বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এক নারী শিক্ষার্থী অন্য মেয়েদের অজান্তে তাঁদের ছবি তুলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র ছাত্রের কাছে পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা তদন্ত ও সমাধানের জন্য ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মজিদ ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কয়েকজন শিক্ষককে মৌখিকভাবে দায়িত্ব দিয়েছেন। পরে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীরা ডিনের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত নারী শিক্ষার্থীর নাম দেবশ্রী দত্ত রাত্রী। তিনি সদ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। যে সিনিয়রের কাছে ছবিগুলো পাঠানো হতো, তিনিও একই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। বর্তমানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে কর্মরত।
অভিযোগ উঠেছে, তিনি নিয়মিতভাবে মেয়েদের ঘুমন্ত বা ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি তুলে ওই সিনিয়রের কাছে পাঠাতেন। বিষয়টি প্রকাশ পেলে সোমবার (২৭ অক্টোবর) ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বিভাগীয় শিক্ষক ও কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিনের কাছে অভিযোগ করেন।
অভিযুক্ত নারী শিক্ষার্থী অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসে। আমরা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে ছবির আদান-প্রদানের প্রমাণ পাই। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি স্বীকার করেন যে, তিনি মেয়েদের বিভিন্ন ছবি তুলতেন এবং তা এক সিনিয়র ভাইয়ের কাছে পাঠাতেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ওই মোবাইলটি সিলগালা অবস্থায় ডিন অফিসে সংরক্ষিত রয়েছে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ ও নিরোধ কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হবে।
অভিযুক্ত সিনিয়র ওই শিক্ষার্থী ‘স্বীকারোক্তিমূলক প্রতিক্রিয়া’ দিয়েছেন বলেও জানান ডিন আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, ওই শিক্ষার্থী বলেছে, সে মেয়েটির সঙ্গে দীর্ঘদিন কথা বলেছে। মেয়েটি যেসব ছবি পাঠিয়েছে, তা সে সংরক্ষণ করেনি। তার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না, তবে সে তার কাজের জন্য অনুতপ্ত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যা সিদ্ধান্ত নেবে, তা সে মেনেও নেবে।’
তবে ওই সিনিয়রের নাম প্রকাশ করেননি অধ্যাপক আবদুল মজিদ। পরিচয় জানতে চাইলে তিনি পুরোপুরি নিশ্চিত নন বলে জানান। এই বিষয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুল আলিম ‘ব্যস্ত থাকায়’ পরে যোগাযোগ করবেন বলে জানান।
তবে সামাজিক যোগাযোগেরমাধ্যমে অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থীর পরিচয় জানা গেছে। তিনি বাকৃবির ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী এবং নাম তার শরীফ ইসতিয়াক আকাশ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এক পোস্টে বাকৃবির মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী শেখ মো. মহিউদ্দিন সাজিভ লিখেছেন, ‘এ ধরনের বিকৃত ও কুরুচিপূর্ণ লম্পটদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করতে হবে।’
অগ্রণী ব্যাংক পিএলসির ময়মনসিংহ শাখার সিনিয়র অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম ওই পোস্টে লিখেছেন, ‘সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধী যত বড়ই শক্তিশালী হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।’
অভিযুক্ত নারী শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা জানান, ইন্টার্নশিপ চলাকালে ওই শিক্ষার্থীর সন্দেহজনক আচরণ লক্ষ্য করে তারা নজরদারিতে রাখেন। পরে নিশ্চিত হন যে, তিনি মেয়েদের ঘুমন্ত বা অপ্রস্তুত অবস্থার ছবি তুলতেন। বিষয়টি প্রমাণ হওয়ার পর তারা বিভাগীয় শিক্ষকদের অবহিত করেন এবং কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।