leadT1ad

বিরল খনিজ কী, বিশ্ব কেন নেমেছে এর খোঁজে, ভূরাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ১৬
চীনের সাম্প্রতিক বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং অন্যান্য দেশে আবারও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। স্ট্রিম গ্রাফিক

যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা ও বৈশ্বিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি রূপান্তরের প্রেক্ষাপটে ‘বিরল খনিজ’ বিশ্বজুড়ে আলোচনায়। ১৭টি রেয়ার আর্থ এলিমেন্ট (আরইই) বা বিরল মৃত্তিকা উপাদানকে বলা বিরল হয় বিরল খনিজ। এই ধাতুগুলো রাসায়নিকভাবে প্রায় একইরকম। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নিওডিমিয়াম, ডিসপ্রোসিয়াম, টার্বিয়াম, প্রাসিওডিমিয়াম ও সামারিয়াম।

নামের মধ্যে ‘বিরল’ থাকলেও এরা পৃথিবীর ভূত্বকে তেমন বিরল নয়। আসল সমস্যা হলো—এই ধাতুগুলো আহরণ ও প্রক্রিয়াজাত করার জটিলতা ও পরিবেশগত খরচ। চীন বর্তমানে এই খাতে প্রাধান্য বিস্তার করেছে। দেশটি বৈশ্বিক খনির প্রায় ৬০–৭০ শতাংশ এবং শোধন ও ম্যাগনেট উৎপাদনের ৯০ শতাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে আধুনিক প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ও শক্তি খাতে এই উপাদানগুলোকে ঘিরে এক কৌশলগত নির্ভরতা তৈরি হয়েছে, যা বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্যে প্রভাব ফেলছে।

ফরেইন পলিসির বিশ্লেষণে বলা হয়, চীনের সাম্প্রতিক বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং অন্যান্য দেশগুলোতে আবারও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। মূল উদ্বেগ তিনটি বিষয়ে— সরবরাহ শৃঙ্খলের দুর্বলতা, প্রযুক্তিগত নির্ভরতা এবং ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি।

এই সংকটের বীজ রোপিত হয়েছিল কয়েক দশক আগে, যখন বিরল খনিজের উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ ধীরে ধীরে চীনে স্থানান্তরিত হয়। কারণ, সেখানে উৎপাদন খরচ ছিল অনেক কম এবং পরিবেশগত বিধিনিষেধও ছিল প্রায় অনুপস্থিত। বিদেশি ক্রেতারা সস্তা কাঁচামালের লোভে চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। তারা মূলত পরিবেশগত দায়ভার চীনের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল। এর ফলে আজ এক কাঠামোগত নির্ভরতা তৈরি হয়েছে, যা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক, দুই দিক থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ।

বিশ্বের অনেক দেশ বছরের পর বছর এই কৃত্রিমভাবে কম দামের সুবিধা ভোগ করেছে। তারা এই খনিজ দিয়ে উন্নত প্রযুক্তি, সামরিক সরঞ্জাম, এমনকি পরিবেশবান্ধব শিল্পও গড়ে তুলেছে। কিন্তু এখন সেই ভিত্তিই অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।

এই ঝুঁকি মোকাবিলা ও সরবরাহ উৎস বৈচিত্র্য আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া দীর্ঘ আলোচনার পর ২০ অক্টোবর ৮.৫ বিলিয়ন ডলারের একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তির পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, ‘আর মাত্র এক বছর পর আমাদের এত বেশি বিরল খনিজ থাকবে যে আমরা জানব না সেগুলো নিয়ে কী করব। তখন এগুলোর দাম হবে মাত্র দুই ডলার।’

এই ধাতুগুলো রূপালি-সাদা, নরম ও নমনীয় প্রকৃতির। এদের বিশেষ চৌম্বকীয়, আলোক-উজ্জ্বল ও অনুঘটক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা উন্নত প্রযুক্তির জন্য অপরিহার্য।

এরপর ২৮ অক্টোবর জাপানের সঙ্গেও ট্রাম্প নতুন প্রজন্মের পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুল্লি এবং বিরল খনিজ সরবরাহ নিয়ে একটি চুক্তি করেন। জাপান তার পারমাণবিক প্রযুক্তির জন্য রপ্তানি বাজারে ফিরে যাওয়ার পথ খুঁজছে এবং উভয়ই মূল ইলেকট্রনিক উপাদানগুলোর উপর চীনের আধিপত্য কমানোর করার চেষ্টা করছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের ওই বক্তব্য বাস্তবসম্মত নয়। পর্যাপ্ত সরবরাহ গড়ে তুলতে কয়েক বছর, এমনকি এক দশক পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। বাস্তবে, সরবরাহে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টার ফলে এই খনিজের দাম বরং আরও বাড়ছে।

নতুন খনি, পরিশোধনাগার এবং প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার মতো অঞ্চলে খরচ অনেক বেশি। কঠোর পরিবেশগত নিয়ম, উচ্চ শ্রমমূল্য এবং জ্বালানি ব্যয়ের কারণে এই প্রকল্পগুলো আর্থিকভাবে জটিল ও সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়ছে।

বিরল খনিজ কী, এদের ব্যবহার কোথায়

এই ধাতুগুলো রূপালি-সাদা, নরম ও নমনীয় প্রকৃতির। এদের বিশেষ চৌম্বকীয়, আলোক-উজ্জ্বল ও অনুঘটক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা উন্নত প্রযুক্তির জন্য অপরিহার্য। এরা দুই ভাগে বিভক্ত—হালকা বিরল খনিজ (যেমন, সেরিয়াম, ল্যান্থানাম) এবং ভারী বিরল খনিজ (যেমন: ডিসপ্রোসিয়াম, ইট্রিয়াম)। ভারী উপাদানগুলো তুলনামূলকভাবে দুষ্প্রাপ্য ও মূল্যবান, কারণ তারা উচ্চ তাপমাত্রা ও কঠিন পরিবেশে বেশি কার্যকর।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও বৈদ্যুতিক যান (ইভি): নিওডিমিয়াম ও প্রাসিওডিমিয়াম দিয়ে তৈরি শক্তিশালী স্থায়ী চুম্বক ব্যবহার হয় ইভি মোটর ও উইন্ড টারবাইনে। একটি বৈদ্যুতিক গাড়িতেই প্রায় ২ কেজি বিরল খনিজ ম্যাগনেট লাগে। সমুদ্রতীরবর্তী উইন্ড ফার্মগুলোতেও এই ধাতু অপরিহার্য।

নিওডিমিয়াম, সেরিয়াম, ল্যান্থানাম, প্রাসিওডিমিয়াম, সামারিয়াম নবায়নযোগ্য জ্বালানি যন্ত্রে অপরিহার্য; বৈদ্যুতিক গাড়ি ও উইন্ড টারবাইনের মোটরে ব্যবহৃত হয়।

ইলেকট্রনিকস ও ভোক্তা প্রযুক্তি: স্মার্টফোন, হার্ড ড্রাইভ, এলইডি স্ক্রিনসহ ছোট ও দক্ষ উপাদান তৈরিতে বিরল খনিজ ব্যবহার হয়। ইউরোপিয়াম লাল আলোক-ফসফরের জন্য অপরিহার্য।

ইট্রিয়াম, সেরিয়াম, নিওডিমিয়াম ব্যবহৃত হয় স্পিকার, মাইক্রোফোন, যোগাযোগ যন্ত্র, বৈদ্যুতিক গাড়ির মোটর ও উইন্ড টারবাইনের জন্য স্থায়ী চুম্বক তৈরিতে।

ফোর্বসের বিশ্লেষক ডেভিড ব্ল্যাকমন লিখেছেন, ‘এই খনিজগুলো প্রতিটি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার মূল উপাদান—আর জ্বালানি নিরাপত্তা মানেই জাতীয় নিরাপত্তা।’

প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ: ডিসপ্রোসিয়াম উচ্চ তাপমাত্রায় চুম্বকের স্থিতি বাড়ায়, যা ব্যবহৃত হয় ক্ষেপণাস্ত্র নির্দেশনা ব্যবস্থা, যুদ্ধবিমান ইঞ্জিন ও রাডারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর প্রতি বছর শত শত মিলিয়ন ডলারের বিরল খনিজ ব্যবহার করে।

টাইটানিয়াম, নিয়োবিয়াম, ট্যান্টালাম ব্যবহৃত হয় বিমান নির্মাণে এবং উচ্চ পরিবাহিতা সম্পন্ন উপকরণ ও তেজস্ক্রিয় ট্রেসার হিসেবে

অন্যান্য খাত: তেল শোধন প্রক্রিয়ায় অনুঘটক, চিকিৎসায় এমআরআই কনট্রাস্ট এজেন্ট এবং পারমাণবিক চুল্লিতে ব্যবহৃত হয়।

ফোর্বসের বিশ্লেষক ডেভিড ব্ল্যাকমন লিখেছেন, ‘এই খনিজগুলো প্রতিটি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার মূল উপাদান—আর জ্বালানি নিরাপত্তা মানেই জাতীয় নিরাপত্তা।’

বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, জলবায়ু উষ্ণায়ন ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ধরে রাখতে ২০৫০ সালের মধ্যে বিরল খনিজের চাহিদা অন্তত ৩০ শতাংশ বাড়বে। তাই এই খনিজ ছাড়া বৈশ্বিক জ্বালানি রূপান্তর কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে।

কেন এই খনিজের খোঁজে প্রতিযোগিতায় বিশ্ব

সম্প্রতি চীন বিরল খনিজ রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ কঠোর করায় এনিয়ে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা তীব্র আকার নিয়েছে। বেইজিং গত এপ্রিলে ৭টি ভারী বিরল খনিজের (যেমন ডিসপ্রোসিয়াম ও টার্বিয়াম) এবং সেগুলোর চুম্বকজাত পণ্যের রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। ডিসেম্বরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়, কারণ হিসেবে দেখানো হয় ‘সামরিক ব্যবহারের জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ’। এমনকি কোনো পণ্যে ০.১ শতাংশ চীনা উপাদান থাকলেও তা রপ্তানি নিষিদ্ধ হয়। ফলে শিকাগোর ইভি কারখানা থেকে ইউরোপের উইন্ড প্রজেক্ট পর্যন্ত উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং নিওডিমিয়ামের দাম বছরে ৫০ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়। মূল কারণগুলো হলো:

সরবরাহের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ: চীনের একচেটিয়া প্রভাব পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর চাপের ঝুঁকি তৈরি করছে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) সতর্ক করেছে, ‘গুরুত্বপূর্ণ খনিজে নতুন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ সরবরাহ সংকটের বাস্তব ঝুঁকি তৈরি করছে।’ এতে যুক্তরাষ্ট্র-অস্ট্রেলিয়ার ৮.৫ বিলিয়ন ডলারের বিকল্প সরবরাহ চুক্তিও হুমকিতে পড়েছে।

বিরল খনিজ আজ বিশ্বের ক্ষমতার ভারসাম্য নতুনভাবে নির্ধারণ করছে। তেলের পরিবর্তে এখন ‘চুম্বক’ বা ম্যাগনেট হয়ে উঠছে প্রযুক্তিগত ও সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের নতুন মুদ্রা। এই খনিজের নিয়ন্ত্রণই নির্ধারণ করছে কোন দেশ ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে নেতৃত্ব দেবে।

জ্বালানি রূপান্তরের তাগিদ: নেট-জিরো লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য বিরল খনিজের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে, আইইএ-র পূর্বাভাস অনুযায়ী যা ২০৪০ সালের মধ্যে আরও ৫০-৬০ শতাংশ বাড়বে। কিন্তু বর্তমান খনি ও পরিশোধন অবকাঠামো এ চাহিদা মেটাতে পারছে না।

অতীতের ভুল সিদ্ধান্ত: পরিবেশগত কারণে ১৯৭০-৮০-র দশকে পশ্চিমা দেশগুলো খনিজ খনন বন্ধ করে উৎপাদন চীনের ওপর ছেড়ে দিয়েছিল। এখন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন খনি প্রকল্পের অনুমোদন পেতে ১০ বছরেরও বেশি সময় লাগে, যা বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করে।

এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র এমপি ম্যাটেরিয়ালস-এর মাউন্টেন পাস খনিতে ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে (পেন্টাগনের তহবিল থেকে), আর অস্ট্রেলিয়ার লিনাস রেয়ার আর্থস ভারী বিরল খনিজ আলাদা করার কেন্দ্র স্থাপন করছে কালগুর্লিতে।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল বিশ্লেষকদের ভাষায়, এটি ‘এক দশকব্যাপী প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জ’—যেখানে রসায়ন, মূলধন ও নীতির ধারাবাহিকতা ও নিরবিচ্ছন্ন সরবরাহ প্রয়োজন, তাৎক্ষণিক সমাধান নয়।

ক্ষমতার ভারসাম্যের উপর কী প্রভাব ফেলবে

বিরল খনিজ আজ বিশ্বের ক্ষমতার ভারসাম্য নতুনভাবে নির্ধারণ করছে। তেলের পরিবর্তে এখন ‘চুম্বক’ বা ম্যাগনেট হয়ে উঠছে প্রযুক্তিগত ও সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের নতুন মুদ্রা। এই খনিজের নিয়ন্ত্রণই নির্ধারণ করছে কোন দেশ ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে নেতৃত্ব দেবে।

