leadT1ad

জাহাঙ্গীরনগরে প্রজাপতি মেলায় মুগ্ধতা

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০২
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রজাপতি মেলায় শিশুরা। স্ট্রিম ছবি

যেন ডানায় ভর করে উড়ে বেড়াচ্ছে ছোট্ট ফারিবা। প্রজাপতি দেখিয়ে মাকে বলছে, ‘মা, মা, আমিও প্রজাপতি।’ তার মতো শত শত শিশু শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রজাপতি মেলায় এসে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে।

এসব শিশুর কেউ পরে এসেছিল মুখোশ। কারো হাতে ছিল রঙিন ফেস্টুন। গালে আঁকা প্রজাপতির প্রতিচ্ছবি। সন্তানের আনন্দে উদ্বেলিত অভিভাবকরাও।

‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’– স্লোগানে প্রতিবছরের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫তম প্রজাপতি মেলা হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জহির রায়হান মিলনায়তন প্রাঙ্গণে মেলা উদ্বোধন করেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আজকে শিশুদের উপস্থিতি প্রমাণ করে প্রজাপতি ও প্রকৃতির প্রতি তাদের ভালোবাসা। মেলার মাধ্যমে তারা প্রাণীদের নিয়ে আরো সচেতন হতে শিখবে। প্রজাপতিকে চেনা, তার ভূমিকা জানা ও প্রজাপতি সংরক্ষণে আমাদের সবার এগিয়ে আসা দরকার।

মেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান। আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুর রব, মেলার টাইটেল স্পন্সর ‘কিউট’– এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাজী রাজিবউদ্দীন আহমেদ চপল, বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচারের (আইইউসিএন) সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ, সাউথইস্ট ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাসুম উদ্দিন খান প্রমুখ।

বেলা বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে মেলায় বাড়ে দর্শনার্থী। দুই মেয়ে– অনন্যা ও রিয়াকে নিয়ে রাজধানীর মিরপুর থেকে মেলায় আসা চাকরিজীবী মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে এসেছি। বাচ্চারা খুব উপভোগ করেছে। ঢাকায় তো এভাবে প্রজাপতি দেখা যায় না। ওরা খুব আগ্রহ নিয়ে প্রজাপতি দেখেছে।’

মেলায় ভিড় করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। ছাত্রীরা রঙিন শাড়ি, ছাত্ররা পাঞ্জাবি পরে ঘুরে বেড়ান। প্রজাপতির রঙের সঙ্গে মিল রেখে নীল শাড়ি পরে আসা পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজানা মেহেরিন হাতে নীল প্রজাপতির প্রতিচ্ছবি আঁকিয়েছেন। প্রকৃতিপ্রেমী এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি সুযোগ পেলেই প্রকৃতির কাছাকাছি চলে যাই। আজ এত কাছ থেকে এত প্রজাপতি দেখার সুযোগ তো ভুলেও হারানো যায় না।’

দিনব্যাপী মেলায় শোভাযাত্রা, প্রজাপতির গল্পে পাপেট শো ও প্রজাপতির অরিগ্যামি, প্রজাপতিবিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা (শিশু-কিশোর), প্রজাপতি ও প্রকৃতিবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা (শিশু-কিশোর), প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির হাট দর্শন, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি ওড়ানো, বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা ও প্রজাপতিবিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শন হয়।

মেলায় এবার প্রকৃতি সংরক্ষণে অবদান ক্যাটেগরিতে ‘বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন বন্যপ্রাণী বিশারদ এবং সংরক্ষণবিদ ড. আলী রেজা খান। যৌথভাবে বাটারফ্লাই ইয়াং ইনথুসিয়াস্ট পুরস্কার পেয়েছেন জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহারিয়ার রাব্বি তন্ময় ও নূরে আফসারী। প্রজাপতিভিত্তিক ফটোগ্রাফিতে প্রথম হয়েছেন সৈয়দ আব্বাস, দ্বিতীয় মাহমুদুল বারি ও প্রিন্স পাল জয় তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন।

ব্রডকাস্ট মিডিয়া ক্যাটেগরিতে পুরস্কার জিতেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশে টিভির প্রতিনিধি আহসান হাবীব। প্রিন্ট মিডিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রতিনিধি মিজানুর রহমান ও ডিজিটাল মিডিয়ায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রতিনিধি মাহ আলম বিজয়ী হয়েছেন।

এবার প্রজাপতি মেলায় উন্মোচিত হয়েছে ‘বাটারফ্লাইস অফ বাংলাদেশ’ বইয়ের তৃতীয় সংস্করণ। এতে ৩৬০ প্রজাতির ছবিসহ প্রজাপতির বায়োলজি ও শনাক্তকারী জিনভিত্তিক তথ্য।

প্রজাপতি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১০ সাল থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রজাপতি মেলা হচ্ছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত