আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা চূড়ান্ত হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.)মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
কৃষি উপদেষ্টা বলেন, ‘নীতিমালাটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। জাতীয় পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। আশা করছি, আগামী মাস বা তার পরের মাসেই এটি সম্পন্ন হবে।’
তিনি জানান, আজকের সভায় সারের ব্যবস্থাপনা, দাম ও নতুন নীতিমালা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ‘আল্লাহর কৃপায় দেশে এখন সারের কোনো সংকট নেই। পর্যাপ্ত সার মজুদ আছে, দামও বাড়বে না। বরং সারের আন্তর্জাতিক দাম এখন নিম্নমুখী।’
ইউরিয়া সারের অতিব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কৃষকরা অনেক সময় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ইউরিয়া ব্যবহার করেন। এতে গাছ সবুজ হয় ঠিকই, কিন্তু ফলন বাড়ে না, বরং জমির ক্ষতি হয়। ইউরিয়ার ব্যবহার কমাতে প্রচার চালানো দরকার। ডিএপি সারেও প্রায় ২০ শতাংশ ইউরিয়া থাকে।’
নতুন নীতিমালায় দুর্নীতি ও লাইসেন্সজনিত জটিলতা দূর করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। ‘আগে ডিলারদের আলাদা আলাদা সংস্থার লাইসেন্স নিতে হতো। নতুন নীতিমালায় একটি লাইসেন্সেই সব ধরনের সার বিক্রি করা যাবে। পাশাপাশি নতুন লাইসেন্স অনুমোদনের জন্য একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হবে’, বলেন কৃষি উপদেষ্টা।
সার কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়ায় কৃষকের খরচ বাড়বে কিনা —প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়লেও কৃষকের জন্য সারের দাম অপরিবর্তিত থাকবে। সরকার ভর্তুকি দেবে।’
তিনি আরও বলেন, গত মৌসুমে বোরো ও আমনের উৎপাদন ভালো ছিল — প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন বেশি ধান উৎপাদন হয়েছে। এবারও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের আশা করা যাচ্ছে।
পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘এবার পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। সরকারের দেওয়া এয়ার ফ্লো মেশিন ও কৃষকদের প্রচেষ্টায় পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়নি। বর্তমানে বাজারে দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে, যা সহনীয়। এর চেয়ে কম হলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
সবজির বাজার প্রসঙ্গে তিনি জানান, মৌসুমের শুরুতে ফুলকপির মতো কিছু সবজির দাম তুলনামূলক বেশি থাকলেও তা সময়ের সঙ্গে স্থিতিশীল হবে। তবে আলু ও পেঁপের দাম অনেক কম, যা কৃষকদের নিরুৎসাহিত করছে। ‘এই দুই ফসলের দাম না পেলে কৃষক পরের মৌসুমে চাষ বন্ধ করে দিতে পারেন’, বলেন তিনি।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা জানিয়ে কৃষি উপদেষ্টা বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২৫ বছরের একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
কৃষিজমি রক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জমি কমে গেলে দেশ পরনির্ভরশীল হয়ে পড়বে। তাই কৃষিজমি সুরক্ষায় আইন করা হচ্ছে, যাতে ফসলি জমিতে অবকাঠামো নির্মাণ না করা যায়। এ কাজে ভূমি, পরিবেশ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করছে।’
তিনি জানান, কৃষকের সুবিধার জন্য ‘খামারি অ্যাপ’ চালু করা হয়েছে। এই অ্যাপে কৃষক জানতে পারবেন কোন জমিতে কোন ফসল সবচেয়ে উপযুক্ত এবং কী পরিমাণ সার প্রযোজ্য।