leadT1ad

পুতিনের দিল্লি সফর ভূরাজনীতিতে কী ইঙ্গিত দিচ্ছে

এই সফরে এমন সব চুক্তি হতে পারে, যা ভারতসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও জ্বালানি ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা কাঠামো ও শক্তির ভারসাম্য বদলে দিতে পারে। একই সঙ্গে তা পশ্চিমের বাইরে নতুন এক ভূরাজনৈতিক অবস্থানের প্রতীকও হয়ে উঠবে, যা বহুমেরু বিশ্বব্যবস্থাকে আরও এগিয়ে নিতে পারে।

চারবছর পর ভারত সফরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। স্ট্রিম গ্রাফিক

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (৪ ডিসেম্বর ২০২৫) দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতের নয়াদিল্লিতে পৌঁছান। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর এটি তার প্রথম ভারত সফর। এই সফরকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলন। যুদ্ধ ও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরাসরি বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন বন্ধ ছিল। এবার সেই ধারাবাহিকতা আবার শুরু হলো।

দুই দেশের নেতারা তাদের দীর্ঘদিনের ‘বিশেষ ও সুবিধাপ্রাপ্ত কৌশলগত অংশীদারত্ব’ পর্যালোচনা ও জোরদারের লক্ষ্য নিয়ে বসবেন। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও মস্কো ও নয়াদিল্লি সম্পর্ককে আরও গভীর করতে চায়। পুতিনের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল রয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলৌসোভ ও শীর্ষ ব্যবসায়িক কর্মকর্তারা। সফরের মূল লক্ষ্য ব্যবসা ও প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো।

প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও বাণিজ্য বিষয়ে ১০ থেকে ১৫টি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২৭ ঘণ্টার এই সফর এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইউক্রেন সংকট সমাধানের প্রচেষ্টা স্থবির, রুশ সেনারা সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি দেখিয়েছে এবং বাণিজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত উত্তেজনা বেড়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, পুতিনের দিল্লি সফর মূলত বাস্তববাদী স্বার্থের প্রতিফলন। ভারতের জন্য এটি প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুযোগ, আর রাশিয়ার জন্য অর্থনৈতিক সহায়তার পথ অব্যাহত রাখার উপায়। যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের মধ্যেও দুই দেশ তাদের সম্পর্ক ধরে রাখছে।

এই সফরে এমন সব চুক্তি হতে পারে, যা ভারতসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও জ্বালানি ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা কাঠামো ও শক্তির ভারসাম্য বদলে দিতে পারে। একই সঙ্গে তা পশ্চিমের বাইরে নতুন এক ভূরাজনৈতিক অবস্থানের প্রতীকও হয়ে উঠবে, যা বহুমেরু বিশ্বব্যবস্থাকে আরও এগিয়ে নিতে পারে।

পুতিনের দিল্লি আগমন বহুমেরু বিশ্ব ব্যবস্থার দিকে একটি স্পষ্ট সংকেত। ভারত তার ‘কৌশলগত স্বার্বভৌমত্ব’ নীতি পুনর্ব্যক্ত করছে—যেখানে পশ্চিমা জোটের সঙ্গে থেকেও সে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছে। ভারত ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়াকে সরাসরি নিন্দা না করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছে।

এই সফরের লক্ষ্য কী

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পরবর্তী পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন গতি আনাই পুতিনের দিল্লি সফরের মূল লক্ষ্য। ভারত এখন রাশিয়ার অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক সহায়ক।

ভারত সমুদ্রপথে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় অপরিশোধিত তেল আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি ভারত রুশ অস্ত্র, সার ও অন্যান্য পণ্যেরও বড় ক্রেতা।

২০২২ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি মোট আমদানির ২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় ৩৬ শতাংশে দাঁড়ায়। ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা পুতিন-মোদির আলোচনায় প্রধান বিষয়গুলো হলো—

১. বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা

দুই দেশের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা। ২০২৫ অর্থবছরে এ অঙ্ক ছিল ৬৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে আমদানির তুলনায় ভারতের রপ্তানি অনেক কম—৪ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির বিপরীতে ৬৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি। রুশ বাজারে ভারতীয় ওষুধ, কৃষিপণ্য, যন্ত্রপাতি ইত্যাদির রপ্তানি বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

২. প্রতিরক্ষা সহযোগিতা

এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ দ্রুততর করা, সু-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান উন্নয়ন, যৌথভাবে সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন এবং সম্ভাব্যভাবে সু-৫৭ স্টেলথ ফাইটার কেনা—এসব বিষয়ও আলোচনার কেন্দ্রে। এস-৫০০ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা নিয়েও প্রাথমিকভাবে কথা হতে পারে, যা ভারতের স্যাটেলাইট প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে পারে এবং পাকিস্তান-চীন সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে শক্তির ভারসাম্য বদলাতে পারে।

৩. জ্বালানি ও পারমাণবিক সহযোগিতা

রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনার জবাবও এই আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। পুতিন পশ্চিমা দেশগুলোর রুশ পারমাণবিক জ্বালানির ওপর নির্ভরতা তুলে ধরে তাদের অবস্থানের দ্বিচারিতা উল্লেখ করেন। পারমাণবিক বিদ্যুৎ ও মহাকাশ সহযোগিতা নিয়ে নতুন চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে।

৪. অন্যান্য খাত

জাহাজ চলাচল, স্বাস্থ্যসেবা, সার, যোগাযোগ, শ্রমশক্তি বিনিময়, আধুনিক প্রযুক্তি ইত্যাদি খাতে চুক্তি প্রত্যাশিত। প্রথমবারের মতো রাশিয়ার সঙ্গে পারস্পরিক সরঞ্জাম বিনিময় চুক্তি (আরইএলওএস) নিয়ে আলোচনা এগোতে পারে। এতে উভয় দেশ একে অপরের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করতে পারবে, যা ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক অগ্রগতি।

সার্বিকভাবে মনে হচ্ছে উদীয়মান শক্তিগুলো এখন আর একপক্ষ বেছে নিতে আগ্রহী নয়। তারা নিজেদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বহুমুখী সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। বিশ্লেষকদের মতে, এই সফর রাশিয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একঘরে হয়ে পড়েছে বলে যে ধারণা ছিল, তা অনেকটাই দূর করে।

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এই সফর কী ইঙ্গিত দিচ্ছে

পুতিনের দিল্লি আগমন বহুমেরু বিশ্ব ব্যবস্থার দিকে একটি স্পষ্ট সংকেত। ভারত তার ‘কৌশলগত স্বার্বভৌমত্ব’ নীতি পুনর্ব্যক্ত করছে—যেখানে পশ্চিমা জোটের সঙ্গে থেকেও সে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছে। ভারত ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়াকে সরাসরি নিন্দা না করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছে।

আবার একই সঙ্গে কোয়াড জোটে যুক্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় কাজ করছে।

পুতিনকে আতিথেয়তা দেওয়া মূলত পশ্চিমা দেশগুলোর রাশিয়াকে একঘরে করার প্রচেষ্টাকে চ্যালেঞ্জ করে, বিশেষত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) যুদ্ধাপরাধ অভিযোগ সত্ত্বেও। ভারত রাশিয়ার বিরুদ্ধে আইসিসির অভিযোগকে স্বীকৃতি দেয় না।

রাশিয়ার জন্য এটি বৈশ্বিক বিচ্ছিন্নতা ভাঙার কৌশল। মস্কো ভারতকে ব্রিকস-এর অন্যতম বড় শক্তি মনে করে এবং ডি-ডলারাইজেশনসহ বিকল্প বাণিজ্য ব্যবস্থায় ভারতের সঙ্গে কাজ করছে। এ সফর আরও কিছু বিষয় সামনে আনে—

যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক প্রভাবের বিরুদ্ধে অবস্থান: তেল কেনা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ প্রত্যাখ্যান করে ভারত-রাশিয়া উভয়েই নিজেদের সিদ্ধান্তগ্রহণের সার্বভৌমত্ব তুলে ধরছে।

বৈশ্বিক সম্পর্ক পুনর্গঠন: গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, সাইবার নিরাপত্তা, মধ্য এশিয়া ও আর্কটিক সম্পদে প্রবেশাধিকার—এসব সহযোগিতা আবার সক্রিয় হতে পারে।

আঞ্চলিক নিরাপত্তা: ভারত-চীন সীমান্ত উত্তেজনা ও পাকিস্তানের অস্থিতিশীলতার সময়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ভারতের জন্য কৌশলগত শক্তি বাড়াবে।

বহুমেরুত্ব: ব্রিকস ও এসসিও-র মতো জোটগুলোর গুরুত্ব আরও বাড়তে পারে। এগুলো পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন বৈশ্বিক ব্যবস্থার বিকল্প কাঠামো হিসেবে দাঁড়াবে। রাশিয়া চায় ভারত ইউরেশীয় অঞ্চলে আরও দৃঢ় ভূমিকা নিক, যাতে চীন ও পশ্চিমা শক্তির মাঝে ভারসাম্য রাখা যায়। এতে স্পষ্ট হয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বহুমেরু বিশ্বে ভারত সব পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করছে।

সার্বিকভাবে মনে হচ্ছে উদীয়মান শক্তিগুলো এখন আর একপক্ষ বেছে নিতে আগ্রহী নয়। তারা নিজেদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বহুমুখী সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। বিশ্লেষকদের মতে, এই সফর রাশিয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একঘরে হয়ে পড়েছে বলে যে ধারণা ছিল, তা অনেকটাই দূর করে।

পুতিনের দিল্লি সফর বৈশ্বিক রাজনীতির পরিবর্তিত বাস্তবতার এক প্রতিচ্ছবি। এই সফর পুরোনো মিত্রতার স্থায়িত্ব প্রমাণ করে, আবার একই সঙ্গে বহু দিক থেকে সমঝোতা ও চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। ভারতের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির দৃঢ়তা এতে স্পষ্ট হলেও, চূড়ান্ত ফল নির্ভর করবে নয়াদিল্লি কীভাবে প্রতিক্রিয়া সামাল দেয় তার ওপর। এই শীর্ষ বৈঠকের পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলো বৈশ্বিক স্থিতি সুসংহতও করতে পারে, আবার কিছু ক্ষেত্রে উত্তেজনাও বাড়াতে পারে।

