তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান সম্প্রতি লোকান্তরিত হলেন। নব্বয়ের দশকের কিশোরদের কল্পনার দুনিয়া শাসন করেছে তার সৃষ্ট মুসা-কিশোর-রবিনরা। নব্বয়ের দশকের লোকপ্রিয় সাহিত্য, সংস্কৃতি আর সেখানে রকিব হাসানের ভূমিকা নিয়ে এই লেখা
ওয়াহিদ সুজন
তিন গোয়েন্দা নয়, ‘আউট ল’ শব্দটা আপানারা পাইবেন সেবা প্রকাশনীর আরেকটা সিরিজে। ওয়েস্টার্ন। ব্যাপারটা এই, তিন গোয়েন্দা পড়াটাও আউট ল হওয়ার মতো ঘটনা। গড় সমাজে লেখাপড়া আর গাড়ি-ঘোড়ার যে সম্পর্ক সেখান থেকে এসব বইকে দেখা হইতো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ‘আউট বই’ পড়া মানে উচ্ছন্নে যাওয়া, পড়াশোনায় মন নাই; এসব কথা। আবার বইয়ের কভারে প্রজাপতি মার্কা লোগো বড়দের মনে যে নিষিদ্ধ স্মৃতি উসকে দিত না; এমন না। মানে বড়দের পাপবোধ বা প্রাপ্তমনস্কতার শাস্তি পাইতো ছোটরা। মোটের ওপর আপনি যদি নব্বইয়ের বাচ্চা ছেলেটা হন ব্যাপারটা কিছুট কল্পনা করতে পারবেন। সেইখানে রকিব হাসান ছিলেন বড়সড় হিরো!
তিন গোয়েন্দার জনরা কিশোর থ্রিলার, মূলত কামিং অফ ধাঁচের গল্প। অনেকটা শিশুতোষ গল্প হইলেও পড়ার আয়োজনটাই ছিল রোমাঞ্চকর ঘটনা। কখনো কখনো বড়দের ইঙ্গিতপূর্ণ সম্পর্কও উঠে আসছে। আপনি খুব বেশি বড় না হইলে সেটা অবশ্য বোঝার কথা না! তো, নাইনটিজ কিডসদের জন্য মোটামুটি আউট ল’র পর্যায়ে পড়ে যাওয়ার কথা। যদিও সিরিজের নায়করা মোটামুটি শৃঙ্খলপ্রবণ, বুদ্ধিমান ও চটপটে। হয়তো আমাদের মা-বাবারা এমনই চান। শুধু সারাদিন পড়ার বইয়ের মুখ গুজে থাকতে হবে।
নব্বয়ের দশকে বেড়ে উঠা কিশোরদের বড় একটা অংশের পড়ার টেবিলের নিচে, কোলের ওপর, বই বা খাতার চিপার ভেতর তিন গোয়েন্দা ছিল না—এটা ভাবাও দুষ্কর। এভাবে আউট ল হইতে হইতে বাচ্চাদের কাছে কিশোর পাশা, মুসা আমান ও রবিন মিলফোর্ডের সঙ্গে তাদের স্রষ্টা হয়ে উঠছিলেন পুরো একটা প্রজন্মের নায়ক।
‘হ্যাল্লো কিশোর বন্ধুরা—
আমি কিশোর পাশা বলছি আমেরিকার রকি বীচ থেকে। জায়গাটা লস অ্যাঞ্জেলসে, প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে। হলিউড থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে। যারা এখনও আমাদের পরিচয় জানো না, তাদের বলছি আমরা তিন বন্ধু একটা গোয়েন্দা সংস্থা খুলেছি। নাম তিন গোয়েন্দা।
আমি বাঙালি, থাকি চাচা-চাচীর কাছে। দুই বন্ধুর একজনের নাম মুসা আমান। ব্যায়ামবীর, আমেরিকান নিগ্রো; অন্যজন আইরিশ আমেরিকান, রবিন মিলফোর্ড, বইয়ের পোকা। একই ক্লাসে পড়ি আমরা।
পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে লোহা-লক্কড়ের জঞ্জালের নিচে পুরান এক মোবাইল হোম-এ আমাদের হেডকোয়ার্টার। তিনটি রহস্যের সমাধান করতে চলেছি— এসো না, চলে এসো আমাদের দলে।’
সেবা প্রকাশনীর তিন গোয়েন্দার বইগুলোর তৃতীয় পৃষ্টায় এ পরিচিতিটুকু থাকত। এ প্রকাশনীর কুয়াশা বা মাসুদ রানা; অন্যান্য সিরিজেও এই পরিচিতি থাকত। অন্য অনেক তফাতের মধ্যে বড়দের এ দুই সিরিজের কেন্দ্র হলো ঢাকা। যা শুরুতে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকা; যেখানে পুব বাঙলার মানুষের জাতীয়তাবাদী চেতনা নানান ভাঙা-গড়ার মধ্যে দিয়ে একটা আদল নেয়। একটা সাংস্কৃতিক বয়ান প্রধানও হয়ে উঠে, যার থেকে কিছু ব্রাত্য এসব থ্রিলার জাতীয় রচনা। অন্যদিকে পশ্চিমবাংলার গল্প আর সেই অর্থে রাজধানীর হয়ে উঠল না। বড় জোর স্মৃতিকাতরতা। কুয়াশায় আমরা দেখি ব্রিটিশ ইন্ডিয়া থেকে ভাগ হওয়ার পর এখানকার ইনস্টিটিউশনগুলো তৈরি হচ্ছে। মাসুদ রানা পুরোপুরি পাকিস্তানের স্বার্থকেন্দ্রিক গল্প। আবার বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বাধীন দেশের নায়কও এরা।
এই জায়গায় তিন গোয়েন্দার তাৎপর্য আলাদা। মাসুদ রানা বা কুয়াশা বিদেশে অ্যাডভেঞ্চার করলেও তিন গোয়েন্দা পুরোপুরি বিদেশকেন্দ্রিক। দুনিয়ার স্বর্গ আমেরিকায় দুর্দান্ত সব কাণ্ড ঘটাচ্ছে কিশোর, রবিন ও মুসা। যারা সবাই অভিবাসীদের সন্তান, তাদের বাংলাদেশের কোনো ইনস্টিটিউশনের সঙ্গে তাল মেলানোর দরকার নাই। তিন কিশোর বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড ও আফ্রিকা থেকে যাওয়া মানুষের সন্তান। মূল চরিত্রগুলো রবার্ট আর্থার জুনিয়রের দ্য থ্রি ইনভেস্টিগেটর্স সিরিজ থেকে নেয়া হলেও গল্পে মূলত আমেরিকান ড্রিমের প্রতি আগ্রহ। এরা নিতান্ত মধ্যবিত্তের সন্তান। এদের বাবা-চাচারা কেউ স্যালভেজ ইয়ার্ডের মালিক, সাংবাদিক বা সিনেমার টেকনিশিয়ান। কিন্তু এ কিশোররা কী খায়, কেমনে রিয়্যাক্ট সেটা পাঠকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিশোররা যে অনেককে বার্গার খাইতে শিখাইছে, এমনই তো হওয়ার কথা।
দ্য থ্রি ইনভেস্টিগেটর্স সিরিজের ফর্মুলা অনুযায়ী, কিশোর পাশা বুদ্ধিমত্তায় সবাইকে হারিয়ে দেয়। মুসা আমান ভূতের ভয়ে কাবু হলেও শত্রুকে কুপোকাত করতে যথেষ্ট। আর রবিন মিলফোর্ড হলো গবেষক। মানে কেউ একাই সব নয়। তাহলে বাজার চলতি বাচ্চাদের সাপ্লিমেন্টের কথা ভাবুন, যারা বলে সেটি খেলে বাচ্চারা একইসঙ্গে টলার, শার্পার, হেলথি ও আরো কী কী যেন হবে। শুধু বাচ্চারা না; মা-বাবারা যদি তিন গোয়েন্দা পড়ত বুঝতে পারতে বাচ্চাদের একসঙ্গে অনেককিছু না হলেও চলে।
তিন গোয়েন্দা প্রথম প্রকাশ হয় ১৯৮৫ সালের আগস্টে। গল্প নেয়া হয়েছে থ্রি ইনভেস্টিগেটর্স সিরিজের প্রথম বই ‘দ্য সিক্রেট অব টেরর ক্যাসল’ থেকে, যার লেখক ছিলেন রবার্ট আর্থার। ওই সিরিজ লেখক ছিলেন একাধিক, যেখানে বিক্রি বাড়াতে প্রকাশনা সংস্থা র্যানডম হাউজ বিখ্যাত নির্মাতা আলফ্রেড হিচকককে চরিত্র আকারে ঢুকিয়ে দেয়; যা তিন গোয়েন্দা এসে পরিণত হয় ডেভিস ক্রিস্টোফারে। শুধু ক্রিস্টোফার ডেভিস নন, হলিউড-সমসাময়িক বিজ্ঞান-পশ্চিমা ইতিহাস নানাভাবে ঢুকে গেছে গল্পগুলোয়। আমাজানের জঙ্গল থেকে দক্ষিণ সাগর—লার্জার দ্যান লাইফ অ্যাডভেঞ্চারগুলো আশি-নব্বই এমনকি এখনকার বাচ্চাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। এর ইফেক্ট আমাদের সমাজে আসলে কেমন? এ বিষয়ে খানিকটা বলব পরবর্তীতে।
বিশ্বে প্রথম আধুনিক গোয়েন্দা গল্প হিসেবে স্বীকৃত এডগার অ্যালান পোর ‘দ্য মার্ডার ইন দ্য রু মর্গ’। বাংলা ভাষায় বলতে গেলে হয়তো আমরা পশ্চিমবাংলা থেকেই ধার করব। কিন্তু বাচ্চাদের জন্য এখানে বরাবরই বরাদ্দ ছিল রূপকথা। যেটা শেখায় রাজার ছেলের জন্ম হয় মূলত রাজা হওয়ার জন্যই। আর ছিল বড়দের জন্য লেখা বইগুলো। যেমন দস্যু বনহুর। রকিব হাসানের এক সাক্ষাৎকারে পাইলাম দস্যু বাহরাম, দস্যু মোহন ও স্বপনকুমার সিরিজের নাম। নাম শুনেই বোঝা যায় নতুন দেশে যে মধ্যবিত্তের বিকাশ ঘটছে; তার সঙ্গে মানানসই নয়, মানে তাদের ক্ষুধা আরো বেশি আরবান লাইফস্টাইল নির্ভর হবে। অর্থাৎ আশি-নব্বইয়ের দশকের কিশোরদের জন্য আরো অ্যাডভেঞ্চারধর্মী কিছু প্রয়োজন ছিল, যা সহজলভ্য। রকিব হাসান সেই গল্পটা দুনিয়ার স্বর্গে স্থাপন করলেন। যদিও এর আগে মাসুদ রানার মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্কদের জগতে অন্য ধরনের উন্মাদনা তৈরি করেছেন কাজী আনোয়ার হোসেন। তবে আমার ধারণা হলো, তিন গোয়েন্দা কিন্তু অবধারিতভাবে মাসুদ রানার ভবিষ্যৎ পাঠকদের প্রস্তুত করে দিচ্ছিল!
সেবা প্রকাশনীর আরো আরো সিরিজ বা বইয়ের মতো রকিব হাসানের তিন গোয়েন্দা যে বিদেশী গল্প অবলম্বনে সেটা তো শুরু থেকে পরিষ্কার। আবার ধরেন মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বা অন্যদের ক্ষেত্রে বিষয়টা জানতে আমাদের যথষ্ট সময়ই লেগেছে। অনুবাদ ও রূপান্তর নিয়ে রকিব হাসান বা কাজী আনোয়ার হোসেনের এই সংযম ও সততা আসলেই বিরল ও সম্মানযোগ্য।
এইটিজ ও নাইনটিজের কিশোরদের কাছে ‘তিন গোয়েন্দা’ একটা লিবারেল বা উদার পৃথিবীর আয়না। এ শব্দ ব্যবহারে আমি রাজনৈতিকভাবে সঠিক থাকার চেষ্টা করি নাই। তখন এমনকি শহরেও খেলার মাঠ, গাছাগাছালি সমেত পার্ক, নির্জন রাস্তা বা রহস্যময় গলি-গুপচির অভাব ছিল না। ভবঘুরে, পাগলও সমাজে পাত্তা পাইত। তাদের কেউ কেউ এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ মানুষও। তিন গোয়েন্দা, চাই কি টম সয়্যারের মতো ডাকাতদলও খুলে ফেলা যাইতো ওই সময় (সত্যি সত্যি ডাকাতি না করলে হয় আরকি)। মফস্বল বা আরেকটু গ্রামের দিকে হইলেও কিশোররা আরো স্বাধীন। তারা চাইলে অ্যাডভেঞ্চারের নানান বিষয় খুঁজে নিতে পারত। তিন গোয়েন্দা সেখানে নতুন একটা অপশন যোগ করছিল। একইসঙ্গে আমাদের সমাজে বিদ্যমান সাবেকিপনার বাইরে নতুন একটা উন্মুক্ত জগত। রকিব হাসানের গদ্যভঙ্গি সরল, যেন জীবনের মতো। সেখানে ইতিহাস-ঐতিহ্যের কৃত্রিম অনুগামী হওয়ার চেষ্টা নাই। সত্য-মিথ্যার প্রভেদ হলো কথা। যেখানে ক্যারেক্টারগুলো প্রায় সবাই স্বাধীন। ভালো-মন্দের ফারাক থাকবে বৈকি।
বাংলায় আপনি গোয়েন্দা কাহিনী বলতে খুন বা গুপ্তধন উন্মোচন করতে গেলে, সেখানে অবধারিত রিয়েলিটি হয়ে দাঁড়ায় পুরোনো দিনের জমিদারি, গোমস্তাগিরি, যারে এখনো যেন তোয়াজ করতে হবে। তিন গোয়েন্দার মতো বিদেশী সিরিজে বড়জোর প্রাইভেট প্রপার্টির আলাপ পাবেন। এ আলাপগুলো অনুমাননির্ভর, কিন্তু বাংলাদেশে বসেই তো করছি। এটাও ঠিক যে রকিব হাসান হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে অনেক কিছুতে ইন্টারভনশন করেন না, যতটা শুধু গল্পের রূপান্তরের খাতিরে করতে হইছে। তারপরও তো লেখক, যিনি শুধু বিদেশী বই রূপান্তর করতে বসেন নাই, একটা কানেকশন তৈরি করতে চাইছেন পাঠকের সঙ্গে—বাংলাদেশের পাঠকের সঙ্গে। স্বপ্ন দেখানোর মতো ব্যাপার তো বটেই। এসব বিষয় একটা প্রজন্মের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকার কথা। বাট ওইটা নিয়ে তত আলাপ করি নাই। এর বদলে আমাদের সমাজে জাতীয় আইডলগুলো গুরু-গম্ভীর ও লোকে পড়ে নাই এমনই!
