leadT1ad

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রস্তাব অগণতান্ত্রিক: বাসদ (মার্কসবাদী)

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ২১: ৪১
স্ট্রিম গ্রাফিক

গণভোটের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন করতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সর্বশেষ প্রস্তাবকে ‘অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী’ উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) বা বাসদ (মার্কসবাদী)।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলের সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, প্রক্রিয়াটি গণঅভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা থেকে জন্ম নিয়েছিল, তা প্রতিফলিত করে না।

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য জনগণের প্রত্যাশা পূরণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করেছিল। এর মধ্যে ছয়টি কমিশন তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে, এর পর ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে মতপার্থক্য দূর করা ও জাতীয় ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়।

মাসুদ রানা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার হিসেবে বাসদ (মার্কসবাদী) কমিশনের এই বিশেষ উদ্যোগকে স্বাগত জানায় এবং এতে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু প্রায় ছয় মাসব্যাপী রাজনৈতিক সংলাপ ও পরামর্শের পর কমিশন তার বাস্তবায়ন প্রস্তাবের মাধ্যমে সেই প্রয়াসগুলো ‘এক হাতে উড়িয়ে দিয়েছে’।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, প্রথম পর্যায়ে কমিশন ছয়টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে পাঁচটির সুপারিশ নিয়ে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করে, যার মধ্যে ৩৩টি দল মতামত জমা দেয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩০টি দলকে নিয়ে ২০২৫ সালের ৩ জুন থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ২০টি মূল বিষয়ের ওপর আলোচনা হয়। এরপর অক্টোবর মাসে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়ন নিয়ে পাঁচ দিনের চূড়ান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এই বৃহৎ প্রক্রিয়া সত্ত্বেও, মাসুদ রানা বলেন, চূড়ান্ত সনদ ও তার বাস্তবায়ন কাঠামো আলোচনার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে। যেখানে আলোচনায় প্রায় ২০টি পয়েন্ট ছিল, চূড়ান্ত সনদে সেটি বেড়ে হয়েছে ৮৪টি। এর অনেকগুলো বিষয় কখনোই আলোচনা বা ঐকমত্যে আসেনি। দলটির দাবি, যদিও নথিতে বহুবার “সর্বসম্মত” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে সর্বসম্মত পয়েন্ট ২৯টির বেশি নয়।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে প্রধান উপদেষ্টা শুরুতেই বলেছিলেন—শুধু যেসব বিষয়ে সব দল একমত হবে, সেগুলোকেই ঐকমত্য হিসেবে ধরা হবে। ‘সনদ নিজেই প্রমাণ করে এটি সর্বসম্মতভাবে প্রণীত হয়নি’, বলেন রানা। ‘যদি কেবল ঐকমত্যের সিদ্ধান্তগুলোকে সনদ হিসেবে ঘোষণা করা হতো, তবেই সেটিকে ঐকমত্যপূর্ণ দলিল বলা যেত।’

বাসদ (মার্কসবাদী) কমিশনের প্রস্তাবিত গণভোট পদ্ধতিরও তীব্র সমালোচনা করেছে। প্রস্তাব অনুযায়ী ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৪৮টি একটি প্যাকেজ আকারে গণভোটে উপস্থাপন করা হবে—যেখানে ‘হ্যাঁ’ ভোট মানে সবগুলো প্রস্তাবের সমর্থন এবং ‘না’ ভোট মানে সবগুলোর বিরোধিতা। ‘বিশ্বের কোথাও সাংবিধানিক প্রশ্নে এভাবে একত্রে মতামত গ্রহণের নজির নেই’, বলেন রানা। তিনি যোগ করেন, গণভোটে পক্ষে ভোট পড়লে বিরোধী দলগুলোর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাতিল ঘোষণা করা হবে— যা মাসব্যাপী আলোচনার মূল্যকে শূন্যে নামিয়ে আনে এবং বেশিরভাগ দলকে সংস্কার প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, এইভাবে সনদ বাস্তবায়ন বর্তমান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। ‘রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্ন অবস্থানকে জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছা হিসেবে গণ্য করা যায় না’, বলেন রানা। জনগণের প্রকৃত ম্যান্ডেট পেতে হলে প্রতিটি বিষয়ে পৃথকভাবে মতামত প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে।

বাসদ (মার্কসবাদী) একইসঙ্গে সমালোচনা করে যে, প্রস্তাবে বলা হয়েছে— পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ, যা সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবেও কাজ করবে, ২৭০ দিনের মধ্যে সংশোধনী সম্পন্ন না করলে খসড়া আইন স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে। দলটির মতে, এ ধরনের প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে অগণতান্ত্রিক শাসন জারি করার জন্য বিপজ্জনক নজির সৃষ্টি করবে।

‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কর্মকাণ্ড ও উদ্দেশ্য এখন অস্পষ্টতায় পরিণত হয়েছে’, উল্লেখ করে বিবৃতির উপসংহারে বলা হয়, ‘এই প্রক্রিয়া গণঅভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা থেকে জন্ম নিয়েছিল, তা প্রতিফলিত করে না। আমরা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের এই অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রত্যাখ্যান করছি। এভাবে বাস্তবায়িত হলে সনদের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং দেশ এক সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হবে’, বলেন বাসদের এই জ্যেষ্ঠ নেতা।

Ad 300x250

সম্পর্কিত