ভূরাজনীতিতে এর সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে

ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ার ফলে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সমীকরণে নতুন পরিবর্তন আসতে পারে। এতে ইতিবাচক সম্ভাবনা যেমন আছে, তেমনি ঝুঁকিও রয়েছে।

ইতিবাচক ফল: ভারত-রাশিয়া ঘনিষ্ঠতার দিক থেকে

নতুন চুক্তিগুলো ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা আরও সুদৃঢ় করতে পারে। এতে পশ্চিমা অস্ত্রের ওপর নির্ভরতা কমবে এবং উচ্চপ্রযুক্তি খাতে যৌথ উদ্যোগের সুযোগ বাড়বে। পারস্পরিক সরঞ্জাম বিনিময় চুক্তি (আরইএলওএস) হলে দুই দেশ পরস্পরের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের সুযোগ পাবে। এটি যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক সরঞ্জাম বিনিময় চুক্তি থেকে ভিন্ন একটি কৌশলগত অবস্থান তৈরি করবে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারসাম্য আসতে পারে। আর্কটিক শিপিং রুট ব্যবহারের সুযোগ পেলে ভারত বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে আরও প্রভাবশালী ভূমিকা নিতে পারবে।

ইউক্রেন ইস্যুতে মোদি কূটনীতির মাধ্যমে কিছু ছাড় আদায়ে চাপ দিতে পারেন। এতে ভারত মধ্যস্থতাকারী হিসেবে অবস্থান শক্ত করতে পারে।

ঝুঁকি ও বিস্তৃত প্রভাব

পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন: যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো ভারতকে লক্ষ করে বাড়তি নিষেধাজ্ঞা বা আমদানি শুল্ক আরোপ করতে পারে। এতে বাণিজ্য আলোচনা কঠিন হবে এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হবে। কোয়াড জোটেও ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতা কমতে পারে। এতে রাশিয়াবিরোধী ঐক্য দুর্বল হওয়ার অভিযোগে পশ্চিমারা ভারতকে কিছুটা কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করতে পারে।

আঞ্চলিক সামরিক উত্তেজনা: এস-৫০০ এর মতো উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দক্ষিণ এশিয়ায় অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়াতে পারে। পাকিস্তানের নজরদারি স্যাটেলাইট কিংবা চীনের প্রভাব—উভয় ক্ষেত্রেই এর কৌশলগত প্রভাব পড়বে। সমালোচকেরা বলছেন, প্রকাশ্যে ভারত-রাশিয়ার এই ঘনিষ্ঠতা জোরদার ইউক্রেন ইস্যুতে ভারতের নিরপেক্ষ ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

বৈশ্বিক পরিণতি: পশ্চিমা অসন্তোষ থেকে বৈশ্বিক বাণিজ্য ধীর হয়ে যেতে পারে। এতে ব্রিকস-এর মতো জোট আরও শক্তিশালী হতে পারে। তবে যদি নিষেধাজ্ঞায় তেল আমদানি কমে যায়, তাহলে ১০০ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের লক্ষ্যও ভেস্তে যেতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব: এই সহযোগিতা সফল হলে এশিয়া ও আফ্রিকার আরও অনেক দেশ পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে নিজেদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত হতে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমবে এবং বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা দ্রুত স্পষ্ট হবে। তবে বাণিজ্য ঘাটতি ও কাঠামোগত সমস্যা সমাধান না হলে এই অংশীদারত্ব ভবিষ্যতে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

পুতিনের দিল্লি সফর বৈশ্বিক রাজনীতির পরিবর্তিত বাস্তবতার এক প্রতিচ্ছবি। এই সফর পুরোনো মিত্রতার স্থায়িত্ব প্রমাণ করে, আবার একই সঙ্গে বহু দিক থেকে সমঝোতা ও চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। ভারতের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির দৃঢ়তা এতে স্পষ্ট হলেও, চূড়ান্ত ফল নির্ভর করবে নয়াদিল্লি কীভাবে প্রতিক্রিয়া সামাল দেয় তার ওপর। এই শীর্ষ বৈঠকের পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলো বৈশ্বিক স্থিতি সুসংহতও করতে পারে, আবার কিছু ক্ষেত্রে উত্তেজনাও বাড়াতে পারে।

সার্বিকভাবে, এই সফর শুধু চুক্তি নয়—ভূরাজনৈতিক সমীকরণ পুনর্গঠনের এক সম্ভাব্য সূচনা। এটি দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা, বৈশ্বিক শক্তি সম্পর্ক এবং বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার পথে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, বিবিসি, সিএনএন, এপি, রয়টার্স, ফরেন পলিসি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস, এনডি টিভি, দ্য হিন্দু

Ad 300x250

সম্পর্কিত