চীন তার ‘বিরল খনিজ কূটনীত’ ব্যবহার করছে অর্থনৈতিক চাপের অস্ত্র হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রের চিপ নিষেধাজ্ঞার জবাবে বেইজিং বিরল খনিজ রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে এবং তার মিত্র দেশগুলোর ওপরও চাপ বাড়িয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ‘চীন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বৈশ্বিক শান্তি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করছে।’ কিন্তু এর ফলে বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে—২০২৫ সালের অক্টোবরে নাসডাক সূচক ৮০০ পয়েন্ট পড়ে যায়। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এটি ১৯৭৩ সালের পর প্রথম বড় জ্বালানি সংকটের সূচনা হতে পারে।

বিরল খনিজ আজ বিশ্বকে নিয়ে যাচ্ছে এক নতুন ‘চুম্বক যুগে’, যেখানে ভূতত্ত্ব ও ভূরাজনীতি একসঙ্গে কাজ করছে। ফোর্বসের বিশ্লেষক ডেভিড ব্ল্যাকমন যেমন বলেছেন, ‘আমরা এখন আর স্বর্ণ খোঁজার দৌড়ে নেই, আমরা নতুন চুম্বক তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমেছি।’

ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন

চীন বর্তমানে বৈদ্যুতিক যান, ব্যাটারি ও ইলেকট্রনিক্সে ব্যবহৃত খনিজের পুরো সরবরাহ চেইনে প্রভাব বিস্তার করেছে। এর ফলে পশ্চিমা দেশগুলোর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেমিকন্ডাক্টর ও প্রতিরক্ষা উৎপাদন খাতে সক্ষমতা কমে যেতে পারে। সিএসআইএস-এর বিশ্লেষকদের মতে, ‘এগুলো এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কঠোর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ’, যা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহে আঘাত হানছে। এতে চীনের উৎপাদনশক্তি আরও মজবুত হচ্ছে এবং সামরিক প্রযুক্তির ফারাক বাড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্র এখন ‘অপারেশন ওয়ার্প স্পিড ফর রেয়ার আর্থস’ চালু করতে যাচ্ছে। তারা জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে খনিজ মজুদ, মূল্য নিশ্চয়তা এবং অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুত করার পরিকল্পনা করছে। নতুন স্পিড অ্যাক্ট আইনটি মামলা সংক্রান্ত জটিলতা কমিয়ে প্রকল্প অনুমোদন দ্রুত করবে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘আমেরিকার এখন নতুন অপারেশন ওয়ার্প স্পিড প্রয়োজন, যাতে রেয়ার আর্থ সরবরাহ চেইন সুরক্ষিত থাকে।’ অস্ট্রেলিয়ার এনাব্বা রিফাইনারি ২০২৭ সালে চালু হলে চীনের বৈশ্বিক অংশীদারত্ব ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।

তবে এই বৈচিত্র্যকরণের প্রচেষ্টা নতুন ঝুঁকিও তৈরি করছে। গ্রীনল্যান্ড ও ইউক্রেনের মতো নতুন খনি এলাকায় পরিবেশগত বিরোধ তৈরি হচ্ছে, আবার আফ্রিকার খনিগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ বাড়ছে। সফল হলে এই প্রচেষ্টা পরিচ্ছন্ন জ্বালানির প্রযুক্তি গণতান্ত্রিকভাবে বিস্তার করবে এবং কোয়াড ও মিনারেলস সিকিউরিটি পার্টনারশিপ জোটের মাধ্যমে পশ্চিমা জোটকে শক্তিশালী করবে। কিন্তু ব্যর্থ হলে চীনের প্রভাব আরও সুদৃঢ় হবে এবং বাণিজ্যযুদ্ধ ধীরে ধীরে ‘হাইব্রিড সংঘাতে’ রূপ নিতে পারে।

সংক্ষেপে, বিরল খনিজ আজ বিশ্বকে নিয়ে যাচ্ছে এক নতুন ‘চুম্বক যুগে’, যেখানে ভূতত্ত্ব ও ভূরাজনীতি একসঙ্গে কাজ করছে। ফোর্বসের বিশ্লেষক ডেভিড ব্ল্যাকমন যেমন বলেছেন, ‘আমরা এখন আর স্বর্ণ খোঁজার দৌড়ে নেই, আমরা নতুন চুম্বক তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমেছি।’

২০৩০ সালের মধ্যে এই প্রতিযোগিতা নির্ধারণ করবে—বিশ্বের শক্তির ভারসাম্য কি নতুনভাবে বিভক্ত হবে, নাকি চীন তার প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক প্রভাব আরও মজবুত করে ২১শ শতকের নেতৃত্ব পাবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত