leadT1ad

নতুন জাপার স্বীকৃতি চায় আনিসুল-হাওলাদার কমিটি; এখন পর্যন্ত কতবার ভাঙল দলটি

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৫, ২০: ৪৫
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার। সংগৃহীত ছবি

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) স্বীকৃতি চায় আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। এ বিষয়ে দলটির তরফ থেকে নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

৯ আগস্ট আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির কাউন্সিল হয়। সেখানে আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে চেয়ারম্যান ও রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়। পরের দিন তাঁরা নবনির্বাচিত কমিটির চার সদস্যের তালিকা নির্বাচন কমিশনে জমা দেন। এ তালিকার বাকি দুজন হলেন সিনিয়র কো–চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ ও নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু।

জিএম কাদেরকে বাদ দিয়ে করা এ কাউন্সিলকে ‘দশম কাউন্সিল’ বলছেন নবগঠিত কমিটির নেতারা। তাঁদের মতে, এই কাউন্সিল গঠনতান্ত্রিকভাবে বৈধ। লাঙ্গল প্রতীক ব্যবহারের বৈধ অধিকার শুধু তাঁদের কমিটিরই আছে। এটিকে জাতীয় পার্টির ‘মূল ধারা’ বলেও দাবি করছেন তাঁরা।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৭ জুলাই জাপার পক্ষ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মজিবুর রহমান চুন্নুকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

সে সময় স্ট্রিমকে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জানান, ‘যে বৈঠকে জিএম কাদের নেতাদের অপসারণের ঘোষণা দেন, সেটির কোনো ভিত্তি নেই। শুধু মহাসচিবই এমন বৈঠক ডাকতে পারেন। তাই ওই বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত অবৈধ।’

আনিসুল আরও বলেন, কোনো গণতান্ত্রিক দলে এমন স্বৈরাচারী ধারা থাকতে পারে না। তিনি অভিযোগ করেন, দল পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে জিএম কাদের একনায়কসুলভ আচরণ করেছেন।

জাপার ভাঙা-গড়ার খতিয়ান

সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে গড়া দল জাতীয় পার্টি (জাপা) ১৯৯০ সালের পর থেকে একাধিকবার ভাঙন ও বিভক্তির মুখে পড়েছে। আবারও সেই পুরনো সংকটে ফিরেছে দলটি।

১৯৯০-৯১

১৯৯০ সালে এরশাদ ক্ষমতা হারানোর পর জাপায় প্রথম ভাঙন দেখা দেয়। সে বছর ৬ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে প্রধান করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। পরে গ্রেপ্তার হন এরশাদ। তাঁর অনুপস্থিতিতে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন মিজানুর রহমান চৌধুরী।

১৯৯১ সালে আবার দলটিতে ভাঙন দেখা দেয়। সেই সময় হুদা-মতিনের নেতৃত্বে একটি অংশ আলাদা হয়ে যায়। নতুন দলের নাম হয় জাতীয় পার্টি (ন্যাশনালিজম মুভমেন্ট)। তবে সেই দল টেকেনি।

১৯৯৬

ওই বছর আবারও জাপা ভাঙে যখন দলটির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থনে জাতীয় পার্টি (জেপি) নামে নতুন একটি দল গঠন করেন।

১৯৯৯

এ বছর এরশাদ চার দলীয় জোট থেকে সরে দাঁড়ালে তৃতীয়বারের মতো বিভক্ত হয় জাপা।

২০০১

এরশাদ ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের জোটে যোগ দেন। কিন্তু তৎকালীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) মহাসচিব নাজিউর রহমান মঞ্জুরের নেতৃত্বে একটি অংশ চারদলীয় জোটেই থেকে যায়। এ সময় দলটি চতুর্থবারের মতো বিভক্ত হয়।

২০১৩

২০১৩ সালে পঞ্চমবারের মতো ভাঙে জাপা। সে বছর একটি বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে নতুন জাতীয় পার্টি গঠনের ঘোষণা দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ। বর্তমানে দলটি পরিচালনা করছেন মোস্তফা জামাল হায়দার। তবে দলটি এখনো নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়নি।

২০১৯

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টিতে নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ছোট ভাই জিএম কাদেরের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। রওশন নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করে আলাদা কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটিতে কাজী মামুনুর রশীদকে মহাসচিব করা হয়।

তবে একাধিক বৈঠকের পর দুই পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছায়। ঠিক করা হয়, জিএম কাদের দলের চেয়ারম্যান থাকবেন, আর রওশন এরশাদ হবেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা।

২০২৪

২০২৪ সালের মার্চে দলটি আবারও ভাঙে, যখন রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের চেয়ারম্যান পদ নিয়ে মতৈক্যে আসতে পারেননি। রওশন তখন আলাদা কমিটি গঠন করেন। অন্যদিকে কাদের নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত