leadT1ad

৪০ বছরের ভিটা থেকে উচ্ছেদের পর বাঁশঝাড়ে রাত কাটাচ্ছে পাঁচ কোল পরিবার

উচ্ছেদের শিকার পরিবারগুলো একজন রুমালী হাসদা বলছেন, একতরফা রায়ে তাদের উচ্ছেদ করেছেন আদালত। উচ্ছেদের জন্য তাদের কোনো নোটিশও দেওয়া হয়নি। বাড়ির জিনিসপত্র কিছুই সরানো যায়নি। রান্না করা খাবারও বের করতে পারেননি। সবই মাটির দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুদিন ধরে তারা খাওয়া-দাওয়া ভুলে গেছেন। থাকছেন বাঁশঝাড়ের নিচে।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
রাজশাহী

গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) এক্সকাভেটর দিয়ে তাদের বাড়িঘর মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়। স্ট্রিম ছবি

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোল সম্প্রদায়ের পাঁচটি পরিবার বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রায় ৪০ বছর ধরে ওই জায়গায় বাস করছিল পরিবারগুলো। গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) এক্সকাভেটর দিয়ে তাদের বাড়িঘর মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙা বাড়িঘর থেকে নিজেদের জিনিসপত্রও সরাতে পারেনি তারা। পাঁচটি পরিবারের সদস্য প্রায় ২০ জন। এখন তাঁরা থাকছেন বাঁশঝাড়ে খোলা আকাশের নিচে।

কোল পরিবারগুলোর মানবেতর জীবনযাপনের খবর পেয়ে আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে তাদের দেখতে যান জাতীয় আদিবাসী পরিষদের নেতা ও স্থানয়ি রাজনীতিকরা। তাঁরা বলছেন, জাল দলিল দেখিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে কোল পরিবারগুলোকে। এটা একটা জঘন্যতম কাজ হয়েছে।

উচ্ছেদের শিকার পরিবারগুলো একজন রুমালী হাসদা বলছেন, একতরফা রায়ে তাদের উচ্ছেদ করেছেন আদালত। উচ্ছেদের জন্য তাদের কোনো নোটিশও দেওয়া হয়নি। বাড়ির জিনিসপত্র কিছুই সরানো যায়নি। রান্না করা খাবারও বের করতে পারেননি। সবই মাটির দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুদিন ধরে তারা খাওয়া-দাওয়া ভুলে গেছেন। থাকছেন বাঁশঝাড়ের নিচে।

খাস জমি জেনে বাস, ব্যক্তিজমি হিসেবে উচ্ছেদ

উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের বাবুডাইং গ্রামের ৭৭ শতাংশ জায়গায় বাস করত কোল পরিবারগুলো। ২০২০ সালে জমিটি নিজেদের দাবি করে আদালতে মামলা করেন নজরুল ইসলাম আলমগীর ও তাঁর কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন। জমিতে বসবাসকারীদের পক্ষ হিসেবে বিবাদী করা হয় সনাতন সরেনকে। সেই মামলায় সম্প্রতি বাদীর পক্ষে রায় দিয়েছেন গোদাগাড়ী থানার সহকারী জজ আদালত।

গত সোমবার রাজশাহী জেলা জজ আদালতের নাজির বিশ্বজিৎ ঘোষ, নাসির উদ্দিন নামের একজন আইনজীবী ও গোদাগাড়ী থানার উপপরিদর্শক আবুল কালাম উচ্ছেদ অভিযানে যান। এক্সকাভেটর দিয়ে সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঁচটি বাড়ি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন পরিবারগুলোর সদস্যরা।

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোল সম্প্রদায়ের পাঁচটি পরিবার বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। স্ট্রিম ছবি
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোল সম্প্রদায়ের পাঁচটি পরিবার বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। স্ট্রিম ছবি

উচ্ছেদের শিকার রুমালী হাসদা বলেন, তারা খাস জায়গা মনে করে এখানে বাস করতেন। পরে শুনেন জমিটি তিলক মাঝি, দিনু মাঝি, ভাদু মাঝিসহ কয়েকজনের নামে রেকর্ড আছে। তারা তাদের জাত-ভাই। এখন তারা এখানে নেই। কিন্তু তাদের হিন্দু সাজিয়ে জমিগুলো রেজিস্ট্রি করে নেন মকবুল হোসেন নামে বাদীদের একজন। পরে মকবুলের ওয়ারিশরা জমি পেতে আদালতে মামলা করেন। কিন্তু কোল পরিবারগুলো শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অভাবে ঠিক মতো মামলা চালাতে পারেননি। এবার এক তরফা রায়ে তাঁদের জমি বেহাত হয়ে গেছে।

জাল দলিল উচ্ছেদের অভিযোগ আদিবাসী নেতার

উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোকে দেখতে বুধবার সকালে বাবুডাইং গ্রামে যান জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিচিত্রা তিরকি, সাধারণ সম্পাদক নরেন পাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম, দপ্তর সম্পাদক নকুল পাহান, জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক টুনু পাহান, নওগাঁ জেলার সাধারণ সম্পাদক অজিত মুন্ডা, নওগাঁর পোরশা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আইচন পাহান। এ সময় রাজনীতিকদের মধ্যে ছিলেন বাসদের কেন্দ্রীয় বর্ধিত ফোরামের সদস্য জয়নাল আবেদীন মুকুল, পোরশা উপজেলা শাখার সদস্য ভোদলু লাকড়া ও নিয়ামতপুর উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক ফরজমনি। গিয়েছিলেন গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহম্মেদও।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম বলেন, ‘জাল দলিল করে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। এটা একটা জঘন্যতম কাজ হয়েছে। এই পরিবারগুলো ৪০ বছর ধরে বাস করছেন। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর একটা পক্ষ ফায়দা লুটছে। এটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আজ ইউএনও নিজেই তাদের দেখতে গিয়ে কাগজপত্র দেখেছেন। তিনি আদিবাসীদের বলেছেন যে, ওই দলিল ভুয়া। এটা বাতিল হওয়ার কথা।’

জানতে চাইলে গোদাগাড়ীর ইউএনও ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, ‘এটা আইনি বিষয়। সে বিষয়ে মন্তব্য করার সুযোগ নেই। তবে মানবিক কারণে আমি তাদের দেখতে গিয়েছি। পরিবারগুলো দুদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে রয়েছে, তাই তাদের থাকার ব্যবস্থা করার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে বলেছি। আমরা তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করব।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত