলেন, ‘রাকসুর ভিপি সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য এক সপ্তাহ আগে আমাকে মেসেজ দিয়েছেন, আমি এখনো রিপ্লাই দিতে পারিনি। আর এই ছেলে (জিএস) সব জায়গায় মাতব্বরি করে বেড়ায়। সে একটা বেহায়া ছেলে, ভিডিওতেই তার প্রমাণ আছে।’
এদিকে, এই ঘটনায় নিজেদের অবস্থান জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজশাহী মহানগর শাখার আহ্বায়ক মোবাশ্বের রাজ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। তিনি লেখেন, ‘সালাহউদ্দিন আম্মার ও রেজিস্ট্রার স্যারের বাগবিতণ্ডার সময় সেখানে বিএনপির কেউ ছিল না। আমার উপস্থিতিতে রাজশাহী মহানগর এনসিপির নেতৃত্ব উপস্থিত ছিল। আমরা শুধু সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু রেজিস্ট্রার স্যারের পিএস সম্ভবত আমাদের বিএনপির কর্মী ভেবে ভুল তথ্য দেন, এখান থেকেই ভুল বোঝাবুঝির শুরু।’
এই ঘটনাকে ঘিরে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাবি শাখা ছাত্রদল। সংগঠনের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘রেজিস্ট্রার অফিসে আম্মার ও শিক্ষক পরস্পরকে ধমকাচ্ছেন, অথচ বিএনপির নাম টেনে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সেখানে বিএনপির কেউ ছিল না। এনসিপির সঙ্গে নিয়মিত দেখা যায় আম্মারকে, অথচ এখন তিনি তাদের চেনেন না। গণতান্ত্রিক সমাজে যে কেউ আলোচনায় অংশ নিতে পারে, এতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে বিএনপির নাম ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো অনৈতিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
সার্বিক বিষয়ে রাকসু ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ফেসবুক পোস্টে জানান, ‘চিঠি আটকে রাখার সেকেলে গোঁড়ামি তো আছেই। এত ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে বিশ্ববিদ্যালয়কে আপনারা অনেক দূর পিছিয়ে দিয়েছেন। রেজিস্ট্রার অফিস যেকোনো চিঠি আটকে রাখছে। আজকে রাকসু জিএস এর সঙ্গে রেজিস্ট্রারের এমন নিন্দাজনক আচরণ সেই ফ্রাস্ট্রেশনের বহিঃপ্রকাশ। প্রশাসন প্রভু নয় আর শিক্ষার্থীরা দাস নয়।’