leadT1ad

চাঁদাবাজদেরই শাস্তি দিতে পারে না, সরকার এত বড় নির্বাচন কীভাবে ট্যাকেল করবে: জামায়াত

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ২০: ৪০
সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। সংগৃহীত ছবি

আগে একটা গ্রুপ চাঁদাবাজি করতো, এখন আরেকটা গ্রুপ করছে অভিযোগ করে জামায়াত ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দখলদারদের বিপক্ষে কোনো ভূমিকা নিয়েছে কিনা, আমার জানা নেই। এটা তো শুধু দলের দায়িত্ব না, সরকারপ্রধানেরও দায়িত্ব। যে সরকার চাঁদাবাজদের শাস্তি দিতে পারে না, সেই সরকার এত বড় নির্বাচন, এত সন্ত্রাসী কীভাবে ট্যাকেল করবে; আমরা এটিতে শঙ্কিত।’

আজ রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এমন মন্তব্য করেন তিনি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করছেন প্রধান উপদেষ্টা। তারই অংশ হিসেবে জামায়াত ইসলামীর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আমরা (বৈঠকে) বলেছি, এখনও অনেক সময় আছে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বলেছি, এখন মনে হচ্ছে, এই সরকার হাত-পা ছেড়ে দিয়েছে। এখন আপনাদের আরও বেশি কঠোর হতে হবে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন জায়গায় যেসব ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে, তাদের অবিলম্বে সরিয়ে দিতে হবে। আমরা পিআর পদ্ধতি আনার জন্য জনগণের সঙ্গে গণভোটের কথা বলেছি। যদি জনগণ চায়, তাহলে হবে। নয় তো হবে না।’

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ডা. তাহের জানান, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের তিনটি বিষয় আশ্বস্ত করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো, প্রধান উপদেষ্টা এমন কিছু বিষয় সংস্কার করবেন, যেগুলোর জন্য নির্বাচন বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এছাড়াও জুলাই-সন্ত্রাসীদের বিচারও দৃশ্যমান করা হবে বলে তাঁদের জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সবসময় দুই থেকে তিনটির বেশি দল ‘নিঃশর্ত ঐকমত্য’ পোষণ করেছে উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য সবসময় গণতান্ত্রিক মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। কিন্তু আনফরচুনেটলি এখানে অল্পসংখ্যক দল ঐকমত্য বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্থ করছে। তারা বলছে, আগামীতে নির্বাচিত সরকার এসে এগুলো বাস্তবায়ন করবে। আগামী নির্বাচিত সরকারই এসে যদি বাস্তবায়ন করে, তাহলে আমরা এখানে এসে ঐকমত্যে পৌঁছালাম কেন এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো কেন? জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে আমরা রিফর্মগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং এখনই বাস্তবায়ন হবে, এটাই তো স্বাভাবিক।’

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দল। ছবি : প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দল। ছবি : প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ

এসময় ঈমানের তিনটি অংশ— মুখে স্বীকৃতি দেওয়া, হৃদয়ে ধারণ করা এবং কাজে পরিণত করার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতীয় জীবনের তিনটি অংশ। একটি ঐকমত্যে বসা, দুই নম্বর তার আইনি ভিত্তি দেওয়া এবং সেগুলোকে বাস্তবায়নে রূপান্তর করা। এখন পর্যন্ত আমরা শুধু ঐকমত্যে পৌঁছেছি। কিন্তু আইনি ভিত্তি এবং কার্যকর করতে বাধা দিচ্ছে কয়েকটি দল। যদি জুলাইকে আইনি ভিত্তি না দেওয়া হয়, তবে তা হবে শহীদদের রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। আমরা চার্টারের পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই এবং এই চার্টারের ভিত্তিতেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

বৈঠকে নির্বাচনের আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দোষীদের কিছু বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা জামায়াতকে আশ্বস্ত করেছে বলে জানান ডা. তাহের। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, একদিনে সব বিচার হবে না। কিন্তু বিচার অব্যাহত থাকতে হবে। পাশাপাশি একটি অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

এ বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করলেও বর্তমান সরকারকে কিছু বিদেশি শক্তি নির্বাচন বিষয়ে বাধাগ্রস্ত করছে বলেও মনে করে জামায়াত। এসময় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণারও সমালোচনা করেন জামায়াতের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘একটি দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এতে একটি দলকে বেনেফিট দেওয়া হয়েছে।’

এসময় জুলাই ঘোষণাপত্রেরও সমালোচনা করেন ডা. তাহের। তিনি দাবি করেন, ‘৫ আগস্টে যে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়া হয়েছে, সেটি সবার সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে হয়নি। সেখানে কিছু বিষয় অন্তর্বর্তী সরকার অ্যাভয়েড করেছে এবং সেটি অনিরপেক্ষ, অসম্পূর্ণ।’

সরকার একটি চাপের মুখে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছে বলেও দাবি করেন ডা. তাহের। তিনি জানান, নির্বাচনের তারিখের ব্যাপারে তাদের কোনো দ্বিধা নেই। তবে জুলাই চার্টার বাস্তবায়ন না করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা এক ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করে জামায়াত। তিনি বলেন, ‘একটা দল যেভাবে চেয়েছে, সেভাবে হয়েছে। এজন্য তারা খুশি। আর বাকি মেজর দলগুলো, আমরা এক আছি— জুলাই সনদের বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা পিআরের (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতির ব্যাপারে কথা বলেছি। ৩১টি দল যারা ঐকমত্যে বসেছিল, এরমধ্যে ২৫টি দল পিআর চায়। বামপন্থী ও ইসলামপন্থী দলগুলো পিআর চায়। তার বাইরেও যেসব দল আছে, তারাও পিআর চায়। সুতরাং আমরা বলেছি, মেজরিটি রাজনৈতিক দল পিআর চাচ্ছে। অনেকদল আপার হাউজে (উচ্চকক্ষ) পিআর চায়। আমরা পুরোটাই (দুই কক্ষ) পিআর চাই। বিগত নির্বাচনগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা মনে করছি, নতুন একটা সিস্টেমে নির্বাচন হতে হবে। নয়তো আগের মতই কেন্দ্র দখলের নির্বাচন হবে।

এসময় কাকরাইলে জাতীয় পার্টির সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ প্রসঙ্গেও কথা বলেন ডা. তাহের। তিনি বলেন, ‘নুরের ওপর যে হামলা হয়েছে, সেটা শুধু নিন্দাজনক, দুঃখজনক বললেই হয় না, সঙ্গে সঙ্গে কঠিনভাবে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘আগে একটা গ্রুপ চাঁদাবাজি করতো, এখন আরেকটা গ্রুপ চাঁদাবাজি করছে। এই অন্তর্বর্তী সরকার দখলদারদের বিপক্ষে কোনো ভূমিকা নিয়েছে কিনা, আমার জানা নেই। এটা তো শুধু দলের দায়িত্ব না, সরকারপ্রধানের দায়িত্ব। যেই সরকার চাঁদাবাজ শাস্তি দিতে পারে না, সেই সরকার এত বড় নির্বাচন, এত সন্ত্রাসী কীভাবে ট্যাকেল করবে। আমরা এটিতে শঙ্কিত। আমরা বলেছি, এখনও অনেক সময় আছে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বলেছি, এখন মনে হচ্ছে, এই সরকার হাত-পা ছেড়ে দিয়েছে। এখন আপনাদের আরও বেশি কঠোর হতে হবে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন জায়গায় যেসব ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে, তাদের অবিলম্বে সরিয়ে দিতে হবে। আমরা পিআর পদ্ধতি আনার জন্য জনগণের সঙ্গে গণভোটের কথা বলেছি। যদি জনগণ চায় তাহলে হবে, নয়ত হবে না।’

আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যভাগে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা রোববার তিনটি রাজনৈতিক দল- বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামী ও এনসিপিকে আলোচনার জন্য ডেকেছেন। বিকালে প্রথম বৈঠকে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেন। অন্যরা হলেন, দলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এবং হামিদুর রহমান আযাদ।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এই বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানও উপস্থিত ছিলেন।

Ad 300x250

কেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ এক হলো

তারেক রহমানের দেশে ফেরা তাঁর নিজের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ঢাবি শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত হচ্ছে স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষক প্যানেল

ক্যাম্পাসে প্রবেশে কড়াকড়ি, পরিচয়পত্র ছাড়া ঢুকতে পারবেন না শিক্ষার্থী-শিক্ষকেরাও

হারানো জাতীয় পরিচয়পত্র তুলতে জিডি করা লাগবে না

সম্পর্কিত