আর্জেন্টিনার মধ্যবর্তী সংসদ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই তার চরম ডানপন্থী অর্থনৈতিক সংস্কারের পক্ষে জোরালো জনসমর্থন অর্জন করেছেন। তার দল লা লিবেরতাদ আভানজা জাতীয় ভোটে ৪১ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে বিপুল ব্যবধানে জয় লাভ করে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রায় দ্বিগুন ভোট পেয়েছে দলটি। এই ফলাফলকে অনেকে তার কঠোর ব্যয়সংকোচন নীতির ওপর এক ধরনের গণভোট বলে মনে করছেন।
২০২৩ সালের শেষদিকে ক্ষমতায় এসে মিলেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি দেশের অদক্ষ ও বিশাল কল্যাণব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে অতিমুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবেন। নির্বাচনে জয়ের পর তিনি বলেন, ‘জনগণ এক শতাব্দীর ব্যর্থতা থেকে মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
তাকে বলা হয় ‘অনিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদী’। তিনি এই সাফল্যের কৃতিত্ব দেন সাধারণ মানুষের পরিবর্তন-চাহিদা, অর্থনীতিতে স্বাধীনতার আকাঙ্খা ও ‘রাজনৈতিক শ্রেণির’ প্রত্যাখ্যানকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও তার এই জয়কে ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের অনুপ্রেরণা’ বলে উল্লেখ করেন।
এই বিজয় বৈশ্বিক রাজনীতিতে উদীয়মান ডানপন্থী ও জনতুষ্টিবাদী প্রবণতার প্রতিফলন। ইউরোপ থেকে লাতিন আমেরিকা পর্যন্ত বহু দেশেই এখন একই ধারা দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনের মাত্র কয়েক দিন আগে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অলিভিয়ার দে শুটার সতর্ক করেছিলেন, দশকের পর দশক ধরে কল্যাণরাষ্ট্রীয় সামাজিক সুরক্ষা কমানো বা ‘অস্টারিটি’ নীতিই ডানপন্থী উত্থানের মূল কারণ।
তার মতে, ‘যদি রাষ্ট্র নাগরিকদের আরও সহায়তা দিত, মানুষ নিজেদের পিছিয়ে পড়া বা বাদ পড়ার ভয় পেত না।’ মিলেইর জয় প্রমাণ করে, ২০২৫ সালে এই প্রবণতার শুধু ধারাবাহিকতাই বজায় থাকেনি, বরং এর গতি আরও তীব্র হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে—কোন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে? এর ভবিষ্যৎ প্রভাব কী হতে পারে?
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: প্রতিবাদ থেকে মূলধারায়
পপুলিজম বা জনতুষ্টিবাদ হলো এক ধরনের রাজনৈতিক ধারা, যেখানে ‘সৎ জনগণ’-এর বিপরীতে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত অভিজাত শ্রেণি’কে দাঁড় করানো হয়। ১৯ শতক থেকেই এর উপস্থিতি থাকলেও, ২০১০-এর দশক থেকে ডানপন্থী জনতুষ্টিবাদ—যা প্রায়শই জাতীয়তাবাদী ও অভিবাসীবিরোধী—উন্নত বিশ্বজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
২০০৮ সালের আর্থিক সংকট, কোভিড-১৯ মহামারি ও ২০২২ সালের জ্বালানি সংকট এই প্রবণতাকে আরও উস্কে দেয়। ২০২৫ সালে ইউরোপের সংসদগুলোতে জনতুষ্টিবাদী দলগুলোর আসন সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ শতাংশে, যা এক দশক আগেও ছিল মাত্র ১০ শতাংশ। লাতিন আমেরিকায় মিলেইর আগে ব্রাজিলে জইর বলসোনারো এবং এল সালভাদোরে নায়িব বুকেলের মতো ডানপন্থীদের উত্থান ঘটে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উত্থানের পেছনে কাজ করছে তথাকথিত ‘নস্টালজিক ডিপ্রাইভেশন’। এটি এমন এক মানসিকতা, যেখানে বিশ্বায়নের ফলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী অতীতের নিরাপত্তাবোধ হারিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
ইকুইটেবল গ্রোথের ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ‘জনতুষ্টিবাদী ভোটাররা এক ধরনের বঞ্চনা বোধে ভুগছে, যা বিশ্বের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে পুনর্গঠন করছে। শিল্পখাতের অবক্ষয় ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন তাদের ঐতিহ্যবোধ ও পরিচয়ের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছে।’
রাজনৈতিক চিন্তাবিদ ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা এ প্রবণতাকে ব্যাখ্যা করেছেন—অর্থনৈতিক বৈষম্য, নিওলিবারেল নীতি, বর্ণবাদ, অভিজাত শ্রেণির প্রতি ক্ষোভ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্পের মতো ডেমাগগ বা বক্তৃতাবাজদের উত্থানের প্রেক্ষাপটে। তার মতে, মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো যখন কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হয়, তখন জনগণ বিকল্প শক্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে।
এর প্রতিধ্বনি শোনা যায় এলএসই আইডিয়াস–এর এক প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘জনতুষ্টিবাদ মূল ধারার রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি গভীর সন্দেহ ও অবিশ্বাসের প্রতিফলন।’
অর্থনৈতিক প্রভাব: ব্যয়সংকোচনের তিক্ত ফল
জনতুষ্টিবাদের পেছনে সবচেয়ে বড় চালিকা শক্তি হলো অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বৈষম্য। দে শুটারের জাতিসংঘ রিপোর্টে বলা হয়েছে, মধ্যপন্থী সরকারগুলো সামাজিক সুরক্ষাকে বিনিয়োগ নয়, বরং বোঝা হিসেবে দেখায়। এতে সামাজিক নিরাপত্তা দাবি করা মানুষদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। নজরদারি বেড়েছে এবং সমাজে ‘জিরো-সম’ মানসিকতা জোরদার হয়েছে।
বার্তাটি স্পষ্ট, ‘এটা আমরা বনাম তারা। যা একদল পাবে, অন্যদল তা পাবে না, কারণ সবার জন্য যথেষ্ট কিছু নেই।’
২০২১ সালের এক ইউরোপীয় গবেষণায় দেখা যায়, আয়-বৈষম্য মাত্র এক শতাংশ বাড়লে জনতুষ্টিবাদী দলের ভোটও প্রায় একই হারে বাড়ে।
আর্জেন্টিনায় মিলেইর ‘শক থেরাপি’—ভর্তুকি হ্রাস, ৭০ হাজার সরকারি চাকরি বিলোপ এবং পেসোর মান অর্ধেকে নামিয়ে আনা—মুদ্রাস্ফীতি ২০০ শতাংশ থেকে কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রায় ৪০ শতাংশ পরিবার দারিদ্র্যে পড়ে। তবুও জনগণ তাকে পুরস্কৃত করেছে, কারণ তারা এই কঠোর নীতিকে দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে দেখেছে।
দে শুটার সতর্ক করেছেন, ‘এই নেতারা শেষ পর্যন্ত সেই অর্থনৈতিক অভিজাত শ্রেণির স্বার্থই রক্ষা করেন, যাদের তারা প্রথমে বিরোধিতা করেছিলেন।’ তিনি উল্লেখ করেন, এসব নীতি নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি এবং সমাজে বিভাজন আরও গভীর করেছে।
ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস-এর ২০২৫ সালের রিপোর্টে বলা হয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি, বৈষম্য ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতাই রাজনৈতিক অস্থিরতার মূল কারণ। এর ফলে ২০টি বড় নির্বাচনের মধ্যে ১২টিতেই ডানপন্থীদের উত্থান ঘটেছে।
অর্থনীতিবিদ ব্রাঙ্কো মিলানোভিচ নেচার হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সাইন্সেস কমিউনিকেশনসে এক লেখায় বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে ব্যর্থদের অপপ্রচার এই অসন্তোষকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
গবেষক ডক রাস জ্যাকসনের ভাষায়, ‘সরকারগুলো বাস্তব চ্যালেঞ্জগুলো—যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, আর্থিক সংকট বা অনিরাপদ কর্মসংস্থান—ঠিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে, আর সেই ব্যর্থতাই জনতুষ্টিবাদের জ্বালানি।’
সার্বিকভাবে, আর্জেন্টিনায় মিলেইর সাফল্য কেবল একটি জাতীয় নির্বাচনের ফল নয়; এটি বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক স্রোতের প্রতিফলন, যেখানে জনগণ প্রচলিত রাজনীতির প্রতি আস্থা হারিয়ে বিকল্প, প্রায়শই চরমপন্থী, নেতৃত্বের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণ: মর্যাদা ও পরিচয়ের সংকট
এই প্রবণতা কেবল অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক মর্যাদা ও আত্মপরিচয়ের সঙ্গেও জড়িত।
ইকুইটেবল গ্রোথ-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বেকারত্ব ও বাসস্থানের অনিশ্চয়তার মতো ‘সামাজিক মর্যাদার প্রতি হুমকি’ ডানপন্থী জনসমর্থন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। গ্রামীণ ও শিল্পোত্তর অঞ্চলে—যেমন জার্মানির এএফডি-সমর্থিত এলাকাগুলো বা ফ্রান্সের ন্যাশনাল র্যালির ঘাঁটি—মানুষ নিজেদের ‘পরিত্যক্ত’ মনে করে।
দে শুটার বলেন, ‘এএফডি পূর্ব জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি সমর্থন পায়, যেখানে মানুষ মনে করে রাষ্ট্র তাদের হাত ছেড়ে দিয়েছে।’
অভিবাসন ইস্যু এই ক্ষোভকে আরও উসকে দেয়। জনতুষ্টিবাদী নেতারা অভিবাসীদের কর্মসংস্থান ও সামাজিক সুবিধা ‘চুরি’ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। অথচ গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবাসীরা সুবিধার চেয়ে করের মাধ্যমে রাষ্ট্রে বেশি অবদান রাখে। যুক্তরাজ্যে রিফর্ম ইউকের উত্থান—যা বর্তমানে কনজারভেটিভদেরও ছাড়িয়ে গেছে—অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভের ওপর নির্ভর করছে।
দে শুটার এই পরিস্থিতিকে ‘ভয়ঙ্কর’ বলে বর্ণনা করেছেন। সাংস্কৃতিক প্রতিক্রিয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা বলেন, প্রগতিশীল বামপন্থী সাংস্কৃতিক এজেন্ডা—যেমন লিঙ্গ ইস্যু বা সকলের জন্য মানধিকার সচেতনতা—জনগণের একাংশের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
হার্ভার্ডের কার-রায়ান সেন্টার মনে করে, নির্বাচনী ব্যবস্থায় প্রতিনিধিত্বের ঘাটতি মানুষকে ‘অশ্রুত’ বা অবহেলিত মনে করায়। দ্য ডিপ্লোম্যাট এর বিশ্লেষণ বলছে, জাপানেও জনতুষ্টিবাদ একই রকম নস্টালজিক মানসিকতার ওপর ভিত্তি করে বাড়ছে।
রাজনৈতিক ব্যর্থতা: মূলধারার রাজনীতির ফাঁকা জায়গা
মূলধারার রাজনীতির অক্ষমতাই জনতুষ্টিবাদের জ্বালানি। কার্নেগি এনডাওমেন্ট-এর সেপ্টেম্বর ২০২৫ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মূলধারার রাজনীতি যখন বাস্তব সমস্যার কার্যকর সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়, তখনই চরম ডানপন্থী জনতুষ্টিবাদ সবচেয়ে বেশি শক্তি পায়।’
জার্নাল অব পাবলিক ইকোনমিকস-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, জনতুষ্টিবাদী দলের উত্থান রাজনৈতিক কেন্দ্রকে ডানদিকে ঠেলে দেয় এবং আদর্শগত বিভাজন বাড়ায়।
নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্সে গির্ট উইল্ডার্সের ফ্রিডম পার্টি এবং মারিন লা পেনের ন্যাশনাল র্যালি সরকারে প্রবেশের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে, গ্রামীণ অঞ্চলের অবহেলিত ভোটারদের ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, ‘জনতুষ্টিবাদের উত্থান বৈশ্বিক গণতন্ত্রকে দুর্বল করছে। এটি দ্রুত কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী বৈশিষ্ট্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।’ বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থায় সার্বজনীন মূল্যবোধ উপেক্ষিত হওয়াই এই প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করছে।
গণমাধ্যম ও প্রযুক্তির ভূমিকা: প্রতিধ্বনির বিস্তার
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এই প্রবণতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে। ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা উল্লেখ করেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেট’ জনতুষ্টিবাদের প্রধান চালিকাশক্তিগুলোর একটি। এর মাধ্যমে ডানপন্থী নেতারা প্রচলিত গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ এড়িয়ে সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ পায়।
নেচার-এর অক্টোবর ২০২৫ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, অ্যালগরিদম বিভাজনমূলক কনটেন্টকে অগ্রাধিকার দেয়, ফলে ‘ইনফোওয়ার’ বা তথ্যযুদ্ধ তৈরি হয়। এটি মানুষকে নিজেদের পক্ষপাতের ভেতর আরও বন্দি করে। তবে অনেক বিশ্লেষকের মতে, প্রভাবশালী ‘নেপোবেবি’ বা অভিজাত বংশোদ্ভূত কণ্ঠগুলো মূল সমস্যাকে উপেক্ষা করে, যা জনঅসন্তোষ আরও বাড়ায়।
বিশ্বজুড়ে উদাহরণ: উত্তপ্ত কেন্দ্রবিন্দুগুলো
আর্জেন্টিনায় প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই ৪১ শতাংশ ভোট পেয়ে কঠোর কৃচ্ছ্রসাধনের নীতিতে জনগণের সমর্থন দেখিয়েছেন, যদিও দেশে দারিদ্র্যের হার ৫৫ শতাংশ। সমালোচকরা আশঙ্কা করছেন, এতে সামাজিক বিভাজন আরও গভীর হবে।
ইউরোপে জার্মানির এএফডি, যুক্তরাজ্যের রিফর্ম ইউকে এবং ফ্রান্সের ন্যাশনাল র্যালি—সব দলই গ্রামীণ ‘অবহেলিত’ অঞ্চলে শক্ত ঘাঁটি গেড়েছে। আটলান্টিক কাউন্সিল সতর্ক করেছে, এই ডানপন্থী উত্থান ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাশিয়া ও চীনের বিরুদ্ধে সামরিক ঐক্যকে দুর্বল করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৪ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন এবং আর্জেন্টিনায় মিলেই-র বিজয় একই প্রবণতার প্রতিফলন—সামাজিক মর্যাদার হুমকি ও পুরোনো অভিজাত শ্রেণির প্রতি অসন্তোষ।
এশিয়া ও এর বাইরে জাপানে জনতুষ্টিবাদের উত্থান অর্থনৈতিক উদ্বেগের সঙ্গে সম্পর্কিত। ইউক্রেনে, অভিবাসন বিতর্ক ডানপন্থী শক্তিকে উসকে দিচ্ছে।
পরিণতি: স্বাস্থ্য, গণতন্ত্র ও ভূ-রাজনীতি
এই প্রবণতার প্রভাব গভীর ও বিস্তৃত। আমেরিকান জার্নাল অব পাবলিক হেলথ-এর মে ২০২৫ সালের গবেষণায় বলা হয়েছে, ডানপন্থী নীতিগুলো স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবেশ সুরক্ষার ব্যয় কমিয়ে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।
শিক্ষাবিদদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, জনতুষ্টিবাদীরা যখন ক্ষমতায় আসে, তারা আদর্শগত পার্থক্য ঘুচিয়ে গণতান্ত্রিক কাঠামোকেই দুর্বল করে। ইউরোপের কৌশলগত অস্থিরতা রাশিয়া ও চীনের মতো শক্তিগুলোর আগ্রাসনকে আরও উৎসাহিত করতে পারে।
দে শুটার সতর্ক করে বলেছেন, ‘এখনই আমাদের জাগতে হবে। সমাজকে এমন এক প্রতিযোগিতার অরাজকতায় ঢুকতে দেওয়া যাবে না, যেখানে সবাই সীমিত সম্পদের জন্য লড়াই করছে।’ অনেক বিশ্লেষক বলেন, ‘উদার পুঁজিবাদী অর্থনীতির ব্যর্থতা’ নতুন চরমপন্থাকে উৎসাহ যোগাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
অধ্যাপক ফুকুয়ামা মানব প্রকৃতির ‘সহিংসতা, ঘৃণা ও বর্জনের প্রবণতা’কে ডানপন্থা ও জনতুষ্টিবাদের পেছনের মূল কারণ হিসেবে দেখেছেন। তিনি বলেন, কেবল লেবেল দেওয়া নয়, বরং সমস্যার মূল কারণ মোকাবিলা করা জরুরি।
২০২৫ সালে ডানপন্থী উত্থান—আর্জেন্টিনার মিলেই থেকে ইউরোপের ডানপন্থী দলগুলো পর্যন্ত—কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এটি দীর্ঘদিনের নীতিগত-ব্যর্থতার ফল। দে শুটার জোর দিয়ে বলেছেন, শক্তিশালী সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা দয়া নয়, বরং ‘সহজ ও কার্যকর রক্ষাকবচ।’
ইকুইটেবল গ্রোথ–এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, যদি পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে চরম ডানপন্থা ও জনতুষ্টিবাদীদের সমর্থন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে। তবে অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি গ্রহণের মাধ্যমে এই প্রবণতা উল্টে দেওয়া সম্ভব।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, ইকুইটেবল গ্রোথ ডটওআরজি, ভিশন অব হিউম্যানিটি ডট ওআরজি, নেচার ডটকম, আটলান্টিক কাউন্সিল ডট ওআরজি, কার্নেগি এনডাওমেন্ট ডট ওআরজি