ভর্তির ক্ষেত্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানেরা বিশেষ কোনো সুবিধা পাবেন কি না, তা নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে পক্ষে-বিপক্ষে কর্মসূচি চলছে।
স্ট্রিম সংবাদদাতা
ভর্তির ক্ষেত্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানেরা বিশেষ কোনো সুবিধা পাবেন কি না, তা নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে পক্ষে-বিপক্ষে কর্মসূচি চলছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে কর্মরতদের সন্তানেরা বিশেষ কোনো সুবিধা পেতে পারেন না। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করেন, এ সুবিধা তাদের ‘অধিকার’।
এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে বিরোধ এখন তুঙ্গে। পোষ্য কোটা ইস্যুতে আন্দোলন চলাকালে এক শিক্ষার্থীর গলা চেপে ধরার অভিযোগ উঠেছে, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপ-উপাচার্যসহ তিনজন কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন— এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট প্রতিনিধি নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই যখন অবস্থা, তখন অনেকেরই প্রশ্ন ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দিলে কার লাভ, কারই বা ক্ষতি। কর্মকর্তাদের ভাষ্য, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা বহাল কিংবা বাতিল যা-ই করা হোক না কেন, শিক্ষার্থীদের আসলে লাভ-ক্ষতি কিছুই নেই। তবে এ সুবিধা দিলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজেদের প্রতিষ্ঠানে সন্তানকে পড়াশোনা করানোর স্বপ্ন পূরণ হয়।
আর শিক্ষার্থীরা বলছেন, সুবিধাবঞ্চিতদের অধিকার নিশ্চিত করতে কোটা ব্যবস্থার উদ্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিরতদের সন্তানেরা তো সুবিধাবঞ্চিত নয়, তাঁরা যখন এই সুবিধা নিচ্ছে, এটি আসলে সুবিধাবঞ্চিতদের সঙ্গে মশকরা করার শামিল।
পোষ্য কোটা থেকে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা
গত বছরের জুলাই-আগস্টে সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরে গণঅভ্যুত্থান ঘটে। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর ওই বছরের সেপ্টেম্বরেই পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে সরব হতে শুরু করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাতে যোগ দেন। যদিও আশির দশক থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের সন্তানদের ভর্তির ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ কোটা সুবিধা পেতেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর প্রশাসন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির ক্ষেত্রে পোষ্য কোটা ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশ নির্ধারণ করে। এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
ফলে গত ১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘোষণা দেয়, পোষ্য কোটা ৩ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। আর এ সুবিধা পাবেন শুধু সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারীদের সন্তানেরা। এ সিদ্ধান্তও প্রত্যাখান করেন শিক্ষার্থীরা।
এর পরদিন (২ জানুয়ারি) প্রশাসন ভবনের ভেতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রেখে তালা মেরে দেন শিক্ষার্থীরা। ফলে ওই রাতেই উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন।
এদিকে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ১৭ সেপ্টেম্বর তারা ঘোষণা দেন, পোষ্য কোটা পুনর্বহাল করা না হলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দেবেন তারা। ফলে ১৮ সেপ্টেম্বর জরুরি সভায় বসে প্রশাসন। ওই সভায় পোষ্য কোটা ফিরে আসে ‘প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা’ নামে। এ সিদ্ধান্তও প্রত্যাখান করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
ঘটনাবহুল ২০ সেপ্টেম্বর
পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী কাফনের কাপড় গায়ে আমরণ অনশন শুরু করেন। পরে সেখানে আরও অন্তত ৮ জন শিক্ষার্থী যোগ দেন। অনশনকারীদের অভিযোগ, প্রশাসন রাকসু নির্বাচনের ব্যস্ততার সুযোগে গোপনে পোষ্যকোটা ফিরিয়ে এনেছে।
এরপর ২০ সেপ্টেম্বর বিকেলে আন্দোলন চলাকালে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন সাবেক সমন্বয়ক ও রাকসুতে জিএস পদপ্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মারের গলা চেপে ধরেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। অন্যদিকে মাঈন উদ্দিনসহ তিন শিক্ষক-কর্মকর্তা আন্দোলন শিক্ষার্থীদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাল্টা অভিযোগ তোলা হয়।