সেবা প্রকাশনী বা এর তিন গোয়েন্দার মতো সিরিজগুলো এইটিজ-নাইনটিজে যতটা সমাদর পাইতো তা আর নাই, মানে অনেকটা ম্রীয়মান। এটা যেমন লেখকের সক্রিয় ক্রিয়েটিভ টাইমলাইনের ঘটনা, তেমনি সময়ের পরিবর্তনও। রকিব হাসান, শেখ আবদুল হাকিম, নিয়াজ মোরশেদ বা রওশন জামিল সেবা প্রকাশনী ছাড়ছেন অনেক আগে। তারা ছিলেন সেখানকার স্টার। মাঝে স্বত্ব নিয়ে শেখ আবদুল হাকিম কপি রাইট অফিসেও গেছিলেন। রকিব হাসানও তার ছেড়ে আসা নিয়ে স্পষ্ট বলেন নাই। বরং একই ক্যারেক্টার ও গল্প নিয়ে অন্য জায়গা থেকে লিখছেন। তিন গোয়েন্দার বিভিন্ন ফ্যান গ্রুপে এ নিয়ে আপত্তি দেখছিলাম। মানে একজন লেখক এত এত বেস্টসেলার লিখেও শেষ পর্যন্ত তার যথেষ্ট টাকা আসলে ছিল না। এটাই বাংলাদেশের প্রকাশনার রিয়েলিটি।
একইসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় তিন গোয়েন্দা ভক্তদের পেজগুলো খেয়াল করলে বোঝা যায়, তারা এখনো কতটা মিস করে কিশোর-রবিন-মুসাকে। সেই সুযোগ লুফে নিতে শটকার্ট আয়োজন দেখলাম। যেমন রকিব হাসান সেবা প্রকাশনী ছাড়ার পরও অন্যরা নিম্নমানের কাহিনী অ্যাড করছেন সিরিজে। সম্প্রতি অরিজিনাল ‘থ্রি ইনভেস্টিগেটরস’ বাংলায় অনুবাদের বিজ্ঞাপনও দেখলাম।
তিন গোয়েন্দা আইকনিক হয়ে ওঠায় প্রায়শ রকিব হাসানের অন্যান্য কাজের আলোচনা সামনে আসে না। তার দুর্দান্ত অনুবাদের মধ্যে রয়েছে ড্রাকুলা, তিমির প্রেম, ওল্ড ইয়েলোর, শিকারি পুরুষ, টারজান ও আলিফ লায়লা। এছাড়া আছে ‘আমার কৈশোর’ নামের অসাধারণ, কিন্তু ছোট দৈর্ঘ্যের একটা আত্মজীবনী।
একইসঙ্গে এটাও বলা যায়, তিন গোয়েন্দা দিয়েও রকিব হাসানের গল্প আমরা শেষ করতে পারি। কেন?
কারণ হইলো, সিরিজটার প্রভাব তার লেখা অন্য সবকিছুরে খাটো করে দেয়। এমনকি রূপান্তর বা অনূদিত কিনা সেই প্রশ্নের বাইরে গিয়ে থ্রিলার কেমনে লিখতে হয় তারও একটা গাইডলাইন বিবেচনা করা যেতে পারে সিরিজটারে। একজন থ্রিলার লেখক চাইলে বইগুলো সামনে রাখতে পারেন, অন্তত এটাকে বাদ দিতে চাইলেও। এমনকি আমি যেটা বলছিলাম শুরুতে, রকিব হাসান কেমনে আউট ল’দের সরদার হয়ে উঠছিলেন সেটা বোঝার ক্ষেত্রেও আপনি কিশোর-রবিন-মুসা ও তার প্রভাবিত জগতটা নিয়ে ভাবতে পারেন! সেই টাইমলাইন ধরে আমাদের কিশোর সাহিত্যের উত্থান-পতনের গ্রাফও আঁকা যাইতে পারে।
তিন গোয়েন্দা নয়, ‘আউট ল’ শব্দটা আপানারা পাইবেন সেবা প্রকাশনীর আরেকটা সিরিজে। ওয়েস্টার্ন। ব্যাপারটা এই, তিন গোয়েন্দা পড়াটাও আউট ল হওয়ার মতো ঘটনা। গড় সমাজে লেখাপড়া আর গাড়ি-ঘোড়ার যে সম্পর্ক সেখান থেকে এসব বইকে দেখা হইতো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ‘আউট বই’ পড়া মানে উচ্ছন্নে যাওয়া, পড়াশোনায় মন নাই; এসব কথা। আবার বইয়ের কভারে প্রজাপতি মার্কা লোগো বড়দের মনে যে নিষিদ্ধ স্মৃতি উসকে দিত না; এমন না। মানে বড়দের পাপবোধ বা প্রাপ্তমনস্কতার শাস্তি পাইতো ছোটরা। মোটের ওপর আপনি যদি নব্বইয়ের বাচ্চা ছেলেটা হন ব্যাপারটা কিছুট কল্পনা করতে পারবেন। সেইখানে রকিব হাসান ছিলেন বড়সড় হিরো!