এ পরিস্থিতিতে রাতে আবার উপাচার্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় ভর্তি সুবিধা স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন। এর পরদিন রোববার সিন্ডিকেট সভায়ও এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা
প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা না পেয়ে ২১ সেপ্টেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে কর্মবিরতিতে যান শিক্ষকেরা।
প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার দাবিতে রাবি অফিসার্স সমিতির ঘোষণায় ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর শিক্ষক লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবিতের ২২ তারিখ থেকে এখনও ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখেছে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।
এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে গত সোমবার রাকসু নির্বাচন পেছানোর ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন। ২৫ সেপ্টেম্বর ওই ভোট হতো, নতুন তারিখ দেওয়া হয়েছে ১৬ অক্টোবর।
রাবি অফিসার্স সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় ভর্তি তাদের ‘অধিকার’। এ দাবি আদায়ে তারা কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় সন্তানদের ভর্তির সুবিধা না পেলে তারা আবার আন্দোলনে যাবেন।
শিক্ষক ফোরাম অবশ্য প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় ভর্তি নিয়ে ভাবছে না। তাদের দাবি শিক্ষক লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলছে শুধু শিক্ষক লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে। কারণ, শিক্ষার্থীরা যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নজিরবিহীন।’
কার লাভ, কার ক্ষতি
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, এতদিন তারা যে পোষ্য কোটা পেয়েছেন তা প্রত্যেক বিভাগের মেধা তালিকার জন্য নির্ধারিত আসনের অতিরিক্ত। অর্থাৎ, কোনো বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে অনুমোদিত ৫০টি আসন থাকলে তার সবই নেওয়া হয়েছে মেধাতালিকা থেকে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার (পোষ্য কোটা) ব্যাপারে সবশেষ যে নীতিমালা করে, তাতে বলা হয়— এ সুবিধা পেতে হলে শিক্ষার্থীকে অবশ্যই পাস নম্বর ৪০ পেতে হবে। আর প্রতি বিভাগে দুজনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখা জানিয়েছে, বর্তমানে বিভাগ রয়েছে ৫৯টি। আর ইনস্টিটিউট রয়েছে দুটি। সবমিলিয়ে ৬১টি বিভাগে ১২২ জনকে ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এবার ভর্তি পরীক্ষায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে সন্তানেরা অংশ নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে পাস নম্বর পেয়েছিলেন মাত্র ৬৪ জন। প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় শুধু তাদেরই ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এরমধ্যেই শুরু হয়েছে আন্দোলন। ফলে তাদের ভর্তি আটকে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় দুজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। কারণ, বিভাগে ইউজিসি নির্ধারিত আসনের সবগুলোতেই মেধার ভিত্তিতে ভর্তি নেওয়া হয়। এরপর অতিরিক্ত হিসেবে পোষ্য কোটা প্রচলিত ছিল।’
অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় ভর্তির বিরুদ্ধে যে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন, তারা বলছেন— এভাবে ভর্তির কারণে মেধার অবমূল্যায়ন হয়। মেধাবীরা বঞ্চিত হয়, অযোগ্যরা ভর্তি হয়। তবে এ ব্যাপারে একমত নন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখার উপ-রেজিস্ট্রার আসলাম হোসেন।
তিনি বলেন, ‘এটা তো মেধার ভিত্তিতে ভর্তির জন্য নির্ধারিত আসনের অতিরিক্ত। আর প্রত্যেক বিভাগে দুজন শিক্ষার্থী তো বেশি কিছু না। এমন তো না যে তারা ভর্তি হওয়ার কারণে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বসার জায়গা পাবে না।’
তবে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় ভর্তির বিপক্ষে আন্দোলনে থাকা ছাত্র অধিকার পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান মারুফ বলেন, ‘নির্ধারিত আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করলে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি–ইচ্ছুকদের কোনো ক্ষতি নেই, এটা যেমন সত্য; তেমনি এটাও সত্য যে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা বাড়ানো সম্ভব। কর্তৃপক্ষ তাহলে মেধাবীদের জন্যই কেন আসনসংখ্যা বাড়াচ্ছে না?’