তিন গোয়েন্দার জনরা কিশোর থ্রিলার, মূলত কামিং অফ ধাঁচের গল্প। অনেকটা শিশুতোষ গল্প হইলেও পড়ার আয়োজনটাই ছিল রোমাঞ্চকর ঘটনা। কখনো কখনো বড়দের ইঙ্গিতপূর্ণ সম্পর্কও উঠে আসছে। আপনি খুব বেশি বড় না হইলে সেটা অবশ্য বোঝার কথা না! তো, নাইনটিজ কিডসদের জন্য মোটামুটি আউট ল’র পর্যায়ে পড়ে যাওয়ার কথা। যদিও সিরিজের নায়করা মোটামুটি শৃঙ্খলপ্রবণ, বুদ্ধিমান ও চটপটে। হয়তো আমাদের মা-বাবারা এমনই চান। শুধু সারাদিন পড়ার বইয়ের মুখ গুজে থাকতে হবে।
নব্বয়ের দশকে বেড়ে উঠা কিশোরদের বড় একটা অংশের পড়ার টেবিলের নিচে, কোলের ওপর, বই বা খাতার চিপার ভেতর তিন গোয়েন্দা ছিল না—এটা ভাবাও দুষ্কর। এভাবে আউট ল হইতে হইতে বাচ্চাদের কাছে কিশোর পাশা, মুসা আমান ও রবিন মিলফোর্ডের সঙ্গে তাদের স্রষ্টা হয়ে উঠছিলেন পুরো একটা প্রজন্মের নায়ক।
‘হ্যাল্লো কিশোর বন্ধুরা—
আমি কিশোর পাশা বলছি আমেরিকার রকি বীচ থেকে। জায়গাটা লস অ্যাঞ্জেলসে, প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে। হলিউড থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে। যারা এখনও আমাদের পরিচয় জানো না, তাদের বলছি আমরা তিন বন্ধু একটা গোয়েন্দা সংস্থা খুলেছি। নাম তিন গোয়েন্দা।
আমি বাঙালি, থাকি চাচা-চাচীর কাছে। দুই বন্ধুর একজনের নাম মুসা আমান। ব্যায়ামবীর, আমেরিকান নিগ্রো; অন্যজন আইরিশ আমেরিকান, রবিন মিলফোর্ড, বইয়ের পোকা। একই ক্লাসে পড়ি আমরা।
পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে লোহা-লক্কড়ের জঞ্জালের নিচে পুরান এক মোবাইল হোম-এ আমাদের হেডকোয়ার্টার। তিনটি রহস্যের সমাধান করতে চলেছি— এসো না, চলে এসো আমাদের দলে।’
সেবা প্রকাশনীর তিন গোয়েন্দার বইগুলোর তৃতীয় পৃষ্টায় এ পরিচিতিটুকু থাকত। এ প্রকাশনীর কুয়াশা বা মাসুদ রানা; অন্যান্য সিরিজেও এই পরিচিতি থাকত। অন্য অনেক তফাতের মধ্যে বড়দের এ দুই সিরিজের কেন্দ্র হলো ঢাকা। যা শুরুতে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকা; যেখানে পুব বাঙলার মানুষের জাতীয়তাবাদী চেতনা নানান ভাঙা-গড়ার মধ্যে দিয়ে একটা আদল নেয়। একটা সাংস্কৃতিক বয়ান প্রধানও হয়ে উঠে, যার থেকে কিছু ব্রাত্য এসব থ্রিলার জাতীয় রচনা। অন্যদিকে পশ্চিমবাংলার গল্প আর সেই অর্থে রাজধানীর হয়ে উঠল না। বড় জোর স্মৃতিকাতরতা। কুয়াশায় আমরা দেখি ব্রিটিশ ইন্ডিয়া থেকে ভাগ হওয়ার পর এখানকার ইনস্টিটিউশনগুলো তৈরি হচ্ছে। মাসুদ রানা পুরোপুরি পাকিস্তানের স্বার্থকেন্দ্রিক গল্প। আবার বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বাধীন দেশের নায়কও এরা।
এই জায়গায় তিন গোয়েন্দার তাৎপর্য আলাদা। মাসুদ রানা বা কুয়াশা বিদেশে অ্যাডভেঞ্চার করলেও তিন গোয়েন্দা পুরোপুরি বিদেশকেন্দ্রিক। দুনিয়ার স্বর্গ আমেরিকায় দুর্দান্ত সব কাণ্ড ঘটাচ্ছে কিশোর, রবিন ও মুসা। যারা সবাই অভিবাসীদের সন্তান, তাদের বাংলাদেশের কোনো ইনস্টিটিউশনের সঙ্গে তাল মেলানোর দরকার নাই। তিন কিশোর বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড ও আফ্রিকা থেকে যাওয়া মানুষের সন্তান। মূল চরিত্রগুলো রবার্ট আর্থার জুনিয়রের দ্য থ্রি ইনভেস্টিগেটর্স সিরিজ থেকে নেয়া হলেও গল্পে মূলত আমেরিকান ড্রিমের প্রতি আগ্রহ। এরা নিতান্ত মধ্যবিত্তের সন্তান। এদের বাবা-চাচারা কেউ স্যালভেজ ইয়ার্ডের মালিক, সাংবাদিক বা সিনেমার টেকনিশিয়ান। কিন্তু এ কিশোররা কী খায়, কেমনে রিয়্যাক্ট সেটা পাঠকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিশোররা যে অনেককে বার্গার খাইতে শিখাইছে, এমনই তো হওয়ার কথা।
দ্য থ্রি ইনভেস্টিগেটর্স সিরিজের ফর্মুলা অনুযায়ী, কিশোর পাশা বুদ্ধিমত্তায় সবাইকে হারিয়ে দেয়। মুসা আমান ভূতের ভয়ে কাবু হলেও শত্রুকে কুপোকাত করতে যথেষ্ট। আর রবিন মিলফোর্ড হলো গবেষক। মানে কেউ একাই সব নয়। তাহলে বাজার চলতি বাচ্চাদের সাপ্লিমেন্টের কথা ভাবুন, যারা বলে সেটি খেলে বাচ্চারা একইসঙ্গে টলার, শার্পার, হেলথি ও আরো কী কী যেন হবে। শুধু বাচ্চারা না; মা-বাবারা যদি তিন গোয়েন্দা পড়ত বুঝতে পারতে বাচ্চাদের একসঙ্গে অনেককিছু না হলেও চলে।
তিন গোয়েন্দা প্রথম প্রকাশ হয় ১৯৮৫ সালের আগস্টে। গল্প নেয়া হয়েছে থ্রি ইনভেস্টিগেটর্স সিরিজের প্রথম বই ‘দ্য সিক্রেট অব টেরর ক্যাসল’ থেকে, যার লেখক ছিলেন রবার্ট আর্থার। ওই সিরিজ লেখক ছিলেন একাধিক, যেখানে বিক্রি বাড়াতে প্রকাশনা সংস্থা র্যানডম হাউজ বিখ্যাত নির্মাতা আলফ্রেড হিচকককে চরিত্র আকারে ঢুকিয়ে দেয়; যা তিন গোয়েন্দা এসে পরিণত হয় ডেভিস ক্রিস্টোফারে। শুধু ক্রিস্টোফার ডেভিস নন, হলিউড-সমসাময়িক বিজ্ঞান-পশ্চিমা ইতিহাস নানাভাবে ঢুকে গেছে গল্পগুলোয়। আমাজানের জঙ্গল থেকে দক্ষিণ সাগর—লার্জার দ্যান লাইফ অ্যাডভেঞ্চারগুলো আশি-নব্বই এমনকি এখনকার বাচ্চাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। এর ইফেক্ট আমাদের সমাজে আসলে কেমন? এ বিষয়ে খানিকটা বলব পরবর্তীতে।
বিশ্বে প্রথম আধুনিক গোয়েন্দা গল্প হিসেবে স্বীকৃত এডগার অ্যালান পোর ‘দ্য মার্ডার ইন দ্য রু মর্গ’। বাংলা ভাষায় বলতে গেলে হয়তো আমরা পশ্চিমবাংলা থেকেই ধার করব। কিন্তু বাচ্চাদের জন্য এখানে বরাবরই বরাদ্দ ছিল রূপকথা। যেটা শেখায় রাজার ছেলের জন্ম হয় মূলত রাজা হওয়ার জন্যই। আর ছিল বড়দের জন্য লেখা বইগুলো। যেমন দস্যু বনহুর। রকিব হাসানের এক সাক্ষাৎকারে পাইলাম দস্যু বাহরাম, দস্যু মোহন ও স্বপনকুমার সিরিজের নাম। নাম শুনেই বোঝা যায় নতুন দেশে যে মধ্যবিত্তের বিকাশ ঘটছে; তার সঙ্গে মানানসই নয়, মানে তাদের ক্ষুধা আরো বেশি আরবান লাইফস্টাইল নির্ভর হবে। অর্থাৎ আশি-নব্বইয়ের দশকের কিশোরদের জন্য আরো অ্যাডভেঞ্চারধর্মী কিছু প্রয়োজন ছিল, যা সহজলভ্য। রকিব হাসান সেই গল্পটা দুনিয়ার স্বর্গে স্থাপন করলেন। যদিও এর আগে মাসুদ রানার মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্কদের জগতে অন্য ধরনের উন্মাদনা তৈরি করেছেন কাজী আনোয়ার হোসেন। তবে আমার ধারণা হলো, তিন গোয়েন্দা কিন্তু অবধারিতভাবে মাসুদ রানার ভবিষ্যৎ পাঠকদের প্রস্তুত করে দিচ্ছিল!
সেবা প্রকাশনীর আরো আরো সিরিজ বা বইয়ের মতো রকিব হাসানের তিন গোয়েন্দা যে বিদেশী গল্প অবলম্বনে সেটা তো শুরু থেকে পরিষ্কার। আবার ধরেন মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বা অন্যদের ক্ষেত্রে বিষয়টা জানতে আমাদের যথষ্ট সময়ই লেগেছে। অনুবাদ ও রূপান্তর নিয়ে রকিব হাসান বা কাজী আনোয়ার হোসেনের এই সংযম ও সততা আসলেই বিরল ও সম্মানযোগ্য।
এইটিজ ও নাইনটিজের কিশোরদের কাছে ‘তিন গোয়েন্দা’ একটা লিবারেল বা উদার পৃথিবীর আয়না। এ শব্দ ব্যবহারে আমি রাজনৈতিকভাবে সঠিক থাকার চেষ্টা করি নাই। তখন এমনকি শহরেও খেলার মাঠ, গাছাগাছালি সমেত পার্ক, নির্জন রাস্তা বা রহস্যময় গলি-গুপচির অভাব ছিল না। ভবঘুরে, পাগলও সমাজে পাত্তা পাইত। তাদের কেউ কেউ এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ মানুষও। তিন গোয়েন্দা, চাই কি টম সয়্যারের মতো ডাকাতদলও খুলে ফেলা যাইতো ওই সময় (সত্যি সত্যি ডাকাতি না করলে হয় আরকি)। মফস্বল বা আরেকটু গ্রামের দিকে হইলেও কিশোররা আরো স্বাধীন। তারা চাইলে অ্যাডভেঞ্চারের নানান বিষয় খুঁজে নিতে পারত। তিন গোয়েন্দা সেখানে নতুন একটা অপশন যোগ করছিল। একইসঙ্গে আমাদের সমাজে বিদ্যমান সাবেকিপনার বাইরে নতুন একটা উন্মুক্ত জগত। রকিব হাসানের গদ্যভঙ্গি সরল, যেন জীবনের মতো। সেখানে ইতিহাস-ঐতিহ্যের কৃত্রিম অনুগামী হওয়ার চেষ্টা নাই। সত্য-মিথ্যার প্রভেদ হলো কথা। যেখানে ক্যারেক্টারগুলো প্রায় সবাই স্বাধীন। ভালো-মন্দের ফারাক থাকবে বৈকি।
বাংলায় আপনি গোয়েন্দা কাহিনী বলতে খুন বা গুপ্তধন উন্মোচন করতে গেলে, সেখানে অবধারিত রিয়েলিটি হয়ে দাঁড়ায় পুরোনো দিনের জমিদারি, গোমস্তাগিরি, যারে এখনো যেন তোয়াজ করতে হবে। তিন গোয়েন্দার মতো বিদেশী সিরিজে বড়জোর প্রাইভেট প্রপার্টির আলাপ পাবেন। এ আলাপগুলো অনুমাননির্ভর, কিন্তু বাংলাদেশে বসেই তো করছি। এটাও ঠিক যে রকিব হাসান হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে অনেক কিছুতে ইন্টারভনশন করেন না, যতটা শুধু গল্পের রূপান্তরের খাতিরে করতে হইছে। তারপরও তো লেখক, যিনি শুধু বিদেশী বই রূপান্তর করতে বসেন নাই, একটা কানেকশন তৈরি করতে চাইছেন পাঠকের সঙ্গে—বাংলাদেশের পাঠকের সঙ্গে। স্বপ্ন দেখানোর মতো ব্যাপার তো বটেই। এসব বিষয় একটা প্রজন্মের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকার কথা। বাট ওইটা নিয়ে তত আলাপ করি নাই। এর বদলে আমাদের সমাজে জাতীয় আইডলগুলো গুরু-গম্ভীর ও লোকে পড়ে নাই এমনই!
সেবা প্রকাশনী বা এর তিন গোয়েন্দার মতো সিরিজগুলো এইটিজ-নাইনটিজে যতটা সমাদর পাইতো তা আর নাই, মানে অনেকটা ম্রীয়মান। এটা যেমন লেখকের সক্রিয় ক্রিয়েটিভ টাইমলাইনের ঘটনা, তেমনি সময়ের পরিবর্তনও। রকিব হাসান, শেখ আবদুল হাকিম, নিয়াজ মোরশেদ বা রওশন জামিল সেবা প্রকাশনী ছাড়ছেন অনেক আগে। তারা ছিলেন সেখানকার স্টার। মাঝে স্বত্ব নিয়ে শেখ আবদুল হাকিম কপি রাইট অফিসেও গেছিলেন। রকিব হাসানও তার ছেড়ে আসা নিয়ে স্পষ্ট বলেন নাই। বরং একই ক্যারেক্টার ও গল্প নিয়ে অন্য জায়গা থেকে লিখছেন। তিন গোয়েন্দার বিভিন্ন ফ্যান গ্রুপে এ নিয়ে আপত্তি দেখছিলাম। মানে একজন লেখক এত এত বেস্টসেলার লিখেও শেষ পর্যন্ত তার যথেষ্ট টাকা আসলে ছিল না। এটাই বাংলাদেশের প্রকাশনার রিয়েলিটি।
একইসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় তিন গোয়েন্দা ভক্তদের পেজগুলো খেয়াল করলে বোঝা যায়, তারা এখনো কতটা মিস করে কিশোর-রবিন-মুসাকে। সেই সুযোগ লুফে নিতে শটকার্ট আয়োজন দেখলাম। যেমন রকিব হাসান সেবা প্রকাশনী ছাড়ার পরও অন্যরা নিম্নমানের কাহিনী অ্যাড করছেন সিরিজে। সম্প্রতি অরিজিনাল ‘থ্রি ইনভেস্টিগেটরস’ বাংলায় অনুবাদের বিজ্ঞাপনও দেখলাম।
তিন গোয়েন্দা আইকনিক হয়ে ওঠায় প্রায়শ রকিব হাসানের অন্যান্য কাজের আলোচনা সামনে আসে না। তার দুর্দান্ত অনুবাদের মধ্যে রয়েছে ড্রাকুলা, তিমির প্রেম, ওল্ড ইয়েলোর, শিকারি পুরুষ, টারজান ও আলিফ লায়লা। এছাড়া আছে ‘আমার কৈশোর’ নামের অসাধারণ, কিন্তু ছোট দৈর্ঘ্যের একটা আত্মজীবনী।
একইসঙ্গে এটাও বলা যায়, তিন গোয়েন্দা দিয়েও রকিব হাসানের গল্প আমরা শেষ করতে পারি। কেন?
কারণ হইলো, সিরিজটার প্রভাব তার লেখা অন্য সবকিছুরে খাটো করে দেয়। এমনকি রূপান্তর বা অনূদিত কিনা সেই প্রশ্নের বাইরে গিয়ে থ্রিলার কেমনে লিখতে হয় তারও একটা গাইডলাইন বিবেচনা করা যেতে পারে সিরিজটারে। একজন থ্রিলার লেখক চাইলে বইগুলো সামনে রাখতে পারেন, অন্তত এটাকে বাদ দিতে চাইলেও। এমনকি আমি যেটা বলছিলাম শুরুতে, রকিব হাসান কেমনে আউট ল’দের সরদার হয়ে উঠছিলেন সেটা বোঝার ক্ষেত্রেও আপনি কিশোর-রবিন-মুসা ও তার প্রভাবিত জগতটা নিয়ে ভাবতে পারেন! সেই টাইমলাইন ধরে আমাদের কিশোর সাহিত্যের উত্থান-পতনের গ্রাফও আঁকা যাইতে পারে।
সেদিনও বিকেলটা কেটে যাচ্ছিল টিকটকের অতল গহ্বরে। জানেন তো, ওই যে যখন স্ক্রল করতে করতে দুনিয়ার আর কোনো হুঁশ থাকে না, মগজটা যেন অন্য কারও কাছে বন্ধক রাখা। ঠিক তখনই চোখে পড়ল একটা ভিডিও। ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার শহরের কোনো এক বিল্ডিংয়ের ভেতরের দৃশ্য।
২ দিন আগেডায়ান কিটন কেবলই অভিনেত্রী ছিলেন না, ছিলেন এক সাংস্কৃতিক বিস্ময়; সারল্য ও অকৃত্রিমতার আইকন, হাতের ইশারা ও নিখুঁত তোতলামিতে গভীর, হাস্যকর ও হৃদয়বিদারক সত্যি তুলে ধরার এক অনন্য শিল্পী। লা-দি-দা-খ্যাত এই শিল্পীর প্রতি পপস্ট্রিমের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
৪ দিন আগেএকটা ছবি বড়জোর কিই-বা করতে পারে? একটা ছবি হয়তো অনেক কিছুই করতে পারে। কিন্তু কেউই হয়তো বলবেন না, একটি ছবি পুঁজিবাদ বিরোধী শহীদকে বানিয়ে দিতে পারে পুঁজি বাজারের ফ্যাশন আইকন।
৭ দিন আগেঢালিউডের প্রথম মেগাস্টার, নায়ক জসিমের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এক সময়ের এ্যাকশন সুপারস্টার জসিমের লিগেসি কেমন? কিভাবে জসিমের সিনেমা দেখতেছে তরুণ প্রজন্ম? জসিম কিভাবে হয়ে উঠছে মিম ম্যাটেরিয়ালের উৎস?
৮ দিন আগে