অপব্যবহারে ক্ষোভ শিক্ষার্থীদের
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, অতীতে পোষ্য কোটার সুবিধার অপব্যবহারের কারণেই শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ জমেছে। বিষয়টি স্বীকার করছেন খোদ রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আলম মাসউদ। যদিও এখন অপব্যবহারের সুযোগ নেই, বলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত পাঁচ বছরেই পোষ্য কোটায় ৪২৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৯৬ জন, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ১০০ জন, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ১১৩ জন, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ৩৯ জন ও ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ৭৬ জন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়েছেন। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে মাত্র ১৯ নম্বর পেয়েও ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন এক শিক্ষার্থী। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ফেল করলেও শুধু পোষ্য কোটায় ৪৩ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
এসব নিয়ে তুমুল সমালোচনা ছিল। ক্ষোভ ছিল মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের। তবে অভ্যুত্থান পরবর্তী প্রশাসন ভর্তি পরীক্ষায় নূন্যতম পাস নম্বর ৪০ পাওয়া বাধ্যতামূলক করেছিল।
ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, ‘গত ১৫ বছরে পোষ্য কোটার যাচ্ছেতাই ব্যবহার হয়েছে, এটা তো সত্য। তবে আমরা এ ব্যাপারে কঠোর হয়েছি। গতবার তো আমরা আসার পরই ভর্তি শুরু হয়েছিল।’
ছাড় দিতে চান না কেউ
প্রাতিষ্ঠনিক সুবিধায় সন্তানদের ভর্তির সুযোগ কোনোভাবেই ছাড়তে চান না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আপাতত শিক্ষকেরা শিক্ষক লাঞ্ছনার ইস্যুতেই তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চাচ্ছেন। স্বার্থ থাকলেও তারা প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় ভর্তির বিষয়টি সামনে এনে তাদের আন্দোলন ‘খাটো’ করতে চাচ্ছেন না। তবে শিক্ষকেরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ দাবিতে মাঠে থাকার ব্যাপারে সমর্থন দিচ্ছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দিতে নারাজ। তাই তারা আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
রাবি অফিসার্স সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, ‘আমরা শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করেছি প্রশাসনের অনুরোধে। তবে আমরা দাবি মানতে সাতদিন সময় দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে আমরা লাগাতার আন্দোলনে যাব। এ ব্যাপারে ছাড় নয়।’
প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় ভর্তির বিরুদ্ধে গতবছর থেকেই সবচেয়ে বেশি সরব আছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও আসন্ন রাকসু নির্বাচনের স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বাম ছাত্র সংগঠনসহ সবাই এ কোটার বিরুদ্ধে। তারা কেউই প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় ভর্তির বিষয়টি মেনে নেবেন না বলে জানিয়েছেন।
কোটাবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সালাহউদ্দিন আম্মারের বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছেন শিক্ষকেরা। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার লোকজনও তার শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করছেন।
তবু এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন সালাহউদ্দিন আম্মার। তাঁর কথা, ‘আমাকে বহিষ্কার করলে করুক, তবু যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পোষ্য কোটা না থাকে। আমরা এটা থাকতে দেব না। ১ পার্সেন্ট কোটাও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না।’
প্রশাসনের ব্যর্থতায় অস্থিরতা
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কর্মকর্তা মনে করেন, বর্তমান প্রশাসনের ব্যর্থতায় ক্যাম্পাসে অস্থিরতা চলছে। তাঁদের মতে, প্রশাসনে যে শিক্ষকেরা এখন আছেন তাদের অভিজ্ঞতারও অভাব রয়েছে। এ জন্য উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব দফায় দফায় একবার এই পোষ্য কোটা দিয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের মুখে তা স্থগিতও করেছেন। এটি তাঁর অদূরদর্শিতার প্রমাণ।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে একজন ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ধরনের পরিস্থিতিতে আগের যে কোনো প্রশাসন অভিজ্ঞ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়েছে। তারপর সমাধান হয়েছে। তবে বর্তমান প্রশাসন কারও কাছ থেকে কোনো পরামর্শও নেয় না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিস্থিতির জন্য নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ। তিনি বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা আছে। সিলেট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন হলেও তারাও সেখানে বহাল করেছে। আমাদের এখানে শিক্ষার্থীরা মানছে না। এটা আসলে আমাদের দুর্ভাগ্য।’
ভর্তির ক্ষেত্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানেরা বিশেষ কোনো সুবিধা পাবেন কি না, তা নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে পক্ষে-বিপক্ষে কর্মসূচি চলছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে কর্মরতদের সন্তানেরা বিশেষ কোনো সুবিধা পেতে পারেন না। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করেন, এ সুবিধা তাদের ‘অধিকার’।
এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে বিরোধ এখন তুঙ্গে। পোষ্য কোটা ইস্যুতে আন্দোলন চলাকালে এক শিক্ষার্থীর গলা চেপে ধরার অভিযোগ উঠেছে, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপ-উপাচার্যসহ তিনজন কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন— এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট প্রতিনিধি নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই যখন অবস্থা, তখন অনেকেরই প্রশ্ন ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দিলে কার লাভ, কারই বা ক্ষতি। কর্মকর্তাদের ভাষ্য, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা বহাল কিংবা বাতিল যা-ই করা হোক না কেন, শিক্ষার্থীদের আসলে লাভ-ক্ষতি কিছুই নেই। তবে এ সুবিধা দিলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজেদের প্রতিষ্ঠানে সন্তানকে পড়াশোনা করানোর স্বপ্ন পূরণ হয়।
আর শিক্ষার্থীরা বলছেন, সুবিধাবঞ্চিতদের অধিকার নিশ্চিত করতে কোটা ব্যবস্থার উদ্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিরতদের সন্তানেরা তো সুবিধাবঞ্চিত নয়, তাঁরা যখন এই সুবিধা নিচ্ছে, এটি আসলে সুবিধাবঞ্চিতদের সঙ্গে মশকরা করার শামিল।
পোষ্য কোটা থেকে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা
গত বছরের জুলাই-আগস্টে সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরে গণঅভ্যুত্থান ঘটে। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর ওই বছরের সেপ্টেম্বরেই পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে সরব হতে শুরু করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাতে যোগ দেন। যদিও আশির দশক থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের সন্তানদের ভর্তির ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ কোটা সুবিধা পেতেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর প্রশাসন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির ক্ষেত্রে পোষ্য কোটা ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশ নির্ধারণ করে। এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
ফলে গত ১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘোষণা দেয়, পোষ্য কোটা ৩ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। আর এ সুবিধা পাবেন শুধু সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারীদের সন্তানেরা। এ সিদ্ধান্তও প্রত্যাখান করেন শিক্ষার্থীরা।
এর পরদিন (২ জানুয়ারি) প্রশাসন ভবনের ভেতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রেখে তালা মেরে দেন শিক্ষার্থীরা। ফলে ওই রাতেই উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন।
এদিকে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ১৭ সেপ্টেম্বর তারা ঘোষণা দেন, পোষ্য কোটা পুনর্বহাল করা না হলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দেবেন তারা। ফলে ১৮ সেপ্টেম্বর জরুরি সভায় বসে প্রশাসন। ওই সভায় পোষ্য কোটা ফিরে আসে ‘প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা’ নামে। এ সিদ্ধান্তও প্রত্যাখান করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
ঘটনাবহুল ২০ সেপ্টেম্বর
পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী কাফনের কাপড় গায়ে আমরণ অনশন শুরু করেন। পরে সেখানে আরও অন্তত ৮ জন শিক্ষার্থী যোগ দেন। অনশনকারীদের অভিযোগ, প্রশাসন রাকসু নির্বাচনের ব্যস্ততার সুযোগে গোপনে পোষ্যকোটা ফিরিয়ে এনেছে।
এরপর ২০ সেপ্টেম্বর বিকেলে আন্দোলন চলাকালে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন সাবেক সমন্বয়ক ও রাকসুতে জিএস পদপ্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মারের গলা চেপে ধরেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। অন্যদিকে মাঈন উদ্দিনসহ তিন শিক্ষক-কর্মকর্তা আন্দোলন শিক্ষার্থীদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাল্টা অভিযোগ তোলা হয়।
এ পরিস্থিতিতে রাতে আবার উপাচার্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় ভর্তি সুবিধা স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন। এর পরদিন রোববার সিন্ডিকেট সভায়ও এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা
প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা না পেয়ে ২১ সেপ্টেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে কর্মবিরতিতে যান শিক্ষকেরা।
প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার দাবিতে রাবি অফিসার্স সমিতির ঘোষণায় ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর শিক্ষক লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবিতের ২২ তারিখ থেকে এখনও ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখেছে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।
এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে গত সোমবার রাকসু নির্বাচন পেছানোর ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন। ২৫ সেপ্টেম্বর ওই ভোট হতো, নতুন তারিখ দেওয়া হয়েছে ১৬ অক্টোবর।
রাবি অফিসার্স সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় ভর্তি তাদের ‘অধিকার’। এ দাবি আদায়ে তারা কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় সন্তানদের ভর্তির সুবিধা না পেলে তারা আবার আন্দোলনে যাবেন।
শিক্ষক ফোরাম অবশ্য প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় ভর্তি নিয়ে ভাবছে না। তাদের দাবি শিক্ষক লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলছে শুধু শিক্ষক লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে। কারণ, শিক্ষার্থীরা যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নজিরবিহীন।’
কার লাভ, কার ক্ষতি
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, এতদিন তারা যে পোষ্য কোটা পেয়েছেন তা প্রত্যেক বিভাগের মেধা তালিকার জন্য নির্ধারিত আসনের অতিরিক্ত। অর্থাৎ, কোনো বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে অনুমোদিত ৫০টি আসন থাকলে তার সবই নেওয়া হয়েছে মেধাতালিকা থেকে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার (পোষ্য কোটা) ব্যাপারে সবশেষ যে নীতিমালা করে, তাতে বলা হয়— এ সুবিধা পেতে হলে শিক্ষার্থীকে অবশ্যই পাস নম্বর ৪০ পেতে হবে। আর প্রতি বিভাগে দুজনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখা জানিয়েছে, বর্তমানে বিভাগ রয়েছে ৫৯টি। আর ইনস্টিটিউট রয়েছে দুটি। সবমিলিয়ে ৬১টি বিভাগে ১২২ জনকে ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এবার ভর্তি পরীক্ষায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে সন্তানেরা অংশ নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে পাস নম্বর পেয়েছিলেন মাত্র ৬৪ জন। প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় শুধু তাদেরই ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এরমধ্যেই শুরু হয়েছে আন্দোলন। ফলে তাদের ভর্তি আটকে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় দুজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। কারণ, বিভাগে ইউজিসি নির্ধারিত আসনের সবগুলোতেই মেধার ভিত্তিতে ভর্তি নেওয়া হয়। এরপর অতিরিক্ত হিসেবে পোষ্য কোটা প্রচলিত ছিল।’
অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় ভর্তির বিরুদ্ধে যে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন, তারা বলছেন— এভাবে ভর্তির কারণে মেধার অবমূল্যায়ন হয়। মেধাবীরা বঞ্চিত হয়, অযোগ্যরা ভর্তি হয়। তবে এ ব্যাপারে একমত নন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখার উপ-রেজিস্ট্রার আসলাম হোসেন।
তিনি বলেন, ‘এটা তো মেধার ভিত্তিতে ভর্তির জন্য নির্ধারিত আসনের অতিরিক্ত। আর প্রত্যেক বিভাগে দুজন শিক্ষার্থী তো বেশি কিছু না। এমন তো না যে তারা ভর্তি হওয়ার কারণে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বসার জায়গা পাবে না।’
তবে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় ভর্তির বিপক্ষে আন্দোলনে থাকা ছাত্র অধিকার পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান মারুফ বলেন, ‘নির্ধারিত আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করলে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি–ইচ্ছুকদের কোনো ক্ষতি নেই, এটা যেমন সত্য; তেমনি এটাও সত্য যে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা বাড়ানো সম্ভব। কর্তৃপক্ষ তাহলে মেধাবীদের জন্যই কেন আসনসংখ্যা বাড়াচ্ছে না?’
অপব্যবহারে ক্ষোভ শিক্ষার্থীদের
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, অতীতে পোষ্য কোটার সুবিধার অপব্যবহারের কারণেই শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ জমেছে। বিষয়টি স্বীকার করছেন খোদ রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আলম মাসউদ। যদিও এখন অপব্যবহারের সুযোগ নেই, বলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত পাঁচ বছরেই পোষ্য কোটায় ৪২৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৯৬ জন, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ১০০ জন, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ১১৩ জন, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ৩৯ জন ও ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ৭৬ জন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়েছেন। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে মাত্র ১৯ নম্বর পেয়েও ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন এক শিক্ষার্থী। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ফেল করলেও শুধু পোষ্য কোটায় ৪৩ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।
এসব নিয়ে তুমুল সমালোচনা ছিল। ক্ষোভ ছিল মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের। তবে অভ্যুত্থান পরবর্তী প্রশাসন ভর্তি পরীক্ষায় নূন্যতম পাস নম্বর ৪০ পাওয়া বাধ্যতামূলক করেছিল।
ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, ‘গত ১৫ বছরে পোষ্য কোটার যাচ্ছেতাই ব্যবহার হয়েছে, এটা তো সত্য। তবে আমরা এ ব্যাপারে কঠোর হয়েছি। গতবার তো আমরা আসার পরই ভর্তি শুরু হয়েছিল।’
ছাড় দিতে চান না কেউ
প্রাতিষ্ঠনিক সুবিধায় সন্তানদের ভর্তির সুযোগ কোনোভাবেই ছাড়তে চান না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আপাতত শিক্ষকেরা শিক্ষক লাঞ্ছনার ইস্যুতেই তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চাচ্ছেন। স্বার্থ থাকলেও তারা প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় ভর্তির বিষয়টি সামনে এনে তাদের আন্দোলন ‘খাটো’ করতে চাচ্ছেন না। তবে শিক্ষকেরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ দাবিতে মাঠে থাকার ব্যাপারে সমর্থন দিচ্ছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দিতে নারাজ। তাই তারা আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
রাবি অফিসার্স সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, ‘আমরা শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করেছি প্রশাসনের অনুরোধে। তবে আমরা দাবি মানতে সাতদিন সময় দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে আমরা লাগাতার আন্দোলনে যাব। এ ব্যাপারে ছাড় নয়।’
প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় ভর্তির বিরুদ্ধে গতবছর থেকেই সবচেয়ে বেশি সরব আছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও আসন্ন রাকসু নির্বাচনের স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বাম ছাত্র সংগঠনসহ সবাই এ কোটার বিরুদ্ধে। তারা কেউই প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় ভর্তির বিষয়টি মেনে নেবেন না বলে জানিয়েছেন।
কোটাবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সালাহউদ্দিন আম্মারের বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছেন শিক্ষকেরা। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার লোকজনও তার শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করছেন।
তবু এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন সালাহউদ্দিন আম্মার। তাঁর কথা, ‘আমাকে বহিষ্কার করলে করুক, তবু যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পোষ্য কোটা না থাকে। আমরা এটা থাকতে দেব না। ১ পার্সেন্ট কোটাও সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না।’
প্রশাসনের ব্যর্থতায় অস্থিরতা
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কর্মকর্তা মনে করেন, বর্তমান প্রশাসনের ব্যর্থতায় ক্যাম্পাসে অস্থিরতা চলছে। তাঁদের মতে, প্রশাসনে যে শিক্ষকেরা এখন আছেন তাদের অভিজ্ঞতারও অভাব রয়েছে। এ জন্য উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব দফায় দফায় একবার এই পোষ্য কোটা দিয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের মুখে তা স্থগিতও করেছেন। এটি তাঁর অদূরদর্শিতার প্রমাণ।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে একজন ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ধরনের পরিস্থিতিতে আগের যে কোনো প্রশাসন অভিজ্ঞ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়েছে। তারপর সমাধান হয়েছে। তবে বর্তমান প্রশাসন কারও কাছ থেকে কোনো পরামর্শও নেয় না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিস্থিতির জন্য নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ। তিনি বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা আছে। সিলেট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন হলেও তারাও সেখানে বহাল করেছে। আমাদের এখানে শিক্ষার্থীরা মানছে না। এটা আসলে আমাদের দুর্ভাগ্য।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ওই প্রতিবেদনে ডাকসু নির্বাচনে কারচুপির যে চিত্র উঠে এসেছে, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। এই ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও গৌরবময় ঐতিহ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
১২ ঘণ্টা আগেদোয়া মাহফিলে রিজভী কাজী আসাদকে ‘আদর্শবান, নির্লোভ নেতা’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘তাঁর মতো মহৎ হয়ে কাজ করলে দল ও সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা সম্ভব।’
১২ ঘণ্টা আগেবৃহস্পতিবার একইসঙ্গে ২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর সবগুলোই নোয়াখালী জেলার। এসব কমিটিকেও ৩০ দিনের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আংশিক কমিটিও এদিন ঘোষণা করা হয়।
১২ ঘণ্টা আগেরাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ ধরনের জোট করা বা দল করা খুব স্বাভাবিক। তবে গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপি এই মুহূর্তে একীভূত হবে বলে তাঁর মনে হয় না।
১৩ ঘণ্টা আগে